ইরানে বিক্ষোভ: যুক্তরাজ্য ও নরওয়ের রাষ্ট্রদূতকে তলব
২৬ সেপ্টেম্বর ২০২২
ইরানে ২২ বছর বয়সি কুর্দি তরুণী মাহসা আমিনি হত্যার প্রতিবাদে রোববার রাতে টানা দশম দিনের মতো বিক্ষোভ হয়েছে৷ এর আগে দিনের বেলায় যুক্তরাজ্য ও নরওয়ের রাষ্ট্রদূতকে ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব করা হয়েছিল৷
বিজ্ঞাপন
যুক্তরাজ্যে পরিচালিত ফার্সি ভাষার গণমাধ্যমে ইরানের বিক্ষোভ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ায় যুক্তরাজ্যের রাষ্ট্রদূতকে তলব করা হয় বলে ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে৷
আর নরওয়ের সংসদের প্রেসিডেন্ট মাসুদ ঘরাহখানির মন্তব্যের জন্য সে দেশের রাষ্ট্রদূতকে তলব করা হয়েছিল৷ তেহরানে জন্মগ্রহণ করা ঘরাহখানি রোববার টুইটারে লিখেছিলেন, ‘‘আমার মা-বাবা যদি ১৯৮৭ সালে পালানোর সিদ্ধান্ত না নিত তাহলে আমিও তাদের একজন হতাম যারা রাস্তায় জীবন বাজি রেখে লড়ছে৷''
ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রবিষয়ক প্রধান জোসেপ বরেল ইরানে বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে অভিযানকে ‘অগ্রহণযোগ্য' ও ‘অযৌক্তিক' বলে আখ্যায়িত করেছেন৷
ঠিকমতো মাথা ঢাকা হিজাব না পরায় মাহসা আমিনিকে ধরে নিয়ে গিয়েছিল ইরানের নীতি পুলিশ৷ এর তিনদিন পর ১৬ সেপ্টেম্বর তার মৃত্যুর খবর জানানো হয়৷ এরপর থেকে ইরানের বিভিন্ন এলাকায় নারীরা বিক্ষোভ করছেন৷ প্রকাশ্যে তারা হেডস্কার্ফ খুলে ফেলছেন৷ হিউম্যান রাইটস ওয়াচের গবেষক তারা সেপেহরি ফার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বাধ্যতামূলক হিজাবের বিরুদ্ধে ইরানি সমাজের ভেতর এবং দেশের ভেতর এমন সমালোচনা আমি আগে দেখিনি৷''
মাহসা আমিনি হত্যা : বিক্ষোভ এশিয়া ছাড়িয়ে ইউরোপে
ভাইয়ের সঙ্গে ছিলেন মাহসা আমিনি৷ সহি পোশাক না পরায় তাকে ধরে নিয়ে যায় ইরানের নীতি পুলিশ৷ আর জীবিত ফেরেননি মাহসা৷ তার মৃত্যুর প্রতিবাদে বিক্ষোভ চলছে বিভিন্ন দেশে৷ দেখুন ছবিঘরে...
ছবি: Yasin Akgul/AFP
মাহসা আমিনি
মাহসার বয়স মাত্র ২২৷ কুর্দি পরিবারে জন্ম৷ গত ১৩ সেপ্টেম্বর ভাইয়ের পাশ থেকে তাকে ধরে নিয়ে যায় ইরানের নীতি পুলিশ৷ মাহসার অপরাধ- ঠিকভাবে হিজাব পরেনি৷
ছবি: privat/UGC
তিনদিন পর সংবাদ শিরোনামে
ভোজারা ডিটেনশন সেন্টারে নিয়ে যাওয়ার পরই নাকি অজ্ঞান হয়ে যান মাহসা৷ পুলিশের এমনই দাবি৷ তারপর নিয়ে যাওয়া হয় হাসপাতালে৷ সেখানে তিনদিন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে হেরে যান তরতাজা তরুণী মাহসা৷ইরানের প্রায় সব খবরের কাগজে ছাপা হয় মাহসার রহস্যজনক মৃত্যুর খবর৷
ছবি: Fatemeh Bahrami/AA/picture alliance
মাথায় আঘাত করে হত্যা?
