মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য এই নিষেধাজ্ঞা বলে জানিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। ইরানের কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
বিজ্ঞাপন
সোমবার ব্রাসেলসে বৈঠকে বসেছিলেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলির পররাষ্ট্র এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রীরা। সেখানেই ঠিক হয়, ইরানের বিরুদ্ধে নতুন করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কারণ, গত কয়েকমাস ধরে সেখানে মানবাধিকার বিঘ্নিত হচ্ছে। প্রশাসন আন্দোলনকারীদের উপর ভয়ংকর অত্যাচার চালাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে নতুন সিদ্ধান্ত বলে জানিয়েছে ইইউ।
ইরানের গুরুত্বপূর্ণ সরকারি পদাধিকারী এবং প্রশাসনিক কর্তাদের বিরুদ্ধে এই নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে। পাশাপাশি এক প্রভাবশালী ইমামের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। মেয়েদের পোশাক এবং পড়াশোনা নিয়ে তিনি বহু কথা বলেছেন। এছাড়াও একজন ইসলাম বিশেষজ্ঞ এবং তিনজন বিচারকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
ইরানে মেয়েদের স্কুলে যাওয়া ঠেকাতে বিষ প্রদান!
ইরানের ১৫টি শহরের অন্তত এক হাজার মেয়ে শিক্ষার্থী বিষাক্ত গ্যাস হামলার শিকার হয়েছে৷ ইরানের স্বাস্থ্য উপমন্ত্রীর দাবি- মেয়েদের স্কুলে যাওয়া ঠেকাতে এমন হামলা চালানো হয়েছে৷
ছবি: Hasan Sarbakhshian/AP/picture alliance
এক হাজার ছাত্রী আক্রান্ত
গত কয়েক মাসে ইরানের ১৫টি শহরের বিভিন্ন স্কুলের প্রায় এক হাজার ছাত্রী বিষাক্ত গ্যাস হামলার শিকার হয়েছেন৷ অভিভাবকদের অভিযোগ, পরিস্থিতি সামলাতে তেমন কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না সরকার৷
ছবি: Social Media/via REUTERS
আক্রান্তদের অভিজ্ঞতা
ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে শিক্ষার্থীরা জানায়, তারা হঠাৎ করেই বিশেষ ধরনের গন্ধ পাচ্ছিল৷ যেমন পচা ডিমের, পচা ফলের বা শক্তিশালী পারফিউমের৷ এরপর তাদের শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল৷ কারো কারো মাথা ঘুরছিল৷ এর ফলে অনেতে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন৷
ছবি: Allison Bailey/NurPhoto/picture alliance
যেখান থেকে শুরু
ইরানের কোম শহরে একটি স্কুলের শিক্ষার্থীরা প্রথম এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হন৷ এরপর একে একে ইরানের ১৫টি শহরের বিভিন্ন স্কুল থেকে একই ধরনের অভিযোগ আসে৷
ছবি: Diego Radames/SOPA Images/ZUMA Press Wirepicture alliance
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য
