ইরানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী হোসেন ডেনঘান জানান, গত সপ্তাহান্তে তাঁর দেশ ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালিয়েছে৷ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইকেল ফ্লিন এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন৷
বিজ্ঞাপন
দায়িত্ব নেয়ার পর দেয়া প্রথম আনুষ্ঠানিক বক্তব্যে ফ্লিন বুধবার সাংবাদিকদের বলেন, সপ্তাহান্তে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা ও দেশটির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিদ্রোহীদের সৌদি এক জাহাজে হামলা চালানোর ঘটনা দু'টি মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে ইরানের ‘অশান্ত আচরণ'-এর আভাস দিচ্ছে৷ ‘‘আজ থেকে আমরা ইরানকে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘অন নোটিস'-এ রাখছি'', বলেন তিনি৷ তবে তাঁর এই বক্তব্যের অর্থ ব্যাখ্যা করেননি তিনি৷
উল্লেখ্য, সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সময়ে ইরানের সঙ্গে একটি চুক্তি সই করেছিল ছয় বিশ্ব শক্তি৷ জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ সেটি সমর্থনও করেছিল৷ চুক্তিতে বলা হয়, ইরান যদি তার পরমাণু কার্যক্রমে লাগাম টানে তাহলে তার উপর থেকে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হবে৷
কার, কতগুলো পারমাণবিক বোমা আছে
স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট এর ২০২০ সালের জানুয়ারিতে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন বলছে, বিশ্বের নয়টি দেশের কাছে বর্তমানে ১৩,৪০০টি আণবিক বোমা আছে৷ তবে এ সব বোমার সংখ্যা কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/KCNA
রাশিয়ার কাছে সবচেয়ে বেশি
স্টকহোম আন্তর্জাতিক শান্তি গবেষণা ইনস্টিটিউট সিপ্রি-র তথ্য অনুসারে রাশিয়ার কাছে বর্তমানে সবচেয়ে বেশি আণবিক বোমা রয়েছে৷ দেশটিতে এ ধরনের বোমার সংখ্যা ৬,৩৭৫টি৷ ১৯৪৯ সালে রাশিয়া প্রথম পারমাণবিক পরীক্ষা করেছিল৷
ছবি: Getty Images/AFP/N. Kolesnikova
দ্বিতীয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রথম পারমাণবিক বোমা বানিয়েছে এবং একমাত্র দেশ যারা যুদ্ধেও এই অস্ত্র ব্যবহার করেছে৷ দেশটির কাছে এখন ৫,৮০০ টি পারমাণবিক বোমা রয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/H. Jamali
চীনও পিছিয়ে নেই
৩২০টি পারমাণবিক বোমা আছে চীনের৷ রাশিয়া বা যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় সংখ্যাটা কম হলেও দেশটি ধীরে ধীরে এই সংখ্যা বাড়াচ্ছে৷ যেমন ২০১৯ সালেই তাদের কাছে ২৯০ টি বোমা ছিল৷ স্থল, আকাশ বা সমুদ্রপথে সেগুলো ছোঁড়া সম্ভব৷
ছবি: Getty Images
সাবমেরিনে পারমাণবিক বোমা
ফ্রান্সের কাছে পারমাণবিক ওয়ারহেড আছে ২৯০টি৷ এগুলোর অধিকাংশই রয়েছে সাবমেরিনে৷ দেশটির অন্তত একটি সাবমেরিন সবসময় পারমাণবিক বোমা নিয়ে টহল দেয়৷
ছবি: AP
যুক্তরাজ্যেরও আছে পারমাণবিক বোমা
২১৫টি পারমাণবিক বোমা রয়েছে যুক্তরাজ্যের কাছে৷ জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য এই দেশটি ১৯৫২ সালে প্রথম পারমাণবিক পরীক্ষা চালায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Kaminski
