বৃহস্পতিবারই নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা হতে পারে। তার আগে জাতিসংঘে এনিয়ে বৈঠক হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
রাশিয়াকে ড্রোন দেওয়ার অপরাধে ইরানের বিরুদ্ধে একগুচ্ছ নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। জোসেপ বরেলের মুখপাত্র বুধবার জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার দুপুর নাগাদ এই নিষেধাজ্ঞার প্যাকেজ প্রকাশ করা হতে পারে।
সম্প্রতি ইউক্রেনেইরানের তৈরি ড্রোন পাওয়া গেছে। রাশিয়া ওই ড্রোনের সাহায্যে ইউক্রেনে হামলা চালাচ্ছিল বলে অভিযোগ। ইউক্রেন গুলি করা তা নামিয়েছে। ইরানে তৈরি শাহেদ-১৩৬ মডেলের ওই ড্রোন কীভাবে রাশিয়ার হাতে গেল সেইটেই সবচেয়ে বড় প্রশ্ন। ইউরোপীয় ইউনিয়নের দাবি, ইরান রাশিয়াকে ওই ড্রোন সরবরাহ করেছে। ইরান অবশ্য এই দাবি সম্পূর্ণ অস্বীকার করেছে। রাশিয়াকে কোনো অস্ত্রই তারা বেচেনি বলে বুধবার সরকারের তরফে বিবৃতি দেওয়া হয়েছে।
রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধে ইউক্রেনের অস্ত্র-সম্ভার
পশ্চিমা দেশগুলির সহযোগিতায় রাশিয়ার বিরুদ্ধে লড়ছে ইউক্রেন। কী কী অস্ত্র আছে ইউক্রেনের হাতে?
ছবি: Sergey Kohl/Zoonar/IMAGO
সাহায্যের পরিমাণ
সাহায্যের নিরিখে সবচেয়ে বেশি অর্থ খরচ করেছে অ্যামেরিকা। আট দশমিক ৭৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের সাহায্য পাঠিয়েছে। পোল্যান্ড দিয়েছে এক দশমিক ৮৩ বিলিয়ন। যুক্তরাজ্যের সাহায্যের পরিমাণ এক দশমিক ৩৬ বিলিয়ন। জার্মানি খরচ করেছে শূন্য দশমিক ৬৭ বিলিয়ন ডলার।
ছবি: Yasuyoshi chiba/AFP
হাইমারস রকেট
অ্যামেরিকা ইউক্রেনকে হাইমারস রকেট লঞ্চার সিস্টেম দিয়েছে। প্রায় একডজন হাইমারস দিয়েছে অ্যামেরিকা। এই রকেট সিস্টেমের সাহায্যে ৮০ কিলোমিটার দূরের লক্ষ্যবস্তুতে আক্রমণ চালানো যায়। ঘণ্টায় ৮৫ কিলোমিটার বেগে লক্ষ্যবস্তুতে পৌঁছায় এই রকেট। রাশিয়ার হাতে এত ভালো রকেট সিস্টেম নেই বলে বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য। রাশিয়া বিএম-৩০ দূরপাল্লার রকেট ব্যবহার করছে। যার ৭০ কিলোমিটার পর্যন্ত যেতে পারে।
ছবি: Gabrielle Quire/abaca/picture alliance
হাউইৎজারের ব্যবহার
চলতি বছরে অস্ট্রেলিয়া, ক্যানাডা এবং অ্যামেরিকা পৃথকভাবে মোট ১০০টি হাউইৎজার দিয়েছে ইউক্রেনের সেনাকে। এম৭৭৭ হাউইৎজারের সঙ্গে ১৫৫ মিলিমিটারের তিন লাখ রাউন্ড কার্তুজ দেওয়া হয়েছে। রাশিয়ার সবচেয়ে ভালো হাউইৎজারের সমকক্ষ এই এম৭৭৭।
ছবি: AP Photo/Efrem Lukatsky/picture alliance
ট্যাঙ্ক ধ্বংসকারী অস্ত্র
ইউক্রেনের হাতে এখন পাঁচ হাজার ট্যাঙ্ক ধ্বংসকারী অস্ত্র আছে। কাঁধে নিয়ে এই অস্ত্র চালাতে হয়। অ্যামেরিকা এবং ইউরোপের একাধিক দেশ ইউক্রেনকে এই অস্ত্র দিয়েছে। এর সাহায্যে ২২ থেকে ৮৭৫ গজের মধ্যে থাকা ট্যাঙ্ক ধ্বংস করা যায়। জার্মানি ইউক্রেনের সেনাবাহিনীকে এই অস্ত্র চালানোর প্রশিক্ষণও দিয়েছে। যুদ্ধে এই অস্ত্র ইউক্রেনকে বহু জায়গায় জয় পেতে সাহায্য করেছে।
