ইরানে আটক নাজানিন জাঘারির মুক্তি চেয়ে লন্ডনে স্বামীর অনশন
২৬ অক্টোবর ২০২১
পাঁচ বছর ধরে ইরানে আটক স্ত্রীর মুক্তির দাবিতে আবারো অনশন শুরু করছেন ব্রিটিশ দাতব্যকর্মী নাজানিন জাঘারির স্বামী রিচার্ড র্যাটক্লিফ৷ রোববার লন্ডনে অবস্থিত ব্রিটিশ পররাষ্ট্র দপ্তরের বাইরে অনশন শুরু করেন তিনি৷
বিজ্ঞাপন
ইরানের বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ দাতব্যকর্মী নাজানিন জাঘারি-র্যাটক্লিফ গোয়েন্দাবৃত্তির অভিযোগে বর্তমানে তেহরানে আটক আছেন৷ ইরান সরকারের বিরুদ্ধে গোয়েন্দাবৃত্তির অভিযোগে ২০১৬ সাল থেকে তেহরানের বন্দি তিনি৷
আর স্ত্রীর মুক্তির দাবিতে দ্বিতীয়বারের মতো অনশনে বসেছেন রিচার্ড র্যাটক্লিফ৷ তার অভিযোগ, স্ত্রী নাজানিন জাঘারি-র্যাটক্লিফের মুক্তির জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছে না ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন৷
স্ত্রীর মুক্তির দাবিতে ২০১৯ সালে আরেকবার করেছিলেন রিচার্ড৷
‘‘আমি আশা করিনি যে, আমাকে দ্বিতীয়বারের মতো অনশন করতে হবে৷ এটি কোনো সাধারণ কাজ নয়,'' নিজের চেঞ্জ ডট ওআরজিতে এমন মন্তব্য তার৷
দাবি আদায়ে মুখ সেলাই করে অনশন, আত্মহত্যার চেষ্টা
তাদের দাবি- অভিবাসী হওয়ার আবেদনের একটা স্থায়ী সমাধান করে স্বাস্থ্য পরিষেবা ও বেলজিয়াম সরকারের যাবতীয় সেবার আওতায় নিতে হবে৷এ লক্ষ্যে ব্রাসেলসে অনশন ধর্মঘট শুরু করেছেন কয়েকশ’ অভিবাসনপ্রত্যাশী৷ বিস্তারিত ছবিঘরে...
ছবি: Yves Herman/REUTERS
মুখ সেলাই করে অনশনে
ব্রাসেলসে বেলজিয়াম ইউনিভার্সিটি ইউএলবি-তে এক মাসেরও বেশি সময় ধরে অনশন ধর্মঘট করছেন কয়েকশ’ অভিবাসনপ্রত্যাশী৷ তিউনিশিয়া থেকে আসা হাসনি আব্দেরাজ্জেক অনশন করছেন সেলাই করে মুখ বন্ধ করে নিয়ে৷
ছবি: Yves Herman/REUTERS
দুর্বল শরীর
বেলজিয়ামের রাজধানীতে মাসাধিক কাল অনশন করে মরক্কোর ইউসেফ বাউজিদির শরীর এত দুর্বল যে হাঁটার শক্তিও নেই৷ তাকে হাঁটতে সহায়তা করছেন এক জন৷
ছবি: Yves Herman/REUTERS
হাসপাতালে যাওয়ার আগে
ছবির এই অভিবাসনপ্রত্যাশী অভিবাসী হওয়ার আবেদনের স্থায়ী সমাধানের দাবিতে অনশন করতে করতে কাহিল৷ছবিতে তাকে হাসপাতালে নেয়ার প্রস্তুতির মুহূর্ত৷
ছবি: Yves Herman/REUTERS
হাসপাতালের পথে আরেকজন
আরেকজন অভিবাসনপ্রত্যাশীরও আর অনশন ধর্মঘট করার শারীরিক সামর্থ্য নেই৷বেলজিয়াম সরকারের স্বাস্থ্যকর্মীরা হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছেন তাকে৷
ছবি: Yves Herman/REUTERS
মুখ বন্ধ
অভিবাসী হওয়ার আবেদনের স্থায়ী সমাধান দিয়ে স্বাস্থ্য পরিষেবা ও বেলজিয়াম সরকারের যাবতীয় সেবার আওতায় নেয়ার দাবিতে অনশন শুরুর সময় নিজের মুখ সেলাই করে নিয়েছেন অনেকে৷ ছবির এই অনশনকারীর নাম সোফিয়ানে৷
ছবি: Yves Herman/REUTERS
নারীদের অনশন
ব্রাসেলসে বেলজিয়াম ইউনিভার্সিটি ইউএলবি-তে অনশনরত কয়েকজন অভিবাসনপ্রত্যাশী নারী৷
ছবি: Yves Herman/REUTERS
আত্মহত্যার চেষ্টার পর...
