ইরানের রাজধানী তেহরানের পার্লামেন্ট ভবন এবং বিপ্লবী নেতা আয়াতোল্লাহ খামেনেই-এর সমাধিতে সন্ত্রাসীরা জোড়া হামলা চালিয়েছে৷ গোলাগুলিতে অন্তত ১২ জন নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম৷ হামলায় আহত অন্তত ৪২ জন৷
বিজ্ঞাপন
ইরান কর্তৃপক্ষ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, সকালে দু'টি সন্ত্রাসী দল পার্লামেন্ট এবং খামেনেইয়ের মাজারে হামলা চালায়৷ তৃতীয় একটি দলকে হামলা চালানোর আগেই ধরে ফেলে নিরাপত্তাবাহিনী৷ সাইট ইনটেলিজেন্ট গ্রুপ জানিয়েছে, তথাকথিত ইসলামি জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএস) এই হামলার দায় স্বীকার করেছে৷ তাদের দাবি সত্য হলে শিয়া অধ্যুষিত ইরানে সুন্নি জঙ্গি গোষ্ঠীটির প্রথম হামলা হবে৷
পার্লামেন্ট ভবনে হামলা:
পার্লামেন্টের এক সদস্য রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম আইআরআইবি-কে জানিয়েছেন, পার্লামেন্ট কমপ্লেক্সের ভেতর সকালে চার বন্দুকধারী ঢুকে পড়ে৷ তাদের কাছে একে-৪৭ রাইফেল ও পিস্তল ছিল৷ সংবাদ সংস্থা ইসনা এবং ফারস জানিয়েছে, ভবনের উত্তর দিক দিয়ে নিরাপত্তারক্ষীকে গুলি করে ভেতরে ঢোকে বন্দুকধারীরা৷ এরপর এক হামলাকারী আত্মঘাতী বোমার বিস্ফোরণ ঘটায়৷ স্থানীয় সংবাদ সংস্থাগুলো জানিয়েছে, হামলার এক ঘণ্টা পর নিরাপত্তাবাহিনীর গুলিতে বাকি হামলাকারীরা নিহত হয়েছে৷
খামেনেইয়ের সমাধিতে হামলা:
প্রেস টিভি এবং অন্যান্য রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা জানিয়েছে, তেহরানের দক্ষিণাঞ্চলে পার্লামেন্ট ভবন থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে বিপ্লবী নেতা আয়াতোল্লাহ খামেনেইয়ের সমাধির কাছে আত্মঘাতী হামলাকারী বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে৷ সংবাদ সংস্থা এপি জানিয়েছে, বন্দুকধারী এক ব্যক্তি সমাধির পশ্চিমদিকের গেট দিয়ে প্রবেশ করে এলোপাথাড়ি গুলি ছুঁড়তে থাকে, এরপর নিজের শরীরে রাখা বোমার বিস্ফোরণ ঘটায়৷
হামলার পর পরই তেহরানে সতর্কতা জারি করা হয়েছে৷ খামেনেইয়ের সমাধির আশেপাশে সাংবাদিকদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে৷ সাধারণ পরিবহণ ব্যবস্থা বন্ধ রয়েছে৷
কোণঠাসা হলেও ফুরিয়ে যায়নি আইএস
তথাকথিত ইসলামিক স্টেট সিরিয়া ও ইরাকে তাদের মূল ক্ষমতাকেন্দ্রে কোণঠাসা হয়ে পড়েছে৷ তবে মিশর, লিবিয়া, আফগানিস্তানের মতো দেশেও তাদের প্রভাব কম নয়৷ ইউরোপে আইএস ভাবধারায় অনুপ্রাণিত ব্যক্তিদের কার্যকলাপের ঝুঁকিও বাড়ছে৷
ছবি: Reuters/Rodi Said
সিরিয়া ও ইরাকে জমি হাতছাড়া
রাকা শহরকে কেন্দ্র করে বিশাল খিলাফত গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখেছিল আইএস৷ সিরিয়া ও ইরাকের বিস্তীর্ণ অংশ তাদের নিয়ন্ত্রণে এসে গিয়েছিল৷ মার্কিন নেতৃত্বে কোয়ালিশন বাহিনীসহ একাধিক শত্রুর চাপে তারা অনেক এলাকার উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে৷
ছবি: Reuters
আর্থিক সংকট
