ইরানের ফুটবলার আলি দায়েই বিক্ষোভকারীদের সমর্থন করেছিলেন। তাই দুবাই য়েতে পারল না তার পরিবার। মাঝ আকাশ থেকে বিমান ঘোরানো হলো।
বিজ্ঞাপন
সোমবার ইরানের রাজধানী তেহরান থেকে দুবাইয়ের বিমান ধরেছিলেন আলির স্ত্রী এবং মেয়ে। বিমান ছেড়ে দেয়ার পর মাঝ আকাশে কোনো ঘোষণা না করে যাত্রাপথ বদল করা হয়। কিশ দ্বীপে প্লেনটি নামানো হয়। বিমান থেকে নামিয়ে দেওয়া হয় আলির স্ত্রী এবং মেয়েকে। কেন তারা বিদেশে যাচ্ছিলেন, সে বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
আলি জানিয়েছেন, স্ত্রী এবং মেয়ের পাসপোর্ট বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। তাদের শেষপর্যন্ত দুবাই যেতে দেওয়া হয়নি। অভিযোগ, আলি এবং তার স্ত্রী সরকারবিরোধী আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন।
ইরানে ‘নারী, জীবন, স্বাধীনতা!’ প্রতিবাদের তিন মাস
গত সেপ্টেম্বরে মাহসা আমিনির মৃত্যু ইরানে গত কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় প্রতিবাদের সূচনা করেছিল৷ সেই প্রতিবাদ দমনে সর্বশক্তি প্রয়োগ করেছে দেশটির শাসকগোষ্ঠী৷ তবুও থামেনি প্রতিবাদ৷
ছবি: LOUISA GOULIAMAKI/AFP/Getty Images
বিপ্লবের প্রতীক
চুল হিজাবে ঠিকভাবে ঢাকা না হওয়ার অভিযোগে আমিনিকে ১৩ সেপ্টেম্বর আটক করেছিল ইরানের নীতি পুলিশ৷ এর কদিন পর ১৬ সেপ্টেম্বর তার মৃত্যুর ঘোষণা আসে৷ তার আগে আমিনি হাসপাতালে কোমায় ছিলেন৷ আমিনির এই অস্বাভাবিক মৃত্যু গোটা ইরানে প্রতিবাদের সূচনা করে৷
ছবি: Kenzo Tribouillard/AFP
‘নারী, জীবন, স্বাধীনতা!’
আমিনির কুর্দি জন্মস্থান সাক্কাজে তার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া থেকে ১৭ সেপ্টেম্বর প্রতিবাদের শুরু হয়৷ নারীরা তাদের হিজাব খুলে বাতাসে উড়িয়ে ইরানি ভাষায় ‘‘নারী, জীবন, স্বাধীনতা!’’ বলে শ্লোগান দিয়েছেন৷ ২৬ অক্টোবর আমিনির কবরস্থানে হাজির হয়েছিলেন কয়েক হাজার মানুষ৷ ছবিটি সেখানে তোলা৷
ছবি: UGC/AFP
আয়াতুল্লাহদের বিরুদ্ধে ঐতিহাসিক বিদ্রোহ
আমিনির মৃত্যু ঐতিহাসিক এক আন্দোলনের শুরু করেছে৷ উৎপীড়নকারী সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে কেঁপে উঠেছে গোটা ইরান৷ ছবিটি সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে তেহরানে তোলা৷ শুধু নারীরা নয়, সব বয়সের, জাতের মানুষ এই আন্দোলনে শরিক হয়েছেন৷
ছবি: AFP
হিজাব এবং ভয় ছাড়া
গত তিনমাসে ইরানের পশ্চিমাঞ্চলের রাস্তায় হিজাব ছাড়া নারীর সংখ্যা বেড়েছে৷ ইরানের আইন অনুযায়ী, হিজাব ছাড়া বাইরে গেলে বেত্রাঘাত এবং কারাদণ্ড হতে পারে৷ কিন্তু নারীরা তাসত্ত্বেও সাহস দেখাচ্ছেন৷
ছবি: SalamPix/abaca/picture alliance
শাসক গোষ্ঠীর সহিংস প্রতিরোধ
প্রতিবাদকারীদের দমনে সহিংসতার পথ বেছে নিয়েছে ইরানের শাসকগোষ্ঠী৷ এজন্য পুলিশ এবং কুখ্যাত এক আধাসামরিক বাহিনীকে মোতায়েন করা হয়েছে৷ মানবাধিকার সংগঠনগুলোর হিসেব অনুযায়ী, নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে প্রাণ হারিয়েছেন চারশোর বেশি মানুষ, যাদের মধ্যে অনেক শিশু এবং তরুণ রয়েছে৷
