ইরান ও ইরাকের বায়ুসীমা এড়িয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলো ভারতসহ বিশ্বের অধিকাংশ এয়ারলাইন্স৷ লুফৎহানসা তো ইরাকের সঙ্গে বিমান পরিষেবা বন্ধ বুধবার বন্ধই রেখেছিল৷
বিজ্ঞাপন
ইরানের বায়ুসীমা আর নিরাপদ নয়৷ তাই তা এড়িয়ে চলেছে বিশ্বের প্রায় সব বিমানসংস্থা৷ তেহরানে বিমান দুর্ঘটনায় ১৭৬ জনের মৃত্যু এবং ইরাকে মার্কিন সেনা ঘাঁটিতে ইরানের ক্ষেপনাস্ত্র হানার পর এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা৷ এর ফলে অনেক বিমানকে ঘুরপথে যেতে হচ্ছে৷ তাতে গন্তব্যে পৌঁছতে সময় বেশি লাগছে৷ কিন্তু নিরাপত্তার খাতিরে এই অসুবিধা মেনে নিচ্ছে বিমানসংস্থাগুলি৷ কারণ, যেভাবে ইরান প্রত্যাঘাত করেছে, তাতে আমেরিকাও আবার আঘাত হানতে পারে, এমন সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না৷ তখন ইরানকী করবে সেটাও জানা নেই৷ সে জন্য ইরান ও ইরাকের বায়ুসীমা এড়িয়ে চলাই নিরাপদ মনে করেছে বিমানসংস্থাগুলি৷ জেনারেল সোলেইমানিকে হত্যা করার জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের খেসারত দিতে হচ্ছে আবিশ্ব বিমানসংস্থা ও যাত্রীদের৷
ভারতও ও ইরাকের বায়ুসীমা এড়িয়ে চলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এয়ার ইন্ডিয়া জানিয়েছে, নিরাপত্তার কথা ভেবে তারা ইরান ও ইরাকের বায়ুসীমা এড়িয়ে চলবে৷ এমনিতেই তেহরানের ওপর দিয়ে সাধারণত উড়ত না ভারতের বিমানগুলি৷ এবার ইরান ও ইরাকের বায়ুসীমা এড়িয়ে যাওয়ার ভারত থেকে ইউরোপ ও আমেরিকা যেতে ২০ থেকে ৪০ মিনিট বেশি সময় লাগবে৷ মধ্যপ্রাচ্যের দেশে যেতেও সময় কিছুটা বেশি লাগবে৷
যেসব এয়ারলাইন্সের বিমান কখনো বিধ্বস্ত হয়নি
সম্প্রতি বেশ কিছু বিমান দুর্ঘটনার কারণে এই যাত্রা কিছুটা ভীতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ কিন্তু এমন কিছু এয়ারলাইন্স আছে যাদের ফ্লাইট কখনো বিধ্বস্ত হয়নি৷ চলুন দেখা যাক একনজরে৷
ছবি: Wright Electric
হাওয়াইয়ান এয়ারলাইন্স
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই বিমান সংস্থাটি ১৯২৯ সাল থেকে আকাশ পথে যাত্রা শুরু করেছে৷ যদিও ১৯৯৩ থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত লোকসানের মুখে পড়েছিল এটি৷ কিন্তু নিরাপদ যাত্রার ক্ষেত্রে এর তুলনা নেই৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/O. Garcia
ইজিজেট
ব্রিটিশ বাজেট এয়ারলাইন্স ইজিজেট এর পথচলা শুরু হয়েছে ১৯৯৫ সালে৷ এখন পর্যন্ত এই এয়ারলাইন্সের কোনো বিমান দুর্ঘটনার কবলে পড়েনি৷
ছবি: Wright Electric
রায়েন এয়ার
