ইরাকে গঠিত হলো নতুন সরকার৷ সোমবার সে দেশের সাংসদরা তিনজন উপ-প্রধানমন্ত্রী ও ২১ জন মন্ত্রী বিশিষ্ট মন্ত্রিসভার অনুমোদন দিয়েছে৷ যুক্তরাষ্ট্র, জাতিসংঘ সহ অনেকেই নতুন সরকারকে স্বাগত জানিয়েছে৷
বিজ্ঞাপন
অবশ্য গুরুত্বপূর্ণ দুটি মন্ত্রণালয়ে– স্বরাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা – এখনো কাউকে নিয়োগ দেয়া হয়নি৷ অবশ্য সপ্তাহখানেকের মধ্যে সেটা সম্ভব হবে, বলে মনে করছেন নতুন প্রধানমন্ত্রী হায়দার আল-আবাদি৷
দেশটির সাবেক সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল যে, তাঁরা ইরাকের সব ধর্ম ও মতের জনগণকে একসঙ্গে নিয়ে দেশ পরিচালনা করতে ব্যর্থ হয়েছে৷ যে কারণে দেশটির সুন্নি অধ্যুষিত অঞ্চলের একটা বড় অংশ ইসলামিক স্টেট বা আইএস-এর দখলে চলে গেছে৷ তাই নতুন সরকারের চ্যালেঞ্জ হবে, সবার জন্য কাজ করা এবং আইএস বা আইসিস-এর বিরুদ্ধে লড়তে ঐক্যবদ্ধ হওয়া৷
ইরাকে জিহাদিবিরোধী যুদ্ধ
চরমপন্থি ইসলামি সংগঠন আইএস-এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ চলছে ইরাকে৷ সন্ত্রাসবাদী এ সংগঠনটির সিরিয়াসহ মধ্যপ্রাচ্যের কিছু দেশেও তৎপরতা রয়েছে৷ দেখুন ইরাকে আইএস-বিরোধী যুদ্ধ সংশ্লিষ্ট কিছু ছবি৷
ছবি: Reuters
টিকরিট পুনরুদ্ধারের চেষ্টা
সুন্নিদের সন্ত্রাসবাদী সংগঠন ইসলামিক স্টেট ইন ইরাক অ্যান্ড সিরিয়া (আইসিস) উত্তর ও দক্ষিণ ইরাকের কিছু অংশ দখল করে নিয়েছে৷ বাগদাদ থেকে ১৪০ কিলোমিটার দূরের শহর টিকরিটও এখন তাদের দখলে৷ সে এলাকায় ইরাক সরকারের নিয়ন্ত্রণ পুনরুদ্ধারের জন্য আইসিস জঙ্গিদের বিরুদ্ধে লড়ছে সেনাবাহিনী৷
ছবি: Reuters
মধ্যপ্রাচ্যে কর্তৃত্ব চায় আইসিস
আন্তর্জাতিক ইসলামি জঙ্গি সংগঠন আল-কায়েদার সঙ্গে আইসিস-এর একসময় ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল৷ ২০০৬ থেকে ২০০৭-এর দিকে ইরাকে যখন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন যৌথবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ লড়াই চলছে তখনই আইসিস-এর জন্ম৷ সংগঠনটির লক্ষ্য সিরিয়া, ইরাক, লেবানন, ফিলিস্তিন এবং জর্ডান মিলিয়ে বেশ বড় একটা অঞ্চলে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা৷ ইরাকে নুসরা ফ্রন্টসহ বেশ কিছু সংগঠন তাদের সহযোগী হিসেবে কাজ করছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
বিদ্রোহীদের পাশে যুক্তরাষ্ট্র
সিরিয়ায় বাশার আল আসাদ আর ইরাকে নুরি আল মালিকির সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধরত বিদ্রোহীদের মধ্যে মধ্যপন্থি এবং মৌলবাদী সংগঠনের কর্মী রয়েছে৷ সিরিয়ায় ন্যাশনাল কোয়ালিশনের মতো কিছু মধ্যপন্থি সংগঠনকে সমর্থন দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র৷ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ওবামা বিদ্রোহীদের একাংশকে ৫০০ মিলিয়ন ডলারের আর্থিক সহায়তা দেয়ার বিষয়টি বিবেচনা করে দেখছেন৷
ছবি: Reuters
ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগ
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি জানিয়েছেন, কংগ্রেস বিদ্রোহীদের জন্য ৫০০ মিলিয়ন ডলার আর্থিক সহায়তার প্রস্তাব অনুমোদন করলে তা সিরিয়া এবং ইরাকে দেয়া হবে৷ এই বিনিয়োগ ঝুঁকিপূর্ণ, কেননা, ৫০০ মিলিয়ন ডলারের বড় একটা অংশ যে আইসিস-এর কাছে যাবেনা সে সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার উপায় নেই৷
