তেহরানের আজাদী চত্বরে দেয়া ভাষণে রুহানি সামরিক শক্তি ও ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি বাড়ানোরও অঙ্গীকার করেন৷ তিনি বলেন, ‘‘বিভিন্ন ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র বানাতে এবং সামরিক শক্তি বাড়াতে আমরা কারো অনুমতি চাইনি এবং ভবিষ্যতেও চাইবো না৷''
এইসময় ইরানের পতাকা এবং ৪০ বছর আগে বিপ্লবের সময় পরিচিত হয়ে ওঠা বিভিন্ন শ্লোগান লিখিত ব্যানার নিয়ে উপস্থিত হয়েছিলেন হাজারো মানুষ৷ এসব শ্লোগানের মধ্যে ছিল ‘ইসরায়েল নিপাত যাক, যুক্তরাষ্ট্র নিপাত যাক'৷
আরেকটি ব্যানারে লেখা ছিল, ‘‘অ্যামেরিকার হতাশা বাড়িয়ে বিপ্লবের ৪০ বছর পূর্তি হয়েছে৷''
উল্লেখ্য, ১৯৭৯ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি ইরানের সেনাবাহিনী নিরপেক্ষ থাকার ঘোষণা দেয়৷ ফলে দেশটিতে ক্ষমতায় থাকা যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত রাজবংশের পতন ত্বরান্বিত হয়েছিল৷ ঐ সময় মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছিল ইরান৷
৭০-এর দশকে শিয়া অধ্যুষিত ইরানে মুহাম্মদ রেজা শাহ পাহলভির শাসনে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে ইরানের জনগণ৷ সেই ক্ষোভের সুযোগ নিয়ে ধর্মীয় নেতা ইমাম খোমেনী ১৯৭৯ সালে অভ্যুত্থান ঘটান৷ ছবিতে তারই কিছু দৃশ্য...
ছবি: picture-alliance/AP Photo/V. Salemiইরানের শাসক রেজা শাহ পাহলভির একনায়কতন্ত্র ও অত্যাধিক আমেরিকাপ্রীতিকে বিপ্লবের বীজ বপনের কারণ বলে মনে করেন অনেক বিশ্লেষক৷ ইরানের হাজার বছরের সংস্কৃতিতে পশ্চিমা, বিশেষত মার্কিন আগ্রাসনকে মেনে নিতে পারেনি দেশটির জনগণ৷ সে কারণেই খোমেনিকে সমর্থন দিয়েছেন হাজারো জনগণ৷
ছবি: picture-alliance/Everett Collectionইরানের শেষ সম্রাট রেজা শাহ পাহলভি৷ পৃথিবীর ইতিহাসের সবচেয়ে প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী রাজতন্ত্রের বংশধর ছিলেন তিনি৷ তাঁর বংশ আড়াই হাজার বছরের পুরোনো পারস্য রাজতন্ত্রের ধারক ছিল৷ ১৯৫৩ সালে জনভোটে বিজয়ী প্রধানমন্ত্রী মোসাদ্দেককে হটিয়ে ব্রিটিশ ও মার্কিন মদতে সর্বময় ক্ষমতায় যাওয়ার পথ সুগম করেন রেজা শাহ পাহলভি৷ ৬৭ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমতা গ্রহণ করেন।
ছবি: picturealliance/AP Photoঅ্যামেরিকার পাপেট বা পুতুল বলে পরিচিত ছিলেন রেজা শাহ পাহলভি৷ তাঁর শাসনামলে ইরানের সংস্কৃতিগত সংকটের পাশাপাশি অর্থনৈতিক সংকটও পরিলক্ষিত হচ্ছিল৷ বিশেষ করে তেল ব্যবসায় প্রায় একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণে ছিল ব্রিটিশ ও অ্যামেরিকান কোম্পানি৷ সংস্কৃতিগত অবক্ষয়ে ধর্মপ্রাণ ইরানি মুসলমানদের মধ্যে রাজতন্ত্রবিরোধী ক্ষোভ দানা বাঁধে৷
ছবি: picture-alliance/akg-images/H. Vassal৪০ বছর আগে আয়াতোল্লাহ খোমেনি ফ্রান্সে তাঁর নির্বাসিত জীবন শেষে ইরানে ফিরে ইসলামি বিপ্লবের সূচনা করেছিলেন৷ খোমেনি ছিলেন ইরানের ধর্মীয় নেতা৷ ১৯৭৮ সালে আয়াতোল্লাহ খোমেনি ইরাকে শিয়াদের পবিত্র নগরী নাজাফে কড়া পাহারায় নির্বাসিত ছিলেন৷ পরে ইরাক থেকে তাঁকে বিতাড়িত করা হয়৷ তখন তিনি ফ্রান্সে আশ্রয় নেন এবং পরে ইরানের বিপ্লবে ভূমিকা রাখেন৷
