নারীদের স্টেডিয়ামে ফুটবল ম্যাচ দেখতে না দেওয়ায় ইরানকে বিশ্বকাপ ফুটবল ২০২২-এ নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়েছেন মানবাধিকার কর্মীরা৷
বিজ্ঞাপন
গত বুধবার অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপের বাছাইপর্বের খেলায় লেবাননের মুখোমুখি হয় ইরান৷
ইরানের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় শহর মাশাদে অনুষ্ঠিত এ ম্যাচে মোট ১২ হাজার ৫০০ টিকিট বিক্রি হয়েছিল৷ এর মধ্যে দুই হাজার ছিলেন নারী৷ সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, ম্যাচ দেখতে চাওয়া এসকল নারীদেরকে স্টেডিয়ামে ঢুকতে দেওয়া হয়নি৷ নিজের দেশে অনুষ্ঠিত এ ম্যাচে লেবানকে ২-০ গোলে হারায় ইরান৷
মানবাধিকার কর্মীদের দাবি, টিকেট কেটে নারীরা ফুটবল ম্যচটি দেখতে গেলে পুলিশ তাদের বাধা দেয়৷ এসময় তাদের বিরুদ্ধে পিপার স্প্রে ব্যবহার করে পুলিশ৷ তাছাড়া স্টেডিয়ামের বাইরে কোনো ধরনের প্রতিবাদ সমাবেশ আয়োজনেও বাধা দেয় পুলিশ৷
‘ইউনাইটেড ফর নাভিদ' নামে বিদেশে অবস্থানরত ইরানের অ্যাথলেটস ও অ্যাকটিভিস্টদের একটি দল নারীদের প্রতি এমন বৈষম্যমুলক আচরণ বন্ধ না করা পর্যন্ত বিশ্বকাপ ফুটবলে ইরানকে নিষিদ্ধ করার দাবি জানায়৷ ফিফার ডেপুটি সেক্রেটারির কাছে লেখা এক চিঠিতে সংগঠনটি জানায়, ২০২২ ফুটবল বিশ্বকাপ থেকে ইরানকে বহিস্কারের জন্য আমরা আনুষ্ঠানিক দাবি জানাই৷
ইসালিমক রিপাবরিক অব ইরানে নারীরা নানা ধরনের বৈষম্যের শিকার হন বলে অভিযোগ রয়েছে৷ বিভিন্ন ধরনের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে নারীদের অংশগ্রহণে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে৷
তবে ফিফাকে দেওয়া এক চিঠিতে ক্রীড়াক্ষেত্রে নারীদের সাথে বৈষম্য হয় এমনসব নীতি বাদ দেবে বলে জানিয়েছিল ইরান৷ কিন্তু গত বুধবারের ঘটনার পর দেখা যাচ্ছে নারীদের প্রতি বিষম্যমূলক নীতি পরিবর্তনে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি দেশটি৷
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ফুটবল নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফিফাকে জরুরি ভিত্তিতে নারীদের স্টেডিয়ামে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা বাতিলে জন্য ইরানের প্রতি দাবি জানানোর আহ্বান জানায়৷
আরআর/এআই (এএফপি)
আন্দোলনের নেতৃত্বে নারী
নারীদের প্রতিনিয়ত সম অধিকারের দাবিতে লড়াই চালিয়ে যেতে হয়৷ সরকার বিরোধী নানা আন্দোলনেও পুরুষের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে রাস্তায় নামে নারী৷ কখন কখন আন্দোলনের নেতৃত্বেও তাদের দেখা যায়৷
ছবি: picture alliance/abaca
নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের বিরুদ্ধে রাস্তায় ভারতীয় নারীরা
