ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তি রক্ষায় জার্মানির উদ্যোগ
১০ জুন ২০১৯
পরমাণু চুক্তি রক্ষার উদ্যোগ হিসেবে ইরান সফর করেছেন জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাইকো মাস৷ ইরানের সঙ্গে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের হওয়া চুক্তি রক্ষার ‘কার্যকর পথ' খুঁজে বের করতে চান তিনি৷
বিজ্ঞাপন
সোমবার তেহরানে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ জাভেদ জারিফ এবং ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানির সঙ্গে দেখা করেন হাইকো মাস৷ দু'টি আলোচনাতেই মূল বিষয় ছিল ২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তি৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চুক্তি থেকে সরে ইরানের ওপর আবার অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপ শুরু করায় এ নিয়ে সংকট দেখা দিয়েছে৷
চুক্তি রক্ষার উদ্যোগ হিসেবে জার্মানির উদ্যোগের প্রশংসা করলেও ইরান আগেই বলেছে, শুধু কথা বা আশ্বাসে কাজ হবে না, চুক্তি রক্ষা করতে হলে এর চেয়ে বেশি কিছু করতে হবে৷
‘কার্যকর পথ' খুঁজে বের করার চেষ্টার পাশাপাশি হাইকো মাস-ও বলেছেন, ‘‘ ইরানকেও নিশ্চয়ই ভবিষ্যতেও এ চুক্তি বজায় থাকবে এমন রাজনৈতিক দাবি পূরণের আশ্বাস পেতে হবে৷''
এর আগে ইরান জানিয়ে দেয়, যুক্তরাষ্ট্র যে অবরোধ আরোপ শুরু করেছে তা পুষিয়ে দেয়ার উপযুক্ত পথ ইউরোপীয় ইউনিয়ন বের করতে না পারলে আগামী ৭ জুলাইয়ের পর তারা আর চুক্তির শর্ত মানবে না৷
গত সপ্তাহে বার্লিনে এসেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও৷ তখন তাঁর সঙ্গেও ইরানের সঙ্গের পরমাণু চুক্তি নিয়ে কথা বলেছেন হাইকো মাস৷ তবে সেই আলোচনায় জটিলতা কাটেনি৷
ইরান পরমাণু চুক্তি কী ও কেন?
অ্যামেরিকা একতরফাভাবে ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তি বাতিল করলেও বাকি স্বাক্ষরকারী দেশগুলি চুক্তি মেনে চলতে বদ্ধপরিকর৷ ‘জয়েন্ট কম্প্রিহেনসিভ প্ল্যান অফ অ্যাকশন’ নামের এই চুক্তির প্রধান শর্তগুলি কী?
ছবি: picture-alliance/dpa/H. Neubauer
পরমাণু কর্মসূচি বন্ধ?
২০১৫ সালে স্বাক্ষরিত চুক্তি অনুযায়ী ইরান শুধু পরমাণু অস্ত্র তৈরির চেষ্টা চালাতে পারবে না৷ তবে আন্তর্জাতিক নজরদারির মধ্যে শান্তিপূর্ণ পরমাণু কর্মসূচি চালু রাখার অধিকার সে দেশের রয়েছে৷ অর্থাৎ বিদ্যুৎ উৎপাদন ও চিকিৎসার মতো ক্ষেত্রে পরমাণু শক্তি কাজে লাগানো যেতে পারে৷
ছবি: Getty Images/IIPA
ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ
চুক্তির প্রথম আট বছরে ইরান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের সীমা মেনে চলতে রাজি হয়েছিল৷ সেইসঙ্গে এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত গবেষণাও বন্ধ থাকবে৷ আন্তর্জাতিক পরমাণু জ্বালানি সংস্থা আইএইএ ইরানের কার্যকলাপের উপর নজর রেখে চলেছে৷ জার্মানি, ফ্রান্স, ব্রিটেন, চীন ও রাশিয়া এক্ষেত্রে আইএইএ-র মূল্যায়নকেই গুরুত্ব দিয়ে আসছে৷
ছবি: Kazem Ghane/AFP/Getty Images
পরমাণু ভাণ্ডারের ভবিষ্যৎ
চুক্তির আওতায় ইরান ৩,৬৭ শতাংশ সমৃদ্ধকৃত ইউরেনিয়ামের ভাণ্ডার ৯৮ শতাংশ পর্যন্ত কমানোর অঙ্গীকার করেছিল৷ অর্থাৎ ১৫ বছরের জন্য ৩০০ কিলোগ্রামের বেশি এমন মানের ইউরেনিয়াম ইরানের হাতে থাকার কথা নয়৷ ফলে পরমাণু অস্ত্র তৈরির পথ আপাতত বন্ধ থাকছে৷
