ইরাকের একটি তেল শোধনাগারে রকেট হামলা চালিয়েছে আইএস জঙ্গিরা। আগুন এখন নিয়ন্ত্রণে।
বিজ্ঞাপন
উত্তর ইরাকের সিনিয়া তেল শোধনাগারে হামলা চালালো ইসলামিক স্টেটের জঙ্গিরা। রকেট হামলায় আগুন লেগে যায় সেখানে। বন্ধ করে দেওয়া হয় কাজ। সোমবার সকালে ইরাকের সরকার জানিয়েছে, ফের তেল শোধনাগারটিতে উৎপাদন শুরু হয়েছে। ঘটনায় হতাহতের কোনো খবর মেলেনি।
বিশ্বের সবচেয়ে ভয়াবহ যত জঙ্গি হামলা
এশিয়া, অ্যামেরিকা কিংবা আফ্রিকা, বিয়েবাড়ি, অফিস বা হাসপাতাল, কোথাও নিরাপদ নয় সাধারণ মানুষ৷ জঙ্গি হামলায় প্রতি বছরই বাড়ছে মৃত্যু৷ ইতিহাসের কিছু ভয়াবহ জঙ্গি হামলার ঘটনা পড়ুন এই ছবিঘরে৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Abdiwahab
ইস্টার সানডে হামলা (শ্রীলঙ্কা, ২০১৯)
২০১৯ সালের ২১ এপ্রিল ইস্টার সানডে পালন করছিলেন খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীরা৷ এমন দিনেই কলম্বো, নেগোম্বো ও বাট্টিকালোয়া শহরের মোট আটটি গির্জা ও হোটেলে একই সময়ে আত্মঘাতী বোমা হামলা চালানো হয়৷ সরকারের দেয়া সবশেষ তথ্য অনুসারে এ হামলায় নিহত হন ২৫৩ জন৷ ২০০৯ সালে তামিল বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সঙ্গে গৃহযুদ্ধ শেষ হবার পর এটিকেই দেশটির সবচেয়ে বড় সন্ত্রাসী হামলা বলে মনে করা হয়৷ হামলার দায় স্বীকার করেছে আইএস৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
বৈরুত ব্যারাক হামলা (লেবানন, ১৯৮৩)
১৯৮৩ সালের ২৩ অক্টোবর লেবাননের রাজধানী বৈরুতে আত্মঘাতী ট্রাক হামলা চালানো হয়৷ তখন লেবাননে গৃহযুদ্ধ চলছিল৷ ভবনগুলোতে মার্কিন ও ফরাসি শান্তিরক্ষী বাহিনীর সদস্যরা অবস্থান করছিলেন৷ দুই বিস্ফোরক বোঝাই ট্রাক ভবনে ঢুকে গেলে নিহত হন ৩০৭ জন৷ এদের মধ্যে দুই হামলাকারী ছাড়াও ২৪১ জন মার্কিন সেনা, ৫৮ ফরাসি সেনা ও ছয় জন বেসামরিক নাগরিক ছিলেন৷ ‘ইসলামিক জিহাদ’ নামের একটি গ্রুপ হামলার দায় স্বীকার করে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
সিনাই মসজিদ হামলা (মিশর, ২০১৭)
মিশরের ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ হামলা বলে মনে করা হয় এটিকে৷ ২০১৭ সালের ২৪ নভেম্বর জুম্মার নামাজ চলাকালীন ৪০ বন্দুকধারী আল-রাওদা মসজিদে হামলা চালায়৷ আল-রাওদা দেশটির অন্যতম সুফি মসজিদ৷ হামলায় নিহত হন ৩১১ জন৷ কোনো কোনো সংবাদমাধ্যম হামলার সঙ্গে ইসলামিক স্টেটের সম্পৃক্ততা খুঁজলেও আনুষ্ঠানিকভাবে দায় স্বীকার করেনি কেউ৷
ছবি: Getty Images/AFP
এয়ার ইন্ডিয়া ফ্লাইট ১৮২ (ক্যানাডা, ১৯৮৫)
১৯৮৫ সালের ২৩ জুন ভূপৃষ্ঠ থেকে ৩১ হাজার ফুট উঁচুতে আয়ারল্যান্ডের আকাশসীমায় বিধ্বস্ত হয় এয়ার ইন্ডিয়ার টরন্টো-দিল্লি ফ্লাইট৷ বিমানটিতে আগে থেকে বোমা রাখা ছিল, যা নিরাপত্তাকর্মীদের নজর এড়িয়ে যায়৷ ক্যানাডা পুলিশের দাবি, ভারতের অমৃতসরে শিখদের পবিত্র উপাসনালয় গোল্ডেন টেম্পলে সেনা অভিযানের প্রতিবাদে শিখ জঙ্গিদের সংগঠন বাবর খালসা এই বোমা হামলা করে৷ প্লেনে থাকা ৩২৯ জন যাত্রী, পাইলট, ক্রুর সবাই নিহত হন৷
