ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যস্থতায় ইরানের সঙ্গে পরমাণু আলোচনা শুরু হয়েছে। বৈঠকে হাজির চীনও।
বিজ্ঞাপন
ইরান অবাস্তব দাবি করছে, এই অভিযোগ তুলে এক সপ্তাহ আগে ভেস্তে গিয়েছিল পরমাণু চুক্তির আলোচনা। বৃহস্পতিবার ফের তা চালু হয়েছে। বৈঠকে অ্যামেরিকা, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, রাশিয়া, জার্মানি এবং চীনের প্রতিনিধিরা আছেন। মধ্যস্থতা করছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি এনরিক মোরা।
গত সপ্তাহে দীর্ঘ পরমাণু চুক্তি নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয়ছে। কিন্তু সেই আলোচনা ভেস্তে যায়। অ্যামেরিকা সহ অন্য দেশগুলি অভিযোগ করে, বৈঠকে অবাস্তব দাবি করছে ইরান। বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে মোরা বলেন, পরমাণু চুক্তির প্রয়োজনীয়তা সকলেই অনুভব করছেন। সে কারণেই ফের আলোচনায় বসতে রাজি হয়েছেন সকলে। সকলেই আশা করছেন সমাধানসূত্রে পৌঁছানো যাবে।
ইরান পরমাণু চুক্তি কী ও কেন?
অ্যামেরিকা একতরফাভাবে ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তি বাতিল করলেও বাকি স্বাক্ষরকারী দেশগুলি চুক্তি মেনে চলতে বদ্ধপরিকর৷ ‘জয়েন্ট কম্প্রিহেনসিভ প্ল্যান অফ অ্যাকশন’ নামের এই চুক্তির প্রধান শর্তগুলি কী?
ছবি: picture-alliance/dpa/H. Neubauer
পরমাণু কর্মসূচি বন্ধ?
২০১৫ সালে স্বাক্ষরিত চুক্তি অনুযায়ী ইরান শুধু পরমাণু অস্ত্র তৈরির চেষ্টা চালাতে পারবে না৷ তবে আন্তর্জাতিক নজরদারির মধ্যে শান্তিপূর্ণ পরমাণু কর্মসূচি চালু রাখার অধিকার সে দেশের রয়েছে৷ অর্থাৎ বিদ্যুৎ উৎপাদন ও চিকিৎসার মতো ক্ষেত্রে পরমাণু শক্তি কাজে লাগানো যেতে পারে৷
ছবি: Getty Images/IIPA
ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ
চুক্তির প্রথম আট বছরে ইরান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের সীমা মেনে চলতে রাজি হয়েছিল৷ সেইসঙ্গে এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত গবেষণাও বন্ধ থাকবে৷ আন্তর্জাতিক পরমাণু জ্বালানি সংস্থা আইএইএ ইরানের কার্যকলাপের উপর নজর রেখে চলেছে৷ জার্মানি, ফ্রান্স, ব্রিটেন, চীন ও রাশিয়া এক্ষেত্রে আইএইএ-র মূল্যায়নকেই গুরুত্ব দিয়ে আসছে৷
ছবি: Kazem Ghane/AFP/Getty Images
পরমাণু ভাণ্ডারের ভবিষ্যৎ
চুক্তির আওতায় ইরান ৩,৬৭ শতাংশ সমৃদ্ধকৃত ইউরেনিয়ামের ভাণ্ডার ৯৮ শতাংশ পর্যন্ত কমানোর অঙ্গীকার করেছিল৷ অর্থাৎ ১৫ বছরের জন্য ৩০০ কিলোগ্রামের বেশি এমন মানের ইউরেনিয়াম ইরানের হাতে থাকার কথা নয়৷ ফলে পরমাণু অস্ত্র তৈরির পথ আপাতত বন্ধ থাকছে৷
ছবি: BEHROUZ MEHRI/AFP/Getty Images
নিষেধাজ্ঞা শিথিল
ইরান শর্ত পূরণ করার পরিবর্তে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ সে দেশের উপর আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা তুলে নেবার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল৷ ফলে ইরান আবার আন্তর্জাতিক বাজারে পেট্রোলিয়াম বিক্রি ও আন্তর্জাতিক অর্থ বাজারে প্রবেশের সুযোগ পেয়েছিল৷ অ্যামেরিকার চাপের মুখে সেই সুবিধা হাতছাড়া করতে চায় না ইরান৷
