ইরানে দেশজুড়ে চলা প্রতিবাদের পেছনে পশ্চিমা বিভিন্ন দেশ জড়িত থাকার প্রমাণ রয়েছে বলে দাবি করেছে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়৷
বিজ্ঞাপন
গত ১৬ সেপ্টেম্বর ২২ বছর বয়সি কুর্দি ইরানি নারী মাহসা আমিনির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে এই প্রতিবাদের শুরু হয়েছিল৷ চুল হিজাবে ঠিকভাবে ঢাকা হয়নি এমন অভিযোগে দেশটির নীতি পুলিশ গ্রেপ্তার করেছিল তাকে৷ এরপর তেহরানের একটি হাসপাতালে সন্দেহজনক পরিস্থিতিতে তার মৃত্যু হয়৷
১৯৭৯ সালে ইরানে ইসলামি বিপ্লবের পর দেশটির শাসক গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে এতবড় প্রতিবাদ আর দেখা যায়নি৷ পররাষ্ট্র মন্ত্রণায়লের মুখপাত্র নাসের কান্নানি এই বিষয়ে বলেন, ‘‘আমাদের কাছে সুনির্দিষ্ট তথ্য রয়েছে যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, পশ্চিমা দেশগুলো এবং আমেরিকার কিছু মিত্র এই প্রতিবাদে ভূমিকা পালন করছে৷''
গাফুরিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে সরকার-বিরোধী বিক্ষোভ সমর্থন করার জন্য। মাহসা আমিনির মৃত্যুর পর ইরানে সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ চলছে। প্রবল কড়াকড়ি সত্ত্বেও বিক্ষোভ থামানো যায়নি। সাবেক ফুটবলার গাফুরি বিক্ষোভকারীদের সমর্থন করেছিলেন। বলা হয়েছে, তিনি রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে প্রচার চালিয়েছেন।
ছবি: Alireza Zeinali/SPP/IMAGO
বরাবর বিদ্রোহী গাফুরি
গাফুরি হলেন ইরানের কুর্দ এলাকার সবচেয়ে নামী ফুটবলার। তিনি আমিনির পরিবারের কাছে সমবেদনা জানিয়েছেন। এর আগে তিনি মেয়েদের দর্শক হিসাবে মাঠে না থাকার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করেছিলেন। এর আগেও তিনি বারবার কর্তৃপক্ষের সমালোচনা করেছেন।
ছবি: AFP
বিশ্বকাপের প্রতিবাদ
কাতার বিশ্বকাপে ইরানের ফুটবলাররা জাতীয় সংগীত গাননি। তারা এভাবে ইরানে মেয়েদের প্রতিবাদকে সমর্থন করেছেন। দলের অধিনায়ক এহসান হাজসাফি এই বিক্ষোভ নিয়ে বলেছেন, সরকারবিরোধী আন্দোলনকারীদের প্রতি তারা সহানুভূতিসম্মন্ন।
ছবি: Han Yan/Xinhua/IMAGO
আচরণ খতিয়ে দেখা হচ্ছে
ইরানের তরফে জানানো হয়েছে, ফুটবলারদের আচরণ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তেহরানের সিটি কাউন্সিলের চেয়ারম্যান জানিয়েছেন, তারা কিছুতেই জাতীয় সংগীতের অপমান সহ্য করবেন না। কুর্দিস্তানের এক রক্ষণশীল এমপি বলেছেন, যারা জাতীয় সংগীত গাইবে, তাদের কাতার পাঠানো হোক। বর্তমান প্লেয়ারদের দেশে ফেরানো হোক।
ছবি: Anthony Stanley/ATP photo agency/picture alliance
আন্দোলনকারীদের সমালোচনা
এর আগে আন্দোলনকারীরা ফুটবলারদের সমালোচনা করেছিলেন। তারা বলেছিলেন, ইরানের এই পরিস্থিতিতে কেন কাতারে যাচ্ছেন ফুটবলাররা?
ছবি: Anthony Stanley/ATP photo agency/picture alliance
কী হতে পারে?
ইরানের ফুটবলাররা দেশে ফিরলে কী হতে পারে, তা নিয়ে জল্পনা বাড়ছে। গার্ডিয়ানের রিপোর্ট বলছে, দেশে ফিরলে ইরানের ফুটবলাররা শাস্তির মুখে পড়তে পারেন এই আশঙ্কা বাড়ছে। সান জানিয়েছে, ফুটবলারদের জেল, এমনকি মৃত্যুদণ্ড পর্যন্ত হতে পারে। ডেইলি মেল জানিয়েছে, ইরানের ফুটবলারদের সতর্ক করে বলা হয়েছে, বাকি ম্যাচগুলিতে তারা যদি জাতীয় সংগীত না গায়, তাহলে কড়া শাস্তির মুখে পড়তে হবে।
ছবি: MARKO DJURICA/REUTERS
বিক্ষোভ চলছে
ইরানে এখনো বিক্ষোভ চলছে। বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে সরকার কঠোরতম ব্যবস্থা নিচ্ছে। তাও বিক্ষোভ থামানো যাচ্ছে না।
ছবি: SalamPix/abaca/picture alliance
7 ছবি1 | 7
এদিকে, ইরানি কর্তৃপক্ষ দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির ভাতিজি ফরিদে মুরাদখানিকে গ্রেপ্তার করেছে৷ তিনি তার চাচার নেতৃত্বাধীন ইরানি কর্তৃপক্ষকে এক ‘‘হত্যাকারী এবং শিশুদের খুনি শাসক গোষ্ঠী'' হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন৷
ফরিদে মুরাদখানি আদতে খামেনি পরিবারের এমন এক অংশের সদস্য যেটি দেশটির নেতৃত্বের সমালোচক হিসেবে পরিচিত৷ মুরাদখানি অতীতেও কারাভোগ করেছেন৷ তার ভাই মাহমুদ মুরাদখানি টুইটারে জানিয়েছেন যে, তার বোনকে গত বুধবার সরকারি কৌঁসুলির কার্যালয়ে ডাকা হয় এবং সেখান থেকে গ্রেপ্তার করা হয়৷
ফরিদে মুরাদখানি তার ভিডিওতে বলেছেন, ‘‘মানুষকে মুক্ত করুন, আমাদের সাথে থাকুন৷ আপনাদের সরকারকে বলুন হত্যাকারী এবং শিশুদের খুনি শাসকগোষ্ঠীকে সমর্থন না দিতে৷''
জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের হিসেব অনুযায়ী, মাহসা আমিনির মৃত্যুর পর শুরু হওয়া প্রতিবাদ দমনে এখন অবধি ১৪ হাজারের মতো প্রতিবাদকারীকে গ্রেপ্তার করেছে ইরান সরকার৷ আর নরওয়েভিত্তিক ইরান হিউম্যান রাইটসের হিসেব অনুয়ায়ী, সরকারি দমনপীড়নে প্রাণ হারিয়েছে ৫১ শিশুসহ অন্তত ৪১৬ জন৷