২০২০ সালে ইউক্রেনের বিমান গুলি করে নামানোর অভিযোগে ওই সেনাকর্মীদের শাস্তি দেওয়া হয়েছে। তাদের জেলে থাকতে হবে।
বিজ্ঞাপন
ইরানের একটি সেনা আদালত এই শাস্তি শুনিয়েছে। সেনাবাহিনীর ১০জনের বিরুদ্ধে এই শাস্তি ঘোষণা করা হয়েছে। বস্তুত, ২০২০ সালে ওই ঘটনার পর ইরান বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেছিল বলে অভিযোগ। কিন্তু শেষপর্যন্ত বিশ্ব কূটনীতির চাপে তারা তদন্তে নামতে বাধ্য হয়। তারই জেরে ওই ১০ সেনাকর্মীকে শাস্তি দেওয়া হলো।
ইরানের সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, এর মধ্যে এক কম্যান্ডারও আছেন। তার নির্দেশেই ইউক্রেনের একটি যাত্রীবাহী বিমানকে গুলি করে নামানো হয়েছিল। ঘটনায় ১৭৬জন যাত্রী এবং বিমানকর্মীর মৃত্যু হয়েছিল। ওই কম্যান্ডারকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
আপোশের নাম বোয়িং ৭৩৭ ম্যাক্স বিমান
ছয়মাসের মধ্যে দুইটি বড় ধরনের দুর্ঘটনায় পড়ার পর বোয়িং ৭৩৭ ম্যাক্স বিমান বিশ্বজুড়ে খবরের শিরোনাম হয়৷ সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র উড়োজাহাজ নির্মাতা প্রতিষ্ঠানটিকে ২৫০ কোটি ডলার জরিমানা করেছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/J. Redmond
স্বল্প খরচের বিমান
২০১৭ সালে প্রথম আকাশে ওড়ে ‘বোয়িং ৭৩৭ ম্যাক্স ৮’ ব্র্যান্ডের বিমানটি৷ কম জ্বালানি ব্যবহার করতে পারা এই বিমানের ইঞ্জিন অন্যান্য বিমানের চেয়ে বেশ বড়৷
ছবি: Getty Images/S. Brashear
দুর্ঘটনায় বোয়িং ৭৩৭ ম্যাক্স
২০১৮ সালের অক্টোবর মাসে ইন্দোনেশিয়ার লায়ন এয়ার-এর একটি ‘বোয়িং ৭৩৭ ম্যাক্স ৮’ বিমান ভেঙে পড়ে৷ ঘটনায় প্রাণ হারান বিমানে থাকা ১৮৯ জন মানুষ৷ এরপর, ২০১৯ সালে মার্চে ইথিওপিয়ার রাজধানী আদ্দিস আবাবা থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরের একটি মাঠে বিমানটি ভেঙে পড়লে তাতে প্রাণ হারান বিমানের মোট ১৫৭ জন যাত্রী৷ প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, ভেঙে পড়ার আগেই বিমানের গায়ে ধরে যায় আগুন৷
ছবি: Reuters/T. Negeri
উড়াল স্থগিত
কম খরচে উড়তে পারলেও ছয় মাসের মধ্যে বড় দুটি দুর্ঘটনার কারণে বিশ্বের বহু এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষ এই মডেলের বিমান চালু স্থগিত রাখে৷ ফলে চীন, ভারত, ব্রাজিল, মেক্সিকো ও সিঙ্গাপুরের একাধিক আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ বিমান রুটে তার প্রভাব পড়ে৷
ছবি: Getty Images/J. Raedle
ত্রুটির কথা জানা ছিল!
বোয়িং বিমানের যান্ত্রিক ত্রুটির কথা জানতেন বোয়িং-এর কর্মকর্তারা৷ কিন্তু এই ত্রুটি কাটিয়ে উঠতে যে পরিমাণ অর্থলগ্নির প্রয়োজন ছিল, তা না করে, কোম্পানি সিদ্ধান্ত নেয় নতুন আরেকটি বিমান ‘বোয়িং ৭৮৭’-এর উন্নয়নে মনোনিবেশ করার৷ ফলে, ৭৩৭ ম্যাক্স-কে করতে হয় সমঝোতা৷
ছবি: picture alliance/Joker/H. Khandani
কাদের কাছে রয়েছে এই বিমান?
২০১৯ সালের মার্চ পর্যন্ত প্রায় সাড়ে তিনশটি ৭৩৭ ম্যাক্স ৮ বিমান উড়াল কার্যক্রম শুরু করে৷ তখন এই মডেলের সবচেয়ে বেশি বিমান ছিল যুক্তরাষ্ট্রের সাউথওয়েস্ট এয়ারলাইন্সের কাছে৷ এছাড়া আরও ৫,১১০টি বিমান কেনার জন্য অর্ডার দিয়েছিল প্রায় ৬০টি এয়ারলাইন্স৷ ইউরোপে এই মডেলের বিমানের বড় ক্রেতা নরওয়েজিয়ান এয়ারলাইন্স, টিইউআই, টার্কিশ এয়ারলাইন্স ও রায়ানএয়ার৷
ছবি: Reuters/J. Redmond
পাইলটের ক্ষমতা
ইন্দোনেশিয়ায় ২০১৮ সালে ভেঙে পড়া বিমানটির ব্ল্যাক বক্স উদ্ধার হবার পর জানা যায় যে, বিমানের চালক শেষ সময়ে বিমানকে স্বভাবিক উচ্চতায় ফিরিয়ে আনতে অনেক চেষ্টা চালিয়েছিলেন৷ কিন্তু তাতেও শেষরক্ষা হয়নি৷ বিভিন্ন পাইলট সংগঠন এই বিমানের নিরাপত্তা ও নিকৃষ্ট যোগাযোগ ব্যবস্থার নিন্দা জানিয়েছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/J. Redmond
কোম্পানি কী বলছে?
