পোপ ফ্রান্সিস এখন ইরাক সফর করছেন। সেখানেই তিনি খ্রিস্টানদের ইরাক ছেড়ে যেতে নিষেধ করলেন।
বিজ্ঞাপন
ইরাকের মোসুলে পোপ ফ্রান্সিস। গোলায় বিধ্বস্ত একটি গির্জায় তিনি কথা বললেন বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষের সঙ্গে। তিনি যুদ্ধে নিহতদের উদ্দেশ্যে প্রার্থনা করলেন। বছর তিনেক আগে আইএস-এর কবল থেকে মোসুলকে উদ্ধার করে ইরাকি বাহিনী। মোসুলের খ্রিস্টান ও মুসলিমরা পোপকে জানান, আইএস শাসনে তাদের কী অবস্থা হয়েছিল। তারা এটাও জানিয়েছেন, এখন দুই সম্প্রদায়ের মানুষ মিলেমিশে আছেন।
পোপ খ্রিস্টানদের বলেছেন, তারা যেন ইরাক ছেড়ে না যান। দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে সৌভ্রাতৃত্ব দীর্ঘস্থায়ী হবে। আগের অবস্থা ফিরে পাওয়ার রাস্তা হয়তো অনেক লম্বা। তবু পোপের আবেদন, ''হতাশ হবেন না। ক্ষমা করার মনোভাব খুবই জরুরি। আর হাল ছেড়ে দেবেন না।''
মোসুলে পোপ ওল্ড সিটি ঘুরে দেখেন। সেখানে ধ্বসস্তূপে পরিণত হওয়া বাড়ি, চার্চ ঘুরে দেখেন। ২০১৪ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত এই শহর আইএসের অধিকারে ছিল। ইরাকি বাহিনীকে এই শহর পুনরুদ্ধার করতে প্রচুর কষ্ট করতে হয়। তখন প্রচুর চার্চ, মসজিদ ধ্বংস হয়েছে।
পোপ ফ্রান্সিস বলেছেন, ''এই দেশে অতীতে সভ্যতার বিকাশ হয়েছিল। সেখানে এই ধরনের বর্বরোচিত কাজ মেনে নেয়া যায় না। মুসলিম, খ্রিস্টান, ইয়াজদি ও অন্যরা মারা গেছেন, ঘরছাড়া হয়েছেন, তাদের উপাসনাস্থল ধ্বংস হয়েছে।'' পোপ বলেছেন, ''আজ আমি বলতে পারি, সৌভ্রাতৃত্বের প্রতি দায়বদ্ধতা বেড়েছে। এটাও মানুষ বুঝেছে, যুদ্ধ ও ধ্বংসের থেকে শান্তি অনেক বেশি কাম্য।''
ইসলামের জন্মস্থানে পোপ
খ্রিষ্টানদের সর্বোচ্চ ধর্মীয় গুরু পোপ বেনেডিক্ট ফ্রান্সিস মধ্যপ্রাচ্য সফর করলেন৷ আন্তঃধর্মীয় সম্প্রীতি চাঙার লক্ষ্যেই এই সফরে যান পোপ৷ এই সময় পোপ মিশরে আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয় ও আবুধাবিতে খ্রিস্টানদের সঙ্গে দেখা করেন৷
ছবি: Reuters/T. Gentile
ঐতিহাসিক সফর
পোপের এই সফরকে ঐতিহাসিক বলে আখ্যা দিয়েছেন বিশ্লেষকরা৷ সংযুক্ত আরব আমিরাতে বিশ্ব ভাতৃত্বের ডাক দিয়ে পোপ মিসরে আল আজহার মসজিদ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যান্ড ইমামের সঙ্গে দেখা করে একটি ঐতিহাসিক চুক্তি স্বাক্ষর করেন৷
ছবি: Reuters/Vatican Media
ভাইরাল চুম্বন দৃশ্য
