1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

অর্থনীতি চরম সংকটে

সামিরা নিকায়িন / আরবি২২ মে ২০১৩

বেকারত্ব, দারিদ্র্য এবং মুদ্রাস্ফীতির কবলে পড়ে গত কয়েক বছরে অনেক ইরানির জীবন-মান বদলে গেছে৷ দেশটি মুদ্রাস্ফীতির ধাক্কায় হিমশিম খাচ্ছে এবং সংকটের গভীরে চলে যাচ্ছে৷ বৃদ্ধি পাচ্ছে খাবার-দাবার এবং ভোগ্য পণ্যের দাম৷

Titel: Basar Bildbeschreibung: Preissteigerung und Inflation macht sich in Basar bemerkbar. Stichwörter: Iran, Land und Leute, KW8 /12, Wirtschaft, Basar Quelle: MEHR Lizenz: Frei
ছবি: MEHR

ইরানের রাজধানী তেহরানের তরুণ কম্পিউটার বিজ্ঞানী মোহাম্মদ জানান, ‘‘আমার পরিবারের সদস্যরা এখন আর নিজেদের জীবনযাত্রার মান বজায় রাখতে পারছে না বললেই চলে৷'' তাঁর কথায়, ‘‘আমি বিলাসবহুল জীবনের কথা বলছি না, বরং একেবারে মৌলিক চাহিদা, যেমন ধরুন সকালের নাস্তার জন্য এক বোতল দুধ কেনার কথা বলছি৷ অনেক পরিবারই ইতিমধ্যে আশা ছেড়ে দিয়েছে৷ অনেক কিছু কেনা থেকে বিরত থাকছে এবং খাবার-দাবারও কম কম করে কিনছে৷'' মোহাম্মদ জানান, আগে তিনি প্রায়ই তাঁর বন্ধুদের নিয়ে ক্যাফেতে যেতেন৷ কিন্তু এখন তিনি তার চেয়ে টাকা বাঁচানোরই চেষ্টা করেন৷

গত মার্চ মাসের শেষে ইরানের পরিসংখ্যান দপ্তর জানিয়েছে যে, মুদ্রাস্ফীতির হার ৩০ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে, যা দেশটির ইতিহাসে নতুন রেকর্ড ছুঁয়েছে৷ সরকারি হিসাবে, মাত্র এক বছরে খাবার-দাবারের দাম বেড়েছে ৬০ শতাংশেরও বেশি৷ অবশ্য অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, প্রকৃত সংখ্যাটা আরও বেশি হবে৷

রিয়ালের মূল্যমানে ধস

২০১২ সালের মাঝামাঝি সময়ে ইরানের তেল শিল্পের উপর ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হওয়ার পর রিয়ালের মূল্যমানে ধস নামে৷ বর্তমানে তেহরানে এক মার্কিন ডলার এর বিনিময় মূল্য ৩৫ হাজার রিয়াল৷ আর নয় মাস আগে এক মার্কিন ডলারের দাম ছিল ২০ হাজার রিয়াল৷ তেহরানের ব্যবসায়ীরা বলছেন, সেখানকার মানুষের ক্রয় ক্ষমতা মারাত্মক হারে কমে গেছে৷ ইরানের মুদ্রা সংকট দেশটির রাজস্ব খাতের উপরও মারাত্মক প্রভাব ফেলেছে৷

তেহরানের এক মিষ্টি দোকানি ডিডাব্লিউ-এর সাথে একান্ত সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘‘বর্তমানে বাজারে থাকা শুকনা ফলের ৮০ শতাংশই বিদেশ থেকে আমদানি করা৷ স্থানীয় ফলগুলোর দাম খুবই বেশি৷ আমি মনে করি না যে, এ বছর আমাদের ব্যবসা লাভ করতে পারবে৷''

ওষুধ সংকট

ইরানের উপর ইইউ এবং মার্কিন নিষেধাজ্ঞার আওতা থেকে ওষুধ শিল্প বাইরে রাখা হলেও আন্তর্জাতিক ওষুধ কোম্পানিগুলো ইসলামি প্রজাতান্ত্রিক এই দেশটির সাথে ব্যবসা-বাণিজ্য এড়িয়ে চলছে৷ কারণ ইরানের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উপর আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা রয়েছে, ফলে সেই ব্যাংকের মাধ্যমে মুদ্রা বিনিময়ে জটিলতা রয়েছে৷ এমন অবস্থায় বিগত বেশ কয়েক মাস থেকে সারা দেশে ক্যানসার, মাল্টিপল এসক্লেরোসিস এবং ডায়াবেটিসের মতো অসুখগুলোর ওষুধের চরম সংকট দেখা দিয়েছে৷

