মধ্যপ্রাচ্যে বিমানবাহী রণতরী ও বোম্বার টাস্কফোর্স মোতায়েনের ঘোষণা দিয়েছে হোয়াইট হাউস৷ বলা হচ্ছে, এর লক্ষ্য ইরানকে এই বার্তা দেয়া যে, নিজেদের স্বার্থ রক্ষায় যে-কোনো কিছু করতে প্রস্তুত রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র৷
বিজ্ঞাপন
ওয়াশিংটন ও তেহরানের মধ্যে উত্তেজনা বেড়েই চলেছে৷ এর মধ্যেই এলো মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টনের এ ঘোষণা৷
গত বছর ইরানের সঙ্গে পশ্চিমা পরাশক্তিগুলোর পরমাণু চুক্তি থেকে একতরফা যুক্তরাষ্ট্রের নাম প্রত্যাহার করার পর থেকে দেশটির ওপর নানা ধরনের নিষেধাজ্ঞা চাপিয়ে আসছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প৷
সম্প্রতি ইরানের রেভোল্যুশনারি গার্ড বাহিনীকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ঘোষণা দেয় ট্রাম্প প্রশাসন৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এই প্রথম অন্য কোনো দেশের সরকারি সংস্থাকে এই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার ঘোষণা দেয়া হলো৷
মধ্যপ্রাচ্যে সেন্ট্রাল কমান্ড এরিয়ার দিকে এরই মধ্যে রওয়ানা হয়েছে ইউএসএস লিংকন৷ লোহিত সাগর, আরব সাগর বা পারস্য উপসাগরে অবস্থান করতে পারে এটি৷ এই মুহূর্তে অঞ্চলটিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আর কোনো যুদ্ধজাহাজ অবস্থান করছে না৷
রণতরী মোতায়েনের বিষয়ে বিস্তারিত কোনো তথ্য জানানো হয়নি৷ তবে মার্কিন স্বার্থ রক্ষায় ‘সর্বশক্তির নির্মম' প্রয়োগ করতেও পিছপা হবে না যুক্তরাষ্ট্র, একথা স্পষ্ট জানিয়েছেন বোল্টন৷
তিনি বলেন, ‘‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইরানের সঙ্গে যুদ্ধে জড়াতে চায় না৷ কিন্তু যে-কোনো হামলা মোকাবিলায় আমরা প্রস্তুত থাকতে চাই, সেটা ছায়া যুদ্ধই হোক, ইসলামিক রেভোল্যুশনারি গার্ড বা ইরানের নিয়মিত সেনাবাহিনীই হোক৷''
রণতরী ঠিক কখন থেকে মোতায়েন থাকবে, সে বিষয়েও সুনির্দিষ্ট কিছু জানায়নি হোয়াইট হাউস৷
একটি যুদ্ধ-মহড়ায় অংশ নেয়ার জন্য এই মার্কিন রণতরী গত এপ্রিল থেকেই ইউরোপে ছিল৷
ইরান-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক কোন পথে?
৩৪ বছর ধরে দু দেশের বৈরি সম্পর্ক৷ ইরান আর যুক্তরাষ্ট্র পরস্পরের কাছে আসার বেশ কিছু উদ্যোগ ব্যর্থ করে দিয়ে এখনো পরস্পরবিরোধী অবস্থানে৷ প্রত্যাশা ছুঁয়ে না গেলেও এতদিনে দু দেশের সম্পর্কোন্নয়নের দ্বার খানিকটা খুলেছে৷
ছবি: Getty Images
আশা জাগিয়েছেন রোহানি
গত আগস্টেই ইরানের নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে কাজ শুরু করেছেন হাসান রোহানি৷ শুরুতেই যেসব আশার বাণী শুনিয়েছিলেন সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তোলার ইঙ্গিতও ছিল৷ এবারের জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে তাঁর সদিচ্ছার প্রমাণ আশা করেছিলেন অনেকে৷ সে আশা জাগিয়েই নিউ ইয়র্কে পা রেখেছিলেন রোহানি৷
ছবি: ISNA
ওবামার আহ্বান
জাতিসংঘে নিজের ভাষণে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা একরকম চ্যালেঞ্জই ছুড়ে দিয়েছিলেন রোহানির দিকে৷ বলেছিলেন, ইরানের প্রেসিডেন্ট সম্পর্কোন্নয়নের যে কথা আগে বলেছেন জাতিসংঘের অধিবেশনে, সেই ইচ্ছার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ কিছু কথা বললে যুক্তরাষ্ট্র খুব খুশি হবে৷
ছবি: Reuters
মিথ্যে আশা মরীচিকা
কিন্তু জাতিসংঘে নিজের প্রথম ভাষণে রোহানি সেরকম কিছু বলেননি৷ তাঁর দেশের আণবিক অস্ত্র তৈরির পরিকল্পনা প্রসঙ্গে সরাসরি কিছু না বলে পূর্বসসূরিদের মতো ঠিকই তোপ দাগিয়েছেন ইসরায়েলের বিরুদ্ধে৷ আরো বলেছেন, তাঁর দেশের ওপর চলমান নিষেধাজ্ঞা জনগণের ভোগান্তি বাড়ানোর চেষ্টা মাত্র৷
ছবি: Reuters
ইসরায়েলের সন্দেহ
ইসরায়েলের প্রতিক্রিয়াও যেন অতীতের বক্তব্যের অনুলিপি৷ ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন, ইরান সম্পর্কোন্নয়নের কথা বলে আসলে আণবিক বোমা তৈরির পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সময় নিতে চাইছে৷
ছবি: Reuters/Issam Rimawi
শেষ আশাও দুরাশা
জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে শেষ আশা হয়ে ছিল যুক্তরাষ্ট্র এবং ইরানের প্রেসিডেন্টের সংক্ষিপ্ত সাক্ষাতের সম্ভাবনা, যা বাস্তবায়িত হলে ওবামা আর রোহানির হাত মেলানোর দৃশ্যকে দু-দেশের বন্ধুত্বের ছবি হিসেবে ফ্রেমবন্দি করে রাখা যেতো৷ সেটাও সম্ভব হয়নি৷
ছবি: Getty Images
তবু আশা বেঁধে রাখা
১৯৭৯ সালের পর থেকে ইরান আর যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই৷ দু দেশের প্রেসিডেন্টকে কোথাও হাত মেলাতেও দেখা যায়নি৷ জাতিসংঘে আনুষ্ঠানিক সাক্ষাতটা হলে অন্তত সম্পর্কোন্নয়নের পথ নতুন করে খুলছে বলে আশা করা যেতো৷ ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ জাভাদ জারিফ অবশ্য বলেছেন, রোহানির যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সঙ্গে বৈঠক করতে কোনো আপত্তি ছিল না৷ এটা একটা শুভ সূচনা হতে পারতো, বলেন জারিফ৷