ছবির এই অভিবাসনপ্রত্যাশী হতাশায়, ক্ষোভে আত্মহননের পথও বেছে নিয়েছিলেন৷ স্ট্রেচারে তুলে হাসপাতালে নেয়া হচ্ছে তাকে৷
ছবি: Yves Herman/REUTERS
অনড় বেলজিয়াম সরকার
আলজেরিয়া থেকে আসা মোহামেদ লামিনেও অনশন করছেন দুটো ঠোঁট এভাবে সেলাই করে৷তবে একমাস পার হয়ে গেলেও অভিবাসনপ্রত্যাশীদের দাবি পূরণের বিষয়ে বেলজিয়াম সরকারের বিশেষ কোনো পদক্ষেপ লক্ষ্য করা যায়নি৷
ছবি: picture alliance/blickwinkel/McPhotos
8 ছবি1 | 8
‘জনসনকেদায়ত্বনিতেহবে'
ইরানকে এই ঘটনার ‘প্রধান নিপীড়ক' উল্লেখ করে রিচার্ড-র্যাটক্লিফ বলেন, ‘‘যুক্তরাজ্য সরকারও আমাদের সহযোগিতা করছে না৷''
‘‘এটি স্পষ্ট যে, নাজানিনের মামলাটি আরো অনেক মাস আগেই সমাধান হতে পারত৷ কিন্তু অন্যান্য কূটনৈতিক এজেন্ডার জন্য তা হয়নি৷ প্রধানমন্ত্রীকে (বরিস জনসন) এর দায়িত্ব নিতে হবে৷''
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যশনাল মনে করে, পররাষ্ট্র দপ্তরের সামনে অবস্থান নিয়ে রিচার্ড র্যাটক্লিফ এ ঘটনার উপর ক্রমাগত নজরদারি করতে চায়৷ অর্থাৎ এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের উপর চাপ প্রয়োগ অব্যহত রাখতে চায়৷ আন্তর্জাতিক এই মানবাধিকার সংস্থাটি বিভিন্ন সময়ে আটক নাজানিনের মুক্তি দাবি করেছে৷
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের ৬০ বছর
৬০ বছর হয়ে গেল আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের পথ চলার৷ এক আইনজীবীর উদ্যোগে আত্মপ্রকাশ করার সময়ে ফিরে গিয়ে দেকে আসা যাক সংগঠনটির এই পথ পরিক্রমা৷
ছবি: Getty Images/AFP/L. Neal
ভুলে যাওয়া দুই কয়েদি এবং অ্যামনেস্টি
১৯৬১ সালে দুই ছাত্রকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠায় পর্তুগালের স্বৈরাচারি সরকার৷সেই দুজন এবং এভাবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আরো যারা কারারুদ্ধ আছেন তাদেরও মুক্তির দাবিতে সবাইকে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানিয়ে একটি আর্টিকেল লেখেন পিটার বেনেসন৷ ব্রিটিশ আইনজীবী বেনেসনের লেখাটি সারা বিশ্বে আলোড়ন তোলে৷তারই ধারাবাহিকতায় ১৯৬১ সালের ২৮ মে প্রতিষ্ঠিত হয় অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল৷
ছবি: Miguel Riopa/AFP/Getty Images
জীবন রক্ষার লক্ষ্যে
অ্যামনেস্টির প্রথম লক্ষ্য ছিল অহিংস রাজনৈতিক বন্দিদের রক্ষা করা৷তাই সাউথ আফ্রিকার অবিসংবাদিত নেতা নেলসন ম্যান্ডেলা, রাশিয়ার আলেক্সি নাভালনিসহ বিশ্বের অনেক উল্লেখযোগ্য ব্যক্তির পাশেই দাঁড়াতে দেখা গেছে ব্রিটেনভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠনটিকে৷এক সময় বিভিন্ন দেশে নির্যাতন এবং মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধেও প্রতিবাদে সোচ্চার হতে শুরু করে অ্যামনেস্টি৷
ছবি: Getty Images/S. Barbour
নির্যাতনের বিরুদ্ধে
১৯৭০-এর দশকে বিভিন্ন দেশে রাজনৈতিক বন্দিদের ব্যাপকভাবে নির্যাতন করা হতো৷ বিশেষ করে সামরিক সরকারগুলোর মধ্যেই এ প্রবণতা বেশি লক্ষ্য করা যেতো৷ অ্যামনেস্টি সব ধরনের নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে শুরু করে৷এর ফলে বিশ্বব্যাপী সচেতনতা গড়ে ওঠায় জাতিসংঘও নির্যাতনবিরোধী অবস্থান নেয়৷ জাতিসংঘের এ সংক্রান্ত সনদে স্বাক্ষর করে ১৫০টিরও বেশি দেশ৷