এই অবস্থায় চীন, পাকিস্তান এবং ভারতের মতো দেশগুলো থেকে ভেজাল ওষুধ গিয়ে তেহরানের বাজার ভরে গেছে৷ এসব ওষুধও আবার অনেকের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে, বলে জানিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তেহরানের হাসপাতালের এক তরুণ চিকিৎসক৷ তিনি আরও বলেন, ‘‘এমন ঘটনাও ঘটছে যে, ভেজাল ঘুমের ওষুধ খেয়ে কেউ কেউ এপিলেপ্টিকস এর রোগীতে পরিণত হচ্ছে৷ আবার অনেকে মারাও যাচ্ছে এবং তাদের দেহ পরীক্ষা করে দেখা গেছে, তাদের শরীরে দেওয়া পেনিসিলিন ইঞ্জেকশনটি ভুয়া ছিল৷''

উল্লেখ্য, ২০১২ সালের শেষ দিকে ইরানের স্বাস্থ্যমন্ত্রী মারসিহ ভাহিদ দাস্তের্দিকে বরখাস্ত করা হয়৷ কারণ তিনি ওষুধ আমদানির জন্য সরকারের প্রয়োজনীয় তহবিল বরাদ্দের অপারগতার কড়া সমালোচনা করেছিলেন৷

একদিকে বেতন বাকি, অন্যদিকে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি

অর্থনৈতিক সংকটের কারণে অসংখ্য শিল্প-কারখানা কর্মচারীদের বেতন না দিতে পারায় পাওনা বেতন-ভাতার দাবিতে প্রায়ই ধর্মঘট হচ্ছে৷ ইরানের শ্রমিক ইউনিয়নের প্রধান কর্মকর্তা জাফর আজিমজাদেহ বলেন, ইরানের গাড়ি শিল্পের উপর নিষেধাজ্ঞার সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়ছে৷ ডিডাব্লিউ-এর সাথে সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘‘ইরানের একজন কারখানা শ্রমিক এত অল্প আয় করেন যে, তাঁর পক্ষে শ্রমজীবী মানুষের বসবাসের এলাকায় মাত্র ৫০ বর্গমিটারের বাড়ি ভাড়া করা সম্ভব হয়৷''

সংকট সেই নিষেধাজ্ঞার আগে থেকেই

এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই যে, নিষেধাজ্ঞার ফলে ইরানের অর্থনীতির উপর চাপ সৃষ্টি হয়েছে৷ তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, নিষেধাজ্ঞা আরোপের আগে থেকেই ইরানের অর্থনীতি গভীর সংকটের মধ্যে ছিল৷

মাত্র এক বছরে খাবার-দাবারের দাম বেড়েছে ৬০ শতাংশেরও বেশিছবি: borna

প্যারিস বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক এবং ইরান বিশেষজ্ঞ শাহিন ফাতেমি বলেন, ‘‘আহমাদিনেজাদ সরকারের ভুল নীতির কারণেই দেশে এমন মুদ্রাস্ফীতি ঘটেছে৷'' তাঁর মতে, আহমাদিনেজাদের বর্তমান সরকার কিংবা ভবিষ্যতের কোনো সরকারের পক্ষেই দেশকে এই অর্থনৈতিক সংকট থেকে সহজে মুক্ত করা সম্ভব নয়৷

নিষেধাজ্ঞা এবং উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি সরকারের কর্তাব্যক্তিদের এবং ইরানের কোটিপতিদের বলতে গেলে ছুঁতেই পারেনি৷ বরং উল্টো নিম্নবিত্তের মানুষগুলো আরও দরিদ্র হয়ে যাচ্ছে৷ অথচ এসব কিছু ঘটছে এমন একটি দেশে, যেটি তেল সম্ভারের দিক থেকে বিশ্বে তৃতীয় স্থানে রয়েছে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