সোমবার মিসরের ঐতিহাসিক আল আজহার মসজিদ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যান্ড ইমামের সঙ্গে এক ঐতিহাসিক ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করেন তিনি৷ এতে জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে শান্তি প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানানো হয়৷ ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষরের পর দুই নেতার চুম্বনের দৃশ্য ভাইরাল হয় সোশ্যাল মিডিয়ায়৷
ছবি: Reuters/T. Gentile
আবুধাবিতে স্বাগতম
পোপকে আবুধাবি ইন্টারন্যাশনাল বিমানবন্দরে স্বাগত জানান ক্রাউনপ্রিন্স মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ান৷ এরপর পোপ গ্র্যান্ড জায়েদ মস্কে মুসলিম উম্মাহর প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন৷
ছবি: Reuters/WAM
প্রার্থনা করলেন আরব খ্রিস্টানদের জন্য
পোপ সংযুক্ত আরব আমিরাতের আবুধাবিতে দেখা করেন স্থানীয় খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের সঙ্গে৷ আবুধাবির জায়েদ স্পোর্টস সিটি স্টেডিয়ামে ১ লাখ ২০ হাজার লোক উপস্থিত হয়েছিল৷ তাদের জন্য বিশেষ প্রার্থনা করেন পোপ৷
ছবি: Reuters/A. Jadallah
শিশুদের জন্য আশীর্বাদ
বিশেষ আয়োজনে স্বল্প সময়ের মধ্যেও শিশুদের সঙ্গে সময় কাটান পোপ৷ তিনি আলাদা করে চেষ্টা করেন স্টেডিয়ামে উপস্থিত শিশুদের জন্য আশীর্বাদের স্পর্শ বিলিয়ে দিতে৷ তাদের কপালে চুমু দেন পোপ৷
ছবি: Reuters/Vatican Media
পোপের জন্য মেরির মূর্তি
পোপের সফর উপলক্ষে আবুধাবির জায়েদ স্পোর্টস সিটি স্টেডিয়ামে যে আয়োজন করা হয় সেখানে মাতা মেরির একটি শ্বেত পাথরের মূর্তি স্থাপন করা হয়৷ পোপ সেখানে শ্রদ্ধা জানান ও প্রার্থনা করেন৷
ছবি: Reuters/Vatican Media
ধর্ম যাজকদের কেলেঙ্কারি স্বীকার
আরব আমিরাত সফরে সাংবাদিকদের দেওয়া সাক্ষাতকারে পোপ যাজকদের যৌন কেলেঙ্কারির কথা স্বীকার করেন৷ তিনি বলেন, গির্জার যাজকরা নানদের যৌন নিপীড়ন করেছেন৷ এমনকি অনেক যাজক নানদের যৌনদাসী করেও রেখেছিলেন৷ ফলে পোপ বেনেডিক্ট এ কারণে পুরো একটি প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছিলেন৷
ছবি: Reuters/T. Gentile
7 ছবি1 | 7
পোপের আবেদন
ইরাক সহ মধ্যপ্রাচ্যের খ্রিস্টানদের কাছে পোপের আবেদন, তারা যেন নিজেদের জায়গায় থাকেন। ছেড়ে চলে না যান।
ডিডাব্লিউর প্রতিনিধি ওয়েন হোল্ডঅ্যাওয়ে জানিয়েছেন, বিশেষ করে উত্তর ইরাকের কথা মাথায় রেখে তিনি এই আবেদন করেছেন। এখানে আইএসের হাতে খ্রিস্টানরা অত্যাচারিত হয়েছেন।
পোপ বলেছেন, ইরাকের যুদ্ধবিধ্বস্ত এলাকা থেকে খ্রিস্টানরা অনেকে চলে গেছেন। এর ফলে ওই এলাকায় যারা থাকলেন, তাদের এবং সমাজের প্রভূত ক্ষতি হয়েছে।
আইএসের আক্রমণের ফলে উত্তর ইরাকের হাজার হাজার খ্রিস্টান পালাতে বাধ্য হয়েছেন। আগে ইরাকে চার লাখ খ্রিস্টান ছিলেন। ২০১৩ সালে সেটা কমে দাঁড়ায় দেড় লাখে।