মাহসা আমিনির মৃত্যুর পর অনেক মেয়েই হিজাব পরছিল না। কর্তৃপক্ষ ও পুলিশ জানালো, রাস্তায় নামছে নীতি পুলিশ।
বিজ্ঞাপন
প্রকাশ্য জায়গায় মেয়েদের মাথায় হিজাব পরতেই হবে। নাহলে নীতি পুলিশ ব্যবস্থা নেবে। ইরানে জানিয়ে দিলো পুলিশ। রোববারই ভ্যানে করে পুরুষ ও নারী নীতি পুলিশকে তেহরানে টহল দিতে দেখা গেছে।
পুলিশের মুখপাত্র জানিয়েছেন, নীতি পুলিশের সদস্যরা গাড়িতে এবং হেঁটে রাস্তায় ঘুরবেন। ড্রেস কোড মানা না হলে তারা সাবধান করে দেবেন, প্রয়োজনে ব্যবস্থা নেবেন। যারা আইন ভাঙবেন, তাদের ধরে বিচারবিভাগের কাছে পেশ করা হবে।
ইরানে ‘নারী, জীবন, স্বাধীনতা!’ প্রতিবাদের তিন মাস
গত সেপ্টেম্বরে মাহসা আমিনির মৃত্যু ইরানে গত কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় প্রতিবাদের সূচনা করেছিল৷ সেই প্রতিবাদ দমনে সর্বশক্তি প্রয়োগ করেছে দেশটির শাসকগোষ্ঠী৷ তবুও থামেনি প্রতিবাদ৷
ছবি: LOUISA GOULIAMAKI/AFP/Getty Images
বিপ্লবের প্রতীক
চুল হিজাবে ঠিকভাবে ঢাকা না হওয়ার অভিযোগে আমিনিকে ১৩ সেপ্টেম্বর আটক করেছিল ইরানের নীতি পুলিশ৷ এর কদিন পর ১৬ সেপ্টেম্বর তার মৃত্যুর ঘোষণা আসে৷ তার আগে আমিনি হাসপাতালে কোমায় ছিলেন৷ আমিনির এই অস্বাভাবিক মৃত্যু গোটা ইরানে প্রতিবাদের সূচনা করে৷
ছবি: Kenzo Tribouillard/AFP
‘নারী, জীবন, স্বাধীনতা!’
আমিনির কুর্দি জন্মস্থান সাক্কাজে তার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া থেকে ১৭ সেপ্টেম্বর প্রতিবাদের শুরু হয়৷ নারীরা তাদের হিজাব খুলে বাতাসে উড়িয়ে ইরানি ভাষায় ‘‘নারী, জীবন, স্বাধীনতা!’’ বলে শ্লোগান দিয়েছেন৷ ২৬ অক্টোবর আমিনির কবরস্থানে হাজির হয়েছিলেন কয়েক হাজার মানুষ৷ ছবিটি সেখানে তোলা৷
ছবি: UGC/AFP
আয়াতুল্লাহদের বিরুদ্ধে ঐতিহাসিক বিদ্রোহ
আমিনির মৃত্যু ঐতিহাসিক এক আন্দোলনের শুরু করেছে৷ উৎপীড়নকারী সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে কেঁপে উঠেছে গোটা ইরান৷ ছবিটি সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে তেহরানে তোলা৷ শুধু নারীরা নয়, সব বয়সের, জাতের মানুষ এই আন্দোলনে শরিক হয়েছেন৷
ছবি: AFP
হিজাব এবং ভয় ছাড়া
গত তিনমাসে ইরানের পশ্চিমাঞ্চলের রাস্তায় হিজাব ছাড়া নারীর সংখ্যা বেড়েছে৷ ইরানের আইন অনুযায়ী, হিজাব ছাড়া বাইরে গেলে বেত্রাঘাত এবং কারাদণ্ড হতে পারে৷ কিন্তু নারীরা তাসত্ত্বেও সাহস দেখাচ্ছেন৷
ছবি: SalamPix/abaca/picture alliance
শাসক গোষ্ঠীর সহিংস প্রতিরোধ
প্রতিবাদকারীদের দমনে সহিংসতার পথ বেছে নিয়েছে ইরানের শাসকগোষ্ঠী৷ এজন্য পুলিশ এবং কুখ্যাত এক আধাসামরিক বাহিনীকে মোতায়েন করা হয়েছে৷ মানবাধিকার সংগঠনগুলোর হিসেব অনুযায়ী, নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে প্রাণ হারিয়েছেন চারশোর বেশি মানুষ, যাদের মধ্যে অনেক শিশু এবং তরুণ রয়েছে৷
ছবি: AFP
নির্মম আক্রমণ
প্রতক্ষ্যদর্শীরা জানান, পুলিশ এবং আধাসামরিক বাহিনীর সদস্যরা প্রতিবাদকারীদের নির্মমভাবে পেটানোর পাশাপাশি তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছুঁড়েছে৷ তেহরানের পুলিশ ভ্যানে আটক এই নারীর মতো ১৪ হাজার মানুষকে কারাবন্দি করেছে ইরানের শাসকগোষ্ঠী৷
ছবি: SalamPix/ABACA/picture alliance
চুল কেটে প্রতিবাদ
ইরানের শাসকগোষ্ঠীর পতনের দাবিতে প্যারিস থেকে সান ফ্রান্সিসকো অবধি সারা বিশ্বে বিক্ষোভে অংশ নিয়েছেন হাজার হাজার মানুষ৷ ইস্তাম্বুলে ইরানি কনস্যুলেটের সামনে এক নারী চুল কেটে প্রতিবাদ জানিয়েছেন৷
ছবি: YASIN AKGUL/AFP/Getty Images
প্রতীকী সমর্থন