ছবি: Reuters
কুর্দিরা চায় স্বাধীন কুর্দিস্তান
যুক্তরাষ্ট্র চায় ইরাকের প্রধানমন্ত্রী নুরি আল মালিকি সুন্নি এবং কুর্দিদের অংশিদারিত্বের সরকার গঠন করুন৷ ইরাকের কিছু অংশে কুর্দিদের স্বায়ত্তশাসন রয়েছে৷ কুর্দিরা ‘পেশমেরগা’, অর্থাৎ কুর্দিদের স্বাধিকার আন্দোলনের অংশ হিসেবে আইসিসের বিরুদ্ধে লড়ছে৷ কুর্দিদের মূল লক্ষ্য ইরাকে স্বাধীন কুর্দিস্তান প্রতিষ্ঠা করা৷
ছবি: Reuters
ইরানের ভূমিকা
ইরাকে শিয়া-সুন্নি সংঘাতের মধ্যে জড়াতে চায়না ইরান৷ কিন্তু শিয়া প্রধান দেশ ইরানের সরকার ইরাকের মালিকি সরকারকে সমর্থন দিচ্ছে বলে ধারণা করা হয়৷ নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, আইসিস-বিরোধী যুদ্ধে মালিকি সরকারকে ড্রোন এবং অন্যান্য সমর উপকরণ দিয়ে সহায়তা করছে ইরান সরকার৷
ছবি: Atta Kanare/AFP/Getty Images
এক হাজারেরও বেশি নিহত
সিরিয়ায় বিদ্রোহীদের সমর্থন দিচ্ছে সৌদি আরব৷ ইরাকের প্রধানমন্ত্রী নুরি আল মালিকি মনে করেন, আইসিসকেও মদদ দিচ্ছে সৌদি সরকার৷ ইরাকে চলমান সংঘাতে কমপক্ষে এক হাজার মানুষ নিহত হয়েছে৷ মানবাধিকার সংস্থাগুলো এ জন্য ইরাক সরকার এবং আইসিস-এর কঠোর সমালোচনা করেছে৷
ছবি: Reuters
বাড়ছে শরণার্থী
আইসিসের হামলা শুরুর পর থেকে ইরাকের বিভিন্ন স্থান থেকে অন্তত ১২ লাখ মানুষ ঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন৷ সিরিয়া সংকট শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত আড়াই লাখ সিরীয় স্বায়ত্তশাসিত কুর্দি রাজ্যগুলোতে আশ্রয় নিয়েছে৷ এখন আইসিসের দখল করে নেয়া শহরগুলো থেকে পালিয়ে ইরাকিরাও আসছে৷ ছবিতে খাজাইর চেকপয়েন্ট অতিক্রম করে কুর্দিদের নিয়ন্ত্রিত শহর এরবিলের দিকে যেতে দেখা যাচ্ছে মসুল থেকে আসা ইরাকিদের৷
ছবি: Getty Images
স্বেচ্ছাসেবীরাও নেমেছে যুদ্ধে
প্রধানমন্ত্রী মালিকি জানিয়েছেন, রাশিয়া আর বেলারুশের কাছ থেকে পুরোনো যুদ্ধ বিমান কিনেছে ইরাক৷ আইসিসের বিরুদ্ধে সেগুলো ব্যবহার করা হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি৷ বাড়ছে সমরাস্ত্র৷ বাড়ছে যোদ্ধা৷ স্বেচ্ছাসেবীরাও যোগ দিচ্ছেন আইসিস বিরোধী যুদ্ধে৷
জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি-মুনও নতুন সরকারকে স্বাগত জানিয়েছেন৷ তবে শিগগিরই স্বরাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর মতো গুরুত্বপূর্ণ পদ পূরণ করা উচিত বলে তিনি মন্তব্য করেন৷
এদিকে, আইএস-এর বিরুদ্ধে লড়তে জনমত গড়ে তুলতে সৌদি আরব ও জর্ডানের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হচ্ছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি৷ বুধ ও বৃহস্পতিবার সৌদি আরবের জেদ্দায় তিনি আরব পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে আলোচনায় বসবেন বলে জানা গেছে৷
হোয়াইট হাউস জানিয়েছে প্রায় ৪০টির মতো দেশ আইএস-এর বিরুদ্ধে লড়তে সহায়তা করার কথা জানিয়েছে৷
শিশু আত্মঘাতী হামলাকারী
জাতিসংঘ মহাসচিবের এক বিশেষ প্রতিনিধি লায়লা জেরুগি জানিয়েছেন, শিশুদের আত্মঘাতী বোমা হামলাকারী হিসেবে ব্যবহার করছে আইএস৷ এছাড়া শিশুদের দিয়ে অস্ত্র বহন, কৌশলগত এলাকায় টহল দেয়া ও সাধারণ মানুষদের আটক করার মতো কাজও করানো হচ্ছে৷ শিশুদের কারও কারও বয়স ১৩ বছর বলেও জানান তিনি৷