সাকুল্যে ১২ বছর ধরে যে আলোচনা চলছে, আবার বন্ধ হচ্ছে, আবার চলছে, তার ‘ডেডলাইন' আবরো একবার পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে৷ কিন্তু মিডিয়া বা টুইটারে আসন্ন চুক্তি – যদি সত্যিই তা আসন্ন হয় – তা নিয়ে বিশেষ উচ্ছ্বাস নেই৷
বিজ্ঞাপন
রুশ দৈনিক ‘কমার্সান্ট' মঙ্গলবার লেখে: ‘‘আলাপ-আলোচনায় বিশেষ আশাবাদিতা দেখা যাচ্ছে না৷ আলাপ-আলোচনা ৯ই জুলাই অবধিও চলতে পারে৷ প্রায় সাত-আটটি বিষয় এখনও অমীমাংসিত৷ প্রস্তুত করা খসড়াগুলো বারংবার সংশোধন করা হচ্ছে৷ এক্ষেত্রে রাশিয়ার মূল স্বার্থ হলো, ইরানকে অস্ত্রসরবরাহের উপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হচ্ছে কিনা৷ কিন্তু সেটাও এখনো নিশ্চিত নয়৷''
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি সোমবার ভিয়েনায় ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মহম্মদ জাভাদ জরিফের সঙ্গে একটি বৈঠকের পর বলেন, আলাপ-আলোচনা ‘‘যে কোনো দিকে'', অর্থাৎ ভালো কিংবা মন্দের দিকে যেতে পারে৷ কেরি বলেন: ‘‘সবচেয়ে কঠিন বিষয়গুলির মধ্যে একাধিক ক্ষেত্রে আমাদের যতদূর এগোনোর কথা ছিল, আমরা ততদূর এগোতে পারিনি৷'' সোমবারের ‘ওয়াশিংটন পোস্ট' যোগ করছে: ‘‘এতদূর এগোনোর পর ব্যর্থ হওয়ার কোনো প্রশ্ন ওঠে না – সাধারণভাবে সকলের এই ধারণা হলেও, কূটনীতিকরা কিন্তু বার বার সতর্ক করে দিয়েছেন যে, তারা অসফল হতে পারেন৷''
মন্দের ভালো
ইরান আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা আইএইএ-র পরিদর্শকদের কতটা পর্যবেক্ষণের সুযোগ দেবে, সেটাকে একটা বড় বাধা বলে গণ্য করছিলেন কূটনীতিকরা৷ গত শুক্রবার পর্যন্ত ইরান আইএইএ-র পেশ করা বারোটি প্রশ্নের মধ্যে মাত্র দু'টিতে সহযোগিতার মনোভাব প্রদর্শন করেছে – লিখছিল জার্মানির স্যুডডয়চে সাইটুং৷ ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনেই ‘‘সব ধরনের অতিরিক্ত নিয়ন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করেছেন''; অপরদিকে পশ্চিমি প্রতিনিধিদের দাবি হলো, আইএইএ-কে ‘‘সর্বদা তথা সর্বত্র'' পরিদর্শনের অধিকার দিতে হবে৷
বিভীষিকাময় আণবিক বোমা হামলার স্মরণে
কোনো যুদ্ধে আণবিক বোমার ব্যবহারের একমাত্র উদাহরণ স্থাপন করেছিল যুক্তরাষ্ট্র৷ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলার সময় জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকি শহরে আণবিক বোমা হামলা চালিয়েছিল তারা, যার বিভীষিকা আজও বয়ে বেড়াচ্ছে মানুষ৷
ছবি: picture-alliance/AP Images
প্রথম বোমা নিক্ষেপ
