কুর্দি নারী মাহসা আমিনির মৃত্যুর পর সরকারবিরোধী প্রতিবাদ কর্মসূচি দমনের ক্ষেত্রে ইরান আন্তর্জাতিক আইন ভঙ্গ করেছে বলে অভিযোগ করেছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল৷
বিজ্ঞাপন
গত কয়েক দশকের ‘নিপীড়ন এবং অসমতার বিরুদ্ধে' দাঁড়ানো প্রতিবাদকারীদের উপর ইরানি কর্তৃপক্ষ ‘অকথ্য নৃশংসতা' চালিয়েছে বলে মনে করেন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের জুলিয়া ডুকরো৷
চুল হিজাবে ঠিকভাবে না ঢাকায় মাহসাকে গতবছরের ১৩ সেপ্টেম্বর আটক করেছিল ইরানের নীতি পুলিশ৷ ১৬ সেপ্টেম্বর তার মৃত্যুর ঘোষণা আসে৷ তার আগে আমিনি হাসপাতালে কোমায় ছিলেন৷ মাহসার এই অস্বাভাবিক মৃত্যু গোটা ইরানে প্রতিবাদের সূচনা করে৷
ইরানে ‘নারী, জীবন, স্বাধীনতা!’ প্রতিবাদের তিন মাস
গত সেপ্টেম্বরে মাহসা আমিনির মৃত্যু ইরানে গত কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় প্রতিবাদের সূচনা করেছিল৷ সেই প্রতিবাদ দমনে সর্বশক্তি প্রয়োগ করেছে দেশটির শাসকগোষ্ঠী৷ তবুও থামেনি প্রতিবাদ৷
ছবি: LOUISA GOULIAMAKI/AFP/Getty Images
বিপ্লবের প্রতীক
চুল হিজাবে ঠিকভাবে ঢাকা না হওয়ার অভিযোগে আমিনিকে ১৩ সেপ্টেম্বর আটক করেছিল ইরানের নীতি পুলিশ৷ এর কদিন পর ১৬ সেপ্টেম্বর তার মৃত্যুর ঘোষণা আসে৷ তার আগে আমিনি হাসপাতালে কোমায় ছিলেন৷ আমিনির এই অস্বাভাবিক মৃত্যু গোটা ইরানে প্রতিবাদের সূচনা করে৷
ছবি: Kenzo Tribouillard/AFP
‘নারী, জীবন, স্বাধীনতা!’
আমিনির কুর্দি জন্মস্থান সাক্কাজে তার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া থেকে ১৭ সেপ্টেম্বর প্রতিবাদের শুরু হয়৷ নারীরা তাদের হিজাব খুলে বাতাসে উড়িয়ে ইরানি ভাষায় ‘‘নারী, জীবন, স্বাধীনতা!’’ বলে শ্লোগান দিয়েছেন৷ ২৬ অক্টোবর আমিনির কবরস্থানে হাজির হয়েছিলেন কয়েক হাজার মানুষ৷ ছবিটি সেখানে তোলা৷
ছবি: UGC/AFP
আয়াতুল্লাহদের বিরুদ্ধে ঐতিহাসিক বিদ্রোহ
আমিনির মৃত্যু ঐতিহাসিক এক আন্দোলনের শুরু করেছে৷ উৎপীড়নকারী সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে কেঁপে উঠেছে গোটা ইরান৷ ছবিটি সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে তেহরানে তোলা৷ শুধু নারীরা নয়, সব বয়সের, জাতের মানুষ এই আন্দোলনে শরিক হয়েছেন৷
ছবি: AFP
হিজাব এবং ভয় ছাড়া
গত তিনমাসে ইরানের পশ্চিমাঞ্চলের রাস্তায় হিজাব ছাড়া নারীর সংখ্যা বেড়েছে৷ ইরানের আইন অনুযায়ী, হিজাব ছাড়া বাইরে গেলে বেত্রাঘাত এবং কারাদণ্ড হতে পারে৷ কিন্তু নারীরা তাসত্ত্বেও সাহস দেখাচ্ছেন৷
ছবি: SalamPix/abaca/picture alliance
শাসক গোষ্ঠীর সহিংস প্রতিরোধ
প্রতিবাদকারীদের দমনে সহিংসতার পথ বেছে নিয়েছে ইরানের শাসকগোষ্ঠী৷ এজন্য পুলিশ এবং কুখ্যাত এক আধাসামরিক বাহিনীকে মোতায়েন করা হয়েছে৷ মানবাধিকার সংগঠনগুলোর হিসেব অনুযায়ী, নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে প্রাণ হারিয়েছেন চারশোর বেশি মানুষ, যাদের মধ্যে অনেক শিশু এবং তরুণ রয়েছে৷