ছবি: Andrew Chittock/StockTrek Images/IMAGO
ট্যাঙ্কের পরিমাণ
পোল্যান্ড এবং চেক রিপাবলিক ইউক্রেনকে মোট ২৩০টি ট্যাঙ্ক দিয়েছে। টি-৭২এম১ ট্যাঙ্কের ওজন ৪৬ টন। তিনজন ভিতরে বসতে পারেন। ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটার বেগে দৌড়তে পারে এই ট্যাঙ্ক। আঘাত হানতে পারে চার কিলোমিটার দূরের লক্ষ্যবস্তুতে। এছাড়াও যুক্তরাজ্যের চ্যালেঞ্জার-২ ট্যাঙ্ক এবং ইউক্রেনের পুরনো টি-৭২ ট্যাঙ্কও তাদের কাছে আছে।
ছবি: Inna Varenytsia/AP/picture alliance
ড্রোনের ব্যবহার
ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধে প্রচুর ড্রোনের ব্যবহার হচ্ছে। ইউক্রেনকে বেশ কিছু ড্রোন বিক্রি করেছে তুরস্ক। যার সাহায্যে ইউক্রেন নজরদারি করছে, আবার আক্রমণও চালাচ্ছে। তুরস্কের বায়রাকটার টিবি-২ ড্রোন ২৫ হাজার ফুট পর্যন্ত উড়তে পারে। ৩০০ কিলোমিটার পাড়ি দিতে পারে। ছুটতে পারে ২২০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টায়। ৪এমএএম-এল লেজার গাইডেড বোমা নিয়ে যেতে পারে এই ড্রোন।
ছবি: PETRAS MALUKA/AFP/Getty Images
এয়ার ডিফেন্স
সম্প্রতি জার্মানি ইউক্রেনকে একটি আইআরআইএস-টি এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম পাঠিয়েছে। আরো তিনটি কিছুদিনের মধ্যেই পাঠানোর কথা। অত্যাধুনিক এই অস্ত্র রাশিয়ার হাতে নেই। এছাড়াও অ্যামেরিকার কাছ থেকে তারা এনএএসএএমএস সারফেস টু এয়ার মিসাইল সিস্টেম পেয়েছে। স্লোভাকিয়া এস-৩০০ এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম দিয়েছে। এস-৩০০ এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম ৯০ কিলোমিটার দূর পর্যন্ত কাজ করতে পারে। ২০০ কিলোমিটার দূরের মিসাইল ট্র্যাক করতে পারে।
ছবি: Diehl Defence
7 ছবি1 | 7
বুধবারই ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য এবং অ্যামেরিকার আবেদনে ইরান নিয়ে জাতিসংঘে একটি উচ্চপর্যায়ের রুদ্ধদ্বার বৈঠক হয়েছে। সেই বৈঠক শেষ হওয়ার পরেই নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা সিদ্ধান্ত নেয় ইইউ। বৃহস্পতিবার যা ঘোষণা করা হবে।
ইউরোপ এবং অ্যামেরিকার দাবি, জাতিসংঘের ২২৩১ নম্বর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ইরান রাশিয়াকে অস্ত্র বিক্রি করতে পারে না। ২০১৫ সালে এই সিদ্ধান্ত হয়েছিল। ইরান আরো কিছু চুক্তিতে আবদ্ধ বলে দাবি করা হয়েছে। যদিও ডনাল্ড ট্রাম্পের আমলে বেশ কিছু চুক্তি ভেঙেও গেছিল। তবে সার্বিকভাবে ইরান অস্ত্র বিক্রি করতে পারবে না বলে আগে থেকেই চুক্তিবদ্ধ। ইরান সেই নীতিই লঙ্ঘন করেছে বলে অভিযোগ। আর সে জন্যই তাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা করা হবে।
পরমাণু চুক্তি নিয়ে ইরানের সঙ্গে পশ্চিমা দেশগুলির এখনো যথেষ্ট জটিলতা চলছে। ইরানের উপর অ্যামেরিকার একাধিক নিষেধাজ্ঞা জারি আছে। এরপর ইইউ নতুন করে আরো নিষেধাজ্ঞা চাপানোর পরিকল্পনা করছে।