ইরানকে হুমকি দিল অ্যামেরিকা ও ইসরায়েল। পরমাণু চুক্তি নিয়ে কূটনৈতিক আলোচনা ব্যর্থ হলে অন্য বিকল্প নেয়া হবে।
বিজ্ঞাপন
ইসরায়েল ও আমিরাতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠক করলেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন। তারপর বুধবার তিনি জানিয়েছেন, যদি ইরান পরমাণু চুক্তিতে না ফেরে তাহলে অন্য বিকল্প ব্যবস্থা নিতে হবে। ব্লিংকেন বলেছেন, ইরান পরমাণু চুক্তি মেনে চললে, অ্যামেরিকাও তাতে যোগ দেবে।
ব্লিংকেন বলেছেন, ''আমরা সব বিকল্প খতিয়ে দেখছি। আমরা মনে করি, কূটনৈতিক স্তরে আলোচনাই হলো সমস্যা সমাধানের সব চেয়ে ভালো উপায়। কিন্তু এইভাবে সমস্যা সমাধানে ইরানকে বিশেষ উৎসাহী মনে হচ্ছে না।''
ইসরায়েলের হুমকি
অন্য বিকল্পটা কী, তা আরো স্পষ্ট করে জানিয়েছেন ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী লাপিদ। তিনি বলেছেন, হয় সামরিক অভিযান, নয়তো ইরানের বিরুদ্ধে আরো নিষেধাজ্ঞা জারি করা হতে পারে। তিনি বলেছেন, ''বিশ্বকে অশুভ শক্তির হাত থেকে বাঁচাতে কখনো কখনো শক্তিপ্রদর্শন করতে হয়। যদি কোনো সন্ত্রাসী-সরকার পরমাণু বোমা হাতে পেয়ে যায়, তাহলে আমাদের ব্যবস্থা নিতেই হবে।''
ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন. ইসরায়েল যে কোনো সময়, যে কোনোভাবে ব্যবস্থা নিতে পারে। সে অধিকার ও দায়িত্ব তাদের আছে।
ইরান পরমাণু চুক্তি কী ও কেন?
অ্যামেরিকা একতরফাভাবে ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তি বাতিল করলেও বাকি স্বাক্ষরকারী দেশগুলি চুক্তি মেনে চলতে বদ্ধপরিকর৷ ‘জয়েন্ট কম্প্রিহেনসিভ প্ল্যান অফ অ্যাকশন’ নামের এই চুক্তির প্রধান শর্তগুলি কী?
ছবি: picture-alliance/dpa/H. Neubauer
পরমাণু কর্মসূচি বন্ধ?
২০১৫ সালে স্বাক্ষরিত চুক্তি অনুযায়ী ইরান শুধু পরমাণু অস্ত্র তৈরির চেষ্টা চালাতে পারবে না৷ তবে আন্তর্জাতিক নজরদারির মধ্যে শান্তিপূর্ণ পরমাণু কর্মসূচি চালু রাখার অধিকার সে দেশের রয়েছে৷ অর্থাৎ বিদ্যুৎ উৎপাদন ও চিকিৎসার মতো ক্ষেত্রে পরমাণু শক্তি কাজে লাগানো যেতে পারে৷
ছবি: Getty Images/IIPA
ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ
চুক্তির প্রথম আট বছরে ইরান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের সীমা মেনে চলতে রাজি হয়েছিল৷ সেইসঙ্গে এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত গবেষণাও বন্ধ থাকবে৷ আন্তর্জাতিক পরমাণু জ্বালানি সংস্থা আইএইএ ইরানের কার্যকলাপের উপর নজর রেখে চলেছে৷ জার্মানি, ফ্রান্স, ব্রিটেন, চীন ও রাশিয়া এক্ষেত্রে আইএইএ-র মূল্যায়নকেই গুরুত্ব দিয়ে আসছে৷
ছবি: Kazem Ghane/AFP/Getty Images
পরমাণু ভাণ্ডারের ভবিষ্যৎ
চুক্তির আওতায় ইরান ৩,৬৭ শতাংশ সমৃদ্ধকৃত ইউরেনিয়ামের ভাণ্ডার ৯৮ শতাংশ পর্যন্ত কমানোর অঙ্গীকার করেছিল৷ অর্থাৎ ১৫ বছরের জন্য ৩০০ কিলোগ্রামের বেশি এমন মানের ইউরেনিয়াম ইরানের হাতে থাকার কথা নয়৷ ফলে পরমাণু অস্ত্র তৈরির পথ আপাতত বন্ধ থাকছে৷
ছবি: BEHROUZ MEHRI/AFP/Getty Images
নিষেধাজ্ঞা শিথিল
