ইরান সরকারের পক্ষে প্রচারণা চালানো বেশকিছু ভুয়া অ্যাকাউন্ট মুছে ফেলেছে ফেসবুক এবং টুইটার৷ ইন্টারনেট নিরাপত্তা বিষয়ক প্রতিষ্ঠান ফায়ারআই-এর এক অনুসন্ধানের ভিত্তিতে এই উদ্যোগ নিয়েছে প্রতিষ্ঠানগুলো৷
বিজ্ঞাপন
ফেসবুক এবং টুইটার মঙ্গলবার জানিয়েছে, রাজনৈতিক নেতা এবং সাংবাদিকদের ছদ্মবেশ ধারণ করে ইরান সরকারের পক্ষে প্রচারণা চালানো কিছু ভুয়া ফেসবুক অ্যাকাউন্ট মুছে ফেলেছে প্রতিষ্ঠান দু'টি৷ গণমাধ্যমে প্রকাশিত হিসেব অনুযায়ী, নতুন এই উদ্যোগের আওতায় ইরানের মোট ৫১টি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট, ৩৬টি পাতা এবং তিনটি ইন্সটাগ্রাম অ্যাকাউন্ট মুছে ফেলা হয়েছে৷
ফেসবুকের সাইবার নিরাপত্তা বিভাগের প্রধান নেথানিয়েল গ্লাইসার স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে যে, যেসব অ্যাকাউন্ট মুছে ফেলা হয়েছে সেগুলো ব্যবহার করে সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করা হচ্ছিল৷ আর সেসব অ্যাকাউন্ট ইরান থেকে চালু করা হয়েছিল বলেও নিশ্চিত করেছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমটি৷
এদিকে, টুইটার জানিয়েছে, মে মাসের শুরুতে ইরান থেকে চালু করা ২,৮০০ ভুয়া অ্যাকাউন্টের একটি নেটওয়ার্ক মুছে ফেলেছে মাইক্রোব্লগিং সাইটটি৷ প্রতিষ্ঠানটির তদন্ত এখনো অব্যাহত রয়েছে৷
দেশে দেশে ইন্টারনেটে নিয়ন্ত্রণ-লড়াই
অনলাইনে ঘৃণা ছড়ানো বন্ধ করতে জার্মানি একটি ‘সামাজিক মাধ্যম আইন’ করতে চায়৷ জার্মান সংসদে এ নিয়ে আলোচনা চলছে৷ এরই মধ্যে এর সমালোচনাও শুরু হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/W. Kastl
মুক্তমত, নাকি অবৈধ বিষয়বস্তু?
ঘৃণা ছড়ানো বক্তব্য, প্রপাগান্ডা, অ্যাক্টিভিজম ইত্যাদি অনলাইনে হরহামেশাই চলে৷ এগুলো নিয়ে দেশে দেশে বিতর্ক কম হয়নি৷ নানা দেশে তাই সামাজিক মাধ্যমে সরকারি হস্তক্ষেপও এসেছে৷ অনেকে এটাকে মুক্ত মতের উপর হস্তক্ষেপ বলে মনে করেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/W. Kastl
সামাজিক মাধ্যম আইন
জার্মানির আইনমন্ত্রী হাইকো মাস সামাজিক মাধ্যমের জন্য একটি আইনের প্রস্তাবনা তৈরি করেছেন৷ সে আইনে বিদ্বেষমূলক পোস্ট অপসারণ না করলে সামাজিক মাধ্যম কোম্পানির বিপুল জরিমানার কথা বলা হয়েছে৷ কিন্তু এতে বিগড়ে বসেছে ফেইসবুক৷ তারা বলছে, বিদ্বেষমূলক বক্তব্য এবং ভুয়া খবর ঠেকানোর দায় তাদের একার নয়৷ সরকারকেও এই দায়িত্ব নিতে হবে৷ আইনটি এখন পর্যালোচনার জন্য জার্মান সংসদীয় কমিটিতে রয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/T. Hase
ভুলে যাওয়ার অধিকার
২০১৪ সালে ইউরোপিয়ান কোর্ট অফ জাস্টিসের জারি করা এক আদেশে বলা হয়, গুগল, বিং-এর মতো সার্চ ইঞ্জিনকে তাদের অনুসন্ধানের ফলাফলে কোনো বিশেষ কিছু বাদ দিতে ইউরোপীয় নাগরিকরা অনুরোধ জানাতে পারবেন৷ গুগল সেই আদেশ বাস্তবায়ন করলেও আগে এ বিষয়ে বেশ অনাগ্রহ দেখিয়েছে৷ তখন তারা বলেছে, এটা ইন্টারনেটকে মুক্ত বিশ্বের আবদ্ধক্ষেত্র বানিয়ে ফেলবে৷
