জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে ইরানে চলমান বিক্ষোভে নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে ১০৬ জনের মৃত্যু হয়েছে৷ যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এ তথ্য জানিয়েছে৷
বিজ্ঞাপন
প্রাণহানির প্রকৃত সংখ্যা আরো বেশি হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে৷
জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধির ঘোষণায় গত পাঁচদিন ধরে ইরানের বিভিন্ন শহরে ব্যাপক বিক্ষোভ চলছে৷ এ সময় অন্তত ১০৬ জনকে হত্যা করেছে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী৷ মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে এমন তথ্য জানিয়েছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল৷ সংস্থাটি বলছে, প্রাণহানির প্রকৃত সংখ্যা এর চেয়েও বেশি হতে পারে, যা এমনকি ২০০ জনও ছাড়াতে পারে৷
‘বিশ্বাসযোগ্য বিভিন্ন প্রতিবেদনের’ প্রেক্ষিতে অ্যামনেস্টি জানিয়েছে, ২১টি শহরে আইনবহির্ভূত প্রক্রিয়ায় এইসব মানুষকে মেরে ফেলেছে ইরানের নিরাপত্তা বাহিনী৷ বিক্ষোভকারীদের দমনে সরাসরি গুলি চালানো, স্নাইপার, এমনকি হেলিকপ্টার ব্যবহার করেও গুলি ছোড়া হয়েছে বলে দাবি করেছে সংস্থাটি৷
মৃতের সংখ্যা নিয়ে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক পরিসংখ্যান প্রকাশ করেনি ইরানের সরকার৷ কায়হান নামের একটি সংবাদপত্রের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এক হাজার জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ৷ তার মধ্যে নেতৃস্থানীয় কয়েকজনকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হতে পারে৷
সরকারের জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির ঘোষণার পরপর গত শুক্রবার থেকে ইরানে বিক্ষোভ শুরু হয়৷ যানবাহনের চালকরা গাড়ি বন্ধ করে সড়ক অবরোধ করে৷ এক পর্যায়ে আন্দোলন সহিংস হয়ে ওঠে৷ প্রায় ১০০ টি শহরে ব্যাংক, সরকারি ভবন, দোকান, ইসলামিক রিপাবলিকটির প্রতীক ভাংচুর করা হয়৷ রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম দাবি করেছে আক্রমণকারীদের হামলায় রেভোলুশনারি গার্ডের অন্তত তিন সদস্য এবং দুই পুলিশ কর্মকর্তার মৃত্যু হয়েছে৷
এই বিক্ষোভের জন্য বিদেশি শক্তির মদত রয়েছে বলে দাবি করেছেন ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি৷
সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী, এক মাসে ৬০ লিটার পর্যন্ত জ্বালানি তেল কিনতে আগের চেয়ে ৫০ ভাগ বেশি দাম দিতে হবে৷ এর বেশি কিনতে হলে ২০০ ভাগ বেশি দাম পড়বে৷ এই অতিরিক্ত অর্থ গরিবদের জন্য খরচ করা হবে বলে জানিয়েছেন ইরানের প্রধানমন্ত্রী হাসান রুহানি৷
