ইরানে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন: দ্বিতীয় দফার ভোটে জয়ী পেজেশকিয়ান
৬ জুলাই ২০২৪
মাসুদ পেজেশকিয়ান মধ্যপন্থায় বিশ্বাসী। ভোটের প্রচারে ইরানকেবিশ্বের দরবারে উন্মুক্ত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তিনি। ফলপ্রকাশের পর মাসুদ এই নির্বাচনকে ইরানের জনগণের সঙ্গে 'অংশীদারিত্বের সূচনা' বলে উল্লেখ করেছেন।
এক্স প্ল্যাটফর্মে তিনি লেখেন, "আপনাদের সাহায্য, সহানুভূতি, আস্থা আমার সঙ্গে থাকলে ভবিষ্যতের কঠিন রাস্তায় পথ চলাটা আরো সহজ হবে। আমি আপনাদের দিকে হাত বাড়িয়ে দিচ্ছি।"
বার্তাসংস্থা এএফপি জানিয়েছে, দ্বিতীয় দফার ভোটে মাসুদ পেজেশকিয়ান প্রায় ৫৪ শতাংশ ভোট পেয়েছেন, প্রায় ৪৪ শতাংশ ভোট পেয়েছেন সাইদ জালিলি।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিন, চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং মাসুদ পেজেশকিয়ানকে অভিনন্দন জানান।
কট্টরপন্থির পরাজয়
বছর ঊনষাটের পেজেশকিয়ানের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আটান্ন বছর বয়সি সাইদ জালিলি। মাসুদ সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী এবং পেশায় একজন হার্ট সার্জেন। এদিকে, ইরানের বিতর্কিত পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে পশ্চিমা শক্তির সঙ্গে সাবেক আলোচক ছিলেন সাইদ জালিলি।
হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায়নিহত প্রেসিডেন্ট রাইসিরউত্তরসূরি নির্বাচনের জন্য ভোট হয় ইরানে। প্রথম দফার নির্বাচনে কোনো প্রার্থী ৫০ শতাংশের বেশি ভোট না পাওয়ায় শীর্ষ দুই প্রার্থীর মধ্যে ফের লড়াই হয়।
মাসুদ পেজেশকিয়ান ২০০১ থেকে থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত স্বাস্থ্যমন্ত্রী ছিলেন।
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারের সময় তিনি সরকার এবং ইরানের জনগণের মধ্যে আস্থা ফেরানোর কথা বলেন। অর্থনৈতিক দুর্দশার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের কথা বলেন মাসুদ।
পারমাণবিক চুক্তি নিয়ে আলোচনা চালু করতে পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে "গঠনমূলক সম্পর্কের" পক্ষে কথা বলেছেন মাসুদ।
দ্বিতীয় দফায় বেশি ভোট
ইরানের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় শনিবার সকালে জানিয়েছিলো, তিন কোটির বেশি ভোট গণনা হয়েছে। এর মধ্যে মাসুদ পেজেশকিয়ান পেয়েছেন ১ কোটি ৬০ লাখের বেশি ভোট। আর সাইদ জালিলি পেয়েছেন ১ কোটি ৩০ লাখের বেশি ভোট।
প্রথম দফায় ৪২ শতাংশ ভোট পেয়ে এগিয়ে ছিলেন মাসুদ। আর ৩৯ শতাংশ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে ছিলেন কট্টরপন্থি সাইদ। এই কারণে দ্বিতীয় দফায় ভোট হয়েছিল।
কর্তৃপক্ষ প্রাথমিকভাবে জানায়, দ্বিতীয় দফায় সবমিলিয়ে প্রায় ৫০ শতাংশ ভোট পড়েছে, যা প্রথম দফার তুলনায় বেশি।
আট কোটি ৫০ লাখ জনসংখ্যার দেশ ইরানে প্রায় ৬০ হাজার ভোট কেন্দ্র এবং ছয় কোটি দশ লাখের বেশি যোগ্য ভোটার রয়েছে।
এই ফল কতটা প্রভাব ফেলবে
এই ফলাফল ইরানের অভ্যন্তরীণ বা বিদেশি নীতিতে বড় কোনো পরিবর্তন আনতে পারে বলে মনে করছেন না অনেকেই। কারণ মূল ক্ষমতা দেশের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খোমেনির হাতে থাকবে।
বিশ্লেষকেরা অবশ্য বলছেন, সাইদ জালিলি প্রায়ই পশ্চিমা শক্তির প্রতি শত্রুতা প্রকাশ করেছেন। তাই তিনি জয়ী হলে বিরোধী শক্তিদের প্রতি আরো বেশি কঠোর হতো তেহরান।
বিশ্লেষকদের ধারণা, মাসুদ বরং উদারপন্থি পররাষ্ট্র নীতির সপক্ষে কথা বলতে পারেন। পারমাণবিক চুক্তি নিয়ে বড় শক্তিগুলোর সঙ্গে আলোচনা এগোতে পারে। এ ছাড়াও নারীদের হেডস্কার্ফ পরা বাধ্যতামূলক; এই জাতীয় সামাজিক ইস্যুতে তার দৃষ্টিভঙ্গি হয়তো খানিকটা উদার হতে পারে।
যদিও মাসুদ পেজেশকিয়ান বলেছেন,খোমেনিকে দেশের সমস্ত রাষ্ট্রীয় বিষয়ে চূড়ান্ত কর্তৃত্ব হিসাবে মনে করেন তিনি। প্রচারের সময়েও ইরানের শিয়া ধর্মতন্ত্রে কোনো মৌলিক পরিবর্তন বাস্তবায়ন না করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন মাসুদ।
সঠিকভাবে হিজাব না পরার অভিযোগে নীতি পুলিশের হাতে আটক হওয়ার পর ২০২২ সালের ১৬ সেপ্টেম্বরমাহসা আমিনি নামে এক তরুণীরমৃত্যু হয়েছিল। এই ঘটনায় ইরানে ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হয়েছিল। এই প্রেক্ষিতে সংস্কারপন্থি নেতার জয় তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞেরা।
আরকেসি/এডিকে (এপি, রয়টার্স, এএফপি)