ছবি: Tim Sloan/AFP/Getty Images
যুদ্ধাঞ্চলে তদন্ত
যুদ্ধকে ঘিরে বিভিন্ন দেশে যে নিপীড়ন, নির্যাতন এবং হত্যার ঘটনা ঘটে তা রোখা এবং সে সবের তদন্তেরও উদ্যোগ নেয় অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল্৷সাম্প্রতিক সময়ে সিরিয়া যুদ্ধে রাশিয়া, সিরিয়ার বাহিনি এবং যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন সম্মিলিত জোট বাহিনীর বিরুদ্ধে ওঠা যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ তদন্তেও কাজ করেছে সংগঠনটি৷
ছবি: Delil Souleiman/AFP/Getty Images
অস্ত্র সরবরাহ রোধে উদ্যোগ
যুদ্ধাঞ্চলে যথেচ্ছ অস্ত্রের স্রোত বন্ধেও সচেষ্ট অ্যামনেস্টি৷ আন্তর্জাতিক আইন থাকা সত্ত্বেও অনেক দেশই সে আইন না মেনে বিভিন্ন দেশে প্রচুর অস্ত্র বিক্রি করে৷ সেসব অস্ত্রের একটি অংশ বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধেও ব্যবহার করা হয়৷ রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্রসহ বড় বড় সব অস্ত্র রপ্তানিকারী দেশের যুদ্ধাঞ্চলে অস্ত্র সরবরাহের পথ রোধ করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে অ্যামনেস্টি৷
ছবি: Chris J Ratcliffe/Getty Images
সবার অধিকার রক্ষা
লিঙ্গবৈষম্য দূর করা, শিশুর অধিকার, এলজিবিটির অধিকার এবং নারীদের আইনসম্মত গর্ভপাতের অধিকার প্রতিষ্ঠাসহ অনেক বিষয়েই সক্রিয় অ্যামনেস্টি৷
ছবি: Alejandro Pagni/AFP/Getty Images
পুরষ্কার ও স্বীকৃতি
৬০ বছরে অনেক পুরষ্কারও পেয়েছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল৷ এর মধ্যে ১৯৭৭ সালে পাওয়া নোবেল শান্তি পুরস্কার এবং ১৯৭৮ সালের জাতিসংঘ মানবাধিকার পুরস্কার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য৷
ছবি: picture-alliance/dpa/W. Kumm
7 ছবি1 | 7
কীঅভিযোগনাজানিনেরবিরুদ্ধে
২০১৬ সালের এপ্রিল মাসে ব্রিটিশ দাতব্যকর্মী নাজানিন জাঘারিকে ইরানের তৎকালীন সরকারকে ‘ক্ষমতাচ্যুত করার ষড়যন্ত্র এবং গোয়েন্দাবৃত্তির' অভিযোগে তেহরান বিমানবন্দর থেকে আটক করা হয়৷ ইরানে বসবাসরত মা-বাবার সাথে সাক্ষাত শেষে ফেরার পথে বিমানবন্দর থেকে আটক হন তিনি৷
বিচার শেষে ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে নাজানিনকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেয় তেহরানের একটি আদালত৷ তবে তেহরান আদালতের এ বিচারকে ‘বৈষম্যমূলক' বলছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল৷
এরপর চলতি বছর তার সাজার মেয়াদ আরো এক বছর বাড়ানো হয়৷ ২০০৯ সালে লন্ডনে অবস্থিত ইরানের দূতাবাসের সামনে প্রতিবাদ সভায় অংশ নিয়ে রাষ্ট্রের (ইরানের) বিরুদ্ধে ‘প্রপাগান্ডা ছড়ানোর' অভিযোগে তার সাজা এক বছর বাড়ানো হয়৷
ধারণা করা হচ্ছে ইরানকে ব্রিটিশ সরকারের ৪০ কোটি পাউন্ড ঋণ ফেরত দিতে দেরি করায় নাজানিনের মুক্তির ব্যপারটি আটকে আছে৷ ব্রিটিশ পররাষ্ট্র দপ্তর বলছে, ইরানের উপর আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা থাকার কারণে তারা টাকা ফেরত দিতে পারছে না৷
উল্লেখ্য, স্ত্রীর মুক্তির দাবিতে ২০১৯ সালে লন্ডনে অবস্থিত ইরানের দূতাবাসের সামনে ১৫ দিনের অনশন পালন করেছিল রিচার্ড ৷