বিশ্বের শক্তিধর দেশগুলোর সাথে ইরানের পরমাণু আলোচনা দ্বিতীয় দফায় পৌঁছেছে৷ আশা করা হচ্ছে, এই পর্যায়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যকার ৩৫ বছরের বৈরিভাবের অবসান হবে৷
বিজ্ঞাপন
তবে কেউই এই আলোচনা নিয়ে বেশি আশাবাদী নন৷ তারপরও ভিয়েনায় শুরু হওয়া এই আলোচনায় কিছু একটা ফল বেরিয়ে আসবে – এমটাই মনে করা হচ্ছে৷ ইরানের সাথে আলোচনায় অংশ নিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, চীন, রাশিয়া, ব্রিটেন, ফ্রান্স এবং জার্মানি৷
আলোচনা শুরুর একদিন আগেই অবশ্য ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনেই বলেছেন, এই আলোচনার ফল নিয়ে তিনি খুব একটা আশা করছেন না৷ কেননা তাঁর মনে হয় আলোচনাটা অসমাপ্তই থেকে যাবে৷ তবে খামেনি এও বলেছেন, আলোচনার বিপক্ষে নন তিনি৷
ইরান-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক কোন পথে?
৩৪ বছর ধরে দু দেশের বৈরি সম্পর্ক৷ ইরান আর যুক্তরাষ্ট্র পরস্পরের কাছে আসার বেশ কিছু উদ্যোগ ব্যর্থ করে দিয়ে এখনো পরস্পরবিরোধী অবস্থানে৷ প্রত্যাশা ছুঁয়ে না গেলেও এতদিনে দু দেশের সম্পর্কোন্নয়নের দ্বার খানিকটা খুলেছে৷
ছবি: Getty Images
আশা জাগিয়েছেন রোহানি
গত আগস্টেই ইরানের নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে কাজ শুরু করেছেন হাসান রোহানি৷ শুরুতেই যেসব আশার বাণী শুনিয়েছিলেন সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তোলার ইঙ্গিতও ছিল৷ এবারের জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে তাঁর সদিচ্ছার প্রমাণ আশা করেছিলেন অনেকে৷ সে আশা জাগিয়েই নিউ ইয়র্কে পা রেখেছিলেন রোহানি৷
ছবি: ISNA
ওবামার আহ্বান
জাতিসংঘে নিজের ভাষণে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা একরকম চ্যালেঞ্জই ছুড়ে দিয়েছিলেন রোহানির দিকে৷ বলেছিলেন, ইরানের প্রেসিডেন্ট সম্পর্কোন্নয়নের যে কথা আগে বলেছেন জাতিসংঘের অধিবেশনে, সেই ইচ্ছার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ কিছু কথা বললে যুক্তরাষ্ট্র খুব খুশি হবে৷
ছবি: Reuters
মিথ্যে আশা মরীচিকা
কিন্তু জাতিসংঘে নিজের প্রথম ভাষণে রোহানি সেরকম কিছু বলেননি৷ তাঁর দেশের আণবিক অস্ত্র তৈরির পরিকল্পনা প্রসঙ্গে সরাসরি কিছু না বলে পূর্বসসূরিদের মতো ঠিকই তোপ দাগিয়েছেন ইসরায়েলের বিরুদ্ধে৷ আরো বলেছেন, তাঁর দেশের ওপর চলমান নিষেধাজ্ঞা জনগণের ভোগান্তি বাড়ানোর চেষ্টা মাত্র৷
ছবি: Reuters
ইসরায়েলের সন্দেহ
ইসরায়েলের প্রতিক্রিয়াও যেন অতীতের বক্তব্যের অনুলিপি৷ ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন, ইরান সম্পর্কোন্নয়নের কথা বলে আসলে আণবিক বোমা তৈরির পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সময় নিতে চাইছে৷
ছবি: Reuters/Issam Rimawi
শেষ আশাও দুরাশা
জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে শেষ আশা হয়ে ছিল যুক্তরাষ্ট্র এবং ইরানের প্রেসিডেন্টের সংক্ষিপ্ত সাক্ষাতের সম্ভাবনা, যা বাস্তবায়িত হলে ওবামা আর রোহানির হাত মেলানোর দৃশ্যকে দু-দেশের বন্ধুত্বের ছবি হিসেবে ফ্রেমবন্দি করে রাখা যেতো৷ সেটাও সম্ভব হয়নি৷
ছবি: Getty Images
তবু আশা বেঁধে রাখা
১৯৭৯ সালের পর থেকে ইরান আর যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই৷ দু দেশের প্রেসিডেন্টকে কোথাও হাত মেলাতেও দেখা যায়নি৷ জাতিসংঘে আনুষ্ঠানিক সাক্ষাতটা হলে অন্তত সম্পর্কোন্নয়নের পথ নতুন করে খুলছে বলে আশা করা যেতো৷ ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ জাভাদ জারিফ অবশ্য বলেছেন, রোহানির যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সঙ্গে বৈঠক করতে কোনো আপত্তি ছিল না৷ এটা একটা শুভ সূচনা হতে পারতো, বলেন জারিফ৷
ছবি: Getty Images
6 ছবি1 | 6
এদিকে মার্কিন এক সিনিয়র কর্মকর্তা বলেছেন, ‘‘এটা এমন হতে পারে যে ঠিক আমরা যেটা চাচ্ছি হুবহু তেমন কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যাবে না৷ তবে জাতীয় নিরাপত্তার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় এমন কূটনৈতিক আলোচনা সবচেয়ে ভালো পন্থা, যার কোনো বিকল্প হতে পারে না৷''
গত ২৪শে নভেম্বর জেনেভায় জাতিসংঘের পাঁচ স্থায়ী সদস্য দেশ ও জার্মানি ইরানের সঙ্গে একটি অন্তর্বর্তীকালীন পরমাণু চুক্তি করে৷ চুক্তির অন্তর্ভুক্ত শর্ত অনুযায়ী, ইরানের পরমাণু কর্মসূচির কিছু উদ্যোগ সীমিত করার ব্যাপারে সবাই একমত হয়৷ যেমন পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির উপযোগী ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের মাত্রা কমিয়ে আনবে, যা পাঁচ শতাংশের বেশি হবে না৷ সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের মজুদও কমাবে৷ অর্থাৎ প্রথমবারের মতো পশ্চিমা শক্তি ইরানকে স্বল্প মাত্রায় উইরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের অনুমতি দেয়৷ চুক্তি কার্যকর করার বিনিময়ে ইরানের উপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা পর্যায়ক্রমে শিথিল করার কথা৷ যেমন সোনা, মূল্যবান ধাতু, মোটরগাড়ি ও পেট্রোকেমিকেল রপ্তানির ওপর থেকে কিছু নিষেধাজ্ঞা স্থগিত করা হবে৷ ২০ জুলাই পর্যন্ত নতুন নিষেধাজ্ঞাও জারি করা হবে না৷ শর্ত অনুযায়ী, ২০শে জানুয়ারি থেকে ইরান পরমাণু কর্মসূচি সীমিত করেছে৷