এমন ঘটনার প্রেক্ষাপটে দেশটির স্বারাষ্ট্রমন্ত্রী আহমাদ ভাহিদি এক সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেন, মানসিক চাপে থাকার কারণে এবং ভয় পেয়েই নাকি মেয়েরা শারীরিকভাবে অসুস্থ অনুভব করছিল৷ যদিও মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, এমনটা হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই৷
ছবি: Allison Bailey/NurPhoto/picture alliance
সন্দেহ স্বাস্থ্য উপমন্ত্রীর
ইরানের স্বাস্থ্য উপমন্ত্রী ইউনেস পাহানি অবশ্য ভিন্ন কথা বলছেন৷ তার বক্তব্য, ‘‘মেয়েদের স্কুল বন্ধ করতেই এমন হামলা চালানো হচ্ছে৷’’ বিষয়টি ইতিমধ্যে দেশের সংসদে উত্থাপন করা হয়েছে৷ বিস্তারিত তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি৷
ছবি: tejaratnews
আতঙ্কে অভিভাবকেরা
ঘটনার প্রতিবাদে বিভিন্ন স্কুলের সামনে প্রতিবাদ করছেন অভিভাবকেরা৷ রাজধানী তেহরানের বাসিন্দা এক মা ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘অনেক অভিভাবাকই মেয়েদের স্কুলে না পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন৷’’
ছবি: Isna
শিক্ষকদের বিক্ষোভ
এদিকে ঘটনার পর শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার দাবিতে দেশব্যাপী বিক্ষোভের ডাক দিয়েছে ইরানিয়ান টিচার্স ট্রেড অ্যাসোসিয়েশন৷ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক পোস্টে সংগঠনটির সদস্য মোহাম্মদ হাবিবি বলেন, ‘‘এই ঘটনার সাথে যারা জড়িত তাদের জানা থাকা উচিত যে, আমাদের সর্বোচ্চ সীমারেখা হলো শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা৷’’
ছবি: eghtesadnews
7 ছবি1 | 7
গত সেপ্টেম্বর মাসে ২২ বছরের কুর্দ নারী জিনা আমিনি নিহত হন। পুলিশের হেফাজতে তার মৃত্যু হওয়ার পরেই গোটা ইরানজুড়ে বিক্ষোভ শুরু হয়। হাজার হাজার নারী রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করতে থাকেন। বহু মানুষ সরাসরি সরকারের নীতির বিরুদ্ধে প্রশ্ন তোলেন। প্রশাসন নির্মমভাবে সেই বিক্ষোভ দমন করেছে। হাজার হাজার প্রতিবাদকারীকে জেলে ঢোকানো হয়েছে। তাদের উপর অত্যাচার চালানো হয়েছে। এরই প্রতিবাদে নতুন নিষেধাজ্ঞা বলে জানিয়েছে ইইউ।
বস্তুত, জাতিসংঘ নিয়োজিত এক অফিসারের বক্তব্য, ইরান যা করেছে এবং করছে, তা অপরাধ বলে বিবেচিত হওয়া উচিত। ইরানের পরিস্থিতির উপর নজর রাখছেন ওই ব্যক্তি।
ইরানে ‘নারী, জীবন, স্বাধীনতা!’ প্রতিবাদের তিন মাস
গত সেপ্টেম্বরে মাহসা আমিনির মৃত্যু ইরানে গত কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় প্রতিবাদের সূচনা করেছিল৷ সেই প্রতিবাদ দমনে সর্বশক্তি প্রয়োগ করেছে দেশটির শাসকগোষ্ঠী৷ তবুও থামেনি প্রতিবাদ৷
ছবি: LOUISA GOULIAMAKI/AFP/Getty Images
বিপ্লবের প্রতীক
চুল হিজাবে ঠিকভাবে ঢাকা না হওয়ার অভিযোগে আমিনিকে ১৩ সেপ্টেম্বর আটক করেছিল ইরানের নীতি পুলিশ৷ এর কদিন পর ১৬ সেপ্টেম্বর তার মৃত্যুর ঘোষণা আসে৷ তার আগে আমিনি হাসপাতালে কোমায় ছিলেন৷ আমিনির এই অস্বাভাবিক মৃত্যু গোটা ইরানে প্রতিবাদের সূচনা করে৷
ছবি: Kenzo Tribouillard/AFP
‘নারী, জীবন, স্বাধীনতা!’