দক্ষিণ এশিয়ায় এগিয়ে পাকিস্তান
ইতোমধ্যে তিনবার প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে যুদ্ধে জড়িয়েছে পাকিস্তান৷ দেশটির আছে ১৬০টি আণবিক বোমা৷ সাম্প্রতিক সময়ে পারমাণবিক বোমার সংখ্যা বাড়িয়েছে দেশটি৷ অনেকে আশঙ্কা করেন, প্রতিবেশীর সঙ্গে দেশটির লড়াই কোন এক সময় পারমাণবিক যুদ্ধে রূপ নিতে পারে৷
ছবি: picture-alliance/AP
থেমে নেই ভারত
পারমাণবিক বোমার সংখ্যা বাড়াচ্ছে ভারতও৷ দেশটি প্রথম পারমাণবিক পরীক্ষা চালায় ১৯৭৪ সালে৷ সিপ্রির তথ্য অনুযায়ী, তাদের কাছে এখন ১৫০টি বোমা রয়েছে৷ ভারত অবশ্য জানিয়েছে, তারা আগে কোনো দেশকে আঘাত করবে না, আর যেসব দেশের পারমাণবিক বোমা নেই, সেসব দেশের বিরুদ্ধে তারা এ ধরনের বোমা ব্যবহার করবে না কোনোদিন৷
ছবি: Reuters
ইসরায়েল সম্পর্কে তথ্য কম
ইসরায়েল অবশ্য নিজের দেশের পরমাণু কর্মসূচি সম্পর্কে তেমন কিছু জনসমক্ষে প্রকাশ করে না৷ যদিও দেশটির নব্বইটি পারমাণবিক ‘ওয়ারহেড’ আছে বলে উল্লেখ করেছে সিপ্রি৷
ছবি: Reuters/B. Ratner
উত্তর কোরিয়া সবার নীচে
পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ে গোপনীয়তা অবলম্বন করে উত্তর কোরিয়াও৷ এখন দেশটির কাছে থাকা বোমার সংখ্যা আনুমানিক ৩০ থেকে ৪০টি৷
ছবি: Reuters
9 ছবি1 | 9
২০১৫ সালে ঐ চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার পর ইরান বেশ কয়েকবার ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালায়৷ তবে গত সপ্তাহান্তের পরীক্ষাটি ছিল ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর প্রথম৷ নির্বাচনি প্রচারণা চালানোর সময় ট্রাম্প ইরানের সঙ্গে বিশ্ব শক্তিদের স্বাক্ষরিত চুক্তির সমালোচনা করেছিলেন এবং তিনি ইরানের মিসাইল প্রোগ্রাম বন্ধ করবেন বলে জানিয়েছিলেন৷
ট্রাম্পের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ফ্লিন বলেন, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা জাতিসংঘ রেজোলিউশনের লঙ্ঘন৷ এই রেজোলিউশন বলছে, পরমাণু অস্ত্র নিক্ষেপ করতে পারে এমন ক্ষেপণাস্ত্র তৈরির কাজে জড়িত হবে না ইরান৷
তবে ইরান বলছে, ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা রেজোলিউশনের লঙ্ঘন নয়, কারণ প্রতিরক্ষা বিষক উদ্দেশ্য পূরণের লক্ষ্যে এই পরীক্ষা চালানো হয়েছে, পরমাণু অস্ত্র ছোঁড়ার জন্য নয়৷ প্রতিরক্ষামন্ত্রী হোসেন ডেনঘান বলেন, ‘‘সাম্প্রতিক পরীক্ষা ২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তি ও জাতিসংঘ রেজোলিউশনের লঙ্ঘন নয়৷ আমাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী আমরা এই পরীক্ষা চালিয়েছি এবং বিদেশিদের আমাদের প্রতিরক্ষা বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে দেয়া হবে না৷''
উল্লেখ্য, ইরানের কাছে যে ক্ষেপণাস্ত্রগুলো আছে তা মধ্যপ্রাচ্যের একটি বড় অংশে হামলা চালাতে সক্ষম৷ যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকটি ঘাঁটি ও ইরানের আঞ্চলিক শত্রু ইসরায়েলেও আঘাত হানতে সক্ষম ইরানের মিসাইল৷ ইরান বলছে, যুক্তরাষ্ট্র কিংবা ইসরায়েলের হামলা ঠেকাতে তাদের মিসাইল কার্যকরি৷
জেডএইচ/ডিজি (এএফপি, রয়টার্স, ডিপিএ, এপি)
ইরান-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক কোন পথে?