এফএস/এসিবি (এপি, রয়টার্স)
ইরানের কয়েকটি দর্শনীয় স্থান
হাজার বছরের পুরনো ইতিহাস ও সংস্কৃতি, আকর্ষণীয় ভবন আর অসাধারণ প্রকৃতির দেখা পেতে চাইলে চলে যান ইরানে৷ সঙ্গে পাবেন মনে রাখার মতো আতিথেয়তা৷
ছবি: picture alliance/Prisma
কাশান
শহরের কেন্দ্রে আছে ঐতিহ্যবাহী ঘরবাড়ি, মসজিদ আর বাজার৷ আর শহরের বাইরে গেলে দেখা যাবে লবণাক্ত পানির হ্রদ৷ এছাড়া মেরেনযব মরুভূমিতে বেড়াতে গিয়ে সূর্যোদয় দেখার বিষয়টিও অনেকদিন মনে রাখার মতো একটি বিষয়৷
ছবি: DW/F. Schlagwein
ইসফাহান
ইরানের প্রায় সব জায়গাতেই আর্টের দেখা পাওয়া যায়৷ যেমন ছবিতে ইসফাহান শহরে অবস্থিত শেখ লুৎফুল্লাহ মসজিদের গম্বুজের ভেতরের কারুকাজ দেখতে পাচ্ছেন৷ এছাড়া স্ট্রিট আর্ট, রংবেরংয়ের বাড়িঘর ইত্যাদিরও দেখা পাওয়া যাবে ইসফাহানে৷
ছবি: DW/F. Schlagwein
আবিয়ানেহ
কাশান আর ইসফাহানের মাঝে ছোট্ট একটি গ্রাম আবিয়ানেহ৷ মাত্র ৩০০ লোক বাস করেন সেখানে৷ কিন্তু ইরানের অনেকেই এই গ্রামকে চেনেন৷ কারণ প্রায় ২০০০ বছরের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি এখনও ধরে রেখেছেন গ্রামবাসীরা৷ সেখানকার ঘরবাড়ি তৈরি হয়েছে লাল-বাদামি রংয়ের মাটি দিয়ে৷ ২০০৭ সালে এই গ্রামের নাম ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় ঠাঁই পায়৷
ছবি: DW/F. Schlagwein
লুট মরুভূমি
মঙ্গলগ্রহ দেখতে কেমন হতে পারে তা বোঝার জন্য অনেকে লুট মরুভূমির ছবি দেখে থাকেন৷ দাশত-ই-লুট, যা কালুট নামেও পরিচিত, মরুভূমিতে প্রাণের চিহ্ন নেই৷ থাকবেই বা কীভাবে? ২০০৫ সালে নাসা সেখানে ৭০.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা মেপেছিল৷
ছবি: DW/F. Schlagwein
ইয়াজদ
ইরানের সবচেয়ে বড় দুই মরুভূমির মাঝে অবস্থিত শহর এটি৷ দেশটির অন্যতম সুন্দর এই শহরে গেলে প্রাচীনকালের ঘরবাড়ির দেখা পাওয়া যাবে৷ আর সন্ধ্যাবেলার চায়ের দোকানের ছাদে উঠে আলোকিত শহর দেখাও এক দারুণ অভিজ্ঞতা৷
ছবি: picture alliance/Prisma
গোলেস্তান প্রদেশ
কেমন লাগছে ছবিটি? দারুণ না! ছোট্ট যে ঘরটি দেখছেন সেটি আসলে নবি খালেদ ইবনে সেনান (আঃ)-এর মাজার৷ সেখান থেকে সারি সারি পাহাড়ের দৃশ্য সত্যিই অপূর্ব৷ এলাকাটি উত্তরপূর্ব ইরানে অবস্থিত৷
ছবি: DW/F. Schlagwein
সিরাজ
বেশিরভাগ ইরানির ভালোলাগার শহর সিরাজ৷ সেখানে দেখার অনেক কিছু থাকলেও সবচেয়ে জনপ্রিয় হচ্ছে মহাকবি হাফিজের কবর৷ এছাড়া নাসির-উল-মুল্ক মসজিদও দেখে আসতে পারেন৷
ছবি: DW/F. Schlagwein
পেরজেপোলিস
আকেমেনুদ সাম্রাজ্যের, যা প্রথম পারস্য সাম্রাজ্য নামেও পরিচিত, রাজধানী ছিল পেরজেপোলিস৷ এখনও শহরটিতে সেই সময়কার কিছু স্থাপত্যের দেখা পাওয়া যায়৷ ফলে ইউনেস্কোর তালিকায় এই শহরের নামও রয়েছে৷