ঘনিষ্ঠ সহযোগীদের চাপ সত্ত্বেও ইসরায়েল ইরানের হামলার জবাব দিতে বদ্ধপরিকর৷ তবে প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু সম্ভবত এখনো সে বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেননি৷ ওয়াশিংটন ইসরায়েলের সুরক্ষার অঙ্গীকার করেছে৷
বিজ্ঞাপন
ইসরায়েসের ভূখণ্ডের উপর ইরানের প্রথম সরাসরি হামলার পর পাল্টা পদক্ষেপের প্রস্তুতি চলছে৷ ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু এখনো সে বিষয়ে কোনো পাকা সিদ্ধান্ত নেননি বলে সরকারি ও সামরিক মহলে শোনা যাচ্ছে৷ তিনি পরপর রোববার ও সোমবার যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভার বৈঠক করে বিভিন্ন পদক্ষেপ খতিয়ে দেখেছেন৷ দেশের সামরিক বাহিনীর প্রধান হেরজি হালেভি বলেছেন, ইসরায়েল অবশ্যই উচিত জবাব দেবে৷ তবে সে বিষয়ে তিনি বিস্তারিত কিছু জানান নি৷
ইরান পালটা হামলা সম্পর্কে সাবধান করে দিয়েছে৷ মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, যে ইরানের উপর হামলা চালালে অ্যামেরিকা সেই অভিযানে অংশ নেবে না৷ ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র বিষয়ক প্রধান জোসেপ বোরেল মধ্যপ্রাচ্যে আরো উত্তেজনা সম্পর্কে সতর্ক করে দিয়েছেন৷ তাঁর মতে, এমন পরিস্থিতিতে বিপদ এড়াতে গাড়ির গতি না বাড়িয়ে ব্রেক কষে কিছুটা পিছিয়ে যাওয়া উচিত৷ ফ্রান্স, জার্মানি, ব্রিটেন, জাতিসংঘসহ অনেক রাষ্ট্র ও সংগঠনের শীর্ষ নেতারা সংযমের ডাক দিয়েছেন৷
সংযমের যাবতীয় ডাক সত্ত্বেও ইসরায়েল যে কোনো না কোনো ভাবে ইরানের হামলার জবাব দেবে, সে বিষয়ে তেমন সংশয় নেই৷ হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক মুখপাত্র জন কিরবি সোমবার বলেন, মার্কিন প্রশাসন ইরানের সঙ্গে যুদ্ধ ও আঞ্চলিক সংকট চায় না৷ তবে শেষ পর্যন্ত ইসরায়েলকেই ইরানের হামলার প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নিতে হবে৷ মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন সোমবার মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপে কয়েকটি দেশের প্রতিরক্ষামন্ত্রীদের সঙ্গে টেলিফোনে বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেন৷ তিনি বলেন, অ্যামেরিকা উত্তেজনা বাড়াতে না চাইলেও রাষ্ট্র হিসেবে ইসরায়েল এবং গোটা অঞ্চলে মার্কিন সৈন্যদের সুরক্ষা দিয়ে যাবে৷
ইরানের ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে পরিচিত দেশ রাশিয়া ও চীন সরাসরি শনিবারের হামলার নিন্দা না করলেও সংযমের ডাক দিয়েছে৷ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, কারো স্বার্থেই উত্তেজনা আরো বাড়ানোর অর্থ হয় না৷ চীন আশা করছে, যে ইরান নিজস্ব সার্বভৌমত্ত্ব ও সম্মান বজায় রেখে এবং পরিস্থিতি ভালোভাবে সামলে উঠে গোটা অঞ্চলকে আরো অস্থিরতার দিকে ঠেলে দেবে না৷ সোমবার দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মধ্যে টেলিফোনে কথা হয়েছে৷ চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই সিরিয়ায় ইরানের দূতাবাসের উপর ইসরায়েলের হামলার তীব্র নিন্দা করেছেন৷ চীনের ‘সীমিত' পদক্ষেপকে ইসরায়েলের হামলার জবাবে ‘আত্মরক্ষা' হিসেবে বর্ণনা করেছেন তিনি৷
ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য বিভিন্ন সময়ে চেষ্টা চালিয়েছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়৷ কিন্তু এসেছে কি শান্তি?