ছবি: BEHROUZ MEHRI/AFP/Getty Images
নিষেধাজ্ঞা শিথিল
ইরান শর্ত পূরণ করার পরিবর্তে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ সে দেশের উপর আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা তুলে নেবার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল৷ ফলে ইরান আবার আন্তর্জাতিক বাজারে পেট্রোলিয়াম বিক্রি ও আন্তর্জাতিক অর্থ বাজারে প্রবেশের সুযোগ পেয়েছিল৷ অ্যামেরিকার চাপের মুখে সেই সুবিধা হাতছাড়া করতে চায় না ইরান৷
ছবি: FARS
চুক্তিভঙ্গের পরিণতি
পরমাণু কর্মসূচির উপর আন্তর্জাতিক নজরদারির ফলে একটি পরমাণু বোমা তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান তৈরি করতে ইরানের কমপক্ষে এক বছর লাগবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন৷ সে রকম প্রচেষ্টা চালালে আবার সে দেশের উপর আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা চাপানোর বিধান মেনে নিয়েছে ইরান৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Jenis
চুক্তির মেয়াদ শেষের অবস্থা
সমালোচকরা বার বার চুক্তির ‘সানসেট ক্লজ’ বা মেয়াদ শেষের অবস্থার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে থাকেন৷ তাদের অভিযোগ, শান্তিপূর্ণ লক্ষ্যে পরমাণু কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা সত্ত্বেও ইরান চুক্তির মেয়াদ শেষে আবার অস্ত্র তৈরির কাজ শুরু করবে৷ তবে চুক্তির প্রবক্তারা মনে করিয়ে দেন, যে বিভিন্ন ধরনের কার্যকলাপের উপর ১০, ১৫, ২০ বা ২৫ বছর পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা বজায় থাকবে৷
ছবি: Fars
ক্ষেপণাস্ত্র ও আঞ্চলিক প্রভাব
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও তাঁর সমর্থকরা ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির বাড়বাড়ন্ত ও মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে সে দেশের প্রভাব প্রতিপত্তির কড়া সমালোচনা করেন৷ ইউরোপসহ অন্যান্য অনেক দেশও বিষয়ে একমত৷ তবে ‘সফল’ পরমাণু চুক্তি বাতিল করার বদলে তা কাজে লাগিয়ে ইরানের উপর চাপ সৃষ্টি করতে চায় তারা৷
ছবি: Reuters/O. Sanadiki
7 ছবি1 | 7
গত ১২ই মে সংযুক্ত আরব আমিরাতে তিনটি পেট্রোলিয়ামবাহী ট্যাংকার জাহাজে হামলা হয়৷ ঘটনা তদন্তের পর সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব ও নরওয়ের রাষ্ট্রদূতরা জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে তাঁদের মতামত জানান৷ তদন্তকারীদের উদ্ধৃত করে তাঁরা বলেছেন, সম্ভবত কোনো বিদেশি রাষ্ট্র ডুবুরি পাঠিয়ে জাহাজগুলোতে মাইন বসিয়ে বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে৷ ইরানের দিকে ইঙ্গিত করলেও অবশ্য সরাসরি নাম উল্লেখ করেননি তাঁরা৷ তবে সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূত আগেই হামলার জন্য ইরানকে দায়ী করেছেন৷
অন্যদিকে ইরান যুক্তরাষ্ট্রের স্থাপনাতেও হামলা চালাতে পারে এমন আশঙ্কায় ঐ অঞ্চলে অতিরিক্ত দেড় হাজার সৈন্য পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র৷ এর আগে এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার ও কয়েকটি বি-৫২ বোমারু বিমানও মোতায়েন করেছে তারা৷
হাইকো মাস-এর পর জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে চুক্তি রক্ষার উদ্যোগ হিসেবে তেহরান সফরে যাবেন৷