ইরানের বিতর্কিত পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে সংকট কাটাতে আগামী ২০শে জুলাইয়ের মধ্যে চূড়ান্ত চুক্তি স্বাক্ষরের চেষ্টা চলছে৷ জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের ৫ স্থায়ী সদস্য ও জার্মানি ভিয়েনায় ইরানের সঙ্গে চতুর্থ দফার আলোচনা চালাচ্ছে৷
বিজ্ঞাপন
গোটা বিশ্বের নজর ইউক্রেন ও সিরিয়ার সংকটের দিকে৷ ফলে ইরানের সঙ্গে আন্তর্জাতিক মহলের আলোচনার বিষয়টি অনেকটা নেপথ্যে চলে এসেছে৷ ইরানের এক উচ্চপদস্থ কূটনীতিক শুক্রবার আলোচনায় অগ্রগতির উল্লেখ করেছেন৷ আব্বাস আরাকচি বলেন, আলোচনার পরিবেশ ভালো৷ তবে আলোচনা অত্যন্ত কঠিন ও ধীর গতিতে এগোচ্ছে৷ উল্লেখ্য, বুধবার ভিয়েনায় চলতি দফার আলোচনা শুরু হয়েছে৷ উদ্দেশ্য, ইরানের বিতর্কিত পরমাণু কর্মসূচিকে ঘিরে সংকটের চূড়ান্ত সমাধানসূত্রে আসা৷
এই নিয়ে চতুর্থ দফার আলোচনা যে চলছে, সেই ঘটনাকেই ইতিবাচক হিসেবে গণ্য করছেন পর্যবেক্ষকরা৷ রাতারাতি কোনো চমকের আশা নেই৷ জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচ স্থায়ী সদস্য ও জার্মানি তাই দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়ার জন্য প্রস্তুত৷ প্রাথমিক আলোচনার পর চূড়ান্ত ঘোষণাপত্রের খসড়া নিয়ে আলোচনা চলছে৷ ইরানের কাছে আন্তর্জাতিক মহলের দাবি হলো, সে দেশ যেন পরমাণু কর্মসূচির মাত্রা এতটাই কমিয়ে দেয়, যাতে আণবিক বোমা তৈরির প্রচেষ্টা একেবারে অসম্ভব হয়ে পড়ে৷ সেইসঙ্গে এমন প্রচেষ্টা যাতে সহজেই চিহ্নিত করা যায়, সেই ব্যবস্থাও রাখতে হবে৷ আগামী ২০শে জুলাইয়ের মধ্যে চুক্তি চূড়ান্ত করার লক্ষ্য স্থির করা হয়েছে৷ কারণ নভেম্বরে স্বাক্ষরিত প্রাথমিক চুক্তির মেয়াদ সে দিনই শেষ হবে৷
ইরান-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক কোন পথে?
৩৪ বছর ধরে দু দেশের বৈরি সম্পর্ক৷ ইরান আর যুক্তরাষ্ট্র পরস্পরের কাছে আসার বেশ কিছু উদ্যোগ ব্যর্থ করে দিয়ে এখনো পরস্পরবিরোধী অবস্থানে৷ প্রত্যাশা ছুঁয়ে না গেলেও এতদিনে দু দেশের সম্পর্কোন্নয়নের দ্বার খানিকটা খুলেছে৷
ছবি: Getty Images
আশা জাগিয়েছেন রোহানি
গত আগস্টেই ইরানের নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে কাজ শুরু করেছেন হাসান রোহানি৷ শুরুতেই যেসব আশার বাণী শুনিয়েছিলেন সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তোলার ইঙ্গিতও ছিল৷ এবারের জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে তাঁর সদিচ্ছার প্রমাণ আশা করেছিলেন অনেকে৷ সে আশা জাগিয়েই নিউ ইয়র্কে পা রেখেছিলেন রোহানি৷
ছবি: ISNA
ওবামার আহ্বান
জাতিসংঘে নিজের ভাষণে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা একরকম চ্যালেঞ্জই ছুড়ে দিয়েছিলেন রোহানির দিকে৷ বলেছিলেন, ইরানের প্রেসিডেন্ট সম্পর্কোন্নয়নের যে কথা আগে বলেছেন জাতিসংঘের অধিবেশনে, সেই ইচ্ছার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ কিছু কথা বললে যুক্তরাষ্ট্র খুব খুশি হবে৷
