ইরাক থেকে দুই হাজার সেনা কমাবে অ্যামেরিকা। জার্মানি জানিয়েছে, তাঁরাও ইরাক থেকে সেনা কমাবে।
বিজ্ঞাপন
চলতি মাসেই ইরাক থেকে সেনা কমাবে অ্যামেরিকা। প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প তাঁর নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পালন করতে চান। তিনি অ্যামেরিকাকে অপ্রয়োজনীয় যুদ্ধের হাত থেকে রেহাই দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্ত এসেছে একটি মার্কিন পত্রিকায় প্রকাশিত খবরের পর। সেখানে হোয়াইট হাউসের সূত্র জানিয়েছে, ট্রাম্প মৃত অ্যামেরিকান সেনাদের 'লুসার্স' বলেছেন। তবে ট্রাম্প এই কথা অস্বীকার করেছেন।
অ্যামেরিকার সেন্ট্রাল কম্যান্ডের কম্যান্ডার ফ্র্যাঙ্ক ম্যাকেনজি জানিয়েছেন, এখন ইরাকে পাঁচ হাজার ২০০ জন সেনা আছেন। এই সংখ্যা তিন হাজারে নামিয়ে আনা হবে। তাঁর দাবি, ''অ্যামেরিকা তাদের চূড়ান্ত লক্ষ্যে পৌঁছতে চায়। সেটা হলো, ইরাকি সেনা বাহিনীকে তৈরি করে দেয়া, যাতে তারা আইএসের মোকাবিলা করতে পারে এবং বাইরের কারো সাহায্য ছাড়াই ইরাকে শান্তি ও সার্বভৌমত্ব বজায় রাখতে পারে।''
মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ঘাঁটিগুলো
ইরাক থেকে তুরস্ক, মধ্যপ্রাচ্যের বেশিরভাগ দেশেই রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ঘাঁটি৷ আছে হাজারো সৈন্য৷ এই ঘাঁটিগুলো দিয়ে ইরানকে চারপাশ থেকে ঘিরে রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র৷
ছবি: imago/StockTrek Images
ইরাক
ইরাকে বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের ৫,২০০ সৈন্য রয়েছে৷ তবে তা ক্রমান্বয়ে কমিয়ে আনার পরিকল্পনা করেছে পেন্টাগন৷ এর অংশ হিসেবে বেশ কয়েকটি ক্যাম্প থেকে এরিমধ্যে সৈন্য প্রত্যাহারও করা হয়েছে৷ বর্তমানে গ্রিন জোন, বাগদাদের কূটনৈতিক এলাকা, আল আসাদ বিমান ঘাঁটিতে দেশটির সেনাসদস্য রয়েছে৷ গত নভেম্বরে আল আসাদ বিমান ঘাঁটিতে সৈন্যদের সঙ্গে দেখা করেছেন ভাইস প্রেসিডেন্ট পেন্স৷
ছবি: imago/StockTrek Images
কুয়েত
মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম মিত্র কুয়েত৷ দুই দেশের মধ্যে রয়েছে প্রতিরক্ষা সহায়তা চুক্তি৷ দেশটিতে রয়েছে বেশ কয়েকটি মার্কিন ঘাঁটি৷ যেখানে প্রায় ১৩ হাজার সৈন্য রয়েছে৷
ছবি: Getty Images/S. Nelson
সিরিয়া
সিরিয়ার কোথায় যুক্তরাষ্ট্রের কত সংখ্যক সৈন্য রয়েছে সে বিষয়টি প্রকাশিত নয়৷ অক্টোবরে সেখান থেকে সৈন্য প্রত্যাহার শুরু করেছে ট্রাম্প প্রশাসন৷ তার আগ পর্যন্ত দেশটিতে প্রায় ২০০০ সৈন্য ছিল, বর্তমানে যা ৮০০ জনে নেমে এসেছে৷ যেসব ঘাঁটি চালু আছে তার একটি সিরিয়ান-জর্ডান সীমান্তে৷ এর কাছেই রয়েছে ইরানীয় আর তাদের সমর্থিত বাহিনী৷
ছবি: -picture alliance/AP Photo/Z. Garbarino
জডার্ন
ইরাক, সিরিয়া, ইসরায়েল, আর সৌদি আরবের সঙ্গে সীমান্ত রয়েছে জডার্নের৷ কৌশলগত দিক থেকে তাই মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভৌগলিক অবস্থান এটি৷ দেশটির মুভাফফাক ছালটি বিমান ঘাঁটি থেকে সিরিয়ায় আইএস বিরোধী হামলা চালানো হয়েছে৷ অবশ্য কিং ফয়সাল বিমান ঘাঁটিতে ২০১৬ সালে তিন মার্কিন সেনা নিহত হয়েছিল জডার্নের বিমান বাহিনীর গুলিতে৷