‘খিলাফত’ স্থাপন করতে অর্থের প্রয়োজন৷ রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষের মতোই এলাকা দখল করে কর বাবদ টাকা তুলে, সেখানকার প্রাকৃতিক ও অন্যান্য সম্পদ বিক্রি করে এসেছে আইএস৷ তাদের যোদ্ধা ও কর্মীদের বেতন-ভাতাও এসেছে সেখান থেকে৷ বর্তমানে জমি হারিয়ে চরম অর্থাভাবে ভুগছে আইএস৷
ছবি: Reuters/Rodi Said
লিবিয়ায় আবার মাথাচাড়া দেবার প্রচেষ্টা
যেখানেই অরাজকতা, সেখানেই সুযোগ খোঁজার কাজে ঝাঁপিয়ে পড়ে আইএস৷ সিরিয়া ও ইরাকে ধাক্কা খেয়ে লিবিয়ায় আবার উপস্থিতি বাড়াতে চাইছে তারা৷ সে দেশের একনায়ক গাদ্দাফির বিরুদ্ধে সংগ্রামের পর অনেক চরম ইসলামপন্থি গোষ্ঠী আইএস-এর ছত্রছায়ায় চলে আসে৷ প্রাথমিক সাফল্যের পর সেখানেও জমি হারায় তারা৷ এবার নতুন করে উপস্থিতি বাড়াতে চাইছে আইএস৷
ছবি: Reuters/I. Zitouny
ইয়েমেনে কঠিন লড়াই
অরাজকতার সুযোগ নিয়ে ইয়েমেনেও পা রাখতে চেয়েছিল আইএস৷ কিন্তু সেখানে তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী কম নয়৷ আল-কায়েদা ও শিয়া বিদ্রোহীদের দৌরাত্ম্যের মাঝে জায়গা করে নিতে আইএস-কে বেগ পেতে হয়েছে৷ শিয়া-সুন্নি সংঘাতের বৃহত্তর কালো ছায়া তাদের অ্যাজেন্ডা অনেকটা দাবিয়ে রেখেছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Y.Arhab
মিশরে উপস্থিতি
মিশরের সিনাই উপদ্বীপে আইএস ঘাঁটি গেড়েছে৷ খ্রিষ্টানসহ অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে হিংসাত্মক কার্যকলাপ চালিয়ে তারা মিশরের প্রশাসনকে বেকায়দায় ফেলছে৷ দু’টি গির্জার উপর সাম্প্রতিক হামলার পর সরকার জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে৷
ছবি: Reuters/A. Aboulenein
আফগানিস্তানে তালেবানকে চ্যালেঞ্জ
দুর্বল রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণের সুযোগ নিয়ে এতকাল আফগানিস্তানে চরমপন্থি সন্ত্রাস চালিয়ে এসেছে তালিবান৷ তাদের শক্তিক্ষয়ের ফলে যে শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে, তার অনেকটাই দখল করতে এগিয়ে এসেছে আইএস৷ জেহাদি ভাবধারার সওদাগর হিসেবে নিজেদের গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে চাইছে তারা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/TTP
অনুপ্রেরণার উৎস
সরাসরি এলাকার উপর নিয়ন্ত্রণ ও সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ পরিচালনা ছাড়াও ভাবাদর্শ ও জেহাদি রপ্তানির কাজেও সাফল্য দেখিয়েছে আইএস৷ কোনো দেশে সন্ত্রাসী হামলার ডাক দিয়ে এমনকি অচেনা মানুষকেও উদ্বুদ্ধ করে লক্ষ্য হাসিল করেছে এই গোষ্ঠী৷ নিস, প্যারিস, বার্লিন, লন্ডন, স্টকহোম-এর মতো শহরে হামলার ক্ষেত্রে এমনটা দেখা গেছে৷
ছবি: picture alliance/ZUMAPRESS.com
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বনাম আইএস
পূর্বসূরি বারাক ওবামা-র কড়া সমালোচনা করে ডোনাল্ড ট্রাম্প আইএস-কে নির্মূল করার ব্রত নিয়েছেন৷ ক্ষমতায় আসার পর ইয়েমেন ও আফগানিস্তানে সরাসরি আইএস-এর বিরুদ্ধে সামরিক হামলার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি৷ তবে এক্ষেত্রে কোনো সার্বিক নীতি এখনো স্পষ্ট নয়৷