ছবি: Reuters
মিথ্যে আশা মরীচিকা
কিন্তু জাতিসংঘে নিজের প্রথম ভাষণে রোহানি সেরকম কিছু বলেননি৷ তাঁর দেশের আণবিক অস্ত্র তৈরির পরিকল্পনা প্রসঙ্গে সরাসরি কিছু না বলে পূর্বসসূরিদের মতো ঠিকই তোপ দাগিয়েছেন ইসরায়েলের বিরুদ্ধে৷ আরো বলেছেন, তাঁর দেশের ওপর চলমান নিষেধাজ্ঞা জনগণের ভোগান্তি বাড়ানোর চেষ্টা মাত্র৷
ছবি: Reuters
ইসরায়েলের সন্দেহ
ইসরায়েলের প্রতিক্রিয়াও যেন অতীতের বক্তব্যের অনুলিপি৷ ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন, ইরান সম্পর্কোন্নয়নের কথা বলে আসলে আণবিক বোমা তৈরির পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সময় নিতে চাইছে৷
ছবি: Reuters/Issam Rimawi
শেষ আশাও দুরাশা
জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে শেষ আশা হয়ে ছিল যুক্তরাষ্ট্র এবং ইরানের প্রেসিডেন্টের সংক্ষিপ্ত সাক্ষাতের সম্ভাবনা, যা বাস্তবায়িত হলে ওবামা আর রোহানির হাত মেলানোর দৃশ্যকে দু-দেশের বন্ধুত্বের ছবি হিসেবে ফ্রেমবন্দি করে রাখা যেতো৷ সেটাও সম্ভব হয়নি৷
ছবি: Getty Images
তবু আশা বেঁধে রাখা
১৯৭৯ সালের পর থেকে ইরান আর যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই৷ দু দেশের প্রেসিডেন্টকে কোথাও হাত মেলাতেও দেখা যায়নি৷ জাতিসংঘে আনুষ্ঠানিক সাক্ষাতটা হলে অন্তত সম্পর্কোন্নয়নের পথ নতুন করে খুলছে বলে আশা করা যেতো৷ ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ জাভাদ জারিফ অবশ্য বলেছেন, রোহানির যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সঙ্গে বৈঠক করতে কোনো আপত্তি ছিল না৷ এটা একটা শুভ সূচনা হতে পারতো, বলেন জারিফ৷
ছবি: Getty Images
6 ছবি1 | 6
আলোচনায় অংশ নিলেও ইরানের আন্তরিকতা নিয়ে সংশয় কিন্তু কাটছে না৷ জাতিসংঘের এক রিপোর্ট অনুযায়ী ইরান ব্যালিস্টিক মিসাইল তৈরির চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে৷ সে দেশের সর্বোচ্চ নেতা খামেনেই নিজেই বড় আকারে এমন ক্ষেপণাস্ত্র তৈরির নির্দেশ দিয়েছেন৷ ইরান বরাবর ক্ষেপণাস্ত্রের বিষয়টি পরমাণু কর্মসূচি সংক্রান্ত আলোচনার বাইরে রাখার কথা বলে এসেছে৷ মার্কিন প্রশাসন অবশ্য তাতে রাজি নয়৷ পরমাণু অস্ত্র বহনের ক্ষমতা রাখে – এমন ক্ষেপণাস্ত্র নিয়ে অবশ্যই আলোচনা করতে হবে বলে মনে করে ওয়াশিংটন৷ এ প্রসঙ্গে ২০১০ সালে নিরাপত্তা পরিষদের এক প্রস্তাবের উল্লেখ করেছে ওবামা প্রশাসন৷ অন্যদিকে রাশিয়া সেটা চায় না৷
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু শুক্রবার মার্কিন প্রশাসনকে ইরানের সঙ্গে রফার বিষয়ে আবার সাবধান করে দিয়েছেন৷ সে দেশকে কোনো রকম ছাড় যাতে দেওয়া না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে, বলেন তিনি৷