ছবি: AFP
নির্মম আক্রমণ
প্রতক্ষ্যদর্শীরা জানান, পুলিশ এবং আধাসামরিক বাহিনীর সদস্যরা প্রতিবাদকারীদের নির্মমভাবে পেটানোর পাশাপাশি তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছুঁড়েছে৷ তেহরানের পুলিশ ভ্যানে আটক এই নারীর মতো ১৪ হাজার মানুষকে কারাবন্দি করেছে ইরানের শাসকগোষ্ঠী৷
ছবি: SalamPix/ABACA/picture alliance
চুল কেটে প্রতিবাদ
ইরানের শাসকগোষ্ঠীর পতনের দাবিতে প্যারিস থেকে সান ফ্রান্সিসকো অবধি সারা বিশ্বে বিক্ষোভে অংশ নিয়েছেন হাজার হাজার মানুষ৷ ইস্তাম্বুলে ইরানি কনস্যুলেটের সামনে এক নারী চুল কেটে প্রতিবাদ জানিয়েছেন৷
ছবি: YASIN AKGUL/AFP/Getty Images
প্রতীকী সমর্থন
গত ১৩ ডিসেম্বর বার্লিনের ব্রান্ডেনবুর্গ গেটের উপর আলো ফেলে কুর্দি ভাষায় লেখা হয় ‘নারী, জীবন, স্বাধীনতা!’৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের টাইম ম্যাগাজিন ইরানি নারীদের ‘হিরোস অব দ্য ইয়ার’ ঘোষণা দিয়েছে৷
ছবি: Markus Schreiber/AP/picture alliance
দুই বন্দিকে ফাঁসি
ইরানে সরকারবিরোধী প্রতিবাদ কর্মসূচিতে অংশ নেয়া দুই প্রতিবাদকারী ব়্যাপার মোহসিন শেখারি এবং মজিদরেজা রাহনাভার্দকে ইতোমধ্যে মৃত্যদণ্ড দেয়া হয়েছে৷ অন্তত ৩৮ জনকে কথিত ‘সৃষ্টিকর্তার বিরুদ্ধে শত্রুতার’ অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইরান৷ দেশটিতে শিশুদেরও মৃত্যুদণ্ড দেয়ার বিধান রয়েছে৷
ছবি: AFP/Getty Images
9 ছবি1 | 9
অ্যামেনিস্টে সেই ঘটনার বিচারে আন্তর্জাতিক উদ্যোগ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছে৷ বাস্তবে, এটা জার্মানির মতো দেশগুলোর প্রতি আহ্বান, যেখানে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের সুযোগ রয়েছে এমনকি যদি ঘটনাটি জার্মানি বা যে দেশে বিচার হচ্ছে সেখানকার না-ও হয়, তারপরও৷
ডুকরো বলেন, ‘‘গত বছর জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদে ইরান ইস্যুতে তদন্ত কমিশন গঠনে ভূমিকা রেখেছিল জার্মান সরকার৷ (মাহসা) আমিনির মৃত্যুর এক বছর পর আমরা ইরানে মানবাধিকারের প্রতি জার্মান সরকারের সম্মান প্রদর্শনের পরিষ্কার প্রতিশ্রুতি চাই৷''
ইরানি কর্তৃপক্ষ মাহসা আমিনির মৃত্যুর প্রতিক্রিয়ায় দেশজুড়ে সৃষ্ট প্রতিবাদ কর্মসূচি নির্মমভাবে দমনের চেষ্টা করে৷ মানবাধিকার সংস্থাগুলোর হিসেবে, সরকারি দমনপীড়নে অন্তত ৫০০ প্রতিবাদকারী নিহত হয়েছেন এবং বেশ কয়েকহাজার আহত হয়েছেন৷ এছাড়া ইরান সাত প্রতিবাদকারীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেছে৷
এদিকে, এক নিরব প্রতিবাদের অংশ হিসেবে বুধবার অনেক ইরানি নারী ইসলামিক ড্রেস কোড অনুসরণ করেননি৷