ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও মধ্যপ্রাচ্যের বিরুদ্ধে অনাকাঙ্খিত আচরণ বন্ধ করতে বলেছে ইইউ৷ তবে এসব অভিযোগকে ‘ভিত্তিহীন' বলেছে তেহরান৷
বিজ্ঞাপন
ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের বক্তব্য
ইরানের ব্যালাস্টিক মিসাইল কর্মসূচি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ইরানের প্রতি আর কোনো ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা না করার আহ্বান জানিয়েছে৷ ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা করা হলে তা জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের নির্দেশের লঙ্ঘন হবে বলেও উল্লেখ করেছে তারা৷ ইরানের সামরিক কর্মকাণ্ড এবং সিরিয়ায় তাদের সেনা উপস্থিতি নিয়ে ব্রাসেলসের গভীর উদ্বেগ রয়েছে বলে জানিয়েছে ইইউ৷
ইরানের প্রতিক্রিয়া
ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, এ ধরনের অভিযোগ ভিত্তিহীন৷ ইউরোপে সন্ত্রাসী এবং অপরাধ গ্রুপগুলো অবাধে বিচরণ করছে বলে দাবি করা হয় ঐ বিবৃতিতে৷ এতে আরো বলা হয়েছে, এই ধরনের অভিযোগের মাধ্যমে ইরানের বিরোধী দলগুলোকে উস্কে দেয়া হচ্ছে৷
অ্যামেরিকা একতরফাভাবে ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তি বাতিল করলেও বাকি স্বাক্ষরকারী দেশগুলি চুক্তি মেনে চলতে বদ্ধপরিকর৷ ‘জয়েন্ট কম্প্রিহেনসিভ প্ল্যান অফ অ্যাকশন’ নামের এই চুক্তির প্রধান শর্তগুলি কী?
ছবি: picture-alliance/dpa/H. Neubauer
পরমাণু কর্মসূচি বন্ধ?
২০১৫ সালে স্বাক্ষরিত চুক্তি অনুযায়ী ইরান শুধু পরমাণু অস্ত্র তৈরির চেষ্টা চালাতে পারবে না৷ তবে আন্তর্জাতিক নজরদারির মধ্যে শান্তিপূর্ণ পরমাণু কর্মসূচি চালু রাখার অধিকার সে দেশের রয়েছে৷ অর্থাৎ বিদ্যুৎ উৎপাদন ও চিকিৎসার মতো ক্ষেত্রে পরমাণু শক্তি কাজে লাগানো যেতে পারে৷
ছবি: Getty Images/IIPA
ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ
চুক্তির প্রথম আট বছরে ইরান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের সীমা মেনে চলতে রাজি হয়েছিল৷ সেইসঙ্গে এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত গবেষণাও বন্ধ থাকবে৷ আন্তর্জাতিক পরমাণু জ্বালানি সংস্থা আইএইএ ইরানের কার্যকলাপের উপর নজর রেখে চলেছে৷ জার্মানি, ফ্রান্স, ব্রিটেন, চীন ও রাশিয়া এক্ষেত্রে আইএইএ-র মূল্যায়নকেই গুরুত্ব দিয়ে আসছে৷
ছবি: Kazem Ghane/AFP/Getty Images
পরমাণু ভাণ্ডারের ভবিষ্যৎ
চুক্তির আওতায় ইরান ৩,৬৭ শতাংশ সমৃদ্ধকৃত ইউরেনিয়ামের ভাণ্ডার ৯৮ শতাংশ পর্যন্ত কমানোর অঙ্গীকার করেছিল৷ অর্থাৎ ১৫ বছরের জন্য ৩০০ কিলোগ্রামের বেশি এমন মানের ইউরেনিয়াম ইরানের হাতে থাকার কথা নয়৷ ফলে পরমাণু অস্ত্র তৈরির পথ আপাতত বন্ধ থাকছে৷
ছবি: BEHROUZ MEHRI/AFP/Getty Images
নিষেধাজ্ঞা শিথিল
ইরান শর্ত পূরণ করার পরিবর্তে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ সে দেশের উপর আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা তুলে নেবার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল৷ ফলে ইরান আবার আন্তর্জাতিক বাজারে পেট্রোলিয়াম বিক্রি ও আন্তর্জাতিক অর্থ বাজারে প্রবেশের সুযোগ পেয়েছিল৷ অ্যামেরিকার চাপের মুখে সেই সুবিধা হাতছাড়া করতে চায় না ইরান৷
ছবি: FARS
চুক্তিভঙ্গের পরিণতি
পরমাণু কর্মসূচির উপর আন্তর্জাতিক নজরদারির ফলে একটি পরমাণু বোমা তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান তৈরি করতে ইরানের কমপক্ষে এক বছর লাগবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন৷ সে রকম প্রচেষ্টা চালালে আবার সে দেশের উপর আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা চাপানোর বিধান মেনে নিয়েছে ইরান৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Jenis
চুক্তির মেয়াদ শেষের অবস্থা
সমালোচকরা বার বার চুক্তির ‘সানসেট ক্লজ’ বা মেয়াদ শেষের অবস্থার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে থাকেন৷ তাদের অভিযোগ, শান্তিপূর্ণ লক্ষ্যে পরমাণু কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা সত্ত্বেও ইরান চুক্তির মেয়াদ শেষে আবার অস্ত্র তৈরির কাজ শুরু করবে৷ তবে চুক্তির প্রবক্তারা মনে করিয়ে দেন, যে বিভিন্ন ধরনের কার্যকলাপের উপর ১০, ১৫, ২০ বা ২৫ বছর পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা বজায় থাকবে৷
ছবি: Fars
ক্ষেপণাস্ত্র ও আঞ্চলিক প্রভাব
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও তাঁর সমর্থকরা ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির বাড়বাড়ন্ত ও মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে সে দেশের প্রভাব প্রতিপত্তির কড়া সমালোচনা করেন৷ ইউরোপসহ অন্যান্য অনেক দেশও বিষয়ে একমত৷ তবে ‘সফল’ পরমাণু চুক্তি বাতিল করার বদলে তা কাজে লাগিয়ে ইরানের উপর চাপ সৃষ্টি করতে চায় তারা৷
ছবি: Reuters/O. Sanadiki
7 ছবি1 | 7
ইরান নতুন একটি ক্রুজ মিসাইল উন্মোচন করার পরই ইউরোপীয় ইউনিয়ন এই উদ্বেগ প্রকাশ করেছে৷ তেহরানের দাবি, এই ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষায় জাতিসংঘের নির্দেশের লঙ্ঘন হবে না৷ কেননা, ক্ষেপণাস্ত্রটি পারমাণবিক ওয়ারহেড বহন করছে না৷
ইউরোপীয় ইউনিয়নের অভিযোগ, ফ্রান্স, ডেনমার্ক এবং নেদারল্যান্ডসে ইরানের যেসব বিদ্রোহী রয়েছে, তাদের গুপ্তহত্যার পরিকল্পনায় যুক্ত রয়েছে তেহরান৷ এ কারণে ইইউ ইরানের গোয়েন্দা এবং নিরাপত্তা বিভাগের উপর জানুয়ারি থেকে অবরোধ জারি করেছে৷