নিরাপদ যাত্রার ক্ষেত্রে এই আইরিশ এয়ারলাইন্সের ভালো রেকর্ড রয়েছে৷ যদিও ২০০৮ সালে রোম যাওয়ার পথে কিছু পাখি যাত্রাপথে বাধার সৃষ্টি করায় জরুরি অবতরণ করতে হয়েছিল বিমানটিকে৷ কিন্তু যাত্রীদের কোনো ক্ষয়-ক্ষতি হয়নি৷ কেবল দু’জন ক্রু কিছুটা আহত হয়েছিলেন৷
ছবি: AP
ভার্জিন
ভার্জিন ব্যান্ডের ভার্জিন আটলান্টিক, ভার্জিন অস্ট্রেলিয়া এবং ভার্জিন অ্যামেরিকা এয়ারলাইন্স – এদের প্রতিটি ফ্লাইটের নিরাপদ যাত্রার রেকর্ড খুবই ভালো৷
ছবি: picture alliance/AP Images/M. Faulkner
এমিরেটস
এমিরেটস এয়ারলাইন্সের পথচলা শুরু হয়েছে ১৯৮৫ সালে৷ এই এয়ারলাইন্সের কোনো ফ্লাইট বড় কোনো দুর্ঘটনার কবলে পড়েনি৷ কেবল একবার দুবাই বিমানবন্দরে ২০১৬ সালের আগস্টে বিমান অবতরণের সময় আগুন ধরে গিয়েছিল ফ্লাইটে৷ বিমানের কোনো আরোহী হতাহত হননি৷ তবে একজন দমকলকর্মী প্রাণ হারিয়েছিলেন৷
ছবি: picture alliance/dpa/M. Gambarini
ইত্তিহাদ
ইত্তিহাদ এয়ারলাইন্সের সেফটি রেকর্ডও ভীষণ ভালো৷ কেবল একবার ফ্রান্সের তুলু বিমানবন্দরে গ্রাউন্ড টেস্টিং-এর সময় একটি ফ্লাইট এত দ্রুতগতিতে যাত্রা শুরু করেছিল যে দেয়ালে গিয়ে আঘাত হানে৷ এতে বিমানের ভেতরে থাকা ন’জন আহত হন৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/K. Jebreili
কাতার এয়ারওয়েজ
২০০৪ সাল থেকে যাত্রা শুরু করেছে কাতার এয়ারওয়েজ৷ বিশ্বের সবচেয়ে নিরাপদ বিমান বলা হয় এই এয়ারলাইন্সের বিমানগুলোকে৷ কিন্তু দু’বার এদের বিমান দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় অগ্নিকাণ্ডের শিকার হয়৷ প্রথমবার আবুধাবিতে ২০০৭ সালে এবং দ্বিতীয়বার ২০১৭ সালে দোহাতে৷ কিন্তু দু’টি ঘটনার কোনোটাই কেউ হতাহত হননি৷
ছবি: Airbus - photo by master films/ H. Goussé
7 ছবি1 | 7
লুফৎহানসা বুধবার ইরাকে কোনও বিমান পাঠায়নি৷ তার অধীনের দুটো বিমানসংস্থাও একই পথে হেঁটেছে৷ এয়ার ফ্রান্স ও কেএলএম ইরান ও ইরাকের বায়ুসীমায় আপাতত ঢুকবে না বলে ঠিক করেছে৷ ইউরোপের বিমান সংস্থাগুলির এই সিদ্ধান্তের ফলে ১৫ হাজার যাত্রী ক্ষতিগ্রস্ত হবেন৷ কিছু গন্তব্যে যাত্রার সময় এক ঘন্টা বেশি লাগবে৷ এর ফলে বিমানসংস্থাগুলি প্রবল ক্ষতির মুখে পড়বে৷ ভাড়া বৃদ্ধির সম্ভাবনাও রয়েছে৷ এমিরেটসও দুবাই থেকে বাগদাদ যাওয়ার বিমান বাতিল করেছে৷ তারা জানিয়ে দিয়েছে, যাত্রীদের নিরাপত্তা তাঁদের কাছে অনেক বেশি জরুরি৷
যেসব বিমান দুর্ঘটনায় যাত্রীরা সবাই বেঁচে ছিলেন
অধিকাংশ সময়ই বিমান দুর্ঘটনা কেড়ে নেয় প্রাণ৷ কদাচিৎ হলেও এমন কিছু বিমান দুর্ঘটনার ঘটনাও ঘটেছে যেখানে বেঁচে ছিলেন সবাই৷ ছবিঘরে থাকছে এমন কিছু বিমান দুর্ঘটনার চিত্র, যেখানে সব যাত্রীই পেয়েছেন সৌভাগ্যের ছোঁয়া৷
ছবি: dpa - Report
ডুরাংগো সৌভাগ্য