গত ১৩ ডিসেম্বর বার্লিনের ব্রান্ডেনবুর্গ গেটের উপর আলো ফেলে কুর্দি ভাষায় লেখা হয় ‘নারী, জীবন, স্বাধীনতা!’৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের টাইম ম্যাগাজিন ইরানি নারীদের ‘হিরোস অব দ্য ইয়ার’ ঘোষণা দিয়েছে৷
ছবি: Markus Schreiber/AP/picture alliance
দুই বন্দিকে ফাঁসি
ইরানে সরকারবিরোধী প্রতিবাদ কর্মসূচিতে অংশ নেয়া দুই প্রতিবাদকারী ব়্যাপার মোহসিন শেখারি এবং মজিদরেজা রাহনাভার্দকে ইতোমধ্যে মৃত্যদণ্ড দেয়া হয়েছে৷ অন্তত ৩৮ জনকে কথিত ‘সৃষ্টিকর্তার বিরুদ্ধে শত্রুতার’ অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইরান৷ দেশটিতে শিশুদেরও মৃত্যুদণ্ড দেয়ার বিধান রয়েছে৷
ছবি: AFP/Getty Images
9 ছবি1 | 9
মাহসা আমিনির মৃত্যুর দশ মাস পরে এই নির্দেশ এলো। ড্রেস কোড অমান্য করায় মাহসাকে পুলিশ ধরেছিল এবং তাদের হেফাজতে থাকার সময় মাহসার মৃত্যু হয়। তারপরই ইরান-জুড়ে প্রবল বিক্ষোভ
হয়। রীতিমতো শক্তিপ্রয়োগ করে বিক্ষোভ থামানো হয়। পাঁচশজন মারা যান। ২০ হাজারের বেশি মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এরপরেও মেয়েরা নীরব প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। গত প্রায় দশ মাস নীতি পুলিশকে রাস্তায় দেখা যায়নি। এমনকী এরকমও রটেছিল, নীতি পুলিশের আর কোনো অস্তিত্ব নেই। তবে সরকার বারবার জানিয়েছিল, ড্রেস কোড বদলায়নি। হিসাব পরাটা বাধ্যতামূলক। এবার আবার নীতি পুলিশের নজরদারি শুরু হলো।
ইরানে বিক্ষোভের প্রতি বিশ্বের সংহতি
ইরানে মাহসা আমিনির মৃত্যুর প্রতিবাদে বিক্ষোভ চলছে৷ এর প্রতি সংহতি জানিয়ে বিশ্বের অনেক শহরেও প্রতিবাদ হচ্ছে৷
ছবি: Stefano Rellandini/AFP/Getty Images
প্যারিস
ইরানে চলমান বিক্ষোভের প্রতি বিশ্বের অনেক মানুষ সংহতি জানাচ্ছন৷ রোববার প্যারিসে এক বিক্ষোভ থেকে ‘ইসলামিক রিপাবলিকের মৃত্যু’,‘একনায়কের মৃত্যু’ শ্লোগান দেয়া হয়৷
ছবি: Stefano Rellandini/AFP/Getty Images
ইস্তাম্বুল, দিয়ারবাকির, ইজমির
ইস্তাম্বুলে বিক্ষোভে অনেক ইরানি নারী অংশ নেন৷ ইরানের সরকারের বিরুদ্ধে তারা শ্লোগান দেন, যেমন ‘নারী, জীবন, স্বাধীনতা!’৷ কুর্দি অধ্যুষিত তুরস্কের দিয়ারবাকির শহর ও পশ্চিম উপকূলের ইজমিরেও বিক্ষোভ হয়েছে৷ নিহত মাহসা আমিনি একজন কুর্দি ছিলেন৷
ছবি: Emrah Gurel/AP/picture alliance
বার্লিন
প্রায় পাঁচ হাজার মানুষ ইরানের নেতৃত্বের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে অংশ নেন৷ তারা নারী হত্যা (ফেমিসাইড) বন্ধের দাবি জানান৷
ছবি: Annette Riedl/dpa/picture alliance
বৈরুত
মধ্যপ্রাচ্যের অনেক মানুষও ইরানে বিক্ষোভের প্রতি সংহতি জানিয়েছেন৷ লেবাননের রাজধানী বৈরুতে নারীরা জাতীয় জাদুঘরের সামনে বিক্ষোভ করে নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধের দাবি জানিয়েছেন৷
ছবি: MOHAMED AZAKIR/REUTERS
লস অ্যাঞ্জেলেস
যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার লস অ্যাঞ্জেলেসের সিটি হলের সামনে বিক্ষোভকারীরা ইরানের ঐতিহ্যবাহী বাদক বাজিয়ে ইরানে চলমান বিক্ষোভের প্রতি সংহতি প্রকাশ করেন৷ লন্ডন, টোকিও ও মাদ্রিদেও সংহতি বিক্ষোভ হয়েছে৷
ছবি: BING GUAN/REUTERS
শরিফ বিশ্ববিদ্যালয়, তেহরান
ইরানের বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা ইরানের শাসক ও তাদের নিপীড়নমূলক নীতির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করছেন৷ তেহরানের শরিফ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থী ও অধ্যাপকদের উপর হামলা করেছে নিরাপত্তা বাহিনী৷
ছবি: UGC/AFP
6 ছবি1 | 6
১৯৭৯ সালে এই ড্রেস কোড চালু করা হয়। তা ভঙ্গ করলে জরিমানা দিতে হবে, দুই মাস পর্যন্ত জেলও হতে পারে।