ছবি: Imago/Zuma/Keystone১৯৭৮ সালের ৮ সেপ্টেম্বর শুক্রবার তেহরানে শাহবিরোধী এক বিশাল জনসমাবেশ হয়৷ সেদিন শাহের বাহিনী নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করে কয়েকশ’ বিক্ষোভকারীকে৷ সেই সমাবেশে ৬০-৭০ লাখ জনসমাগম হয়৷ ইরানের বিপ্লবের পর সেই দিনটিকে ‘ব্ল্যাক ফ্রাইডে’ নাম দেওয়া হয়৷
ছবি: akairan.com১৯৭৯ সালের ১৬ জানুয়ারি পালিয়ে যান শাহ৷ এর আগে জনবিক্ষোভের মুখে ক্ষমতা ছেড়ে দিয়ে ৪ জানুয়ারি তিনি প্রধানমন্ত্রী শাপর বখতিয়ারকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রধান ঘোষণা করেন৷ শাহ পালিয়ে পরিবারসহ তিনি মিশরে চলে যান৷
ছবি: akairan.com১৯৭৯ সালের জানুয়ারি মাসেই নির্বাসিত খোমেনিকে দেশে ফেরার অনুমতি দেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রধান শাপর বখতিয়ার৷ ১৫ বছর নির্বাসনে কাটিয়ে ১ ফেব্রুয়ারি দেশে ফেরেন খোমেনি৷ সেই সময় বিমানবন্দরে লাখো লোক তাঁকে স্বাগত জানান৷
ছবি: akairan.com১৯৭৯ সালের ১১ ফেব্রুয়ারিতে ইমাম খোমেনির নেতৃত্বে শাহের ক্ষমতাসীন প্রশাসনকে হটানো হয়৷ সেই সময় ইসলামী বিপ্লবের প্রধান নেতা হিসেবে প্রশাসনের দায়িত্ব গ্রহণ করেন খোমেনি৷ এরপর থেকেই ১১ ফেব্রুয়ারিকে ইরানের বিপ্লব দিবস হিসেবে পালন করা হয়৷
ছবি: atraknews.comইসলামী বিপ্লবের বিজয়ের মাত্র দুই মাস পর ৩০ মার্চ দেশটিতে এক ঐতিহাসিক গণভোট অনুষ্ঠিত হয়৷ ওই গণভোটের মাধ্যমে ইরানের জনগণ ইসলামী প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পক্ষে রায় দেন৷ সেই সময় ইসলামী প্রজাতন্ত্রের পক্ষে ৯৮ দশমিক ২ শতাংশ ভোট পড়েছিল৷ এরপর ১৯৭৯ সালের ১ এপ্রিল ইরানকে ইসলামী প্রজাতন্ত্র হিসেবে ঘোষণা করা হয়৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/V. Salemi এর আগে ইসলামি বিপ্লবের ৪০ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে বিমানবাহিনীর এক অনুষ্ঠানে দেয়া বক্তব্যে ইরানের বর্তমান সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনেই ‘অ্যামেরিকা নিপাত যাক' শ্লোগানের ব্যাখ্যা দেন৷ তিনি বলেন, এই শ্লোগান অ্যামেরিকার ‘অশুভ' শাসকদের বিরুদ্ধে, জনগণ নয়৷ ‘‘যুক্তরাষ্ট্র অশুভ আত্মা দ্বারা পরিচালিত৷ আর ওরা প্রশ্ন করে, আমরা কেন বলি ‘অ্যামেরিকা নিপাত যাক'৷ যতদিন তারা তাদের ধূর্ত কাজকর্ম চালিয়ে যাবে, ততদিন আমরা এই শ্লোগান বাতিল করবো না,'' বলেন খামেনেই৷
উল্লেখ্য, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গতবছর ইরানের সঙ্গে ২০১৫ সালে স্বাক্ষরিত চুক্তি থেকে সরে আসার ঘোষণা দেন৷ এবং দেশটির উপর পুনরায় নিষেধাজ্ঞা জারি করেন৷ ইরানকে পরমাণু কর্মসূচি থেকে দূরে রাখতে ২০১৫ সালে দেশটির সঙ্গে জাতিসংঘের স্থায়ী পাঁচ সদস্য, জার্মানি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের চুক্তি হয়েছিল৷
জেডএইচ/এসিবি (এএফপি, রয়টার্স)