মোসুলে চলমান সামরিক অভিযানে পাঁচজন জার্মান মহিলাকে আটক করা হয়েছে৷ দৃশ্যত, তারা তথাকথিত জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট-কে সহায়তা করার জন্যই ইরাকে গিয়েছিল৷
বিজ্ঞাপন
গত সপ্তাহে মোসুলের অবরুদ্ধ পুরাতন অংশে আইএস-এর ২০ জন নারী যোদ্ধাকে আটক করা হয়৷ তাদের মধ্যে রাশিয়া, তুরস্ক, ক্যানাডা, লিবিয়া, চেচনিয়া ও পাঁচজন জার্মানির নাগরিক রয়েছে৷ সকলকে পুলিশ হেফাজতে রাখা হয়েছে৷
এক ইরাকি সামরিক কর্মকর্তা জার্মানির ‘ডি ভেল্ট' পত্রিকাকে বলেন যে, সংশ্লিষ্ট মহিলারা আইএস-এর নির্মিত একটি সুড়ঙ্গ প্রণালীর মধ্যে লুকিয়ে ছিল৷ তাদের যেখানে ধরা হয়েছে, সেখানে অস্ত্রশস্ত্র ও বিস্ফোরক বেল্ট ইত্যাদি পাওয়া গিয়েছে যা সম্ভবত ইরাকি সৈন্যদের উপর আক্রমণের জন্য ব্যবহার করা হতো৷ প্রাথমিক বিবরণ অনুযায়ী, ধৃত মহিলারা আইএস-এর পুলিশবাহিনীর হয়ে কাজ করছিল৷
জার্মানির পূর্বাঞ্চল থেকে আসা কিশোরী
‘ডি ভেল্ট' পত্রিকার বিবরণ অনুযায়ী, যে পাঁচজন জার্মান মহিলা মোসুলে ধরা পড়েছে, তাদের মধ্যে জার্মানির স্যাক্সনি রাজ্যের এক ১৬ বছরের কিশোরীও আছে৷ মেয়েটি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিল ও বছর খানেক আগে বাড়ি থেকে উধাও হয়৷ ইতিপূর্বে সে ইন্টারনেটে আইএস সমর্থকদের সংস্পর্শে এসেছিল বলে প্রকাশ৷
দাড়ি-গোঁফ কেটে পালাচ্ছে আইএস
ইসলামিক স্টেট বা আইএস-এর দখল থেকে মসুল মুক্ত হয়েছে আগেই৷ এখন চলছে তাদের পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন করার অভিযান৷ তবে এখন দাড়ি-গোঁফ কেটে মানুষের সাথে মিশে পালাচ্ছে তারা৷ ফলে সাধারণ মানুষকেও পড়তে হচ্ছে ইরাকি বাহিনীর সন্দেহে৷
ছবি: Reuters/E. De Castro
মোসুল ঘেরাও
প্রতিদিনই মুক্ত হচ্ছে মোসুলের নতুন নতুন এলাকা৷ মুক্ত হচ্ছেন শহরটিতে দীর্ঘদিন আটকে থাকা সাধারণ ইরাকিরাও৷ কমান্ডাররা বলছেন, এখন হাতে গোনা দু-তিনশ’ আইএস জঙ্গি বিভিন্ন গোপন আস্তানায় আশ্রয় নিয়ে আছে৷ তারা যাতে পার্শ্ববর্তী সিরিয়ায় পালিয়ে যেতে না পারে, সেজন্য শহর ঘেরাও করা হয়েছে৷
ছবি: Reuters/A. Al-Marjani
জঙ্গি খুঁজতে ড্রোন
আগের মতো আইএসে প্রকাশ্য কোনো আস্তানা মসুলে আর নেই৷ আজ এ বাড়িতে তো কাল ঐ ভবনে, এমন করেই যুদ্ধ চালাচ্ছে অবশিষ্ট জঙ্গিরা৷ ফলে নির্দিষ্ট করে হামলা চালানো বেশ কষ্টকরই হচ্ছে ইরাকি বাহিনীর জন্য৷ এই কাজ সহজ করতে নেয়া হচ্ছে প্রযুক্তির ব্যবহার৷ ড্রোন ব্যবহার করে চিহ্নিত করা হচ্ছে জঙ্গিদের অবস্থান৷ তারপর আক্রমণ৷
ছবি: Reuters/E. De Castro
কারা জঙ্গি?
