এখনও কি একঘরে ইরান?
১৬ অক্টোবর ২০১৩তথাকথিত পাঁচ-যোগ-এক-এর গোষ্ঠী, অর্থাৎ জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচটি স্থায়ী সদস্য দেশ ও জার্মানির সঙ্গে আলাপ-আলোচনায় ইরান এবার স্পষ্ট ইতিবাচক ইঙ্গিত দিয়েছে, যা থেকে বোঝা যায় যে, নতুন প্রেসিডেন্ট হাসান রোহানির নেতৃত্বাধীন নতুন ইরান সরকার যথাশীঘ্র সম্ভব সমস্যাটির সমাধান করতে চান৷
‘‘এছাড়া পশ্চিমি তরফেও মনোভাব পাল্টেছে৷ পশ্চিমি দেশগুলিও অন্তত ইরানের আণবিক কর্মসূচি চালানোর অধিকারটি মেনে নিতে রাজি,'' ডয়চে ভেলে-কে বলেছেন লন্ডনের স্কুল অফ ওরিয়েন্টাল অ্যান্ড আফ্রিকান স্টাডিজ-এর আলি ফতহোল্লাহ-নেজাদ৷ তাঁর মতে ‘‘দু'পক্ষের কাছাকাছি আসার লক্ষণ বিগত দশ বছরে কখনো এমন আশাজনক ছিল না৷''
পশ্চিমি শক্তিরা বিশেষ করে ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধিকরণ কর্মসূচি সম্পর্কে সন্দিহান৷ কিন্তু ইরানের দৃষ্টিকোণ থেকে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধিকরণ জ্বালানি ক্ষেত্রে স্বনির্ভরতার পথে একটি অত্যাবশ্যক পদক্ষেপ৷ কাজেই ইরান আলাপ-আলোচনার আগেই আণবিক শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহারে তার পূর্ণ অধিকারের কথা বলেছে৷ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা প্রত্যাহারও ইরানের একটি দাবি৷
পরিবর্তে ইরান স্বচ্ছতা এবং আস্থা সৃষ্টিকারী পদক্ষেপের প্রস্তাব দিতে পারে – গ্যারান্টি হিসেবে যে, ইরান কোনোদিন তার আণবিক কর্মসূচি সামরিক কাজে লাগাবে না৷ বলতে কি, আলাপ-আলোচনায় ইরানের প্রতিনিধিদলের প্রাক্তন মুখপাত্র হোসেইন মুসাভিয়ান সম্প্রতি জার্মানির ‘‘ফ্রাংকফুর্টার আলগেমাইনে সাইটুং'' পত্রিকাকে ঠিক এ কথাই বলেছেন৷
পশ্চিমি দৃষ্টিকোণ থেকে কিন্তু ইরানকেই প্রথমে অগ্রণী হতে হবে৷ জেনেভায় আলাপ-আলোচনা হল তার প্রথম পরীক্ষা: বিগত কয়েক সপ্তাহে নানা ইতিবাচক সংকেত ও আভাস-ইঙ্গিতের পর এবার বাস্তব কিছু একটা ঘটা চাই৷ আলাপ-আলোচনার প্রথম দিনেই ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভাদ জরিফ সংকট সমাধানের একটি তিন-দফা পরিকল্পনা পেশ করে সকলকে চমকে দেন – যদিও সেই পরিকল্পনার খুঁটিনাটি জনসমক্ষে প্রকাশ করা হয়নি৷ তবে ইরান নাকি এক বছরের মধ্যেই ঐকমত্যে পৌঁছতে আগ্রহী৷ এবং এক থেকে দু'মাসের মধ্যেই সেই ঐকমত্যের প্রথম পর্যায় সম্পন্ন হবে৷
চাপটা আসলে প্রেসিডেন্ট রোহানি-র উপর, বলে অনেক বিশেষজ্ঞের বিশ্বাস৷ ইরানের ধর্মীয় নেতা আয়াতোল্লাহ আলি খামেনেই নাকি রোহানি-কে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা প্রত্যাহারের পথে প্রাথমিক সাফল্য প্রদর্শনের জন্য ছ'মাস সময় দিয়েছেন৷ কাজেই পশ্চিমি শক্তিদের এবার রোহানি-র হাতকে শক্ত করতে হবে – অবশ্যই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা শিথিল করার প্রস্তাব দিয়ে – বলেছেন ফতহোল্লাহ-নেজাদ৷
কিন্তু সে পথে একাধিক প্রতিবন্ধক আছে৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রিপাবলিকানরা ইরানের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা শিথিল করার বিপক্ষে৷ অন্যদিকে রাশিয়া ও চীন ঐ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা থেকে নিজেরাই লাভবান হয়েছে, কাজেই তারা ইরান এবং পশ্চিমের মধ্যে শীঘ্র আপোশে বিশেষ আগ্রহী নয়৷ চীন ইরানের দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক সহযোগী৷ অন্যদিকে রাশিয়ার ভয়, ইরান যদি ইউরোপে তেল ও গ্যাস সরবরাহ শুরু করে, তাহলে রাশিয়ার নিজের ব্যবসার ক্ষতি হতে পারে৷