জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচ স্থায়ী সদস্য ও জার্মানির সঙ্গে রবিবার ইরানের এক বোঝাপড়া হয়েছে৷ এর ফলে দুই পক্ষের মধ্যে আস্থা বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে৷
বিজ্ঞাপন
প্রত্যাশা শুরু থেকেই কম রাখা হয়েছিল৷ জেনিভায় আলোচনা নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যেও সীমাবদ্ধ রাখা হয়নি৷ তাই আশার আলো দেখা যাওয়ার ফলে শুক্রবারের বদলে রবিবার ভোররাত পর্যন্ত আলোচনা গড়িয়েছে৷
ইরান-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক কোন পথে?
৩৪ বছর ধরে দু দেশের বৈরি সম্পর্ক৷ ইরান আর যুক্তরাষ্ট্র পরস্পরের কাছে আসার বেশ কিছু উদ্যোগ ব্যর্থ করে দিয়ে এখনো পরস্পরবিরোধী অবস্থানে৷ প্রত্যাশা ছুঁয়ে না গেলেও এতদিনে দু দেশের সম্পর্কোন্নয়নের দ্বার খানিকটা খুলেছে৷
ছবি: Getty Images
আশা জাগিয়েছেন রোহানি
গত আগস্টেই ইরানের নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে কাজ শুরু করেছেন হাসান রোহানি৷ শুরুতেই যেসব আশার বাণী শুনিয়েছিলেন সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তোলার ইঙ্গিতও ছিল৷ এবারের জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে তাঁর সদিচ্ছার প্রমাণ আশা করেছিলেন অনেকে৷ সে আশা জাগিয়েই নিউ ইয়র্কে পা রেখেছিলেন রোহানি৷
ছবি: ISNA
ওবামার আহ্বান
জাতিসংঘে নিজের ভাষণে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা একরকম চ্যালেঞ্জই ছুড়ে দিয়েছিলেন রোহানির দিকে৷ বলেছিলেন, ইরানের প্রেসিডেন্ট সম্পর্কোন্নয়নের যে কথা আগে বলেছেন জাতিসংঘের অধিবেশনে, সেই ইচ্ছার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ কিছু কথা বললে যুক্তরাষ্ট্র খুব খুশি হবে৷
ছবি: Reuters
মিথ্যে আশা মরীচিকা
কিন্তু জাতিসংঘে নিজের প্রথম ভাষণে রোহানি সেরকম কিছু বলেননি৷ তাঁর দেশের আণবিক অস্ত্র তৈরির পরিকল্পনা প্রসঙ্গে সরাসরি কিছু না বলে পূর্বসসূরিদের মতো ঠিকই তোপ দাগিয়েছেন ইসরায়েলের বিরুদ্ধে৷ আরো বলেছেন, তাঁর দেশের ওপর চলমান নিষেধাজ্ঞা জনগণের ভোগান্তি বাড়ানোর চেষ্টা মাত্র৷
ছবি: Reuters
ইসরায়েলের সন্দেহ
ইসরায়েলের প্রতিক্রিয়াও যেন অতীতের বক্তব্যের অনুলিপি৷ ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন, ইরান সম্পর্কোন্নয়নের কথা বলে আসলে আণবিক বোমা তৈরির পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সময় নিতে চাইছে৷
ছবি: Reuters/Issam Rimawi
শেষ আশাও দুরাশা
জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে শেষ আশা হয়ে ছিল যুক্তরাষ্ট্র এবং ইরানের প্রেসিডেন্টের সংক্ষিপ্ত সাক্ষাতের সম্ভাবনা, যা বাস্তবায়িত হলে ওবামা আর রোহানির হাত মেলানোর দৃশ্যকে দু-দেশের বন্ধুত্বের ছবি হিসেবে ফ্রেমবন্দি করে রাখা যেতো৷ সেটাও সম্ভব হয়নি৷
ছবি: Getty Images
তবু আশা বেঁধে রাখা
১৯৭৯ সালের পর থেকে ইরান আর যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই৷ দু দেশের প্রেসিডেন্টকে কোথাও হাত মেলাতেও দেখা যায়নি৷ জাতিসংঘে আনুষ্ঠানিক সাক্ষাতটা হলে অন্তত সম্পর্কোন্নয়নের পথ নতুন করে খুলছে বলে আশা করা যেতো৷ ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ জাভাদ জারিফ অবশ্য বলেছেন, রোহানির যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সঙ্গে বৈঠক করতে কোনো আপত্তি ছিল না৷ এটা একটা শুভ সূচনা হতে পারতো, বলেন জারিফ৷
ছবি: Getty Images
6 ছবি1 | 6
ইরান তার বিতর্কিত পরমাণু কর্মসূচি বন্ধ করছে না, দেশটির উপর থেকে সব নিষেধাজ্ঞা তুলেও নেওয়া হচ্ছে না৷ তবে এই প্রাথমিক বোঝাপড়া চূড়ান্ত সমাধানসূত্রের পথ খুলে দিতে পারে৷ আস্থাবর্ধক এই চুক্তির আওতায় ইরান আরাক পরমাণু চুল্লি নির্মাণের কাজ বন্ধ রাখবে৷ তাছাড়া ইউরেনিয়ামের ফিসাইল কনসেন্ট্রেশনের মাত্রা ২০ শতাংশের মধ্যে রাখতে হবে৷ নতুন করে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের ক্ষেত্রেও ফিসাইল পিউরিটি ৫ শতাংশের মাত্রা অতিক্রম করবে না৷ আন্তর্জাতিক আণবিশ শক্তি সংস্থা আইএইএ-র পরিদর্শকরা নাতান্স ও ফোর্দো পরমাণু কেন্দ্রে প্রবেশের সুযোগ পাবেন৷ এই সব পদক্ষেপের বদলে বেশ কিছু নিষেধাজ্ঞা শিথিল করবে আন্তর্জাতিক সমাজ৷
এমন বোঝাপড়ার ফলে সামগ্রিকভাবে বেশ ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে৷ ইরান সহ অংশগ্রহণকারী দেশগুলির সরকার এই চুক্তিকে স্বাগত জানিয়েছে৷ তবে ইসরায়েল এই বোঝাপড়ার তীব্র বিরোধিতা করেছে৷ প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু এই সিদ্ধান্তকে ‘ঐতিহাসিক ভুল' হিসেবে বর্ণনা করেন৷