মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও সোমবার ইরানকে ১২টি শর্ত পূরণ করতে বলেছেন৷ নইলে দেশটিকে ‘নজিরবিহীন অর্থনৈতিক চাপের' মুখোমুখি হতে হবে বলেও হুমকি দেন তিনি৷
বিজ্ঞাপন
শর্তগুলোর মধ্যে আছে, ব্যালিস্টিক মিসাইল কর্মসূচি স্থগিত করা, সিরিয়া ও ইয়েমেনে হস্তক্ষেপ বন্ধ করা, বেসামরিক পরমাণু কর্মসূচির পরিসর ছোট করা এবং হামাস, হেজবোল্লাহ ও প্যালেস্টিনিয়ান ইসলামিক জিহাদ সংগঠনকে সমর্থন দেয়া বন্ধ করা৷
যুক্তরাষ্ট্রের থিংক ট্যাংক হেরিটেজ ফাউন্ডেশনে দেয়া বক্তব্যে পম্পেও এসব শর্তের কথা উল্লেখ করেন৷ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরান চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে সরিয়ে নেয়ার ঘোষণার দুই সপ্তাহ পর এই বক্তব্য রাখলেন পম্পেও৷ ট্রাম্পের ঘোষণার পর ইরানের উপর চুক্তি পূর্ববর্তী নিষেধাজ্ঞা আবার বলবৎ করে যুক্তরাষ্ট্র৷ এছাড়া ইরানের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক থাকা কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধেও নিষেধাজ্ঞার কথা বলা হয়৷
পম্পেও হুমকি দিয়ে বলেন, ‘‘যদি (ইরান) সরকার তার বর্তমান অগ্রহণযোগ্য ও অলাভজনক নীতি থেকে সরে না আসে, তাহলে নিষেধাজ্ঞার মাত্রা বাড়তেই থাকবে৷’’
পম্পেওর বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রোহানি বলেছেন, তাঁর দেশ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার কোনো অধিকার ওয়াশিংটনের নেই৷ ‘‘বিশ্বের সব দেশই সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে স্বাধীনতা চায়,’’ বলেন তিনি৷ এরপর তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘‘ইরান ও বিশ্ব নিয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার তুমি কে?’’
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভেদ জারিফ পম্পেওর পরিকল্পনাকে ‘পুরনো অভ্যাসে প্রত্যাবর্তন’ বলে মন্তব্য করেন৷ এক টুইটার পোস্টে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসনের বিরুদ্ধে ‘ব্যর্থ নীতি আর দুর্নীতিপরায়ন বিশেষ স্বার্থ দ্বারা পরিচালিত’ হওয়ার অভিযোগ আনেন৷
ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র বিষয়ক প্রধান ফেডেরিকা মোঘেরিনি বলেন, পম্পেও তাঁর বক্তব্যে পরমাণু চুক্তি থেকে সরে আসার মাধ্যমে ঐ অঞ্চলে কীভাবে শান্তি ফিরে আসবে তা তুলে ধরতে ব্যর্থ হয়েছেন৷ ইরান যতদিন চুক্তির শর্ত মেনে চলবে ততদিন ইইউ চুক্তিতে থাকবে বলেও জানান তিনি৷
জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাইকো মাস বলেছেন, পম্পেওর বক্তব্যে তিনি অবাক হননি৷ তবে এই মুহূর্তে ইরান চুক্তির বিকল্প নেই বলেও মন্তব্য করেন তিনি৷ পম্পেওর সঙ্গে আলাপ করতে চলতি সপ্তাহে ওয়াশিংটন যাবেন বলেও জানান জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী৷
এদিকে, ‘ব্রুকিংস সেন্টার ফর মিডল ইস্ট পলিসি’র সুজানে ম্যালোনে বলেছেন, ‘‘পম্পেও কোনো কৌশল তুলে ধরেননি৷ তার পরিবর্তে তিনি তাঁর কিছু চাওয়ার তালিকা তুলে ধরেছেন, যার একমাত্র ব্যাখ্যা হতে পারে ইরানে সরকার পরিবর্তনের ডাক৷’’
জেডএইচ/এসিবি (এএফপি, রয়টার্স)
ইরান: সভ্যতার এক সূতিকাগার