১৯৪৫ সালের ৬ই আগস্ট৷ ঘড়িতে বাজছে ঠিক সকাল সোয়া আটটা৷ জাপানের হিরোশিমা নগরিতে যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধবিমান ‘এনোলা গে’ থেকে ছোড়া হয় প্রথম আণবিক বোমা ‘লিটল বয়’৷ মুহূর্তেই ধ্বংস হয়ে যায় গোটা নগরীর বাড়ি ঘর, দালান কোঠা৷ আণবিক বোমার তেজস্ক্রিয়তায় সঙ্গে সঙ্গেই মারা যান সেখানকার ২০ ভাগ মানুষ৷ বিকলাঙ্গ হয়ে পড়ে লক্ষাধিক৷
ছবি: Three Lions/Getty Images
দ্য এনোলা গে
আদতে হিরোশিমায় বোমা হামলার পরিকল্পনা ছিল ঐ বছরের ১লা আগস্ট৷ কিন্তু টাইফুনের কারণে তা বাতিল করা হয়৷ পাঁচদিন পর ‘এনোলা গে’ ১৩ জন ক্রু নিয়ে হামলার জন্য রওনা হয়৷
ছবি: gemeinfrei
দ্বিতীয় বোমা হামলা
হিরোশিমায় হামলার তিনদিন পর, অর্থাৎ ৯ই আগস্ট, অ্যামেরিকা দ্বিতীয় আণবিক বোমাটি ফেলে নাগাসাকি শহরে৷ আসলে তাদের লক্ষ্য ছিল কিয়োটো৷ কিন্তু এতে মার্কিন প্রতিরক্ষাবাহিনী সায় না দেয়ায় নাগাসাকিকে বেছে নেয়া হয়৷ এই বোমাটির নাম ছিল ‘ফ্যাট ম্যান’৷ এতে বিস্ফোরক ছিল ২২ হাজার টন টিএনটি৷ বোমা হামলার চার মাসে সেখানে প্রাণ হরান ৭০ হাজার মানুষ৷
ছবি: Courtesy of the National Archives/Newsmakers
কৌশলগত হামলা
১৯৪৫ সালে নাগাসাকিতে ছিল মিৎসুবিশি কোম্পানির ইস্পাত ও অস্ত্র কারখানা৷ সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের পার্ল হারবারে হামলা চালানোর টর্পেডোও তৈরি হতো৷ নাগাসাকিতে তখন মাত্র অল্প কয়েকজন সেনা ছিল৷
ছবি: picture-alliance/dpa
হামলা শিকার
বোমা হামলার সময়ই কেবল নয়, তেজস্ক্রিয়তায়ও কয়েক লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছে৷ তেজস্ক্রিয়তা, পোড়া ও ক্ষতের কারণে ১৯৪৫ সালের শেষে কেবল হিরোশিমাতেই নিহত হয়েছেন ৬০ হাজার মানুষ৷ পাঁচ বছর পরে নিহতের সংখ্যা দাঁড়ায় ২ লাখ ৩০ হাজারে৷
ছবি: Keystone/Getty Images
যুদ্ধাপরাধ?
হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে বোমা হামলার পর জাপানিরা আতঙ্কে ছিলেন যে, রাজধানী টোকিওতে হয়ত তৃতীয় হামলা চালাবে যুক্তরাষ্ট্র৷ তাই আত্মসমর্পণের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল তারা৷ মার্কিন প্রেসিডেন্ট হ্যারি ট্রুম্যান ঐ হামলা দুটির নির্দেশ দেন৷ তাঁর মনে হয়েছিল এতে বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তি ঘটবে৷ ইতিহাসবিদরা অবশ্য এ ঘটনাকে যুদ্ধাপরাধ হিসেবেই উল্লেখ করেছেন৷
ছবি: AP
পুনর্গঠন
হিরোশিমা নগরীর ‘সিটি সেন্টার’ বোমা হামলায় পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়েছিল, যা আবার নতুন করে গড়া হয়৷ কেবল ‘ওটা’ নদীর ধারে দ্বীপটিতে কোনো পরিবর্তন করা হয়নি৷ সেখানে রয়েছে স্মৃতিস্তম্ভ: শান্তি জাদুঘর, শিশুদের শান্তি স্মারক স্তম্ভ, শিল্প ও বাণিজ্য ভবনের ধ্বংসস্তূপ আর শিখা অর্নিবাণ, যেটা জ্বলবে বিশ্বের সব আণবিক বোমা ধ্বংস না হওয়া পর্যন্ত৷