এরোমেক্সিকো ফ্লাইট ২৪১৩৷ উত্তর মেক্সিকোর ডুরাংগো শহর থেকে ১০১ জন যাত্রী নিয়ে মেক্সিকো সিটির উদ্দেশ্যে গত ৩১ জুলাই আকাশে উড়ে বিমানটি৷ উড্ডয়নের কিছু সময় পরেই বিমানটি বিধ্বস্ত হয়৷ সৌভাগ্যজনক যে এ ঘটনায় কোনো প্রাণহানি ঘটেনি, তবে ৮০ জনের মতো যাত্রী আহত হয়েছেন৷
ছবি: picture-alliance/Xinhua
হাডসন মিরাকল
এটি ১৫ জানুয়ারী ২০০৯ সালের ঘটনা৷ প্রায় ১৫০-এর অধিক যাত্রী নিয়ে নর্থ কেরলিনার উদ্দেশ্যে যাত্রা করে ইউএস এয়ারওয়েজ এর বিমানটি৷ যাত্রা পথে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দিলে, বিমান চালক ক্যাপ্টেন সুলি সুলেনবার্গার দেখালেন এক অপূর্ব দক্ষতা৷ কোনো বিমানবন্দরে নয়, তিনি বিমানটি অবতরণ করলেন নিউ ইয়র্ক শহরের হাডসন নদীর বরফ-শীতল পানিতে৷ বেঁচে যান যাত্রীরা৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/S. Day
টরেন্টো মিরাকল
প্রায় ৩০০ জন যাত্রী নিয়ে এয়ার ফ্রান্স এয়ারবাস এ৩৪০ আগস্ট ২, ২০০৫ সালে টরেন্টোর পিয়ার্সন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরন করার সময় তীব্র ঝড়ের মুখে পড়ে বিধ্বস্ত হয়৷ভাগ্যক্রমে উদ্ধারকর্মীরা যাত্রীদের সকলকেই কোনো প্রাণহানির ঘটনা ছাড়া উদ্ধার করতে সক্ষম হয়৷ এ ঘটনায় ১২ জন যাত্রী আহত হয়৷
ছবি: dpa - Report
ডেনভারে শুভক্ষণ
কন্টিনেন্টাল এয়ারলাইনস এর বোয়িং ৭৩৭ বিমানটি ডিসেম্বর ২০, ২০০৮ তারিখে যুক্তরাষ্ট্রের ডেনভার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে যাত্রী সহ উড্ডয়নের প্রস্তুতি নিচ্ছিল৷ কিন্ত বিপরীত দিক থেকে আসা তীব্র বাতাসের বেগে বিমানটি রানওয়ে থেকে ছিটকে পড়ে বিমানটি৷ তবে যাত্রীদের সবাই নিরাপদে বেরিয়ে আসেন৷
ছবি: Getty Images/D. Zalubowski
প্রশান্ত মহাসাগরে জরুরি অবতরণ
১৯৫৬ সালের ঘটনা৷ বোয়িং ৩৭৭ স্ট্রাটক্রুইজার ২৪ জন যাত্রী ও সাতজন ক্রু’সহ হনলুলু থেকে সান ফ্রান্সিসকো যাওয়ার পথে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দিলে বৈমানিক বিমানটিকে প্রশান্ত মহাসাগরে জরুরি অবতরণ করেন৷ অবতরণটি যেমন ছিল সফল, আরোহীদের সবাইও ছিলেন নিরাপদ৷
ছবি: gemeinfrei
5 ছবি1 | 5
এছাড়া তেহরানে ইউক্রেন এয়ারলাইন্সের বিমান কেন ভেঙে পড়ল, তার কারণ এখনও স্পষ্ট নয়৷ ইরান দাবি করেছে, দুর্ঘটনার কারণ যান্ত্রিক গোলযোগ৷ ইউক্রেন বিমানসংস্থা প্রথমে সে কথা বললেও পরে জানিয়েছে, বিস্তারিত তদন্ত না করে কারণ বলা সম্ভব নয়৷ কানাডার প্রধানমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেছেন, বিমান দুর্ঘটনার তদন্তে তাঁর দেশের ভূমিকা থাকবে৷ কারণ, দুর্ঘটনায় মৃতদের মধ্য়ে ৬৩ জন কানাডার নাগরিক৷ তিনি জানিয়েছেন, দুর্ঘটনা কেন হয়েছে তা জানাটা কানাডার কাছে খুবই জরুরি৷