হজ যাত্রার বিষয়ে সৌদি আরবের সঙ্গে চুক্তি সাক্ষর না করেই দেশে ফিরে গেলেন ইরানের প্রতিনিধিরা৷ ফলে এ বছর ইরানি মুসল্লিরা হজ যাত্রা করতে পারবেন না৷ দুই দেশ পরস্পরকে এ জন্য দায়ী করছে৷
বিজ্ঞাপন
বেশ কিছুকাল ধরে সৌদি আরব ও ইরানের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি ঘটে চলেছে৷ এবার হজ যাত্রাকে কেন্দ্র করে তা নতুন মাত্রা পেল৷ রবিবার ইরান জানিয়েছে, এ বছর সে দেশের কোনো তীর্থযাত্রী মক্কায় হজ পালন করতে যাবেন না৷ সৌদি আরব ইরানের মুসল্লিদের নিরাপত্তার গ্যারেন্টি দিতে ব্যর্থ হওয়ায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে ইরান জানিয়েছে৷
ইরানের সংস্কৃতি মন্ত্রী আলি জানাটি বলেন, সৌদি সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে ইরানি মুসল্লিদের হজযাত্রা বন্ধ করার পদক্ষেপ নিয়েছে৷ উল্লেখ্য, গত বছর হজ চলাকালীন কয়েক'শ ইরানীয় মুসল্লি পদদলিত হয়েছিলেন৷ সেই ঘটনার পর সৌদি আরব কোনো রিপোর্ট প্রকাশ করেনি৷ এর আগে ১৯৮৭ সালের পর ইরান ৩ বছর হজযাত্রা বন্ধ রেখেছিল৷
অন্যদিকে সৌদি আরব এই অচলাবস্থার জন্য ইরানকেই দায়ী করেছে৷ সে দেশের সরকারের মতে, ইরানের হজ সংগঠনের সঙ্গে আলোচনার পর যে চুক্তিপত্র প্রস্তুত করা হয়েছিল, ইরান তা সাক্ষর না করে হাজার হাজার মুসলিমকে হজ পালন থেকে বঞ্চিত করছে৷ সৌদি আরব কোনো মুসলিমকে কখনো হজ পালনে বাধা দেয় না বলে জানিয়েছেন সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী আদেল আল জুবেইর৷ তিনি বলেন, প্রতি বছর ৭০টিরও বেশি দেশের সঙ্গে এই মর্মে চুক্তি সাক্ষরিত হয়৷
হজযাত্রাকে কেন্দ্র করে রাজনীতি নিয়ে টুইটারে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেকে৷
সৌদি আরব-ইরানের সম্পর্কের অবনতির একের পর এক ঘটনা দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা বাড়িয়ে তুলছে৷ কূটনৈতিক সংঘাতের পর এবার সাইবার যুদ্ধেরও আশঙ্কা দেখা যাচ্ছে৷
বাংলাদেশসহ বেশ কিছু দেশে পবিত্র ঈদ-উল-আজহা পালিত হচ্ছে শুক্রবার৷ তবে বৃহস্পতিবার ঈদ উদযাপন করছিল সৌদি আরবের মানুষ৷ ঈদের দিনে হজের আনুষ্ঠানিকতাও ঠিকভাবেই চলছিল৷ একেবারে শেষ দিকে হুড়োহুড়ি শুরু হওয়ার কারণেই শুরু হয় বিপর্যয়৷
অথচ একটু আগেই সবই ছিল শান্ত
হজের একেবারে শেষ দিকের একটি আনুষ্ঠানিকতা ‘বড় জামারা’, অর্থাৎ ‘বড় শয়তান’-কে লক্ষ্য করে নুড়ি ছুড়ে মারা৷ নির্বিঘ্নেই শুরু হয়েছিল এই আনুষ্ঠানিকতা৷ প্রতীকী অর্থে শয়তানকে ঢিল ছোড়ার জন্য পাথর সংগ্রহ করার সময়ও বিশ্বের নানা দেশ থেকে আসা ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের মাঝে কোনো উত্তেজনা বা আতঙ্ক লক্ষ্য করা যায়নি৷
ছবি: Reuters/Ahmad Masood
একদিকে নিশ্চিন্ত মানুষ, অন্যদিকে....
হাজিদের নির্বিঘ্নে শয়তানকে লক্ষ্য করে নুড়ি বা পাথর ছোড়ার এই ছবি দেখে কে বলবে এই আনুষ্ঠানিকতা সারতে গিয়েই জীবনাবসান হতে পারে অনেকের! অথচ তা-ই হয়েছে৷ পায়ের নীচে চাপা পড়ে সাতশ’রও বেশি মানুষ মারা গেছে, আহতের সংখ্যাও অনেক৷
ছবি: Reuters/Ahmad Masood
উদ্ধার তৎপরতা
ভিড়ের চাপ এবং হুড়োহুড়িতে হতাহতের খবর ছড়িয়ে পড়ার পরই নিরাপত্তাকর্মীরা ঘটনাস্থলে উদ্ধার তৎপরতা শুরু করে৷ ততক্ষণে অবশ্য মৃত্যুর মিছিলটা অনেক দীর্ঘ গয়ে গেছে!