ইরান শর্ত পূরণ করার পরিবর্তে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ সে দেশের উপর আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা তুলে নেবার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল৷ ফলে ইরান আবার আন্তর্জাতিক বাজারে পেট্রোলিয়াম বিক্রি ও আন্তর্জাতিক অর্থ বাজারে প্রবেশের সুযোগ পেয়েছিল৷ অ্যামেরিকার চাপের মুখে সেই সুবিধা হাতছাড়া করতে চায় না ইরান৷
ছবি: FARS
চুক্তিভঙ্গের পরিণতি
পরমাণু কর্মসূচির উপর আন্তর্জাতিক নজরদারির ফলে একটি পরমাণু বোমা তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান তৈরি করতে ইরানের কমপক্ষে এক বছর লাগবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন৷ সে রকম প্রচেষ্টা চালালে আবার সে দেশের উপর আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা চাপানোর বিধান মেনে নিয়েছে ইরান৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Jenis
চুক্তির মেয়াদ শেষের অবস্থা
সমালোচকরা বার বার চুক্তির ‘সানসেট ক্লজ’ বা মেয়াদ শেষের অবস্থার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে থাকেন৷ তাদের অভিযোগ, শান্তিপূর্ণ লক্ষ্যে পরমাণু কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা সত্ত্বেও ইরান চুক্তির মেয়াদ শেষে আবার অস্ত্র তৈরির কাজ শুরু করবে৷ তবে চুক্তির প্রবক্তারা মনে করিয়ে দেন, যে বিভিন্ন ধরনের কার্যকলাপের উপর ১০, ১৫, ২০ বা ২৫ বছর পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা বজায় থাকবে৷
ছবি: Fars
ক্ষেপণাস্ত্র ও আঞ্চলিক প্রভাব
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও তাঁর সমর্থকরা ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির বাড়বাড়ন্ত ও মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে সে দেশের প্রভাব প্রতিপত্তির কড়া সমালোচনা করেন৷ ইউরোপসহ অন্যান্য অনেক দেশও বিষয়ে একমত৷ তবে ‘সফল’ পরমাণু চুক্তি বাতিল করার বদলে তা কাজে লাগিয়ে ইরানের উপর চাপ সৃষ্টি করতে চায় তারা৷
ছবি: Reuters/O. Sanadiki
7 ছবি1 | 7
ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তি
২০১৫ সালে অ্যামেরিকা, জার্মানি সহ বেশ কয়েকটি দেশের সঙ্গে ইরানের পরমাণু চুক্তি হয়। পশ্চিমা বিশ্বের আশঙ্কা ছিল, ইরান পরমাণু বোমা বানাবার জন্য বেশ কিছু কর্মসূচি নিয়েছে। ইরান এই ধরনের কর্মসূচি বাতিল করার কথা বলে। তারা জাতিসংঘের নজরদারিতেও রাজি হয়ে যায়। বিনিময়ে তারা বিপুল পরিমাণ অর্থ পাবে বলে ঠিক হয়।
কিন্তু ২০১৮ সালে এই পরমাণু চুক্তি সংকটে পড়ে। কারণ, সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ঘোষণা করেন, অ্যামেরিকা আর ওই চুক্তিতে থাকবে না। ইরান চুক্তিভঙ্গ করছে। ইসরায়েল অবশ্য ওই চুক্তির অংশ ছিল না। বাইডেন প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর অ্যামেরিকা আবার চুক্তিতে ফিরতে চাইছে।
ইরান তখন ইঙ্গিত দেয়, তারা পরমাণু চুক্তিতে ফিরতে রাজি। কিন্তু অ্যামেরিকা জানতে চায়, কবে তারা ফিরবে? ইরান এনিয়ে টালবাহানা করছে। তবে ইরান বারবার জানিয়েছে, তারা কোনো পরমাণু অস্ত্র বানাচ্ছে না। কিন্তু পশ্চিমা দেশগুলির অভিযোগ, ইরান এখন যে পথে চলছে, তাতে এটা স্পষ্ট, তারা পরমাণু অস্ত্র বানাতে চায়।