1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ইরাকে মানসিক বিপর্যয়ে শিশুরা

২৬ জুলাই ২০১৭

ইসলামিক স্টেট বা আইএস-এর জঙ্গি কার্যক্রম এবং মোসুল যুদ্ধে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শিশুরা৷ খাদ্যের অভাবে তারা ভুগছে অপুষ্টিতে৷ সহিংসতার যে রূপ তারা দেখেছে, তা ভয়ংকর চাপ ফেলেছে মনোজগতেও৷

Irak - Lager Salamya für interne Flüchtlinge nähe Mossul
ছবি: DW/S. Salim

‘‘দেখো, সে এখন হাঁটতে পারছে!'' ৪৩ বছরের হানান মোহাম্মদ তার দু'বছরের শিশুকে দুই পায়ের ওপর দাঁড় করানোর চেষ্টা করছিলেন৷ মাত্র কিছুদিন আগেই মোসুল থেকে পালাতে পেরেছেন হানান৷ যুদ্ধের কারণে তার আগের কয়েক সপ্তাহ খাবার এবং পানির তীব্র অভাবে পড়তে হয় তাঁদের৷

তিনি বলেন, ‘‘দায়েশের (আইএসকে স্থানীয়ভাবে এ নামেও ডাকা হয়) কারণে আমাদের সবসময় ক্ষুধার্ত থাকতে হতো৷ কেনার মতো কিছু পাওয়া যেত না, পাওয়া গেলেও তার দাম হতো আকাশচুম্বী৷'' এ কারণেই তিনি তাঁর সন্তানদের ঠিকমতো খাবার দিতে পারেননি৷ অপুষ্টিতে তাঁর ছয় মাসের এক শিশু মারাও গিয়েছে৷ তার ছেলে হাঁটা শুরু করলেও, একই কারণে এক সময় হাঁটা বন্ধ করে দেয়৷

দুই ছোট শিশুকে নিয়ে সালামিয়াতে আশ্রয় নিয়েছেন হানান৷ মোসুল থেকে পালিয়ে আসা ইরাকিদের পুনর্বাসনে ক্যাম্প খোলা হয়েছে এখানে৷

ক্যাম্পে আশ্রয় নেয়া অনেকের সাথে আইএসের যোগাযোগ আছে৷ আইএস জঙ্গিদের সাথে সম্পর্ক থাকায় হানান তাঁর স্বামীকে তালাক দিয়েছেন৷ এর কিছুদিন পরেই এক বোমা হামলায় মারা যান হানানের স্বামী৷

ডিভোর্সের পর হানান তাঁর সন্তানদের নিয়ে তাঁর মা-বাবার সাথে থাকতেন৷ কিন্তু পরে আইএস তাদের সেখান থেকে সরিয়ে নেয় এবং মানবঢাল হিসেবে ব্যবহার করা শুরু করে৷ সেখানে কোনো খাবার বা পানি ছিল না৷ প্রতিনিয়ত চারপাশে বোমা পড়তে থাকতো৷ কেউ পালাতে চাইলে আইএস জঙ্গিরা তাদের হত্যা করতো৷

ছবি: DW/S. Salim

বড়দের মতোই শিশুরাও যুদ্ধের কারণে সমান এবং অনেকক্ষেত্রেই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে৷ ক্যাম্পটিতে শত শত শিশু অপুষ্টিতে ভুগছে বলে জানালেন দাতা সংস্থা সামারিটান পার্স-এর কেলি নাউ৷ এই ক্যাম্পে শিশুদের বিশেষ খাবার দেয়া হয়৷ মাদের বোঝানো হয় বুকের দুধ খাওয়ানোর উপকারিতা৷ ইরাকের বেশিরভাগ নারীর ধারণা, ৪০ দিন পর শিশুকে বুকের দুধের চেয়ে কেনা দুধ খাওয়ানো ভালো৷

মোসুল থেকে আসা শিশুদের শতকরা ৫ ভাগ ভুগছে অপুষ্টিতে৷ এদের মধ্যে কারো কারো অবস্থা আশঙ্কাজনক৷ হানান মোহাম্মদের মতো অনেক মাই তাঁদের সন্তান হারিয়েছে৷ নদী অথবা কুয়া ছাড়া আর কোনো পানি সহজলভ্য ছিল না৷ পাওয়া যেত না গুড়ো দুধও৷ ‘‘এখানে আমি এমন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছি, যা আমাকে সুদান বা ইয়েমেনেও মোকাবেলা করতে হয়নি'', বলছিলেন নাউ৷

