২০২০ সালে জাতীয় নিরাপত্তা আইনে বন্দি করা হয়েছিল ওই জার্মান-ইরানি নাগরিককে।
ছবি: Privat
বিজ্ঞাপন
৬৬ বছরের নাহিদ তাঘাভি দীর্ঘদিন ধরে ইরানের জেলে বন্দি। তার এক সহবন্দি জানিয়েছেন, জেলে ক্রমশ অসুস্থ হয়ে পড়ছেন নাহিদ। বিছানা থেকে ওঠার অবস্থায় নেই তিনি। তার শরীরে এতটাই যন্ত্রণা যে প্রতিদিন ব্যাথা কমানোর ইঞ্জেকশন দিতে হচ্ছে তাকে। ইরানের জেল কর্তৃপক্ষ অবশ্য এবিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।
মানবাধিকার কর্মী নাহিদকে ২০২০ সালে জাতীয় নিরাপত্তা আইনে গ্রেপ্তার করে ইরানের পুলিশ। এর একবছর পর ইরানের আদালত তাকে দোষী বলে সাব্যস্ত করে। ১১ বছরের হাজতবাসের নির্দেশ দেয়া হয়। এরপর টানা ৭ মাস নাহিদকে আইসোলেশন সেলে রাখা হয়। সেই সময় থেকেই নাহিদের শরীর ভাঙতে শুরু করে বলে জানিয়েছেন তার সহবন্দি। একটি ইনস্টাগ্রাম পোস্ট করেছেন নারগেস মহম্মদী। সেখানে বলা হয়েছে, এই জার্মান-ইরানি মানবাধিকার কর্মীর শারীরিক অবস্থা খুবই খারাপ। চোখে মুখে সেই ছাপ ফুটে উঠছে নাহিদের। তিনি বিছানা ছেড়ে উঠতেই পারছেন না।
ইরানে ‘নারী, জীবন, স্বাধীনতা!’ প্রতিবাদের তিন মাস
গত সেপ্টেম্বরে মাহসা আমিনির মৃত্যু ইরানে গত কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় প্রতিবাদের সূচনা করেছিল৷ সেই প্রতিবাদ দমনে সর্বশক্তি প্রয়োগ করেছে দেশটির শাসকগোষ্ঠী৷ তবুও থামেনি প্রতিবাদ৷
ছবি: LOUISA GOULIAMAKI/AFP/Getty Images
বিপ্লবের প্রতীক
চুল হিজাবে ঠিকভাবে ঢাকা না হওয়ার অভিযোগে আমিনিকে ১৩ সেপ্টেম্বর আটক করেছিল ইরানের নীতি পুলিশ৷ এর কদিন পর ১৬ সেপ্টেম্বর তার মৃত্যুর ঘোষণা আসে৷ তার আগে আমিনি হাসপাতালে কোমায় ছিলেন৷ আমিনির এই অস্বাভাবিক মৃত্যু গোটা ইরানে প্রতিবাদের সূচনা করে৷
ছবি: Kenzo Tribouillard/AFP
‘নারী, জীবন, স্বাধীনতা!’
আমিনির কুর্দি জন্মস্থান সাক্কাজে তার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া থেকে ১৭ সেপ্টেম্বর প্রতিবাদের শুরু হয়৷ নারীরা তাদের হিজাব খুলে বাতাসে উড়িয়ে ইরানি ভাষায় ‘‘নারী, জীবন, স্বাধীনতা!’’ বলে শ্লোগান দিয়েছেন৷ ২৬ অক্টোবর আমিনির কবরস্থানে হাজির হয়েছিলেন কয়েক হাজার মানুষ৷ ছবিটি সেখানে তোলা৷
ছবি: UGC/AFP
আয়াতুল্লাহদের বিরুদ্ধে ঐতিহাসিক বিদ্রোহ
আমিনির মৃত্যু ঐতিহাসিক এক আন্দোলনের শুরু করেছে৷ উৎপীড়নকারী সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে কেঁপে উঠেছে গোটা ইরান৷ ছবিটি সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে তেহরানে তোলা৷ শুধু নারীরা নয়, সব বয়সের, জাতের মানুষ এই আন্দোলনে শরিক হয়েছেন৷
ছবি: AFP
হিজাব এবং ভয় ছাড়া
গত তিনমাসে ইরানের পশ্চিমাঞ্চলের রাস্তায় হিজাব ছাড়া নারীর সংখ্যা বেড়েছে৷ ইরানের আইন অনুযায়ী, হিজাব ছাড়া বাইরে গেলে বেত্রাঘাত এবং কারাদণ্ড হতে পারে৷ কিন্তু নারীরা তাসত্ত্বেও সাহস দেখাচ্ছেন৷