ভারতে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের মূল টার্গেট দেশটির মুসলমান জনগোষ্ঠী৷ এরকম বৈষম্যমূলক একটি আইনের বিরুদ্ধে দেশ জুড়ে জোর আন্দোলন শুরু হয়৷ সব ভয় উপেক্ষা করে নারীরা সামনে থেকে ওই আন্দোলনে অংশ নিয়েছেন৷
ছবি: DW/M. Javed
‘ফ্যাসিবাদের’ বিরুদ্ধে নারী
পার্লামেন্টে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল উত্থাপন করে দেশের ধর্মনিরপেক্ষ ভাবমূর্তি হুমকির মুখে ফেলে দেওয়ায় ভারতের নানা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমে আন্দোলন করে৷ ওই আন্দোলনে ছাত্রীদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মত৷
ছবি: DW/M. Krishnan
হিজাব খুলে প্রতিবাদ
কট্টর শরিয়া আইন অনুসরণ করা দেশ ইরানে নারীদের হিজাব পরা বাধ্যতামূলক৷ কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে অনেক নারী হিজাব খুলে সরকারের ওই নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন৷ নানা দমন পীড়নের শিকার হওয়ার পরও দেশটির বড় বড় নগরীতে নারীদের এ প্রতিবাদ চলছে৷
ছবি: picture-alliance/abaca/SalamPix
সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ
ইরানে সাধারণ মানুষের বাকস্বাধীনতাই হরণ করা হয়েছে৷ সেখানে নারীদের সমঅধিকার বা বাকস্বাধীনতার দাবি কঠোর ভাবে দমণের শিকার হওয়াটাই স্বাভাবিক৷ তারপরও দেশটির সব আন্দোলনে নারীদের সরব উপস্থিতি দেখা যায়৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/J. Roberson
পাকিস্তানের নারীরা বললেন ‘যথেষ্ট হয়েছে’
পাকিস্তানে সাধারণত নারীদের সমঅধিকারের দাবিকে ‘পশ্চিমা আগ্রাসন’ বা ‘এনজিও মাফিয়া’ বলে বিদ্রুপ করা হয়৷ সমাজের বড় একটি অংশ নারীবাদীদের অচ্ছুত ভাবে৷ এত বাধার পরও পাকিস্তানের নারীরা ধীরে ধীরে আওয়াজ তুলতে শুরু করেছেন৷
ছবি: Reuters/M. Raza
বৃহৎ সামাজিক আন্দোলন
সমঅধিকারের আন্দোলন ছাড়াও পাকিস্তানের নারীরা লিঙ্গ ভিত্তিক সহিংসতা, বাল্যবিবাহ এবং ‘অনার কিলিং’ এর মত সামাজিক ব্যাধির বিরুদ্ধে আন্দোলনে যোগ দিচ্ছেন৷ গণতন্ত্র রক্ষায় নানা আন্দোলনেও তাদের সক্রিয় উপস্থিতি দেখা যায়৷
ছবি: DW/T. Shahzad
ছোট্ট মিছিলের বড় প্রভাব
পাকিস্তানের প্রতিবেশী আফগানিস্তানেও নারীদের সমঅধিকারের দাবি কখনোই বড় ইস্যু হয়ে উঠতে পারনি৷ গত কয়েক দশক ধরে যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তানে শান্তি ফেরানোই যেখানে মূল লক্ষ্য সেখানে নারীদের অধিকার নিয়ে আলাদাভাবে কথা হয় না৷ তারপরও দেশটির নারীদের মাঝেমধ্যে নিজেদের অধিকারের দাবিতে রাস্তায় নামতে দেখা যায়৷
ছবি: DW/H.Sirat
কী পাচ্ছেন আফগান নারীরা
যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোগে তালেবানের সঙ্গে একটি চুক্তির মাধ্যমে আফগানিস্তানে শান্তি ফেরানোর চেষ্টা করা হচ্ছে৷ কিন্তু যদি আবারও তালেবান দেশটির ক্ষমতায় চলে আসে তবে আফগান নারীরা এখন যেটুকু অধিকার পাচ্ছেন সেটুকুও কেড়ে নেওয়া আশঙ্কা রয়েছে৷