ইরাকের বাগদাদে মার্কিন ড্রোন হামলায় ইরানি জেনারেলসহ ৬ জন নিহতের পর দেশটি থেকে বিদেশি সৈন্য সরাতে প্রস্তাব পাস করলো ইরাকের পার্লামেন্ট৷
বিজ্ঞাপন
বিদেশি কোনো সেনাবাহিনী যাতে ইরাকের মাটি, বায়ু বা জল ব্যবহার করতে না পারে সে বিষয়ে ব্যবস্থা নিতেও সরকারকে আহ্বান জানিয়েছেন এমপিরা৷
ইরাকের পার্লামেন্টের বিশেষ অধিবেশনে পাস হওয়ায় প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ‘‘বিজয় অর্জিত হওয়ায় ইসলামিক স্টেটের বিরুদ্ধে লড়াই করা আন্তর্জাতিক জোটের সহায়তা আর প্রয়োজন নেই৷''
পার্লামেন্টে পাস হওয়া রেজল্যুশন আইনের মতো মানতে বাধ্য নয় সরকার৷ কিন্তু এই প্রস্তাবে সকলের সায় থাকায় তা কার্যকর হবে বলে ধারণা করছেন বিশ্লেষকরা৷ দেশটির তত্ত্বাবধায়ক প্রধানমন্ত্রী আদেল অবদুল মাহদি অধিবেশন শুরুর আগে নিজেই পার্লামেন্টকে আহ্বান জানিয়েছেন ইরাকে বিদেশি সেনার উপস্থিতি বন্ধে কার্যকর ভূমিকা রাখার৷
মাহদি বলেন, ‘‘আমরা এর ফলে অভ্যন্তরীণ ও বাইরের নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে পারি, কিন্তু এটিই হবে ইরাকের জন্য সবচেয়ে ভালো সিদ্ধান্ত৷''
এদিকে, নানা বিষয়ে বিরোধী অবস্থানে থাকলেও বাগদাদের হামলার পর ইরাক থেকে মার্কিন সেনা বহিষ্কারের বিষয়ে একই ধরনের দাবি উঠেছে শিয়া সম্প্রদায়ের নানা অংশ থেকে৷ পার্লামেন্ট অধিবেশনের আগে আইন কমিটি এবং পার্লামেন্ট সদস্য শিয়া নেতা আম্মার আল-শিবলি বলেন, ‘‘ইসলামিক স্টেটকে পরাজিত করার পর এখন আর মার্কিন বাহিনীর উপস্থিতির কোনো প্রয়োজন দেখছি না৷ আমাদের নিজেদের সামরিক বাহিনী রয়েছে, দেশের নিরাপত্তা দিতে তারাই যথেষ্ট৷''
কে ছিলেন কাসিম সোলাইমানি
কাসিম সোলাইমানি৷ ইরানিদের কাছে তিনি নায়কোচিত এক বীর, যার জনপ্রিয়তা এমনকি প্রেসিডেন্ট রুহানির চেয়েও বেশি৷ অন্যদিকে পশ্চিমাদের কাছে তিনি জঙ্গী গোষ্ঠীগুলোর মদদদাতা৷ সোলাইমানি কেন এত আলোচিত দেখুন ছবিঘরে৷
ছবি: mojnews
তারকাখ্যাতি
ইরানের জনগনের কাছে কাসিম সোলাইমানির ছিল তারকাখ্যাতি৷ ইনস্টাগ্রামে সেনা বাহিনীর এই জেনারেলের রয়েছে বিপুল অনুসারী৷
ছবি: FARS
পর্দায় সোলাইমানি
২০০৩ সালে ইরান সিরিয়া যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার পর থেকে আলোচনায় কাসিম সোলাইমানি৷ এসময় যুদ্ধময়দানের ছবিতে, তথ্যচিত্র, এমনকি মিউজিক ভিডিও আর অ্যানিমেটেড চলচ্চিত্রেও দেখা যায় তাকে৷
ছবি: Khamenei.ir
যুদ্ধময়দানে
গত অক্টোবরে সোলাইমানির বিরল একটি সাক্ষাৎকার প্রচারিত হয় ইরানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে৷ জানান, ২০০৬ সালে তিনি লেবাননে ইসরায়েল-হেজবুল্লাহ যুদ্ধের তদারকি করেছেন৷
ছবি: ILNA
আঞ্চলিক প্রভাব বিস্তারের স্থপতি
সোলাইমানির সমর্থকরা মনে করেন সম্প্রতি ইরানের আঞ্চলিক ক্ষমতা বিস্তারের মূল স্থপতি ছিলেন তিনি৷ তার নেতৃত্বেই মধ্যপ্রাচ্যে জিহাদী বিরোধী অভিযানগুলো পরিচালনা করেছে ইরান৷ ইরাক, সিরিয়া সহ অন্যদেশগুলোতে কূটনৈতিক তৎপরতাও চালিয়েছেন তিনি৷
ছবি: ABNA24.com
শিয়াদের জেমস বন্ড?