ছবি: SalamPix/abaca/picture alliance
শাসক গোষ্ঠীর সহিংস প্রতিরোধ
প্রতিবাদকারীদের দমনে সহিংসতার পথ বেছে নিয়েছে ইরানের শাসকগোষ্ঠী৷ এজন্য পুলিশ এবং কুখ্যাত এক আধাসামরিক বাহিনীকে মোতায়েন করা হয়েছে৷ মানবাধিকার সংগঠনগুলোর হিসেব অনুযায়ী, নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে প্রাণ হারিয়েছেন চারশোর বেশি মানুষ, যাদের মধ্যে অনেক শিশু এবং তরুণ রয়েছে৷
ছবি: AFP
নির্মম আক্রমণ
প্রতক্ষ্যদর্শীরা জানান, পুলিশ এবং আধাসামরিক বাহিনীর সদস্যরা প্রতিবাদকারীদের নির্মমভাবে পেটানোর পাশাপাশি তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছুঁড়েছে৷ তেহরানের পুলিশ ভ্যানে আটক এই নারীর মতো ১৪ হাজার মানুষকে কারাবন্দি করেছে ইরানের শাসকগোষ্ঠী৷
ছবি: SalamPix/ABACA/picture alliance
চুল কেটে প্রতিবাদ
ইরানের শাসকগোষ্ঠীর পতনের দাবিতে প্যারিস থেকে সান ফ্রান্সিসকো অবধি সারা বিশ্বে বিক্ষোভে অংশ নিয়েছেন হাজার হাজার মানুষ৷ ইস্তাম্বুলে ইরানি কনস্যুলেটের সামনে এক নারী চুল কেটে প্রতিবাদ জানিয়েছেন৷
ছবি: YASIN AKGUL/AFP/Getty Images
প্রতীকী সমর্থন
গত ১৩ ডিসেম্বর বার্লিনের ব্রান্ডেনবুর্গ গেটের উপর আলো ফেলে কুর্দি ভাষায় লেখা হয় ‘নারী, জীবন, স্বাধীনতা!’৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের টাইম ম্যাগাজিন ইরানি নারীদের ‘হিরোস অব দ্য ইয়ার’ ঘোষণা দিয়েছে৷
ছবি: Markus Schreiber/AP/picture alliance
দুই বন্দিকে ফাঁসি
ইরানে সরকারবিরোধী প্রতিবাদ কর্মসূচিতে অংশ নেয়া দুই প্রতিবাদকারী ব়্যাপার মোহসিন শেখারি এবং মজিদরেজা রাহনাভার্দকে ইতোমধ্যে মৃত্যদণ্ড দেয়া হয়েছে৷ অন্তত ৩৮ জনকে কথিত ‘সৃষ্টিকর্তার বিরুদ্ধে শত্রুতার’ অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইরান৷ দেশটিতে শিশুদেরও মৃত্যুদণ্ড দেয়ার বিধান রয়েছে৷
ছবি: AFP/Getty Images
9 ছবি1 | 9
মহম্মদী জানিয়েছেন, নাহিদের মেরুদণ্ডে সমস্যা আছে। ব্যাথা মূলত সেখান থেকেই হচ্ছে। এছাড়াও উচ্চরক্তচাপ এবং সুগারের সমস্যা শুরু হয়েছে তার। মহম্মদীর ইনস্টাগ্রাম প্রোফাইল তার পরিবার চালায় ফ্রান্স থেকে। মহম্মদীর সঙ্গে যা কথা হয়, তার উপর ভিত্তি করেই এই পোস্টগুলি করা হয়।
নাহিদ ছাড়াও ইরানের জেলে বন্দি নারী রাজনৈতিক বন্দি এবং বিশেষত বিদেশি বন্দিদের বিষয়ে নিয়মিত পোস্ট করেন মহম্মদী। তাদের উপর কী ধরনের অত্যাচার হচ্ছে, সার্বিকভাবে জেলের অবস্থা এই সমস্ত বিষয়ে পোস্ট করেন মহম্মদী।
বস্তুত, গত কয়েকবছরে বহু বিদেশি মানবাধিকার কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে ইরান। আন্তর্জাতিক চাপ থাকলেও তাদের ছাড়া হচ্ছে না। আরো বেশ কয়েকজন বিদেশি বন্দির শারীরিক অবস্থাও ভালো নয় বলে জানিয়েছেন মহম্মদী।