চারপাশ থেকে ঘেরাও হওয়ায় প্রাণে বাঁচতে আইএস জঙ্গিরাও আশ্রয় নিচ্ছে নতুন কৌশলের৷ ইসলামি কায়দা অনুযায়ী দাড়ি-গোঁফ রাখলেও, এখন সবাই ‘ক্লিন শেভড’৷ যতক্ষণ পারছে যুদ্ধ, হেরে যাওয়ার শঙ্কা দেখলে পোশাক পালটে সাধারণ মানুষের ভিড়ে মিশে যাচ্ছে জঙ্গিরা৷
ছবি: Reuters/A. Saad
নতুন বিপদ আত্মঘাতি নারী
অগ্রসর হতে থাকা ইরাকি বাহিনীর বিরুদ্ধে টিকতে না পেরে আরেক পদ্ধতির আশ্রয় নিয়েছে আইএস জঙ্গিরা৷ নারী জঙ্গিরা বোমা বেঁধে সাধারণ নারীদের সাথে মিশে যাচ্ছে৷ চেষ্টা চালাচ্ছে ইরাকি বাহিনীর কাছাকাছি গিয়ে হামলা চালানোর৷ গেল এক সপ্তাহে এমন বেশকটি হামলায় হতাহতের ঘটনাও ঘটেছে৷
ছবি: Reuters/Stringer
সাধারণের বিপদ
দীর্ঘদিন আইএসের নির্যাতনে জরাজীর্ণ অবস্থা, তা থেকে মুক্তির পরও কমছে না সাধারণ মানুষের ঝামেলা৷ সেই কারণটাও আইএস৷ লুকিয়ে থাকা জঙ্গি খুঁজতে গিয়ে সবাইকেই সন্দেহের তালিকায় রাখছে ইরাকি বাহিনী৷ না থেমে দীর্ঘ পথ হাঁটতে হচ্ছে তাদের৷ একাধিকবার খতিয়ে দেখা হচ্ছে পরিচয়৷ মাঝে মধ্যেই করা হচ্ছে শরীর তল্লাশি৷ রেহাই পাচ্ছেন না শিশু-বুড়োরাও৷
ছবি: Reuters/A. Al-Marjani
শিশুদের জন্য সহায়তা
দীর্ঘদিন ধরে জঙ্গি অধ্যুষিত এলাকায় পৌঁছায়নি কোনো ত্রাণ৷ জরুরি ওষুধ তো দূরের কথা, একেবারেই সাধারণ ঠান্ডার ওষুধও মসুলবাসীর কাছে ছিলো আকাশের চাঁদ৷ তবে দ্রুতই পালটাচ্ছে এই অবস্থা৷ মুক্ত অঞ্চল এবং জঙ্গি এলাকা থেকে পালিয়ে আসা শিশুরা পাচ্ছে বিভিন্ন রোগের টিকা৷ সরকারি-বেসরকারি নানা সংস্থা থেকে মিলছে জরুরি ত্রাণও৷
ছবি: Reuters/A. Al-Marjani
6 ছবি1 | 6
স্যাক্সনি রাজ্যের রাজধানী ড্রেসডেনের প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন যে, অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়েটির বিরুদ্ধে সম্ভাব্য সন্ত্রাসী কার্যকলাপের অভিযোগে অনুসন্ধান চলছিল, কিন্তু সে কোনোরকম উত্তর দিতে অস্বীকার করায় তদন্ত বন্ধ রাখা হয়৷ তবে মেয়েটি জার্মানিতে ফেরার পর তদন্ত আবার চালু হবে বলে মুখ্য কৌঁসুলি লোরেনৎস হাজে ‘ডি ভেল্ট' পত্রিকাকে জানিয়েছেন৷
জার্মানি থেকে ৯০০ জনের বেশি ইসলামপন্থি তথাকথিত ইসলামিক স্টেটকে সাহায্য করার উদ্দেশ্যে সিরিয়া ও ইরাক যাত্রা করেছে বলে ধরে নেওয়া হয়, তাদের মধ্যে একাধিক অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়েও রয়েছে৷
আইএস দখল হারাচ্ছে
মোসুলবাসীদের আশঙ্কা, মোসুল আইএস-এর কবল থেকে মুক্ত হওয়ার পর এখানে অরাজকতার সৃষ্টি হবে, কেননা, আইএস-বিরোধী জোট প্রতিবেশী দেশ সিরিয়ায় আইএস-এর মুখ্য ঘাঁটি রাকা মুক্ত করার দিকে নজর দেবে৷ মোসুলকে মুক্ত করার অভিযানে আন্তর্জাতিক আইন ভঙ্গের অভিযোগ ইতিমধ্যেই শোনা যাচ্ছে৷ মোসুলে যারা ধরা পড়েছে ও পড়ছে, তারা নিরপেক্ষ ও আইনসম্মত বিচার পাবে কিনা, তা আপাতত স্পষ্ট নয়৷ অপরদিকে বিচারের জন্য ধৃত ব্যক্তিদের স্বদেশে পাঠানো হবে কিনা সে বিষয়েও কিছু জানা যায়নি৷