৩৪ বছর ধরে দু দেশের বৈরি সম্পর্ক৷ ইরান আর যুক্তরাষ্ট্র পরস্পরের কাছে আসার বেশ কিছু উদ্যোগ ব্যর্থ করে দিয়ে এখনো পরস্পরবিরোধী অবস্থানে৷ প্রত্যাশা ছুঁয়ে না গেলেও এতদিনে দু দেশের সম্পর্কোন্নয়নের দ্বার খানিকটা খুলেছে৷
ছবি: Getty Images
আশা জাগিয়েছেন রোহানি
গত আগস্টেই ইরানের নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে কাজ শুরু করেছেন হাসান রোহানি৷ শুরুতেই যেসব আশার বাণী শুনিয়েছিলেন সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তোলার ইঙ্গিতও ছিল৷ এবারের জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে তাঁর সদিচ্ছার প্রমাণ আশা করেছিলেন অনেকে৷ সে আশা জাগিয়েই নিউ ইয়র্কে পা রেখেছিলেন রোহানি৷
ছবি: ISNA
ওবামার আহ্বান
জাতিসংঘে নিজের ভাষণে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা একরকম চ্যালেঞ্জই ছুড়ে দিয়েছিলেন রোহানির দিকে৷ বলেছিলেন, ইরানের প্রেসিডেন্ট সম্পর্কোন্নয়নের যে কথা আগে বলেছেন জাতিসংঘের অধিবেশনে, সেই ইচ্ছার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ কিছু কথা বললে যুক্তরাষ্ট্র খুব খুশি হবে৷
ছবি: Reuters
মিথ্যে আশা মরীচিকা
কিন্তু জাতিসংঘে নিজের প্রথম ভাষণে রোহানি সেরকম কিছু বলেননি৷ তাঁর দেশের আণবিক অস্ত্র তৈরির পরিকল্পনা প্রসঙ্গে সরাসরি কিছু না বলে পূর্বসসূরিদের মতো ঠিকই তোপ দাগিয়েছেন ইসরায়েলের বিরুদ্ধে৷ আরো বলেছেন, তাঁর দেশের ওপর চলমান নিষেধাজ্ঞা জনগণের ভোগান্তি বাড়ানোর চেষ্টা মাত্র৷
ছবি: Reuters
ইসরায়েলের সন্দেহ
ইসরায়েলের প্রতিক্রিয়াও যেন অতীতের বক্তব্যের অনুলিপি৷ ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন, ইরান সম্পর্কোন্নয়নের কথা বলে আসলে আণবিক বোমা তৈরির পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সময় নিতে চাইছে৷
ছবি: Reuters/Issam Rimawi
শেষ আশাও দুরাশা
জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে শেষ আশা হয়ে ছিল যুক্তরাষ্ট্র এবং ইরানের প্রেসিডেন্টের সংক্ষিপ্ত সাক্ষাতের সম্ভাবনা, যা বাস্তবায়িত হলে ওবামা আর রোহানির হাত মেলানোর দৃশ্যকে দু-দেশের বন্ধুত্বের ছবি হিসেবে ফ্রেমবন্দি করে রাখা যেতো৷ সেটাও সম্ভব হয়নি৷
ছবি: Getty Images
তবু আশা বেঁধে রাখা
১৯৭৯ সালের পর থেকে ইরান আর যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই৷ দু দেশের প্রেসিডেন্টকে কোথাও হাত মেলাতেও দেখা যায়নি৷ জাতিসংঘে আনুষ্ঠানিক সাক্ষাতটা হলে অন্তত সম্পর্কোন্নয়নের পথ নতুন করে খুলছে বলে আশা করা যেতো৷ ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ জাভাদ জারিফ অবশ্য বলেছেন, রোহানির যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সঙ্গে বৈঠক করতে কোনো আপত্তি ছিল না৷ এটা একটা শুভ সূচনা হতে পারতো, বলেন জারিফ৷