ইরানের নীতি পুলিশের দাবি, মাহসা হঠাৎ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন৷ তারপরই নাকি তিনি কোমায় চলে যান৷ কিন্তু পরিবার বলছে, মাহসা পুরোপুরি সুস্থ ছিলেন, তাই হৃদরোগে মারা যাওয়ার তথ্যটি তারা বিশ্বাস করছেন না৷ জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক ভারপ্রাপ্ত হাই কমিশনার নাদা আল-নাশিফ অবশ্য বলেছেন, পুলিশ আমিনির মাথায় লাঠি দিয়ে আঘাত করেছিল অথবা কোনো গাড়ির সঙ্গে মাথা ঠুকে দিয়েছিল বলে রিপোর্টে বলা হয়েছে।
ছবি: Denis Balibouse/REUTERS
ইরানে প্রবল বিক্ষোভ
মাহসা আমিনির নীতি পুলিশের হেফাজতে মৃত্যুর খবরে ফুঁসে উঠেছে ইরান৷ নানা শহরে বিক্ষোভ জানাতে রাস্তায় নেমেছে হাজার হাজার মানুষ৷ওপরের ছবিতে রাজধানী তেহরানের এক রাস্তার বিক্ষোভ মিছিল৷
ছবি: UGC
এক থেকে হাজার মাহসা
মাহসা হত্যার প্রতিবাদ ইরান থেকে ছড়িয়ে পড়েছে নানা দেশে৷ বিভিন্ন স্থানে নারীরা মাহসার ছবি নিয়ে বিক্ষোভ করছেন, কেউ কেউ ছবির নীচে লিখছেন, ‘‘আ অ্যাম মাহসা৷’’ ওপরে জার্মানির রাজধানী বার্লিনের ছবি, ইরানি বংশোদ্ভূত এক নারীর হাতেও দেখা যাচ্ছে মাহসার ছবিতে ‘‘আ অ্যাম মাহসা’’ লেখা প্ল্যাকার্ড৷
ছবি: Paul Zinken/picture alliance/dpa
তুরস্কে বিক্ষোভ
ইস্তাম্বুলের রাস্তায় মাহসা হত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভ৷ এই নারীর মতো অনেকেই তুরস্ক থেকেই তুলেছেন হত্যাকারীদের কঠোর শাস্তির দাবি৷
ছবি: Francisco Seco/ASSOCIATED PRESS/picture alliance
চুল কেটে প্রতিবাদ
হিজাবে চুল এবং মুখ না ঢাকার কারণে মাহসাকে নিয়ে পিটিয়ে মারা হয়েছে বলে বিক্ষোভকারীদের সন্দেহ৷ তাই ইরানের অনেক নারীই হিজাব পোড়াচ্ছেন, কেটে ফেলছেন নিজের মাথার চুল৷ অন্যান্য দেশেও এভাবে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন অনেকে৷ ওপরে ইস্তাম্বুলে এক নারীর চুল কাটার মুহূর্ত৷
ছবি: Yasin Akgul/AFP
ফ্রাঙ্কফুর্টে বিক্ষোভ
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট শহরে বসবাসরত ইরানিরাও মাহসা হত্যার প্রতিবাদে রাস্তায় নেমেছেন৷
ছবি: Boris Roessler/picture alliance/dpa
পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ
ইরানের বিভিন্ন শহরে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়াচ্ছেন বিক্ষোভকারীরা৷
পুরুষরাও বিক্ষোভে অংশ নিচ্ছেন৷ বিক্ষোভ দমাতে নিরাপত্তা বাহিনী কখনও আকাশ লক্ষ্য করে, কখনওবা বিক্ষোভকারীদের দিকে গুলি ছুড়ছে৷ এর জবাবে বিক্ষোভকারীরা পুলিশের দিকে লক্ষ্য করে পাথর ছুড়ছেন, পুলিশের গাড়ি ও সরকারি ভবনে আগুনও ধরিয়ে দিচ্ছেন৷
বিক্ষোভে অন্তত ৪১ জন প্রাণ হারিয়েছেন বলে রোববার দেশটির রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে৷ এদের বেশিরভাগই বিক্ষোভকারী৷ কয়েকজন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যও রয়েছেন৷ তবে অসলোভিত্তিক ‘ইরান হিউম্যান রাইটস' মৃত্যুর সংখ্যা অন্তত ৫৭ বলে দাবি করছে৷ তবে বিক্ষোভের প্রসার দমাতে ইন্টারনেট বন্ধ করে দেয়ায় তথ্য পাওয়া কঠিনতর হয়ে উঠেছে বলে সংস্থাটি জানিয়েছে৷
এখন পর্যন্ত সংস্কারপন্থি অ্যাক্টিভিস্ট, মানবাধিকার কর্মী ও সাংবাদিকসহ কয়েকশ বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