ছবি: Keystone/Getty Images
স্মরণের সংস্কৃতি
১৯৫৫ সালে নাগাসাকিতে অ্যাটোমিক বোমার জাদুঘর এবং একটি ‘পিস পার্ক’ বা শান্তি উদ্যান নির্মাণ করা হয়৷ সেখানে গিয়ে অনেকেই বোমা হামলায় নিহতদের স্মরণ করেন৷ এটা জাপানিদের সংস্কৃতির অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ পারমাণবিক যুদ্ধের নারকীয়তার বৈশ্বিক প্রতীকে পরিণত হয়েছে হিরোশিমা ও নাগাসাকি৷
ছবি: Getty Images
এক মুহূর্তের নীরবতা
প্রতি বছর হিরোশিমায় এ দিনটি উপলক্ষ্যে অনেক বড় পরিসরে স্মরণ সভার আয়োজন করা হয়৷ বোমাটি যখন নিক্ষেপ করা হয়েছিল, ঠিক সেই মুহূর্তটিতে ঘটনায় বেঁচে যাওয়া মানুষ, নিহতদের স্বজন, সাধারণ নাগরিক, রাজনীতিবিদ – সবাই এক মিনিটের নীরবতা পালন করেন৷ অনেকেই পরমাণু নিরস্ত্রীকরণের জন্য অঙ্গীকার করেন এদিন৷
ছবি: Kazuhiro Nogi/AFP/Getty Images
জীবিত শেষ সদস্য নিহত
যুক্তরাষ্ট্র বিমান বাহিনীর যে দলটি ঐ ‘অ্যাটম বোমা’ নিক্ষেপ করেছিল সেই দলের জীবিত শেষ সদস্য থিওডোর ভ্যানকির্ক ২০১৪ সালের ৩০শে জুলাই মারা যান৷ জর্জিয়া রাজ্যে অবসরপ্রাপ্তদের একটি আবাসে ৯৩ বছর বয়সে মারা যান তিনি৷ ‘ডাচ’ নামে পরিচিত কির্ক বোমা নিক্ষেপকারী বিমান এনোলা গে-র নেভিগেটর ছিলেন৷ সে সময় তাঁর বয়স ছিল ২৪ বছর৷
ছবি: picture-alliance/AP Images
10 ছবি1 | 10
একসপ্তাহ আগেও নিউ ইয়র্ক টাইমস-এর টমাস এল ফ্রিডম্যান একটি ‘‘ভালো গোছের খারাপ চুক্তি'' প্রত্যাশা করছিলেন৷ তাঁর মতে খসড়া চুক্তিতে দেখা যাচ্ছে, খামেনেই ইরানের বুনিয়াদি পারমাণবিক কাঠামো বজায় রাখতে সক্ষম হয়েছেন – যদিও কিছুটা কাটছাঁট সহ৷ অপরদিকে খামেনেই বারংবার জানিয়েছেন যে, ইরান তার সামরিক স্থাপনাগুলি পরিদর্শনের অনুমতি দেবে না৷
ফ্রিডম্যানের চোখের সামনে ভাসছে অদ্ভুত দৃশ্যটি: গোলটেবিলে আলাপ-আলোচনা চলেছে; একদিকে ইরান, অন্যদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চীন, ফ্রান্স, জার্মানি এবং ব্রিটেন৷ ওদিকে ইরানের হাতের তাস খারাপ হলেও, ইরান দারুণ খেলছে৷ কাজেই ফ্রিডম্যানের ব্যঙ্গপূর্ণ মন্তব্য: ‘‘আমার বাড়ি বিক্রির জন্য আমি খামেনেইকেই ভাড়া করবো৷''
টুইটারে
জুলিয়ান মায়ার টুইট করেছেন: ‘‘প্রতিনিধিরা ইরান চুক্তি সম্পন্ন করার জন্য ‘ঘড়ি বন্ধ করে রাখতে পারেন''৷
রাজেশ রাজাগোপালন-এর টুইট: ‘‘এর অর্থ সম্ভবত এই যে, কেরি এত কিছু ছাড় দিয়েছেন যে, তেহরানকে নতুন দাবি তুলতে হচ্ছে৷ ইরান চায় অস্ত্র সরবরাহের উপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হোক৷''
জেরেমি ডায়মন্ড-এর টুইট: ‘‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কি ইরানের সঙ্গে একটি বাজে চুক্তি করছে?''