পরমাণু চুক্তির বৈঠকে ইরানকে হুঁশিয়ারি দিলেন জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী। বৈঠকে ইরানও উপস্থিত ছিল।
বিজ্ঞাপন
ইরানের সামনে শেষ সুযোগ। পরমাণু চুক্তি নিয়ে ইরান যেন নতুন করে কোনো স্ট্র্যাটেজি তৈরি না করে। হুঁশিয়ারি দিলেন জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাইকো মাস। সোমবার ২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তিতে সই করা দেশগুলি ভার্চুয়াল বৈঠকে বসছিল। ইরানের প্রতিনিধিও সেখানে উপস্থিত ছিলেন। সেখানেই মাস এই হুঁশিয়ারি দেন।
ইরান পরমাণু চুক্তি কী ও কেন?
অ্যামেরিকা একতরফাভাবে ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তি বাতিল করলেও বাকি স্বাক্ষরকারী দেশগুলি চুক্তি মেনে চলতে বদ্ধপরিকর৷ ‘জয়েন্ট কম্প্রিহেনসিভ প্ল্যান অফ অ্যাকশন’ নামের এই চুক্তির প্রধান শর্তগুলি কী?
ছবি: picture-alliance/dpa/H. Neubauer
পরমাণু কর্মসূচি বন্ধ?
২০১৫ সালে স্বাক্ষরিত চুক্তি অনুযায়ী ইরান শুধু পরমাণু অস্ত্র তৈরির চেষ্টা চালাতে পারবে না৷ তবে আন্তর্জাতিক নজরদারির মধ্যে শান্তিপূর্ণ পরমাণু কর্মসূচি চালু রাখার অধিকার সে দেশের রয়েছে৷ অর্থাৎ বিদ্যুৎ উৎপাদন ও চিকিৎসার মতো ক্ষেত্রে পরমাণু শক্তি কাজে লাগানো যেতে পারে৷
ছবি: Getty Images/IIPA
ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ
চুক্তির প্রথম আট বছরে ইরান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের সীমা মেনে চলতে রাজি হয়েছিল৷ সেইসঙ্গে এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত গবেষণাও বন্ধ থাকবে৷ আন্তর্জাতিক পরমাণু জ্বালানি সংস্থা আইএইএ ইরানের কার্যকলাপের উপর নজর রেখে চলেছে৷ জার্মানি, ফ্রান্স, ব্রিটেন, চীন ও রাশিয়া এক্ষেত্রে আইএইএ-র মূল্যায়নকেই গুরুত্ব দিয়ে আসছে৷
ছবি: Kazem Ghane/AFP/Getty Images
পরমাণু ভাণ্ডারের ভবিষ্যৎ
চুক্তির আওতায় ইরান ৩,৬৭ শতাংশ সমৃদ্ধকৃত ইউরেনিয়ামের ভাণ্ডার ৯৮ শতাংশ পর্যন্ত কমানোর অঙ্গীকার করেছিল৷ অর্থাৎ ১৫ বছরের জন্য ৩০০ কিলোগ্রামের বেশি এমন মানের ইউরেনিয়াম ইরানের হাতে থাকার কথা নয়৷ ফলে পরমাণু অস্ত্র তৈরির পথ আপাতত বন্ধ থাকছে৷
ছবি: BEHROUZ MEHRI/AFP/Getty Images
নিষেধাজ্ঞা শিথিল
ইরান শর্ত পূরণ করার পরিবর্তে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ সে দেশের উপর আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা তুলে নেবার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল৷ ফলে ইরান আবার আন্তর্জাতিক বাজারে পেট্রোলিয়াম বিক্রি ও আন্তর্জাতিক অর্থ বাজারে প্রবেশের সুযোগ পেয়েছিল৷ অ্যামেরিকার চাপের মুখে সেই সুবিধা হাতছাড়া করতে চায় না ইরান৷
ছবি: FARS
চুক্তিভঙ্গের পরিণতি
পরমাণু কর্মসূচির উপর আন্তর্জাতিক নজরদারির ফলে একটি পরমাণু বোমা তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান তৈরি করতে ইরানের কমপক্ষে এক বছর লাগবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন৷ সে রকম প্রচেষ্টা চালালে আবার সে দেশের উপর আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা চাপানোর বিধান মেনে নিয়েছে ইরান৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Jenis
