মাহসা আমিনের মৃত্যুর পর ইরানজুড়ে মেয়েদের হিজাব-বিরোধী বিক্ষোভ চলছে। ইরানের এক সাংসদ এই বিক্ষোভকারীদের যৌনকর্মী বললেন।
নিউ ইয়র্কে ইরানের মেয়েদের সমর্থনে বিক্ষোভ। ছবি: Stephanie Keith/REUTERS
বিজ্ঞাপন
ইরানে যেমন হিজাবের বিরুদ্ধে মেয়েদের রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ শুরু হয়েছে, তেমনই সেই বিক্ষোভ নিয়ে কট্টরপন্থিরা তাদের মনোভাব কঠোর করছে। তেহরানের সাংসদ মাহমুদ নাবারভিয়ান বলেছেন, বিক্ষোভকারীরা মেয়েরা দাঙ্গাবাজ, তারা যৌনকর্মীদের মতো বাইরে বেরিয়েছে।
এই সাংসদের মতে, মেয়েদের মাথা থেকে হিজাব সরিয়ে নেওয়া মানে জনসমক্ষে নগ্ন হওয়া। ইরানের সরকারি মিডিয়াও বলেছে, এই বিক্ষোভকারীরা দাঙ্গাবাজ, প্রতারক, দেশদ্রোহী এবং ভণ্ড।
২২ বছর বয়সি মাহসা হিজাব পরেনি বলে পুলিশ তাকে ধরে নিয়ে যায়। তারপর সে মারা যায়। ১৬ সেপ্টেম্বর এই ঘটনার পর থেকেই ইরানে লাগাতার বিক্ষোভ চলছে। মেয়েরা রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করছেন এবং অনেক জায়গায় হিজাব পোড়ানো হয়েছে। অনেকে তাদের চুল কেটেছেন।
মাহসা আমিনি হত্যা : বিক্ষোভ এশিয়া ছাড়িয়ে ইউরোপে
ভাইয়ের সঙ্গে ছিলেন মাহসা আমিনি৷ সহি পোশাক না পরায় তাকে ধরে নিয়ে যায় ইরানের নীতি পুলিশ৷ আর জীবিত ফেরেননি মাহসা৷ তার মৃত্যুর প্রতিবাদে বিক্ষোভ চলছে বিভিন্ন দেশে৷ দেখুন ছবিঘরে...
ছবি: Yasin Akgul/AFP
মাহসা আমিনি
মাহসার বয়স মাত্র ২২৷ কুর্দি পরিবারে জন্ম৷ গত ১৩ সেপ্টেম্বর ভাইয়ের পাশ থেকে তাকে ধরে নিয়ে যায় ইরানের নীতি পুলিশ৷ মাহসার অপরাধ- ঠিকভাবে হিজাব পরেনি৷
ছবি: privat/UGC
তিনদিন পর সংবাদ শিরোনামে
ভোজারা ডিটেনশন সেন্টারে নিয়ে যাওয়ার পরই নাকি অজ্ঞান হয়ে যান মাহসা৷ পুলিশের এমনই দাবি৷ তারপর নিয়ে যাওয়া হয় হাসপাতালে৷ সেখানে তিনদিন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে হেরে যান তরতাজা তরুণী মাহসা৷ইরানের প্রায় সব খবরের কাগজে ছাপা হয় মাহসার রহস্যজনক মৃত্যুর খবর৷
ছবি: Fatemeh Bahrami/AA/picture alliance
মাথায় আঘাত করে হত্যা?