ছবি: Reuters
গামবোরু এনগালা হামলা (নাইজেরিয়া, ২০১৪)
নাইজেরিয়ার পাশাপাশি দুই শহর গামবোরু ও এনগালাতে ২০১৪ সালের ৫ মে রাতে হামলা শুরু করে বোকো হারাম জঙ্গিরা৷ একে-৪৭ ও আরপিজি দিয়ে এ হামলা চালানো হয় টানা ১২ ঘণ্টা ধরে৷ হামলায় নিহত হন শহর দুটির ৩৩৬ জন বাসিন্দা৷ চিবোক শহর থেকে অপহৃত মেয়েদের খুঁজে পাওয়া গেছে– এমন গুজব ছড়িয়ে হামলার ঠিক আগে আগেই শহর দুটি থেকে মোতায়েন সেনাসদস্যদের অন্যদিকে সরিয়ে দিতে সফল হয় জঙ্গিরা৷ এরপরই ঘটে হামলার ঘটনা৷
ছবি: AMINU ABUBAKAR/AFP/Getty Images
কারাডা হামলা (ইরাক, ২০১৬)
২০১৬ সালের ৩ জুলাই স্থানীয় সময় মধ্যরাতে ইরাকের রাজধানী বাগদাদে দুটি হামলা চালানো হয়৷ শিয়া অধ্যুষিত কারাডায় রমজান মাসে ব্যস্ত এক বাজারে আত্মঘাতী ট্রাকহামলা চালানো হয়৷ একই সময়ে শা’ব এলাকায় রাস্তার পাশে রাখা আরো একটি বোমাও বিস্ফোরিত হয়৷ দুই হামলায় নিহত হন ৩৪২ জন৷ হামলার দায় স্বীকার করে আইএস৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Al-Rubaye
ত্রুয়িলো হত্যাকাণ্ড (কলম্বিয়া, ১৯৮৮-১৯৯৪)
কলম্বিয়ার ত্রুয়িলো শহরে ছয় বছর ধরে চলেছে এই হত্যাকাণ্ড৷ এজন্য দায়ী করা হয় অঞ্চলটিতে সক্রিয় বিভিন্ন আধাসামরিক বাহিনী ও দুর্ধর্ষ মাদক চোরাচালানকারী পাবলো এসকোবারের অধীনের ড্রাগ কার্টেলকে৷ এই মাদক চোরাচালান সংগঠনগুলোর সদস্যরা সামরিক বাহিনী ও পুলিশেও সক্রিয় ছিলেন৷ ধারণা করা হয়, ছয় বছরে অন্তত ৪০০ মানুষকে হত্যা করেছে মাদক ব্যবসায়ীরা৷ হত্যার পর মরদেহ ফেলে দেয়া হতো পাশ দিয়ে বয়ে চলা কাউকা নদীতে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/G. Ismar
মোগাদিসু হামলা (সোমালিয়া, ২০১৭)
সোমালিয়া তো বটেই, পুরো আফ্রিকা মহাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় হামলার ঘটনা মনে করা হয় এটিকে৷ নিরাপত্তাকর্মীরা একটি বোমাভর্তি ট্রাককে মোগাদিসুর ব্যস্ততম সড়কে তল্লাশির জন্য আটকালে চালক এটির বিস্ফোরণ ঘটান৷ হামলায় অন্তত ৫৮৭ জনের মৃত্যু হয়৷ আনুষ্ঠানিকভাবে কেউ দায় স্বীকার না করলেও পুলিশের ধারণা, হামলার জন্য দায়ী জঙ্গি সংগঠন আল শাবাব৷
ছবি: Reuters/F. Omar
পুলিশ কর্মকর্তাদের ওপর হামলা (শ্রীলঙ্কা, ১৯৯০)
১৯৯০ সালের ১১ জুন শ্রীলঙ্কার ইস্টার্ন প্রভিন্সে পুলিশ কর্মকর্তাদের ওপর হামলা চালায় তামিল টাইগাররা৷ কয়েকটি থানায় হামলা চালিয়ে দখল করা হয়৷ নিহতের সংখ্যা অন্তত ৬০০ থেকে ৭৭৪ জন হতে পারে বলে জানায় বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম৷
ছবি: picture-alliance/dpa/epa/str
ইয়াজিদি হত্যাকাণ্ড (ইরাক, ২০০৭)