চুক্তির মেয়াদ শেষের অবস্থা
সমালোচকরা বার বার চুক্তির ‘সানসেট ক্লজ’ বা মেয়াদ শেষের অবস্থার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে থাকেন৷ তাদের অভিযোগ, শান্তিপূর্ণ লক্ষ্যে পরমাণু কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা সত্ত্বেও ইরান চুক্তির মেয়াদ শেষে আবার অস্ত্র তৈরির কাজ শুরু করবে৷ তবে চুক্তির প্রবক্তারা মনে করিয়ে দেন, যে বিভিন্ন ধরনের কার্যকলাপের উপর ১০, ১৫, ২০ বা ২৫ বছর পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা বজায় থাকবে৷
ছবি: Fars
ক্ষেপণাস্ত্র ও আঞ্চলিক প্রভাব
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও তাঁর সমর্থকরা ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির বাড়বাড়ন্ত ও মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে সে দেশের প্রভাব প্রতিপত্তির কড়া সমালোচনা করেন৷ ইউরোপসহ অন্যান্য অনেক দেশও বিষয়ে একমত৷ তবে ‘সফল’ পরমাণু চুক্তি বাতিল করার বদলে তা কাজে লাগিয়ে ইরানের উপর চাপ সৃষ্টি করতে চায় তারা৷
ছবি: Reuters/O. Sanadiki
7 ছবি1 | 7
ট্রাম্প পরবর্তী সময়ে নতুন করে পরমাণু চুক্তি নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। বাইডেন নির্বাচনী প্রচারেই জানিয়েছিলেন, ক্ষমতায় এলে পুরনো পরমাণু চুক্তি নিয়ে আবার আলোচনা করবেন। প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালে ট্রাম্পের প্রশাসন পরমাণু চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসে। ট্রাম্প বলেছিলেন, ইতিহাসে এই পরমাণু চুক্তি সবচেয়ে হাস্যকর। বস্তুত, তার পরেই ইরানের উপর একাধিক নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল ট্রাম্প প্রশাসন। বাইডেন ট্রাম্পের সেই স্ট্র্যাটেজি থেকে বেরিয়ে আসতে চান। ফের পরমাণু চুক্তিতে যুক্ত হতে চান। একেই মাস ইরানের শেষ সুযোগ বলে ব্যাখ্যা করেছেন। বস্তুত, তাঁর বক্তব্য, এত দিন ইরানের উপর চাসৃষ্টির যে স্ট্র্যাটেজি নিয়েছিল অ্যামেরিকা, এ বার তা থেকে সরে আসার সময় হয়েছে। কিন্তু তার জন্য ইরানকেও নিজেদের অবস্থান বদলাতে হবে।
মাসের বক্তব্য সমর্থন করেছেন যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তাঁর বক্তব্য, ইরান যে নীতি নিয়েছে, তা থেকে তাদের সরে আসতে হবে। সম্প্রতি ইরানের পার্লামেন্টে পরমাণু আইন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সেখানে স্থির হয়েছে, আগের চেয়ে অনেক বেশি ইউরেনিয়াম মজুত করা হবে। ইরানের সেই প্রস্তাব নিয়ে বিশ্ব রাজনীতিতে সাড়া পরে যায়। সোমবার সে কথা উল্লেখ করে যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, ইরানকেও সেই অবস্থান থেকে সরতে হবে।
জো বাইডেন পরমাণু চুক্তি নিয়ে কী পদক্ষেপ নেবেন, তার দিকে তাকিয়ে আছে গোটা বিশ্ব। বস্তুত, তাঁর সিদ্ধান্তের উপর বিশ্ব কূটনীতির অনেক কিছু নির্ভর করছে। তবে পরিস্থিতি বদলানোর যথেষ্ট সম্ভাবনা আছে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।