টিকরিট ফিরে পাওয়ার জন্য ব্যাপক অভিযানে নেমেছে ইরাকের বাহিনী৷ আইএস-এর উত্থানের পর থেকে সবচেয়ে বড় এ অভিযানে প্রতিবেশী দেশ ইরানও আছে সঙ্গে৷ যুক্তরাষ্ট্রের ধারণা, ইরান পাশে দাঁড়ানোর ফল ইতিবাচকই হবে৷
বিজ্ঞাপন
যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষস্থানীয় সামরিক কর্মকর্তা জেনারেল ডেম্পসি বলেছেন, টিকরিট থেকে আইএস-কে বিতাড়িত করার যুদ্ধে ইরাকের বাহিনীর সঙ্গে ইরানের সেনাদের যোগ দেয়ার ফল ভালো হবে বলেই তিনি মনে করেন৷ মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের সেনেটে তিনি এ কথা বলেন৷ মার্কিন সেনাবাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তা – জয়েন্ট চিফস অফ স্টাফ জেনারেল মার্টিন ডেম্পসে বলেন, ইরাকের শিয়া আধা সামরিক বাহিনীকে সহায়তা করতে ইরানের এগিয়ে আসা নতুন কিছু নয়৷ ২০০৪ সাল থেকে এই ধারা চলছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি৷
তাঁর মতে, আগে কখনো ইরান এতটা প্রকাশ্যে ইরাকের সহায়তায় এগিয়ে আসেনি ইরান৷ ইরানের এমন প্রকাশ্যে সুন্নিদের জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএস)-এর বিরুদ্ধে যুদ্ধে নামাকে বর্তমান প্রেক্ষাপটে খুব গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন বলে মনে করেন জেনারেল মার্টিন ডেম্পসে৷
হত্যা, আতঙ্ক আর ঘৃণায় আইএস
শুধু ইরাক আর সিরিয়া নয়, আজকাল বিশ্বের অনেক দেশেই ইসলামিক স্টেট বা আইএস-এর তৎপরতার কথা শোনা যায়৷ খেলাফত কায়েমের কথা বলে মধ্যপ্রাচ্যে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করা জঙ্গি সংগঠনটিকে নিয়েই আমাদের আজকের ছবিঘর৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Jordan News Agency
তাদের কাছে নারী যেন বাজারের পণ্য
অনেক সময় আটক নারী ও শিশুদের আইএস জঙ্গিরা যৌন দাস হিসেবে ব্যবহার করে৷ সম্প্রতি আইএস-এর কবল থেকে পালিয়ে আসা ৪০ জনেরও বেশি ইয়াজিদি নারীর সঙ্গে কথা বলে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল৷ নারী ও শিশুদের সঙ্গে আইএস-এর এমন আচরণে নিন্দা জানিয়েছেন সবাই৷
ছবি: DW/Andreas Stahl
সাংবাদিক, এনজিওকর্মী হত্যা করে হুমকি
তাদের বিরুদ্ধে বিমান হামলা বন্ধ না করায় যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করতে নিরপরাধ মানুষ হত্যার বেশ কিছু নজীর গড়েছে আইএস৷ বিমান হামলার প্রতিশোধের কথা বলে যুক্তরাষ্ট্রের দু’জন সাংবাদিক, একজন এনজিও কর্মী এবং ব্রিটেনের দু’জন এনজিও কর্মীর শিরশ্ছেদ করেছে তারা৷ ওপরের ছবিতে দেখা যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের সাংবাদিক জেমস ফলিকে৷ গত আগস্টে তাঁর শিরশ্ছেদ করে ভিডিওচিত্র প্রচার করে আইএস৷
ছবি: dapd
মুসলমান হলেও রক্ষা নেই....
ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে সিরীয় শরণার্থীদের সেবায় আত্মনিয়োগ করেছিলেন পিটার কাসিগ৷ মুসলমান হিসেবে তাঁর নাম হয়েছিল আব্দুল রহমান কাসিগ৷ গত নভেম্বরে শুধু যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক হওয়ায় তাঁকেও হত্যা করে আইএস৷ হত্যার পর ভিডিও চিত্রও প্রকাশ করা হয়৷ নৃশংস এ ঘটনাকে ‘শয়তানের কাজ' হিসেবে বর্ণনা করেন বারাক ওবামা৷
ছবি: picture-alliance/AP/Kassig Family
জিম্মি করে মুক্তিপণ দাবি, তারপর...