ছবি: Reuters/Saudi Civil Defense agency
নির্দেশনা না মানায়
সৌদি স্বাস্থ্যমন্ত্রী খালিদ আল-ফালিহ-র ধারণা, হজযাত্রীরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা ঠিকভাবে না মানায় এই দুর্ঘটনা ঘটে থাকতে পারে৷
ছবি: Reuters/Stringer
সৌদির সমালোচনায় খামেনেই
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি-খামেনেই দুর্ঘটনার জন্য সৌদি কর্তৃপক্ষের ‘অব্যবস্থাপনা’-কে দায়ী করেছেন৷ দুর্ঘটনায় ইরানের প্রায় একশ’র বেশি হজযাত্রী নিহত হয়েছেন৷ তাই দেশটিতে তিন দিনের শোক ঘোষণা করা হয়েছে৷
ছবি: picture alliance/AP Photo
পরিকল্পনা পর্যালোচনা
দুর্ঘটনার পর সৌদি বাদশা সালমান হজ পরিকল্পনা নতুন করে পর্যালোচনার নির্দেশ দিয়েছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/O. Douliery
পোপের শোক প্রকাশ
পোপ ফ্রান্সিস বৃহস্পতিবার নিউ ইয়র্কে তাঁর সান্ধ্য প্রার্থনাসভার সূচনায় মিনায় নিহতদের জন্য সহানুভূতি প্রকাশ করেছেন৷ পোপ সেন্ট প্যাট্রিকস ক্যাথিড্রালে তাঁর প্রাথমিক প্রার্থনায় বলেন, ‘‘এই প্রার্থনার মুহূর্তে আমি তোমাদের সকলের সঙ্গে ঈশ্বরের প্রতি প্রার্থনায় মিলিত হচ্ছি৷’’
ছবি: Reuters
জার্মানির পক্ষ থেকে শোক
জার্মান প্রেসিডেন্ট ইওয়াখিম গাউক, জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল এবং জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফ্রাংক-ভাল্টার স্টাইনমায়ার মিনার ঘটনায় শোক প্রকাশ করেছেন৷
ছবি: Getty Images/AFP/O. Andersen
ফুটবল, রাগবি ইভেন্টের ব্যবস্থাপনা আরও ভালো!
এ বছর ২০ লক্ষ হজযাত্রীর নিরাপত্তার জন্য প্রায় এক লক্ষ নিরাপত্তা বাহিনীর ব্যবস্থা করেছিল সৌদি আরব৷ কিন্তু তারা এত বড় জনসমাবেশের নিরাপত্তা দেয়ার মতো প্রশিক্ষিত নন এবং নিরাপত্তা কর্মীদের ভাষাজ্ঞানের অভাব রয়েছে বলে মন্তব্য করেন ইরফান আল-আলাউই৷ মক্কায় যে উন্নয়ন কাজ চলছে তার কঠোর সমালোচক আলাউই৷ তিনি মনে করেন সর্বোচ্চ পর্যায়ে ফুটবল ও রাগবি প্রতিযোগিতা আরও ভালভাবে আয়োজন করা হয়৷
ছবি: Reuters/Saudi Red Crescent
২৫ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বড়
১৯৯০ সালে হজের সময় মক্কায় এক দুর্ঘটনায় পদদলিত হয়ে ১,৪২৬ জন নিহত হয়েছিল৷ ওটাই এখন পর্যন্ত হজ সম্পর্কিত দুর্ঘটনায় নিহতের সবচেয়ে বড় সংখ্যা৷ বৃহস্পতিবারের দুর্ঘটনার অবস্থান তার পরেই৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
দু’সপ্তাহের মধ্যে সৌদিতে আবার শোকের ছায়া
গত ১১ সেপ্টেম্বরও দুর্ঘটনার কারণেই খবরের শিরোনামে এসেছিল সৌদি আরব৷ সেদিন মক্কার মসজিদুল হারামে ক্রেন ভেঙে পড়ায় মারা যান ১০৯ জন৷ ৯ বছর আগে আরেকটি বড় দুর্ঘটনা ঘটেছিল সৌদি আরবে৷ সেবার শয়তানকে লক্ষ্য করে নুড়ি ছুড়ে মারার সময়ই নিহত হয়েছিলেন ৩৬৪ জন হাজি৷