ইরানের ইতিহাস অনেক পুরনো৷ সেই সময়কার বিভিন্ন নিদর্শন ও সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে জার্মানির বন শহরে হয়েছিল একটি প্রদর্শনী৷
ছবি: Bundeskunsthalle Bonn
চার মাসব্যাপী প্রদর্শনী
প্রায় আট হাজার বছর আগে খ্রিষ্টপূর্ব ষষ্ঠ সহস্রাব্দে এই এক ঘরের ভবনটি তৈরি করা হয়েছিল৷ জার্মানির বন শহরের এক মিউজিয়ামে প্রাচীন ইরানের বিভিন্ন নিদর্শনের প্রদর্শনী চলছে৷ খ্রিষ্টপূর্ব ষষ্ঠ সহস্রাব্দ থেকে খ্রিষ্টপূর্ব ৫২২ সাল পর্যন্ত ঐ অঞ্চলের মানুষজন কীভাবে বসবাস করতেন, তা প্রদর্শনীতে তুলে ধরা হচ্ছে৷
ছবি: National Museum of Iran/Bundeskunsthalle Bonn
দ্য টাওয়ার অফ বাবেল
বিশেষজ্ঞরা এই টাওয়ারকে ইতেমেনানকি নামের একটি ‘জিগুরাত’ বা প্রাসাদ-কমপ্লেক্সের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মনে করেন৷ আলেকজান্ডার দি গ্রেট এটি ধ্বংস করেন৷ ‘ইহুদিদের বাইবেল’ বলে পরিচিত ‘তানাখ’-এর প্রথম গ্রন্থ ‘জেনেসিস’-এ এই টাওয়ারের কথা উল্লেখ আছে৷ খ্রিষ্টানদের বাইবেলের প্রথম অংশ ‘ওল্ড টেস্টামেন্ট’-এও আছে এই টাওয়ারের কথা৷
ছবি: Bundeskunsthalle Bonn
দ্য রয়েল গেম অফ উর
অন্যতম প্রাচীন বোর্ড গেম হচ্ছে ‘ব্যাকগ্যামন’৷ বন শহরের প্রদর্শনীতে সোপস্টোন দিয়ে তৈরি কয়েকটি ব্যাকগ্যামন বোর্ডও দেখানো হচ্ছে৷ এগুলোতে সাপ আর পাখির নকশা রয়েছে৷ খ্রিষ্টপূর্ব তৃতীয় সহস্রাব্দে পশ্চিম এশিয়ায় ‘দ্য রয়েল গেম অফ উর’ খেলা হতো৷ ‘গেম অফ ২০ স্কয়্যার’ নামে পরিচিত খেলাটি আজও জনপ্রিয়৷
ছবি: National Museum of Iran/Bundeskunsthalle Bonn
পাঁচ হাজার বছর আগের
ক্লোরাইট দিয়ে তৈরি এই পাত্রটি খ্রিষ্টপূর্ব তৃতীয় সহস্রাব্দের৷ ইরানের জিরফট শহরের সমতল ভূমি থেকে এটি উদ্ধার করা হয়েছে৷
ছবি: National Museum of Iran/Bundeskunsthalle Bonn
দক্ষতার পরিচয়
সেই সময়কার ধনি ব্যক্তিরা স্বর্ণখচিত এই ধরণের (ছবি) পাত্রে ওয়াইন পান করতেন৷ এসব পাত্রের নকশা ও কারুকাজ দেখলে তখনকার মানুষদের ব্যবহারিক ও প্রযুক্তি বিষয়ক দক্ষতা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়৷
ছবি: National Museum of Iran/Bundeskunsthalle Bonn
রাজকন্যাদের সমাধিতে
এসব স্বর্ণালংকার পাওয়া গেছে দুজন এলামাইট রাজকন্যার সমাধিতে৷ পারস্য উপসাগরের কাছে অবস্থিত ইরানের জুবাজি গ্রামে ২০০৭ সালে এগুলো পাওয়া যায়৷ সমাধিতে স্বর্ণালংকার ছাড়াও খাবার ও ধর্মীয় বিষয়াদিও দিয়ে দেয়া হতো বলে জানা যায়৷
ছবি: Bundeskunsthalle Bonn/D. Ertl
রাজার প্রাসাদ
খ্রিষ্টপূর্ব ১২৭৫ থেকে ১২৪০ পর্যন্ত রাজত্ব করা রাজা উনতাশ-নাপিরিশা শোঘা জানবিল শহরে বাস করতেন৷ তিনটি উঁচু দেয়াল দিয়ে শহরটি ঘেরা ছিল৷ ঐ স্থানে হাজার হাজার ইট পাওয়া যাওয়ায় বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, শহরের আকার বাড়ানোর হয়ত পরিকল্পনা ছিল৷
ছবি: Bundeskunsthalle Bonn
পৃথিবীতেই যেন স্বর্গ
প্রদর্শনীর একটি জায়গায় ছোট আকারে ‘পার্সিয়ান গার্ডেন’ তৈরি করা হয়েছে৷ ইউনেস্কোর ঐতিহ্যের একটি অংশ হচ্ছে এই বাগান৷ পার্সিয়ান গার্ডেন মানেই হচ্ছে মাঝখানে থাকবে পানির ফোয়ারা আর পাশে ফুলের বাগান৷ সঙ্গে থাকবে বসার জায়গা, যেখান থেকে দর্শকরা সৌন্দর্য্য উপভোগ করবেন৷