ইরাকের কুর্দিস্তান এলাকায় মার্কিন ঘাঁটি লক্ষ্য করে লাগাতার রকেট হানা। মৃত এক, আহত পাঁচ।
বিজ্ঞাপন
সোমবার একের পর এক রকেট আছড়ে পড়ল কুর্দিস্তানে। এর ফলে একজন বিদেশি কন্ট্রাক্টরের মৃত্যু হয়েছে। এক মার্কিন সেনা সহ আহত পাঁচজন। মার্কিন জোট বাহিনীর মুখপাত্র জানিয়েছেন, ''সোমবার কুর্দিস্তানের রাজধানী ইরবিলে একের পর এক রকেট আছড়ে পড়েছে। তাতে একজন মারা গেছেন।''
মুখপাত্র জানিয়েছেন, যিনি রকেট হানায় মারা গেছেন, তিনি একজন কন্ট্রাক্টর। তিনি ইরাকি নন। মার্কিনও নন। তবে তিনি কোন দেশের নাগরিক তা জানানো হয়নি। যে পাঁচজন আহত হয়েছেন, তাঁরা সকলেই মার্কিন নাগরিক। চারজন কন্ট্রাক্টর ও একজন সেনা।
অন্তত তিনটি রকেট ইরবিলের অসামরিক বিমানবন্দরের কাছে আছড়ে পড়েছে। এখানেই জোট বাহিনীর ঘাঁটি। আইএসের সঙ্গে লড়াই করার জন্য তাঁরা এখানে আছে। এরপরই নিরাপত্তার জন্য ইরবিল বিমানবন্দর বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। কোনো বিমান ওঠানামা করছে না।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তরফে জানানো হয়েছে, স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে নয়টা নাগাদ রকেট হামলা শুরু হয়। এই রকেট ছোড়া হয় দক্ষিণের কিরকুক এলাকা থেকে। কয়েকটি রকেট শহরতলির বসতি এলাকায় পড়ে। কয়েকটি গাড়ি ও বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বাসিন্দাদের ঘরের ভিতরে থাকতে বলা হয়েছে। তদন্ত চলছে।
কুর্দি কারা, কোথায় থাকে?
কুর্দিশ ইন্সটিটিউট অফ প্যারিসের ২০১৭ সালের হিসেবে বিশ্বে কুর্দিদের আনুমানিক সর্বোচ্চ সংখ্যা সাড়ে চার কোটির বেশি৷ আর্মেনিয়া, ইরাক, ইরান, সিরিয়া ও তুরস্কে বেশিরভাগ কুর্দির বাস৷
ছবি: Reuters/A. Lashkari
কুর্দির সংখ্যা ও ধর্ম
কুর্দিশ ইন্সটিটিউট অফ প্যারিসের ২০১৭ সালের হিসেবে বিশ্বে কুর্দিদের আনুমানিক সর্বোচ্চ সংখ্যা সাড়ে চার কোটির বেশি৷ তাদের বেশিরভাগই সুন্নি মুসলমান৷ বাকিরা শিয়া, অ্যালেভিজম, ইয়াদিজম, ইয়ারসানিজমসহ অন্যান্য ধর্মের অনুসারী৷ কুর্দিদের ভাষা অনেকটা ফার্সির মতো৷
ছবি: AFP/D. Souleiman
স্বাধীনতার প্রায় কাছাকাছি
অটোমান সাম্রাজ্যের শেষ দিকে ১৮৯০ দশকে কুর্দি জাতীয়তাবাদ শক্তিশালী হয়ে উঠেছিল৷ প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ১৯২০ সালে স্বাক্ষরিত এক চুক্তিতে কুর্দিদের স্বাধীনতা দেয়ার অঙ্গীকার করা হয়েছিল৷ কিন্তু মাত্র তিন বছর পরই সেই চুক্তি ছিড়ে ফেলেন তুর্কি নেতা কামাল আতাতুর্ক৷ এরপর ১৯২৪ সালে অনুমোদন পাওয়া আরেক চুক্তির মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যে সৃষ্টি হওয়া দেশগুলোর মধ্যে কুর্দিদের আবাসস্থল ভাগ হয়ে যায়৷
ছবি: Getty Images/AFP/D. Souleiman
যেখানে থাকে
বর্তমানে বেশিরভাগ কুর্দির বাস আর্মেনিয়া, ইরাক, ইরান, সিরিয়া ও তুরস্কে৷ সেসব দেশে তারা মাঝেমধ্যে স্বশাসনের দাবি তুলে ধরে৷ এছাড়াও বিশ্বের অনেক দেশে কুর্দিরা বাস করেন৷
ছবি: Getty Images/C. Court
সিরিয়া