ছবি: FARS
চুক্তিভঙ্গের পরিণতি
পরমাণু কর্মসূচির উপর আন্তর্জাতিক নজরদারির ফলে একটি পরমাণু বোমা তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান তৈরি করতে ইরানের কমপক্ষে এক বছর লাগবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন৷ সে রকম প্রচেষ্টা চালালে আবার সে দেশের উপর আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা চাপানোর বিধান মেনে নিয়েছে ইরান৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Jenis
চুক্তির মেয়াদ শেষের অবস্থা
সমালোচকরা বার বার চুক্তির ‘সানসেট ক্লজ’ বা মেয়াদ শেষের অবস্থার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে থাকেন৷ তাদের অভিযোগ, শান্তিপূর্ণ লক্ষ্যে পরমাণু কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা সত্ত্বেও ইরান চুক্তির মেয়াদ শেষে আবার অস্ত্র তৈরির কাজ শুরু করবে৷ তবে চুক্তির প্রবক্তারা মনে করিয়ে দেন, যে বিভিন্ন ধরনের কার্যকলাপের উপর ১০, ১৫, ২০ বা ২৫ বছর পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা বজায় থাকবে৷
ছবি: Fars
ক্ষেপণাস্ত্র ও আঞ্চলিক প্রভাব
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও তাঁর সমর্থকরা ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির বাড়বাড়ন্ত ও মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে সে দেশের প্রভাব প্রতিপত্তির কড়া সমালোচনা করেন৷ ইউরোপসহ অন্যান্য অনেক দেশও বিষয়ে একমত৷ তবে ‘সফল’ পরমাণু চুক্তি বাতিল করার বদলে তা কাজে লাগিয়ে ইরানের উপর চাপ সৃষ্টি করতে চায় তারা৷
ছবি: Reuters/O. Sanadiki
7 ছবি1 | 7
২০১৫ সালে ইরানকে নিয়ে অন্য দেশগুলি পরমাণু চুক্তিতে সই করেছিল। যেখানে স্পষ্ট বলা হয়েছিল, পরমাণু অস্ত্র তৈরি করা যায়, এমন পরিমাণ ইউরেনিয়াম ইরান জমা করতে পারবে না। জাতিসংঘ ইরানের পরমাণু পরীক্ষাগারে নজরদারি চালাতে পারবে।
কিন্তু ২০১৮ সালে অ্যামেরিকা পরমাণু চুক্তি থেকে বেরিয়ে যায়। তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেন, তার পক্ষে ওই চুক্তিতে থাকা অসম্ভব। ইরানের বিরুদ্ধে এরপর একাধিক নিষেধাজ্ঞা জারি করেন তিনি। ইরানও অ্যামেরিকারবিরুদ্ধে সরব হয়।
ট্রাম্প চলে যাওয়ার পরে ইরান জানিয়ে দেয়, আগের চেয়ে বহু গুণ বেশি ইউরেনিয়াম সংগ্রহ করবে তারা। জাতিসংঘের কাছে তথ্য দিতেও তারা দায়বদ্ধ নয়। এরপরেই বাইডেন সরকার নতুন করে পরমাণু চুক্তি নিয়ে আলোচনা করতে উদ্যোগী হয়। গত সপ্তাহে সেই প্রক্রিয়ায় শুরু হয়েছিল। কিন্তু সে আলোচনাও মাঝপথে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।
কূটনীতিকদের একাংশের বক্তব্য, ইরানের উপর চাপ তৈরি করতেই গত সপ্তাহে পরমাণু আলোচনা বন্ধ হয়ে গেছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত নতুন করে চুক্তি যাতে হয়, সকলেই তা চাইছে। তবে ইরানের সরকারি প্রতিনিধিকে যে সহজে চুক্তিতে সই করানো যাবে না, সে কথা এখন সকলের কাছেই স্পষ্ট।