ইসলামিক স্টেটের ভয়ংকর আত্মঘাতী গাড়িবোমা
মোসুল শহর নিয়ন্ত্রণে নেয়ার পর বিপুল পরিমাণ গাড়িবোমা উদ্ধার করেছে ইরাকি বাহিনী৷ কোনটা ছিল বিস্ফোরকভর্তি, আবার কোনটা প্রস্তুতির প্রাথমিক পর্যায়ে৷ সেগুলো এখন সাজিয়ে রাখা হয়েছে শহরটির ফেডারেল পুলিশ দপ্তরের সামনে৷
ছবি: Reuters/T. Al-Sudani
গাড়ি বনাম গাড়িবোমা
সাধারণ মালবাহী ট্রাক, কোনো কোনো ক্ষেত্রে যাত্রিবাহী গাড়িও ব্যবহার করা হতো গাড়িবোমা তৈরির জন্য৷ ভেতরের যন্ত্রপাতি ঠিক থেকে বাইরেটাকে মুড়ে দেয়া হতো পুরু ইস্পাতে৷ উদ্দেশ্য ছিল বন্দুকের গুলি থেকে ভেতরের আত্মঘাতী চালককে রক্ষা করা৷
ছবি: Reuters/T. Al-Sudani
এড়াতে হবে ড্রোন
জঙ্গিদের অবস্থান সম্পর্কে জানতে প্রায়ই চালকবিহীন বিমান বা ড্রোন দিয়ে নজরদারি চালাতো মার্কিন সেনারা৷ গন্তব্যে পৌঁছানোর আগেই যাতে ধরা না পড়তে হয়, সেজন্য গাড়িগুলোকে রং করা হতো সাধারণ গাড়ির মতো৷ কখনও লাল রং, কখনও সাদা দিয়ে ঢেকে দেয়া হতো ইস্পাতের আবরণ৷
ছবি: Reuters/T. Al-Sudani
অস্বাভাবিক গতি
গাড়ির যন্ত্রপাতিতে কিছুটা পরিবর্তন এনে সেগুলোকে দেয়া হতো অস্বাভাবিক গতির সুবিধা৷ পাশাপাশি, বেশিরভাগ গাড়িরই সামনের অংশ এমনভাবে তৈরি করা হতো, যাতে যে কোনো বাধা ভেঙে গাড়িগুলো এগোতে পারে সামনে৷
ছবি: Reuters/T. Al-Sudani
কী ধরনের বিস্ফোরক?
বোমা তৈরিতে ব্যবহার করা হয় নানা ধরনের রাসায়নিক পদার্থ৷ সবচেয়ে বেশি গাড়িতে পাওয়া গেছে ক্লোরিন গ্যাসের উপস্থিতি৷
ছবি: Reuters/T. Al-Sudani
প্রচণ্ড ধ্বংস ক্ষমতা
ব্যাপক আকারে বিস্ফোরণ ঘটানোর ক্ষমতা আছে এই গাড়ি বোমার৷ এক একটি গাড়িতে যে পরিমাণ বিস্ফোরক মজুদ করা যায়, তাতে দুই তিনটে বাড়ি উড়িয়ে দেয়া সম্ভব বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা৷
ছবি: Reuters/T. Al-Sudani
আরো গাড়িবোমার মজুদ
মোসুল শহরে ইরাকি সেনা যুদ্ধ শুরু করার পর থেকে স্নাইপার আর গাড়িবোমা হামলাই ছিল আইএস জঙ্গিদের মূল প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা৷ ইরাকি বাহিনী আশংকা করছে এখন শহরের বিভিন্ন ভবনের গ্যারেজে বিপুল পরিমাণ গাড়িবোমা থাকতে পারে৷
ছবি: Reuters/T. Al-Sudani
গাড়িবোমার প্রদর্শনী!
উদ্ধার করা গাড়িবোমাগুলো রাখা হয়েছে মোসুলে ইরাকি পুলিশের সদরদপ্তরের সামনে৷ যে কেউ চাইলেই দেখে আসতে পারেন ভয়ংকর সেই গাড়িগুলো৷ তবে পুলিশের নিয়মিত পাহারা অবশ্য থাকছেই৷