ইরাকে টানা তৃতীয়দিনের মতো জনঅসন্তোষ চলছে৷ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর বড় আকারের অভিযান সত্ত্বেও দেশটির প্রধানমন্ত্রী আদেল আব্দুল-মাহদির বিরুদ্ধে জনগণের আন্দোলন অব্যাহত রয়েছে৷
বিজ্ঞাপন
চাকুরি বাড়ানো, জনসেবার মানোন্নয়ন আর সীমাহীন দুর্নীতি রোধের দাবিতে আন্দোলনরত ইরাকিদের উপর বুধবার দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী গুলিবর্ষণ ও কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করলে অন্তত সাত ইরাকি নিহত ও সাতশ'রও বেশি আহত হন৷ বৃহস্পতিবার শেষ খবর পাওয়া অবধি প্রতিবাদে অংশ নেয়া দুই ব্যক্তি প্রাণ হারিয়েছেন৷ গত এক বছরের বেশি সময়ের মধ্যে বাগদাদে সংঘটিত সবচেয়ে বড় জনবিদ্রোহ এটি৷ প্রধানমন্ত্রী আদেল আব্দুল-মাহদি পরিস্থিতি শান্ত করতে বিক্ষোভকারীদের কোনো দাবি মেনে নেয়ার কোন ইঙ্গিত দেননি৷
নাগরিকত্ব এবং রাষ্ট্রহীন মানুষের ঠিকানা
বিশ্বে এক থেকে দেড় কোটি মানুষ দেশহীন৷ বঞ্চিত মৌলিক অধিকার থেকে৷ টিকে আছে কোনোরকম৷ চলুন দেখি, কোথায় আছে ঠিকানহীন মানুষ৷
ছবি: Getty Images/AFP/D. Sarkar
বাংলাদেশ/মিয়ানমার
১৯৮২ সালে বৌদ্ধ প্রধান মিয়ানমারে নাগরিকত্ব নিয়ে একটি আইন পাশ হয়৷ আর তাতেই নাগরিকত্ব হারায় মুসলিম প্রধান রোহিঙ্গারা৷ জাতিগত সহিংসতার শিকার হয়ে অনেক রোহিঙ্গা বাস্তুচ্যুত হন৷ রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের শিকার রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয় মানবিক বাংলাদেশ৷ জনসংখ্যার চাপে থাকা ছোট্ট দেশটিতে প্রায় দশ লাখ রোহিঙ্গা বসবাস করছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/E. Jones
আইভরি কোস্ট
ছয় লাখ ৯২ হাজার ঠিকানা বিহীন মানুষকে ঠাঁই দিয়েছে আইভরি কোস্ট৷ বুরকিনা ফাসো, মালি, ঘানা থেকে এই লোকগুলো এসছে আইভরি কোস্টে৷ দেশটির কফি এবং তুলা চাষের সঙ্গে জড়িয়ে কোনোরকম দিন যাপন করছে নাগরিক সুবিধা বঞ্চিত এসব মানুষ৷ দেশটির মোট জনসংখ্যার এক চতুর্থাংশ বিদেশি নাগরিক৷ যারা এখন বাস্তুচ্যুত৷
ছবি: Benoit Matsha-Carpentier/AFP/Getty Image
থাইল্যান্ড
চার লাখ ৭৯ হাজার রাষ্ট্রহীন মানুষের বসতি থাইল্যান্ডে৷ পাহাড়ি নৃগোষ্ঠী ইয়াও, হ্যামং এবং কারেন সম্প্রদায়ের মানুষ এরা৷ মিয়ানমার এবং লাওস সীমান্তবর্তী পর্বত এলাকায় তাদের অস্থায়ী আবাস৷
ছবি: Getty Images/AFP/N. Asfouri
ইস্তোনিয়া/লাটভিয়া
সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে বাল্টিক রাষ্ট্র গঠন হলে, কপাল পোড়ে অন্তত দুই লাখেরও বেশি মানুষের৷ কারণ তাদের আর কোনো ঠিকানা নেই, কোনো বসতি নেই৷ তাদের দুই লাখ ২৫ হাজার আছেন লাটভিয়াতে আর ৭৮ হাজার আছেন ইস্তোনিয়ায়৷
ছবি: Reuters/I. Kalnins
সিরিয়া
১৯৬২ সালের কথা৷ আরবকরণের প্রক্রিয়ায় বলি হয়ে, নাগরিকত্ব হারান কুর্দরা৷ গৃহযুদ্ধের আগে অন্তত তিন লাখ কুর্দ হয়ে পড়ে দেশহীন৷ জাতিসংঘের হিসেব মতে, এখনও সিরিয়ায় নাগরিকসুবিধা বঞ্চিত হয়ে বাস করছে ১ লাখ ৬০ হাজার কুর্দ৷ অনেকে বিভিন্ন দেশে পাড়ি জমিয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/Xinhua/M. Abu Ghosh
কুয়েত