জাতিসংঘ রেজ্যুলেশন ১৯৬৭
১৯৬৭ সালে ছয়দিনের আরব-ইসরাইল যুদ্ধের পর ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকা দখল করে ইসরায়েল৷ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সে বছরের ২২ নভেম্বর জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে ‘রেজ্যুলেশন ২৪২’ নামে একটি প্রস্তাব পাস হয়৷ প্রস্তাবে দখলকৃত ফিলিস্তিনি এলাকা থেকে ইসরায়েলি সৈন্য সরিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়৷
ছবি: Getty Images/Keystone
ক্যাম্প ডেভিড চুক্তি ১৯৭৮
মিশর ও সিরিয়ার নেতৃত্বে আরব রাষ্ট্রগুলো ১৯৭৩ সালে আবারো ইসরায়েলের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হয়৷ এ যুদ্ধের ফলে মধ্যপ্রাচ্যে শান্তির বিষয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে উঠে বিশ্ব নেতারা৷ তাদের চেষ্টায় ১৯৭৮ সালে ১২ দিন আলোচনার পর যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে মার্কিন প্রেসিডেন্টের অবকাশ যাপন কেন্দ্র ক্যাম্প ডেভিডে এ চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয়৷ এ চুক্তিকে মধ্যপ্রাচ্যে শান্তির ভিত হিসিবে বিবেচনা করা হয়েছিল৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/B. Daugherty
মাদ্রিদ কনফারেন্স ১৯৯১
ইসরাইল-ফিলিস্তিন বিষয়ে ১৯৯১ সালে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার নেতৃত্বে স্পেনের মাদ্রিদে এ কনফারেন্সটি অনুষ্ঠিত হয়৷ এতে আরো অংশ নেয় ইসরায়েল, জর্ডান, লেবানান, সিরিয়া ও ফিলিস্তিন৷ এ কনফারেন্সের তাৎক্ষণিক কোন ফলাফল আসেনি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Hollander
অসলো অ্যাকর্ড ১৯৯৩
১৯৯৩ সালে নরওয়ের অসলোতে প্রথমবারের মতো মুখোমুখি আলোচনায় বসে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিন৷ আলোচনার পরবর্তী ধাপে এ দু’দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে যা অসলো চুক্তি নামে পরিচিত৷ চুক্তিতে বলা হয় যে, পশ্চিম তীর থেকে সকল সৈন্য প্রত্যাহার করবে ইসরায়েল৷ পাঁচ বছরের জন্য ফিলিস্তিনকে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের অনুমতিও দেয় এ চুক্তি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Sachs
আরব পিস ইনিশিয়েটিভ ২০০২
২০০২ সালে আরব লিগের নেতারা লেবাননের বৈরুতে অনুষ্ঠিত এক আলোচনায় মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি পরিকল্পনার একটি প্রস্তাব পাস করেন৷ প্রস্তাবনায় ইসরায়েলকে ১৯৬৭ সালের যুদ্ধ চলাকালীন দখলকৃত সব জায়গা ত্যাগ করতে বলা হয়, যেন পশ্চিম তীরে একটি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গড়ে তোলা যায়৷ বিনিময়ে ইসরায়েলকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার কথা জানানো হয়৷
ছবি: Getty Images/C. Kealy
রোডম্যাপ ২০০৩
ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া জাতিসংঘের সহযোগিতায় মধ্যপ্রাচ্যে শান্তির রোডম্যাপ নামে পরিকল্পনার প্রস্তাব দেয়৷ ২০০৫ সালের মধ্যে ফিলিস্তিন ও ইসরায়েল দুইটি আলাদা রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয় এই রোডম্যাপে৷
ছবি: Getty Iamges/AFP/J. Aruri
সংঘর্ষ, অস্ত্র বিরতির চেষ্টা
২০১২ সালের শেষ দিকে গাজায় দুইপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা বাড়তে থাকে৷ এ সময় ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে একটি অস্ত্র বিরতি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়৷ ২০১৪ সালে ইসরায়েলি এক তরুণ নিহতের ঘটনাকে কেন্দ্র করে ফিলিস্তিনে সামরিক অভিযান চালালে পরিস্থিতি আবারো খারাপ হতে থাকে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
প্যারিস সম্মেলন ২০১৭
২০১৭ সালে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিন বিষয়ে আলোচনা করতে ৭০টি দেশের প্রতিনিধিরা প্যারিসে একত্রিত হয়৷ তবে ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের কোনো প্রতিনিধিই এ আলোচনায় অংশ নেয়নি৷
ছবি: Reuters/T. Samson
ট্রাম্পের শান্তি আলোচনা
প্রেসিডেন্ট থাকাকালে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন বিষয়ে শান্তি পরিকল্পনা ঘোষণা করেন ডনাল্ড ট্রাম্প৷ এতে বলা হয় পশ্চিম তীরে বসতি স্থাপন বন্ধ রাখবে ইসরায়েল, তবে ইতোমধ্যে অধিকৃত সকল স্থাপনায় তাদের নিয়ন্ত্রণ থাকবে৷ এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে ফিলিস্তিন৷