শিশুদের আচরণ শিশুসুলভ নয়

কিন্তু অপুষ্টিই মোসুলের শিশুদের একমাত্র শত্রু নয়৷ যুদ্ধের সহিংসতা, হত্যা, বোমা হামলার ক্ষত এখনও বয়ে বেড়াচ্ছে তারা৷ আইএস-এর মোসুল দখলের পর গত তিন বছরে প্রায় সাড়ে ছয় লাখ শিশু এই ভয়াবহতার শিকার হয়েছে বলে এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন ইরাকে ইউনেস্কোর ডেপুটি প্রতিনিধি৷

মোসুল যুদ্ধের শেষ দিকে প্রায়ই দেখা যেতো শিশুরা একা একাই চিকিৎসা কেন্দ্রে চলে আসছে৷ এদের কেউ কেউ অনেকদিন ধ্বংসস্তূপের নীচে চাপা পড়ে ছিল, কেউ আবার মৃত্যুর গন্ধে ছেড়েই দিয়েছিল খাবার৷

শিশুদের আছে অন্য রকম বিপদও৷ বেশ কিছু ক্ষেত্রে দেখা গেছে স্বামী যুদ্ধে নিহত হওয়ার পর আইএস-এর সাথে সম্পর্ক চুকিয়ে নতুন জীবন শুরু করতে চান মা৷ আর এ জন্য অতীত মুছে ফেলতে শিশুকে ফেলে রেখে যান ক্যাম্পের কাছাকাছি৷ সিরিয়া এবং ইরাকে আইএসবিরোধী মনোভাব যত তীব্র হচ্ছে, এমন অনেকশিশুর ভাগ্যও হচ্ছে দোদুল্যমান৷ আইএস জঙ্গিদের পরিবারের সাথে এ সব শিশুদেরও রাখা হচ্ছে একটি বিশেষ ক্যাম্পে৷

ছবি: picture-alliance/AP Photo/B. Janssen

তিন বছর আগে অপহরণ হওয়া ইয়াজিদি শিশুদেরও উদ্ধার করা হয়েছে৷ এদের সবাই এখনও ভয়ংকর আতঙ্কিত৷ শারীরিক এবং মানসিক এই বিপর্যয় কাটিয়ে উঠতে শিশুদের বেশ কিছু সময় লাগবে বলে আশংকা করছেন চিকিৎসকরা৷

সবচেয়ে ভয়ংকর ব্যাপার হলো, এই শিশুদের আচরণ ঠিক শিশুদের মতো নয়৷ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তারা ‘‘রোবটের মতো আচরণ করে'', বলছিলেন সেভ দ্য চিলড্রেনের গবেষক এইলিন ম্যাককার্থি৷

বেশিরভাগ শিশুই পরিবারের সদস্য হারিয়েছে, অনেকেই দুঃস্বপ্ন দেখে এবং মাঝেমধ্যেই আক্রমণাত্মক আচরণ করে৷ শিশুদের সাথে নানারকম খেলা খেলে তাদের ওপর এর প্রভাব বিশ্লেষণ করা হচ্ছে৷ একইসাথে শিশুদের বাবা-মাকেও মানসিক সহায়তা দেয়া হচ্ছে, যাতে তাঁরাও তাঁদের সন্তানকে সাহায্য করতে পারেন৷

দ্রুত জরুরি চিকিৎসা ব্যবস্থার ওপর জোর দিয়েছেন ম্যাককার্থি৷ তা না হলে একসময় এই শিশুদের হতাশা থেকে শুরু করে অন্যান্য স্বাস্থ্যঝুঁকিতেও পড়তে হতে পারে বলে আশংকা তার৷ এমনকি কোনো কোনো ক্ষেত্রে পরবর্তী এই শিশুরা বড় হলে তাদের পরবর্তী প্রজন্মেও ছড়াতে পারে এই ট্রমা৷

এই সমস্যার সমাধানে সেভ দ্য চিলড্রেন কাজ করছে ইরাকি সরকারের সাথে৷ তবে ম্যাককার্থি বলছিলেন, এক্ষেত্রে দেখা দিয়েছে মানসম্মত থেরাপিস্টের অভাব৷

কিন্তু গবেষকরা বলছেন, যদি ইরাকে চলমান সংঘর্ষের মূল কারণ চিহ্নিত ও সমাধান না করা হয়, তাহলে এমন ঘটনা অনেকের সাথেই ঘটতে থাকবে৷ মানসিক এই রোগ, প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে ছড়িয়ে পড়লে পুরো সমাজই এতে আক্রান্ত হতে পারে বলেও আশংকা তাদের৷

জুডিট নয়রিংক/এডিকে

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

বাংলাদেশ