ছবি: AP
সৌদি আরব
সৌদি আরবে বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের তিন হাজার সেনাসদস্য রয়েছে৷ অক্টোবরে সৌদি তেলক্ষেত্রে হামলার পর ইরানের সঙ্গে সৌদি আরবের সংঘাতের শঙ্কায় সেখানে আরো সৈন্য পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছে তারা৷
ছবি: Getty Images/AFP/F. Nureldine
বাহরাইন
বাহরাইনে যুক্তরাষ্ট্রের একটি নৌ ঘাঁটি রয়েছে৷ দ্বীপ রাষ্ট্রটি বরাবরই সৌদি আরবের মিত্র৷ ইরানের বিরুদ্ধে ট্রাম্পের পদক্ষেপের সমর্থকও তারা৷ বর্তমানে সেখানে সাত হাজার মার্কিন সৈন্য রয়েছে৷
ছবি: AP
ওমান
ওমানের অবস্থান হরমুজ প্রণালীর কাছে আরব উপকূলে, যা জ্বালানি পরিবহনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পথ৷ ২০১৯ সালের মার্চে যুক্তরাষ্ট্রেকে বিমান ও সমুদ্র বন্দর ব্যবহারের অনুমতি দেয় ওমান৷ বর্তমানে সেখানে ৬০০ মার্কিন সৈন্য রয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/E. Noroozi
সংযুক্ত আরব আমিরাত
হরমুজ প্রণালীর পাশে থাকা আরেক দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাত৷ তাদেরও যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরবের সাথে ভাল সম্পর্ক বিদ্যমান৷ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সেখানে পাঁচ হাজার সৈন্য পাঠিয়েছে পেন্টাগন৷
ছবি: picture-alliance/AP/K. Jebreili
কাতার
মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় সামরিক ঘাঁটিটি কাতারের আল উদিদে৷ এর আধুনিকায়নে ২০১৮ সালে ১৮০ কোটি ডলারে একটি প্রকল্প ঘোষণা করেছে কাতার৷ বর্তমানে সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের ১৩ হাজার সৈন্য নিযুক্ত রয়েছে৷
ছবি: Reuters/N. Zeitoon
তুরস্ক
যুক্তরাষ্ট্রের সৈন্য রয়েছে তুরস্কেও৷ দেশটির ইনজিরলিক বিমান ঘাঁটিসহ বেশ কিছু জায়গায় মার্কিন সেনা অবস্থান করছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
10 ছবি1 | 10
প্রশাসনের এক কর্তা জানিয়েছেন, আফগানিস্তান থেকেও মার্কিন সেনা সরানোর কাজ আগামী দিনে শুরু হয়ে যাবে। ২০০১ থেকে মার্কিন সেনা আফগানিস্তানে আছে। ইরাকে আছে ২০০৩ থেকে। ২০১১-তে তাঁরা ফিরে আসেন। আবার ২০১৪-তে ইরাকে মার্কিন সেনা পাঠানো হয়। কারণ, তখন আইএস ইরাকের অধিকাংশ জায়গায় আধিপত্য কায়েম করে ফেলেছিল।
সেনা কমাবে জার্মানিও
শুধু অ্যামেরিকাই নয়, ইরাক থেকে সেনা কমাবে জার্মানিও। জার্মান সরকার বুধবার জানিয়েছে, ইরাক থেকে সেনা কমিয়ে ফেলা হবে। সেখানে মাত্র ৫০০ সেনা রাখা হবে। জার্মান প্রতিরক্ষামন্ত্রী জানিয়েছেন, করোনার সময়েও আইএস জঙ্গি কার্যকলাপ চালিয়ে গেছে। তাই আইএসের ওপর সামরিক চাপ সৃষ্টি করতে হবে।
সে জন্য ৫০০ সেনা রাখতে চায় জার্মানি। আইএসের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক জোটের অঙ্গ হিসাবে ইরাকে সেনা পাঠায় জার্মানি। তারা ইরাকি নিরাপত্তা বাহিনীকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে। তাদের হাতে কিছু প্রয়োজনীয় যুদ্ধাস্ত্রও দিয়েছে।