আরব বসন্ত শুরুর আগে সিরিয়ার জনসংখ্যার ৮-১০ শতাংশ ছিল কুর্দি৷ ইসলামিক স্টেটের বিরুদ্ধে লড়তে তাদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র৷ আর সিরিয়ার সরকার মূলত ব্যস্ত ছিল সুন্নি আরব বিদ্রোহীদের মোকাবিলা করতে৷ ফলে একসময় কুর্দিরা সিরিয়ার প্রায় এক-চতুর্থাংশ এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিতে সক্ষম হয়৷ তবে সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র সিরিয়ার কুর্দি এলাকা থেকে সৈন্য সরিয়ে নেয়ার ঘোষণা দিলে তুরস্ক সেখানে হামলা শুরু করেছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/D. Souleiman
তুরস্ক
তুরস্কের মোট জনসংখ্যার ২০ শতাংশ কুর্দি৷ স্বশাসনের দাবিতে ১৯৮৪ সালে সরকারের বিরুদ্ধে অস্ত্র তুলে নেয় কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টি, পিকেকে৷ সেই থেকে সংঘাতে প্রায় ৪০ হাজার জন প্রাণ হারিয়েছেন৷ যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও তুরস্ক পিকেকে-কে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে বিবেচনা করে৷ তুর্কি প্রেসিডেন্ট এর্দোয়ান অবশ্য কুর্দি ভাষা ব্যবহারের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছেন৷
ছবি: Getty Images/AFP/N. Al-Khatib
ইরাক
উত্তরাঞ্চলের তিন রাজ্যে কুর্দিদের বাস৷ মোট জনসংখ্যার প্রায় ১৫-২০ শতাংশ৷ ১৯৮০-র দশকে সাদ্দাম হোসেন কুর্দিদের বিরুদ্ধে রাসায়নিক গ্যাস ব্যবহার করেছিলেন৷ ২০১৪ সালে আইএস ইরাকের একটি অংশ দখল করলে কেন্দ্রীয় সরকার দুর্বল হয়ে পড়ে৷ সেই সুযোগ কির্কুকের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিয়েছিল কুর্দিরা৷ পরে ২০১৭ সালে স্বাধীনতার দাবিতে গণভোটের আয়োজন করে ব্যর্থ হয় তারা৷ উলটো বাগদাদের কাছ থেকে প্রতিশোধের শিকার হয় কুর্দিরা৷
ছবি: picture-alliance/AP/K. Mohammed
ইরান
ইরানের জনসংখ্যার প্রায় ১০ শতাংশ কুর্দি৷ তুরস্কের পিকেকে সংগঠনের অনুসারী ইরানের ‘পার্টি অফ ফ্রি লাইফ অফ কুর্দিস্তান’এর বিরুদ্ধে সামরিক শক্তি নিয়োগ করা হয়েছিল৷ সংগঠনটি ইরানের কুর্দিদের জন্য আরও বেশি সায়ত্ত্বশাসনের দাবি জানিয়েছিল৷ ইরানের কুর্দিরা বৈষম্যের শিকার ও তাদের নেতাদের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড, এমনকি মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয় বলে মানবাধিকার সংস্থাগুলো অভিযোগ করে থাকে৷
ছবি: IRNA
7 ছবি1 | 7
ইরাকের প্রেসিডেন্ট বলেছেন, এটা জঘন্য সন্ত্রাসবাদী কাজ। কুর্দিস্তানের প্রধানমন্ত্রী বারজানি এই ঘটনার নিন্দা করেছেন।
গত কয়েক মাসের মধ্যে মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোট বাহিনীর উপর এটাই সব চেয়ে বড় হানা। পাঁচ মাস পর আবার ইরবিল বিমানবন্দর আক্রান্ত হলো। দুই মাস পরে আবার জোট বাহিনীর উপর আক্রমণ শানানো হলো। সারায়া আউলিয়া আল-দাম নামে একটি গোষ্ঠী এই আক্রমণের দায় স্বীকার করেছে। ইরাকে মার্কিন বাহিনীর উপস্থিতির বিরুদ্ধে এই আক্রমণ বলে জানানো হয়েছে। এই ধরনের বেশ কিছু গোষ্ঠী ইরাকে গজিয়ে উঠেছে। মার্কিন ও ইরাকি বাহিনীর মতে, এই গুলি ইরানের মদতপুষ্ট গোষ্ঠী।