আগস্টের ১৪ তারিখ ইরাকের মোসুল লগরীর পাশে ইয়াজিদি সম্প্রদায় অধ্যুষিত তিল এজের এবং সিবা শেখ খিদির শহরে চারটি আত্মঘাতী বোমা হামলার ঘটনা ঘটে৷ হামলায় অন্তত ৭৯৬ জন নিহত হন৷ কোনো জঙ্গি গোষ্ঠি হামলার দায় স্বীকার করেনি৷ তবে ইরাকের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জালাল তালাবানি এ হামলার জন্য সুন্নি সন্ত্রাসীদের দায়ী করেন৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
ক্রিসমাস হত্যাকাণ্ড (ডি আর কঙ্গো, ২০০৮)
২০০৮ সালের ২৪ থেকে ২৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিক অব কঙ্গোর হাউত-উয়েলে জেলার কয়েকটি গ্রামে আক্রমণ চালায় উগান্ডার বিদ্রোহী গ্রুপ লর্ডস রেজিসট্যান্স আর্মি (এলআরএ)৷ উগান্ডা ও প্রতিবেশী অপর তিন দেশের সেনাবাহিনীর সম্মিলিত অভিযানের পালটা ব্যবস্থা হিসেবে সীমান্ত পেরিয়ে সাধারণ মানুষের ওপর নির্বিচারে হামলা চালায় এলআরএ৷ নিহত হন অন্তত ৬২০ জন৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/J. Kay
ক্যাম্প স্পাইশার হত্যাকাণ্ড (ইরাক, ২০১৪)
২০১৪ সালের ১২ জুন ইরাকের তিকরিতে ক্যাম্প স্পাইশারে হামলা চালিয়ে শিয়া ইরাকি বিমান বাহিনীর ১,৫৬৬ ক্যাডেটকে হত্যা করে আইএস৷ হামলার সময় ক্যাম্পটিতে কয়েক হাজার নিরস্ত্র ক্যাডেট অবস্থান করছিলেন৷ তাঁদের মধ্য থেকে বেছে বেছে শিয়া মুসলিম ও অমুসলিমদের আলাদা করা হয়৷ তারপর গুলি চালিয়ে তাঁদের হত্যা করে আইএস জঙ্গিরা৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Al-Rubaye
৯/১১ হামলা (যু্ক্তরাষ্ট্র, ২০০১)
২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর টুইন টাওয়ারসহ যুক্তরাষ্ট্রের চারটি স্থাপনায় যুগপৎ হামলা চালায় আল কায়েদা জঙ্গি গোষ্ঠী৷ বিমান ছিনতাই করে সেটি নিয়েই টুইন টাওয়ারে আঘাত হানে ছিনতাইকারীরা৷ সরকারি তথ্যমতে, এ হামলায় মোট ২,৯৯৬ জন প্রাণ হারান৷ নিহতদের মধ্যে ১৯ জন ছিনতাইকারী বলে জানিয়েছে গোয়েন্দারা৷ প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলারের সম্পদ ক্ষতিগ্রস্ত হয় এ হামলায়৷
ছবি: AP
13 ছবি1 | 13
উত্তর ইরাকের ছোট তেল শোধনাগার সিনিয়া। রোববার আচমকাই সেখানে পর পর দুইটি রকেট এসে পড়ে। মুহূর্তের মধ্যে দাউ দাউ করে জ্বলতে শুরু করে চারিদিক। দ্রুত কর্মীদের ঘটনাস্থল থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। আগুন লাগার কিছুক্ষণের মধ্যেই ইসলামিক স্টেট হামলার দায় স্বীকার করে বিবৃতি দেয়। ভবিষ্যতে এমন ঘটনা আরো ঘটবে বলে হুমকি দিয়েছে তারা। তাদের দাবি, দুইটি কাটিউশা রকেট ছোড়া হয়েছিল তেল শোধানাগারে।
আগুন লাগার পর ঘটনাস্থলে পৌঁছয় দমকল। সোমবার সকাল পর্যন্ত আগুন নেভানোর কাজ চলে। বন্ধ করে দেওয়া হয় শোধনাগারের সমস্ত কাজ। তবে ইরাকের সরকার জানিয়েছে, হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। সিনিয়া খুব বড় তৈল শোধনাগার নয়। সেখান থেকে সামান্য দূরে অবস্থিত বাইজি শোধনাগার। কোনো ভাবে যদি রকেট সেখানে গিয়ে আঘাত করত, তা হলে বড়সড় ক্ষতির সম্ভাবনা ছিল বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।