২০১৭ সালে টাইম ম্যাগাজিনের সবচেয়ে প্রভাবাশালী ব্যক্তিদের তালিকায় জায়গা করে নেন তিনি৷ সাবেক সিআইএ অ্যানালিস্ট কেনেথ পোলাক তার সম্পর্কে সেখানে লিখেছেন, ‘‘মধ্যপ্রাচ্যের শিয়াদের কাছে কাসিম সোলাইমানি একাধারে জেমস বন্ড, আরউইন রোমেল এবং লেডি গাগার সম্মিলিত এক চরিত্র৷’’
ছবি: Farsnews
পশ্চিমাদের চক্ষুশূল
কেনেথ পোলাক আরো লিখেছেন, ‘‘পশ্চিমাদের কাছে তিনি ইরানের ইসলামি বিপ্লব অন্যদেশগুলোতে রপ্তানি করা, সন্ত্রাসীদের সহযোগিতা দেয়া, পশ্চিমাপন্থি সরকারদের সর্বনাশ করা আর বিদেশের মাটিতে যুদ্ধে ইরানের নেতৃত্ব দেয়ার জন্য দায়ী এক ব্যক্তি৷’’ পশ্চিমা নেতারা লেবাননে হেজবুল্লাহ ও ফিলিস্তিনের হামাসের মত জঙ্গীগোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে ইরানের সম্পর্কের কেন্দ্রীয় চরিত্র বলেও মনে করেন তাকে৷
ছবি: picture alliance / AA
রাজনীতির ময়দানে
অর্থনৈতিক সঙ্কট, দেশজুড়ে অসন্তোষ আর বাহির থেকে যুক্তরাষ্ট্রের চাপের প্রেক্ষিতে রাজনীতিতে আসার জন্য তার প্রতি আহবান জানিয়েছিল অনেক ইরানী৷ তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দাড়াবেন এমন গুঞ্জনও শোনা গিয়েছিল৷ যদিও পরবর্তীতে তা নাকচ করে দেন কাসিম৷
ছবি: FARS
ইরাকের সরকার গঠনে
২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্র যখন আফগানিস্তানে হামলা চালায় তখন ইরানের ‘কুদস ফোর্সের’ নেতৃত্বে চলে আসেন তিনি৷ এই বাহিনীর বিভিন্ন অভিযানে অংশ নিয়েছেন তিনি৷ ২০১৮ সালে ইরাকের সরকার গঠনে তার ভূমিকাও এখন আর অজানা নয়৷
ছবি: Fars
রুহানির চেয়েও জনপ্রিয়
২০১৮ সালে ইরান পোল এবং ম্যারিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এক জরিপে দেখা সোলাইমানির জনপ্রিয়তার হার ছিল ৮৩ ভাগ৷ তার চেয়ে পেছনে ছিলেন প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভাদ জারিফও৷
ছবি: Khamenei.ir
9 ছবি1 | 9
তবে আরেক জনপ্রিয় শিয়া নেতা মুকতাদা আল সদর পার্লামেন্টে পাস হওয়া বিবৃতিকে খুব ‘দুর্বল' বলে উল্লেখ করেছেন৷ এ বিষয়ে সব মিলিশিয়া গ্রুপকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি৷
পার্লামেন্টে পাঠানো লিখিত এক বক্তব্যে সদর বলেন, ‘‘মার্কিন সেনাবাহিনীর ইরাকের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘনের প্রতিবাদে এই প্রতিক্রিয়া খুব দুর্বল৷'' মার্কিন বাহিনীর সঙ্গে করা নিরাপত্তা চুক্তি অবিলম্বে বাতিল, মার্কিন দূতাবাস বন্ধ, সব মার্কিন সেনা বহিষ্কার এবং মার্কিন সরকারের সঙ্গে সব ধরনের যোগাযোগ বন্ধের দাবি জানিয়েছেন তিনি৷
পাশাপাশি, ইরাক এবং ইরাকের বাইরের ‘প্রতিরোধ' যোদ্ধাদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে ‘আন্তর্জাতিক সেনবাহিনী' গঠন করার আহ্বানও জানিয়েছেন মুকতাদা আল সদর৷
কয়েক দশকের শত্রুতা সত্ত্বেও ২০১৪ সাল থেকে আইএসবিরোধী যুদ্ধে মার্কিন সেনাদের সঙ্গে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করেছে ইরান সমর্থিত মিলিশিয়া৷ এখনও ইরাকে প্রায় পাঁচ হাজার মার্কিন সেনা মোতায়েন রয়েছে৷