ছবি: picture-alliance/ROPI/Eidon/Scavuzzo
ইউক্রেনের নিষেধাজ্ঞা
ইউক্রেন গত মে মাসে রাশিয়ার সামাজিক মাধ্যম ও ওয়েবসাইটের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে৷ বিষয়টি দেশটির লাখ লাখ মানুষের উপর প্রভাব ফেলে৷ অনেকেই তাদের ডাটা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন৷ এর প্রতিবাদে তরুণরা রাস্তায় নেমে আসে৷
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/Str
প্রসঙ্গ: সেফ হারবার
২০১৫ সালে ইউরোপীয় কোর্ট অব জাস্টিস এক রায়ে ইউএস এবং ইইউ’র মধ্যকার চুক্তি ‘সেফ হারবার’কে অকার্যকর ঘোষণা করে৷ যে চুক্তি বলে কারো ব্যক্তিগত তথ্য পূর্বানুমতি ছাড়াই হস্তান্তর করা যায়৷ অস্ট্রেলীয় আইনের ছাত্র ম্যাক্স স্ক্রিম ফেইসবুকের বিরুদ্ধে একটি মামলার প্রক্রিয়া শুরু করেছেন৷ মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থার (এনএসএ) সাবেক ঠিকাদার অ্যাডওয়ার্ড স্নোডেন তথ্য ফাঁস করায় তিনি এই ব্যবস্থা নিচ্ছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Warnand
কঠোর চীন
চীনে সরকার কঠোরভাবে সামাজিক মাধ্যম নিয়ন্ত্রণ করে থাকে৷ ফেসবুক, টুইটার, ইনসটাগ্রামের মতো হাজার হাজার ওয়েবসাইট দেশটির সরকার নিষিদ্ধ করে রেখেছে৷ সেখানকার সরকার নিজস্ব ওয়েবসাইট চালু করেছে৷ যেমন, ইউবো, উইচ্যাট৷ জনবহুল এই দেশটিতে এখন এগুলোরও কোটি কোটি ব্যবহারকারী রয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Imaginechina/Da Qing
6 ছবি1 | 6
ইন্টারনেট সিকিউরিটি প্রতিষ্ঠান ফায়ারআই-এর দেয়া তথ্য অনুযায়ী তদন্ত করে এসব অ্যাকাউন্টের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে ফেসবুক৷ প্রতিষ্ঠানটি এক ব্লগপোস্টে মঙ্গলবার জানিয়েছে, ২০১৮ সালের ‘কংগ্রেশনাল ইলেকশন'-এর সময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের একটি নেটওয়ার্ক বিভিন্ন মার্কিন ব্যক্তিত্বের ছদ্মবেশে ইরান সরকারের পক্ষে প্রচারণা চালিয়েছিল এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমালোচনা করেছিল৷
মুছে ফেলা অ্যাকাউন্টগুলোর কয়েকটি গত বছরের মার্কিন মধ্যবর্তী নির্বাচনে অংশ নেয়া বিভিন্ন রিপাবলিকান রাজনীতিবিদের নামে খোলা হয়েছিল বলেও জানিয়েছে ক্যালিফোর্নিয়াভিত্তিক প্রতিষ্ঠানটি৷
ফায়ারআই-এর গবেষক লি ফস্টার এই বিষয়ে বলেন, ‘‘আমি অনুসন্ধান করে দেখেছি, মার্কিন কয়েকজন সাংবাদিকের নামে ভুয়া অ্যাকাউন্ট তৈরি করে কিছু ব্যক্তি বিভিন্ন মার্কিন সংবাদপত্রে সম্পাদকের কাছে লেখা চিঠি থেকে শুরু করে সংবাদভাষ্য এবং ব্লগ প্রকাশেও সক্ষম হয়েছে৷ সেসব লেখায় প্রগতিশীল এবং রক্ষণশীল– দু'ধরনের অভিমতই ফুটে উঠেছে৷''
তবে অনলাইনে অ্যাকাউন্টগুলো মুছে ফেললেও অফলাইনে ঠিক কারা সেগুলোর সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল তা নিশ্চিত করে জানায়নি প্রতিষ্ঠানগুলো৷