জাপানের দুই নাগরিককে জিম্মি করে প্রথমে ২০০ মিলিয়ন ডলার মুক্তিপণ দাবি করে আইএস৷ মুক্তিপণ না পাওয়ায় হারুনা ইউকাওয়াকে হত্যা করলেও সাংবাদিক কেনজি গোতোকে আটকে রাখে৷ গোতো এবং জর্ডানের বৈমানিক আইমান মাজ-আল-কাসাবেহকে জিম্মি করে তাঁদের প্রাণের বিনিময়ে জর্ডানে আটক আইএস-এর এক নারী যোদ্ধার মুক্তি দাবি করা হয়৷ তাঁকে মুক্তি না দেয়ায় কেনজি গোতো এবং আইমান মাজ-আল-কাসাবেহকে হত্যা করে আইএস৷
ছবি: Reuters/www.reportr.co via Reuters TV
ইরাকে শুরু....
গত বছরের জুন মাসে ঝটিকা আক্রমণের ইরাকের মোসুল দখল করে নেয় আইএস৷ সুন্দিদের এই জঙ্গি সংঠনটি তারপর ইরাকের বেশ বড় একটা অংশে কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে৷ সিরিয়াতেও দখল করে নেয় কিছু এলাকা৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
বাংলাদেশেও তৎপর আইএস...
আইএস সরাসরি যুদ্ধ করছে ইরাক আর সিরিয়ায়৷ যোদ্ধা সংগ্রহ করা হচ্ছে বিশ্বের প্রায় সব প্রান্ত থেকে৷ জার্মানি, বৃটেন, ফ্রান্স, বেলজিয়ামের মতো ইউরোপীয় দেশগুলো থেকে জঙ্গি মনোভাবাপন্নরা গিয়েছে ইরাক, সিরিয়ায়৷ এশিয়ার দেশগুলোতেও তৎপর আইএস৷ বাংলাদেশেও আইএস সমর্থক সন্দেহে গ্রেপ্তার করা হয়েছে কয়েকজনকে৷
ছবি: Reuters
জুতার নীচে আইএস!
আইএস-এর প্রতি ঘৃণাও বাড়ছে সারা বিশ্বে৷ ইরাকের স্থপতি আকীল খ্রীফ তো আইএস জঙ্গিদের প্রতি ঘৃণা প্রকাশ করতে বেছে নিয়েছেন অভিনব এক উপায়৷ পুরোনো জুতা সংগ্রহ করে তার নীচে জুতার পরিত্যক্ত ফিতা, বোতাম ইত্যাদি দিয়ে ফুটিয়ে তুলছেন আইএস জঙ্গিদের চেহারার আদল৷ আকীল খ্রীফ মনে করেন, আইএস জঙ্গিদের স্থান জুতার নীচেই হওয়া উচিত৷
ছবি: Armend Nimani/AFP/Getty Images
বৈমানিককে পুড়িয়ে মারা এবং জর্ডানের ‘প্রতিশোধ’
আটক নারী যোদ্ধাকে মুক্তি না দেয়ায় জর্ডানের বৈমানিক আইমান মুয়াত আল-কাসেসবেহ-কে নৃশংসভাবে পুড়িয়ে মারে আইএস৷ ক্ষুব্ধ হয়ে পাল্টা ব্যবস্থা নিতেও দেরি করেনি জর্ডান৷ আইমান মুয়াত আল-কাসেসবেহ-কে (ওপরের ছবি) হত্যা করে আইএস ভিডিও প্রকাশের পরই তাদের নারী যোদ্ধা সাজিদা আল-রিশোয়াই ও আরেক কর্মীকে ফাঁসিতে ঝোলায় জর্ডান সরকার৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Jordan News Agency
8 ছবি1 | 8
গত বছরের জুন মাস থেকে টিকরিট আইএস-এর দখলে৷ রাজধানী বাগদাদ থেকে ১৬০ কিলোমিটার উত্তরের সুন্নি অধ্যুষিত এ শহরেরই জন্মেছিলেন সাবেক প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেন৷ এ শহরের নিয়ন্ত্রণ ফিরে পাওয়ার জন্য শিয়া আধা সামরিক বাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে সব চেয়ে বড় অভিযান শুরু করেছে ইরাকের বাহিনী৷ কিন্তু ৩০ হাজার সৈন্য নিয়ে অভিযান শুরু করলেও দ্রুত অগ্রগতি হচ্ছে না৷ আইএস-এর পেতে রাখা বোমার কারণে মন্থর গতিতে এগোতে হচ্ছে তাদের৷
ইরাকি বাহিনীর এই টিকরিট অভিযানকে মোসুল ফিরে পাওয়ার পথে প্রথম পদক্ষেপ বলেও ধারণা করা হচ্ছে৷ গত বছর মোসুল দখল করেই ইরাকে নিজেদের জোরালো উপস্থিতির ঘোষণা দিয়েছিল আইএস৷ এরপর ধীরে ধীরে দেশের বেশ বড় একটি অংশ দখল করে নেয় ইসলামি জঙ্গি সংগঠনটি৷