ইরানের নীতি পুলিশের দাবি, মাহসা হঠাৎ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন৷ তারপরই নাকি তিনি কোমায় চলে যান৷ কিন্তু পরিবার বলছে, মাহসা পুরোপুরি সুস্থ ছিলেন, তাই হৃদরোগে মারা যাওয়ার তথ্যটি তারা বিশ্বাস করছেন না৷ জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক ভারপ্রাপ্ত হাই কমিশনার নাদা আল-নাশিফ অবশ্য বলেছেন, পুলিশ আমিনির মাথায় লাঠি দিয়ে আঘাত করেছিল অথবা কোনো গাড়ির সঙ্গে মাথা ঠুকে দিয়েছিল বলে রিপোর্টে বলা হয়েছে।
ছবি: Denis Balibouse/REUTERS
ইরানে প্রবল বিক্ষোভ
মাহসা আমিনির নীতি পুলিশের হেফাজতে মৃত্যুর খবরে ফুঁসে উঠেছে ইরান৷ নানা শহরে বিক্ষোভ জানাতে রাস্তায় নেমেছে হাজার হাজার মানুষ৷ওপরের ছবিতে রাজধানী তেহরানের এক রাস্তার বিক্ষোভ মিছিল৷
ছবি: UGC
এক থেকে হাজার মাহসা
মাহসা হত্যার প্রতিবাদ ইরান থেকে ছড়িয়ে পড়েছে নানা দেশে৷ বিভিন্ন স্থানে নারীরা মাহসার ছবি নিয়ে বিক্ষোভ করছেন, কেউ কেউ ছবির নীচে লিখছেন, ‘‘আ অ্যাম মাহসা৷’’ ওপরে জার্মানির রাজধানী বার্লিনের ছবি, ইরানি বংশোদ্ভূত এক নারীর হাতেও দেখা যাচ্ছে মাহসার ছবিতে ‘‘আ অ্যাম মাহসা’’ লেখা প্ল্যাকার্ড৷
ছবি: Paul Zinken/picture alliance/dpa
তুরস্কে বিক্ষোভ
ইস্তাম্বুলের রাস্তায় মাহসা হত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভ৷ এই নারীর মতো অনেকেই তুরস্ক থেকেই তুলেছেন হত্যাকারীদের কঠোর শাস্তির দাবি৷
ছবি: Francisco Seco/ASSOCIATED PRESS/picture alliance
চুল কেটে প্রতিবাদ
হিজাবে চুল এবং মুখ না ঢাকার কারণে মাহসাকে নিয়ে পিটিয়ে মারা হয়েছে বলে বিক্ষোভকারীদের সন্দেহ৷ তাই ইরানের অনেক নারীই হিজাব পোড়াচ্ছেন, কেটে ফেলছেন নিজের মাথার চুল৷ অন্যান্য দেশেও এভাবে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন অনেকে৷ ওপরে ইস্তাম্বুলে এক নারীর চুল কাটার মুহূর্ত৷
ছবি: Yasin Akgul/AFP
ফ্রাঙ্কফুর্টে বিক্ষোভ
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট শহরে বসবাসরত ইরানিরাও মাহসা হত্যার প্রতিবাদে রাস্তায় নেমেছেন৷
ছবি: Boris Roessler/picture alliance/dpa
পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ
ইরানের বিভিন্ন শহরে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়াচ্ছেন বিক্ষোভকারীরা৷
মঙ্গলবারও ইরানজুড়ে বিক্ষোভ হয়েছে। বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়েছে। ইরানের আধা-সরকারি সংবাদসংস্থা ফারস জানিয়েছে,মাহসা আমিনির মৃত্যুর পর বিক্ষোভকারী ও পুলিশ সংঘর্ষে অন্ততপক্ষে ৬০ জনের মৃত্যু হয়েছে। মানবাধিকার সংগঠনগুলির দাবি, অনেক বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে।
ইরানের কর্মকর্তারা সোমবার জানিয়েছিলেন, এক হাজার দুইশ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তার মধ্যে অধিকাররক্ষা কর্মী, আইনজীবী, সাংবাদিকও আছেন। এছাড়া আছেন সাধারণ বিক্ষোভকারী।
আমিনির মৃত্যু: ইরানে দশম দিনের মতো বিক্ষোভ
01:50
This browser does not support the video element.
ইরান হিউম্যান রাইটসের ডিরেক্টর মাহমুদ আমিরি-মোঘাদাম বলেছেন, বিক্ষোভকারীদের উপর গুলি চলছে, তাও বিক্ষোভ থামছে না। তিনি ডিডাব্লিউকে বলেছেন, মানুষ স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে চায়। তারা মনে করছে, যথেষ্ট হয়েছে। তাই তারা বিক্ষোভ দেখাতে রাস্তায় নেমেছে।
গুরুত্বপূর্ণ শিয়া ধর্মীয় নেতা আয়াতোল্লাহ হোসেইন হামেদানি কর্তৃপক্ষকে বলেছেন, তারা যেন বিক্ষোভকারীদের প্রতি নরম মনোভাব নেন। তারা যেন সমস্যা সমাধানের কথা ভাবেন।