১৯৬১ সালে স্বাধীনতা এলেও নাগরিক স্বীকৃতি জোটেনি যাযাবর জীবনে অভ্যস্ত বেদুঈনদের৷ জাতিসংঘের তথ্য মতে, ৯২ হাজার বেদুঈন আছে কুয়েতে৷ যারা বিনামূল্যে শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা এবং চাকরির মতো নাগরিক সুবিধা বঞ্চিত৷
ছবি: AP
ডমিনিকান রিপাবলিক
অবৈধ অভিবাসন ঠেকাতে, ২০১৩ সালে জাতীয়তা বিষয়ক আইনে পরিবর্তন আনার পর, আদালত থেকে রুল জারি করা হয়৷ আর তাতেই অনেকেই হয়ে যান দেশহীন৷ এমনকি, হাইতি থেকে আসা অনেক মানুষ ডমিনিকে জন্ম নিলেও মেলেনি নাগরিকত্ব৷ জাতিসংঘের ২০১৫ সালের হিসেব বলছে, এখানে রাষ্ট্রহীন মানুষের সংখ্যা ১ লাখ ৩৪ হাজার৷
ছবি: picture alliance/dpa
ইরাক
নাগরিক সুযোগ বঞ্চিত সাড়ে ৪৭ হাজার মানুষের আবাস ইরাক৷ এদের মধ্যে আছেন, ঐতিহাসিকভাবে ইরাক-ইরান সীমান্তে বসবাসকারী কুর্দ, ফিলিস্তিনের শরণার্থী আর বেদুঈনরা৷
ছবি: picture-alliance/AP/K. Mohammed
ইউরোপ
ভারতীয় বংশোদ্ভুত ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী রোমা৷ এই সম্প্রদায়ের হাজার দশেক মানুষের বাস, মধ্য ও পূর্ব ইউরোপে৷ তারাও আছেন নাগরিকত্ব সংকটে৷ চেকোশ্লাভাকিয়া ও যুগোশ্লাভিয়া ভেঙে গেলে, তাদের পরিচয় দিতে অস্বীকৃতি জানায় নতুন রাষ্ট্র৷ কসভো আর বসনিয়ায় ঠাঁই নেয়া রোমারাও যুদ্ধের কারণে পরিচয় সংকটে পড়ে যান৷
ছবি: picture-alliance/ZB
কলম্বিয়া
ভেনেজুয়েলায় রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক টানাপোড়েনে অনেক মানুষ পাড়ি জমান কলম্বিয়ায়৷ যাদের মাধ্যমে পৃথিবীতে এসেছে অন্তত ২৫ হাজার শিশু৷ তারাও আছে পরিচয় সংকটে৷ কারণ, কলম্বিয়া নাগরিকত্ব পেতে বাবা-মায়ের মধ্যে একজনের সে দেশের নাগরিকত্ব থাকতে হয়৷
ছবি: Reuters/I. Alvarado
10 ছবি1 | 10
ইরাকের ‘দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট হাই কমিশন ফর হিউম্যান রাইটস' দাবি করেছে, সরকারবিরোধী আন্দোলনে ইতোমধ্যে ১৩ ব্যক্তি নিহত হয়েছেন৷ সংগঠনটির সদস্য আলী আল-বয়াতি জানিয়েছেন যে, নিহতদের মধ্যে এক নিরাপত্তা কর্মীও রয়েছেন৷ আর বিক্ষোভ শুরুর পর থেকে ১৩২ জনকে আটক করা হলেও তাদের বেশ কয়েকজনকে ছেড়েও দেয়া হয়েছে৷
এদিকে, দেশজুড়ে এই অস্থিরতার মাঝেই অজ্ঞাত পরিচয়ের মুখোশধারীদের গুলিতে অ্যাক্টিভিস্ট এবং কার্টুনিস্ট হুসেইন আদেল মাদানি এবং তাঁর স্ত্রী সারা মাদানি নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে নিরাপত্তা বাহিনী৷ তবে তাঁদের দুই বছর বয়সি কন্যা সন্তান অক্ষত রয়েছে৷ কোনোপক্ষ এই হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করেনি৷
ইরাক সরকার অবশ্য বিক্ষোভকারীদের দাবি না মেনে তাদের দমনে কড়া অবস্থান নিয়েছে৷ দেশটির রাজধানীর রাস্তায় ভারী অস্ত্রশস্ত্রসহ দাঙ্গা পুলিশ দেখা গেছে৷ বাগদাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রীয় চত্বরমুখী সব রাস্তা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে৷ এমনকি কর্তৃপক্ষ ফেসবুক, টুইটার এবং হোয়াটসঅ্যাপের মতো সামাজিক যোগাযোগ অ্যাপও বন্ধ করে দিয়েছে বলে জানিয়েছেন শহরটির বাসিন্দারা৷
পাশাপাশি, নিরাপত্তা বাহিনী জানিয়েছে যে, বাগদাদ এবং দক্ষিণ ইরাকের বেশ কয়েকটি শহরে অশান্তিরোধে কারফিউ জারি করা হয়েছে৷