ছবি: AFP
নির্মম আক্রমণ
প্রতক্ষ্যদর্শীরা জানান, পুলিশ এবং আধাসামরিক বাহিনীর সদস্যরা প্রতিবাদকারীদের নির্মমভাবে পেটানোর পাশাপাশি তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছুঁড়েছে৷ তেহরানের পুলিশ ভ্যানে আটক এই নারীর মতো ১৪ হাজার মানুষকে কারাবন্দি করেছে ইরানের শাসকগোষ্ঠী৷
ছবি: SalamPix/ABACA/picture alliance
চুল কেটে প্রতিবাদ
ইরানের শাসকগোষ্ঠীর পতনের দাবিতে প্যারিস থেকে সান ফ্রান্সিসকো অবধি সারা বিশ্বে বিক্ষোভে অংশ নিয়েছেন হাজার হাজার মানুষ৷ ইস্তাম্বুলে ইরানি কনস্যুলেটের সামনে এক নারী চুল কেটে প্রতিবাদ জানিয়েছেন৷
ছবি: YASIN AKGUL/AFP/Getty Images
প্রতীকী সমর্থন
গত ১৩ ডিসেম্বর বার্লিনের ব্রান্ডেনবুর্গ গেটের উপর আলো ফেলে কুর্দি ভাষায় লেখা হয় ‘নারী, জীবন, স্বাধীনতা!’৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের টাইম ম্যাগাজিন ইরানি নারীদের ‘হিরোস অব দ্য ইয়ার’ ঘোষণা দিয়েছে৷
ছবি: Markus Schreiber/AP/picture alliance
দুই বন্দিকে ফাঁসি
ইরানে সরকারবিরোধী প্রতিবাদ কর্মসূচিতে অংশ নেয়া দুই প্রতিবাদকারী ব়্যাপার মোহসিন শেখারি এবং মজিদরেজা রাহনাভার্দকে ইতোমধ্যে মৃত্যদণ্ড দেয়া হয়েছে৷ অন্তত ৩৮ জনকে কথিত ‘সৃষ্টিকর্তার বিরুদ্ধে শত্রুতার’ অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইরান৷ দেশটিতে শিশুদেরও মৃত্যুদণ্ড দেয়ার বিধান রয়েছে৷
ছবি: AFP/Getty Images
9 ছবি1 | 9
বস্তুত, এর আগে আলির পাসপোর্টও বাজেয়াপ্ত করা হয়েছিল। ২২ বছরের জিনা মাহসা আমিনির পুলিশি হেফাজতে মৃত্যু হওয়ার পর গোটা ইরানজুড়ে আন্দোলন শুরু হয়। বহু বিখ্যাত ব্যক্তি সরকারের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। আলিও সমাজমাধ্যমে লিখেছিলেন, শান্তিপূর্ণ পদ্ধতিতে সরকারের আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসা উচিত। সমস্যার সমাধান করা উচিত। শক্তি প্রয়োগ করা উচিত হচ্ছে না।
এরপরেই আলির পাসপোর্ট বাজেয়াপ্ত করা হয়। পরে অবশ্য তা ফেরত দেওয়া হয়। তার রেস্তোরাঁ এবং গয়নার দোকান বন্ধ করে দেওয়া হয়। ইরানের সরকারপন্থি সংবাদসংস্থা জানিয়েছে, আলির স্ত্রীর বিরুদ্ধেও আন্দোলনকারীদের সমর্থনের অভিযোগ আছে। সরকারকে না জানিয়ে তারও বিদেশে যাওয়ার বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা আছে। সে কারণেই তাকে বিমান থেকে নামানো হয়েছে।
সরকার দমনমূলক নীতি নিলেও ইরানের আন্দোলন সমানতালে চলছে। প্রতিদিন রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। সাহিত্য, সংগীত, খেলাধূলা-সহ বিভিন্ন অংশের বিশিষ্ট মানুষ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে এই আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়েছেন। ফলে তাদের উপরেও শাস্তির খাঁড়া নেমে আসছে। আলির পরিবারের সঙ্গে সম্প্রতি সেই ঘটনাই ঘটেছে।