ইথিওপিয়ায় দুর্ঘটনার পর একটি অনুসন্ধানকারী দল পাঠায় বোয়িং৷ ২০১৮ সালে ইন্দোনেশিয়ার দুর্ঘটনার পর, কোম্পানি পাইলটদের উদ্দেশ্যে একটি সতর্কবাণী দিয়ে জানায় যে, ভুল নির্দেশ দেওয়া হলে বিমানের সফটওয়্যার আপনা থেকে বিমানকে নিম্নগামী করে তুলতে পারে, যা অত্যন্ত বিপজ্জনক৷ কিন্তু তারা এটাও বলেছিল যে সাময়িকভাবে কম্পিউটার বন্ধ করে পুনরায় চালু করলে বিপদ এড়ানো সম্ভব৷
ছবি: Getty Images/AFP/J. Redmond
জরিমানা
বোয়িংকে ২০২১ সালের সাত জানুয়ারিতে এসে ২৫০ কোটি ডলার জরিমানা করে যুক্তরাষ্ট্র৷ এর মধ্যে প্রায় ২৪.৪ কোটি ডলার তাদের অপরাধের জন্য, ক্ষতিগ্রস্ত এয়ারলাইন গ্রাহকদের ক্ষতিপূরণ ১৭৭ কোটি ডলার আর ৫০ কোটি ডলার দুর্ঘটনায় নিহতদের স্বজনদের জন্য ৷ যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগের সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল বলেছেন, বোয়িং কর্মকর্তারা এফএএ এর কাছ থেকে উপকরণ সংক্রান্ত তথ্য লুকিয়ে মুনাফার পথ বেছে নিয়েছিল৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/E. Thompson
আবার দুর্ঘটনা
২০২১ সালের ৯ জানুয়ারি ইন্দোনেশিয়ায় বোয়িং এর ৭৩৭-৫০০ মডেলের একটি বিমান উড্ডয়নের পর নিখোঁজ হয়ে যায়৷ পরে জাভা সমুদ্রে এর ব্ল্যাক বক্সের সংকেত মিলে৷ তবে দুর্ঘটনাকবলিত এই বিমানটি ২৭ বছরের পুরানো এবং বর্তমান প্রজন্মের ৭৩৭ ম্যাক্স-এর ত্রুটিপূর্ণ এমসিএএস সিস্টেম এতে ব্যবহার হয়নি৷ দুর্ঘটনার কারণ এখনও জানা যায়নি৷
ছবি: Achmad Ibrahim/AP Photo/picture alliance
9 ছবি1 | 9
মিজানের রিপোর্ট অনুযায়ী, ওই কম্যান্ডার এম-ওয়ান সারফেস টু এয়ার মিসাইল সিস্টেম থেকে দুইটি মিসাইল ছুঁড়েছিলেন। এবং তার জন্য সেনাবাহিনীর কর্তাদের কাছ থেকে কোনো অনুমতি নেওয়া হয়নি। বাকি নয় সেনাকর্মীকে এক থেকে তিন বছরের কারবাসের শাস্তি দেয়া হয়েছে। কিন্তু দণ্ডপ্রাপ্তদের পরিচয় জানানো হয়নি।
কী ঘটেছিল
২০২০ সালের ৮ জানুয়ারি ইউক্রেন ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইনের উড়ান পিএস ৭৫২ তেহরান থেকে কিয়েভে যাচ্ছিল। তেহরান থেকে ওড়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই ফ্লাই'টটিতে মিসাইল লাগে। আগুন লাগা অবস্থায় ফ্লাইটটি মাটিতে গিয়ে পড়ে। ১৭৬ জন যাত্রী এবং বিমানকর্মীর মৃত্যু হয়। প্রাথমিকভাবে ইরান মিসাইলের কথা স্বীকার করতে চায়নি। কিন্তু একাধিক বিশ্বনেতা ইরানকে চিঠি দিয়ে জানান, মিসাইলের জন্যই যে বিমানটি ভেঙে পড়েছে, তার প্রমাণ আছে। এরপরেই ইরান বিষয়টি মেনে নেয়। তদন্তের প্রতিশ্রুতিও দেওয়া হয়। ইরান জানিয়েছে, অনিচ্ছাকৃতভাবে ওই সময় মিসাইল দুইটি ছোঁড়া হয়েছিল। বিমান ধ্বংসের কোনো উদ্দেশ্য ছিল না। এদিন আদালত মৃতদের পরিবার পিছু এক লাখ ৫০ হাজার মার্কিন ডলার ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করেছে।
সূত্র জানাচ্ছে, ওই দিন ইরানের এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমকে হাই অ্যালার্টে রাখা হয়েছিল। কারণ তার আগেই ইরাকে একটি মার্কিন সামরিক ঘাঁটির কাছে আক্রমণ চালানো হয়েছিল। ফলে অ্যামেরিকা পাল্টা মিসাইল ছুঁড়তে পারে বলে মনে করা হচ্ছিল।