আমিনির কুর্দি জন্মস্থান সাক্কাজে তার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া থেকে ১৭ সেপ্টেম্বর প্রতিবাদের শুরু হয়৷ নারীরা তাদের হিজাব খুলে বাতাসে উড়িয়ে ইরানি ভাষায় ‘‘নারী, জীবন, স্বাধীনতা!’’ বলে শ্লোগান দিয়েছেন৷ ২৬ অক্টোবর আমিনির কবরস্থানে হাজির হয়েছিলেন কয়েক হাজার মানুষ৷ ছবিটি সেখানে তোলা৷
ছবি: UGC/AFP
আয়াতুল্লাহদের বিরুদ্ধে ঐতিহাসিক বিদ্রোহ
আমিনির মৃত্যু ঐতিহাসিক এক আন্দোলনের শুরু করেছে৷ উৎপীড়নকারী সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে কেঁপে উঠেছে গোটা ইরান৷ ছবিটি সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে তেহরানে তোলা৷ শুধু নারীরা নয়, সব বয়সের, জাতের মানুষ এই আন্দোলনে শরিক হয়েছেন৷
ছবি: AFP
হিজাব এবং ভয় ছাড়া
গত তিনমাসে ইরানের পশ্চিমাঞ্চলের রাস্তায় হিজাব ছাড়া নারীর সংখ্যা বেড়েছে৷ ইরানের আইন অনুযায়ী, হিজাব ছাড়া বাইরে গেলে বেত্রাঘাত এবং কারাদণ্ড হতে পারে৷ কিন্তু নারীরা তাসত্ত্বেও সাহস দেখাচ্ছেন৷
ছবি: SalamPix/abaca/picture alliance
শাসক গোষ্ঠীর সহিংস প্রতিরোধ
প্রতিবাদকারীদের দমনে সহিংসতার পথ বেছে নিয়েছে ইরানের শাসকগোষ্ঠী৷ এজন্য পুলিশ এবং কুখ্যাত এক আধাসামরিক বাহিনীকে মোতায়েন করা হয়েছে৷ মানবাধিকার সংগঠনগুলোর হিসেব অনুযায়ী, নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে প্রাণ হারিয়েছেন চারশোর বেশি মানুষ, যাদের মধ্যে অনেক শিশু এবং তরুণ রয়েছে৷
ছবি: AFP
নির্মম আক্রমণ
প্রতক্ষ্যদর্শীরা জানান, পুলিশ এবং আধাসামরিক বাহিনীর সদস্যরা প্রতিবাদকারীদের নির্মমভাবে পেটানোর পাশাপাশি তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছুঁড়েছে৷ তেহরানের পুলিশ ভ্যানে আটক এই নারীর মতো ১৪ হাজার মানুষকে কারাবন্দি করেছে ইরানের শাসকগোষ্ঠী৷
ছবি: SalamPix/ABACA/picture alliance
চুল কেটে প্রতিবাদ
ইরানের শাসকগোষ্ঠীর পতনের দাবিতে প্যারিস থেকে সান ফ্রান্সিসকো অবধি সারা বিশ্বে বিক্ষোভে অংশ নিয়েছেন হাজার হাজার মানুষ৷ ইস্তাম্বুলে ইরানি কনস্যুলেটের সামনে এক নারী চুল কেটে প্রতিবাদ জানিয়েছেন৷
ছবি: YASIN AKGUL/AFP/Getty Images
প্রতীকী সমর্থন
গত ১৩ ডিসেম্বর বার্লিনের ব্রান্ডেনবুর্গ গেটের উপর আলো ফেলে কুর্দি ভাষায় লেখা হয় ‘নারী, জীবন, স্বাধীনতা!’৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের টাইম ম্যাগাজিন ইরানি নারীদের ‘হিরোস অব দ্য ইয়ার’ ঘোষণা দিয়েছে৷
ছবি: Markus Schreiber/AP/picture alliance
দুই বন্দিকে ফাঁসি
ইরানে সরকারবিরোধী প্রতিবাদ কর্মসূচিতে অংশ নেয়া দুই প্রতিবাদকারী ব়্যাপার মোহসিন শেখারি এবং মজিদরেজা রাহনাভার্দকে ইতোমধ্যে মৃত্যদণ্ড দেয়া হয়েছে৷ অন্তত ৩৮ জনকে কথিত ‘সৃষ্টিকর্তার বিরুদ্ধে শত্রুতার’ অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইরান৷ দেশটিতে শিশুদেরও মৃত্যুদণ্ড দেয়ার বিধান রয়েছে৷
ছবি: AFP/Getty Images
9 ছবি1 | 9
সুইডেনের সদস্যপদ
এদিন ব্রাসেলসের বৈঠকে ন্যাটোয় সুইডেনের সদস্যপদ পাওয়া নিয়েও দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে। ন্যাটো প্রধান জেমস স্টলটেনবার্গ জানিয়েছেন, ফিনল্যান্ড নিয়ে অনেকটাই সুর নরম করেছে তুরস্ক। কিন্তু সুইডেনকে তারা এখনো সদস্যপদ দিতে রাজি নয়। কিন্তু সুইডেনের ন্যাটোর সদস্যপদ পাওয়া অত্যন্ত জরুরি। ফলে আলোচনা চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে।