তেহরানের আদালত রোববার জানিয়েছে,ওই বিক্ষোভকারী দাঙ্গার সঙ্গে জড়িত ছিল। পুলিশ হেফাজতে মাহসা আমিনির মৃত্যুর পর থেকে ইরান-জুড়ে বিক্ষোভ হচ্ছে। সেই বিক্ষোভের সঙ্গেই জড়িত ছিল শাস্তিপ্রাপ্ত ব্যক্তি।
মিজান অনলাইন জানিয়েছে, ''এই কঠোর শাস্তি দেয়ার কারণ হিসাবে আদালতের যুক্তি হলো. , বিক্ষোভকারী সরকারি বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির জন্য সে দায়ী। রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে চক্রান্তেও সে সামিল ছিল। সে ঈশ্বরের শত্রু। ''
ওয়েবসাইটটি আরো জানিয়েছে, আরেকটি তেহরান আদালত বিক্ষোভ দেখানোর জন্য পাঁচজনকে পাঁচ থেকে দশ বছরের কারাদণ্ডের নির্দেশ দিয়েছে। তারা জাতীয় নিরাপত্তার বিরোধী কাজ করেছে বলে এই শাস্তি।
মাহসা আমিনি হত্যা : বিক্ষোভ এশিয়া ছাড়িয়ে ইউরোপে
ভাইয়ের সঙ্গে ছিলেন মাহসা আমিনি৷ সহি পোশাক না পরায় তাকে ধরে নিয়ে যায় ইরানের নীতি পুলিশ৷ আর জীবিত ফেরেননি মাহসা৷ তার মৃত্যুর প্রতিবাদে বিক্ষোভ চলছে বিভিন্ন দেশে৷ দেখুন ছবিঘরে...
ছবি: Yasin Akgul/AFP
মাহসা আমিনি
মাহসার বয়স মাত্র ২২৷ কুর্দি পরিবারে জন্ম৷ গত ১৩ সেপ্টেম্বর ভাইয়ের পাশ থেকে তাকে ধরে নিয়ে যায় ইরানের নীতি পুলিশ৷ মাহসার অপরাধ- ঠিকভাবে হিজাব পরেনি৷
ছবি: privat/UGC
তিনদিন পর সংবাদ শিরোনামে
ভোজারা ডিটেনশন সেন্টারে নিয়ে যাওয়ার পরই নাকি অজ্ঞান হয়ে যান মাহসা৷ পুলিশের এমনই দাবি৷ তারপর নিয়ে যাওয়া হয় হাসপাতালে৷ সেখানে তিনদিন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে হেরে যান তরতাজা তরুণী মাহসা৷ইরানের প্রায় সব খবরের কাগজে ছাপা হয় মাহসার রহস্যজনক মৃত্যুর খবর৷
ছবি: Fatemeh Bahrami/AA/picture alliance
মাথায় আঘাত করে হত্যা?
ইরানের নীতি পুলিশের দাবি, মাহসা হঠাৎ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন৷ তারপরই নাকি তিনি কোমায় চলে যান৷ কিন্তু পরিবার বলছে, মাহসা পুরোপুরি সুস্থ ছিলেন, তাই হৃদরোগে মারা যাওয়ার তথ্যটি তারা বিশ্বাস করছেন না৷ জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক ভারপ্রাপ্ত হাই কমিশনার নাদা আল-নাশিফ অবশ্য বলেছেন, পুলিশ আমিনির মাথায় লাঠি দিয়ে আঘাত করেছিল অথবা কোনো গাড়ির সঙ্গে মাথা ঠুকে দিয়েছিল বলে রিপোর্টে বলা হয়েছে।
ছবি: Denis Balibouse/REUTERS
ইরানে প্রবল বিক্ষোভ
মাহসা আমিনির নীতি পুলিশের হেফাজতে মৃত্যুর খবরে ফুঁসে উঠেছে ইরান৷ নানা শহরে বিক্ষোভ জানাতে রাস্তায় নেমেছে হাজার হাজার মানুষ৷ওপরের ছবিতে রাজধানী তেহরানের এক রাস্তার বিক্ষোভ মিছিল৷
ছবি: UGC
এক থেকে হাজার মাহসা
মাহসা হত্যার প্রতিবাদ ইরান থেকে ছড়িয়ে পড়েছে নানা দেশে৷ বিভিন্ন স্থানে নারীরা মাহসার ছবি নিয়ে বিক্ষোভ করছেন, কেউ কেউ ছবির নীচে লিখছেন, ‘‘আ অ্যাম মাহসা৷’’ ওপরে জার্মানির রাজধানী বার্লিনের ছবি, ইরানি বংশোদ্ভূত এক নারীর হাতেও দেখা যাচ্ছে মাহসার ছবিতে ‘‘আ অ্যাম মাহসা’’ লেখা প্ল্যাকার্ড৷
ছবি: Paul Zinken/picture alliance/dpa
তুরস্কে বিক্ষোভ
ইস্তাম্বুলের রাস্তায় মাহসা হত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভ৷ এই নারীর মতো অনেকেই তুরস্ক থেকেই তুলেছেন হত্যাকারীদের কঠোর শাস্তির দাবি৷
ছবি: Francisco Seco/ASSOCIATED PRESS/picture alliance
চুল কেটে প্রতিবাদ
হিজাবে চুল এবং মুখ না ঢাকার কারণে মাহসাকে নিয়ে পিটিয়ে মারা হয়েছে বলে বিক্ষোভকারীদের সন্দেহ৷ তাই ইরানের অনেক নারীই হিজাব পোড়াচ্ছেন, কেটে ফেলছেন নিজের মাথার চুল৷ অন্যান্য দেশেও এভাবে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন অনেকে৷ ওপরে ইস্তাম্বুলে এক নারীর চুল কাটার মুহূর্ত৷
ছবি: Yasin Akgul/AFP
ফ্রাঙ্কফুর্টে বিক্ষোভ
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট শহরে বসবাসরত ইরানিরাও মাহসা হত্যার প্রতিবাদে রাস্তায় নেমেছেন৷
ছবি: Boris Roessler/picture alliance/dpa
পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ
ইরানের বিভিন্ন শহরে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়াচ্ছেন বিক্ষোভকারীরা৷
রোববারই তিনটি এলাকার কয়েকশ বিক্ষোভকারীর বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগ করা হয়েছে। সবমিলিয়ে দুই হাজারের বেশি মানুষকে বিক্ষোভ দেখানোর দায়ে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
ইরানে এখনো মানুষ রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন। মেয়েরা রাস্তায় নেমে নারী স্বাধীনতার পক্ষে স্লোগান দিচ্ছেন।
১৯৭৯ সালের পর থেকে সম্ভবত এত প্রবল বিক্ষোভ দেখেনি ইরান। কর্তৃপক্ষ প্রতিবাদ বন্ধ করার জন্য সব ধরনের চেষ্টা করেছে। ১৫ হাজার মানুষকে আটক করা হয়েছে। তারপরেও বিক্ষোভ থামেনি।
জাতিসংঘ ও পশ্চিমা দেশগুলি বিক্ষোভকারীদের সমর্থন করেছে।