আন্দোলনের মুখে নীতিপুলিশের কার্যক্রম বন্ধ করতে যাচ্ছে ইরান৷ শনিবার এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন দেশটির অ্যাটর্নি জেনারেল৷ তবে নতুন কোনো কাঠামোতে বাহিনীটিকে পুনর্গঠন করা হবে কিনা সেটি এখনও পরিষ্কার নয়৷
বিজ্ঞাপন
রোববার ইরানের স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ জাফর মন্তাজেরির বরাত দিয়ে নীতিপুলিশের কার্যক্রম বন্ধের সিদ্ধান্তের খবর দেয়৷ সংবাদ সংস্থা আইএসএনএ তাকে উদ্ধৃত করে লিখেছে, ‘‘বিচারবিভাগের সঙ্গে নীতিপুলিশের কোনো সম্পর্ক নেই৷''
তবে বাহিনীটি ভিন্ন কোন নামে বা ভিন্ন কাঠামোতে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা হবে কিনা তা এখনও স্পষ্ট নয়৷ রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থার তথ্য অনুযায়ী,নৈতিকতা সংক্রান্ত অপরাধের জন্য মৃত্যুদণ্ডসহ অন্য আইনি প্রক্রিয়াগুলো আগের মতোই বহাল থাকবে৷
ইউনিভার্সিটি অব সাসেক্সের জ্যেষ্ঠ প্রভাষক কামরান মতিনের মতে অ্যাটর্নি জেনারেলের ঘোষণাকে সতর্কতার সঙ্গে দেখতে হবে৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘এই ধরনের একটি ঘোষণা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে আসতে হবে যা এখনো আসেনি৷''
নীতিপুলিশের কার্যক্রম বন্ধের কথা বললেও মন্তাজেরি জানিয়েছেন, ‘‘বিচার ব্যবস্থা অবশ্যই আচরণগত বিষয়গুলোর পর্যবেক্ষণ অব্যাহত রাখবে৷''
ইরানে বিক্ষোভের প্রতি বিশ্বের সংহতি
ইরানে মাহসা আমিনির মৃত্যুর প্রতিবাদে বিক্ষোভ চলছে৷ এর প্রতি সংহতি জানিয়ে বিশ্বের অনেক শহরেও প্রতিবাদ হচ্ছে৷
ছবি: Stefano Rellandini/AFP/Getty Images
প্যারিস
ইরানে চলমান বিক্ষোভের প্রতি বিশ্বের অনেক মানুষ সংহতি জানাচ্ছন৷ রোববার প্যারিসে এক বিক্ষোভ থেকে ‘ইসলামিক রিপাবলিকের মৃত্যু’,‘একনায়কের মৃত্যু’ শ্লোগান দেয়া হয়৷
ছবি: Stefano Rellandini/AFP/Getty Images
ইস্তাম্বুল, দিয়ারবাকির, ইজমির
ইস্তাম্বুলে বিক্ষোভে অনেক ইরানি নারী অংশ নেন৷ ইরানের সরকারের বিরুদ্ধে তারা শ্লোগান দেন, যেমন ‘নারী, জীবন, স্বাধীনতা!’৷ কুর্দি অধ্যুষিত তুরস্কের দিয়ারবাকির শহর ও পশ্চিম উপকূলের ইজমিরেও বিক্ষোভ হয়েছে৷ নিহত মাহসা আমিনি একজন কুর্দি ছিলেন৷
ছবি: Emrah Gurel/AP/picture alliance
বার্লিন
প্রায় পাঁচ হাজার মানুষ ইরানের নেতৃত্বের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে অংশ নেন৷ তারা নারী হত্যা (ফেমিসাইড) বন্ধের দাবি জানান৷
ছবি: Annette Riedl/dpa/picture alliance
বৈরুত
মধ্যপ্রাচ্যের অনেক মানুষও ইরানে বিক্ষোভের প্রতি সংহতি জানিয়েছেন৷ লেবাননের রাজধানী বৈরুতে নারীরা জাতীয় জাদুঘরের সামনে বিক্ষোভ করে নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধের দাবি জানিয়েছেন৷
ছবি: MOHAMED AZAKIR/REUTERS
লস অ্যাঞ্জেলেস
যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার লস অ্যাঞ্জেলেসের সিটি হলের সামনে বিক্ষোভকারীরা ইরানের ঐতিহ্যবাহী বাদক বাজিয়ে ইরানে চলমান বিক্ষোভের প্রতি সংহতি প্রকাশ করেন৷ লন্ডন, টোকিও ও মাদ্রিদেও সংহতি বিক্ষোভ হয়েছে৷
ছবি: BING GUAN/REUTERS
শরিফ বিশ্ববিদ্যালয়, তেহরান
ইরানের বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা ইরানের শাসক ও তাদের নিপীড়নমূলক নীতির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করছেন৷ তেহরানের শরিফ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থী ও অধ্যাপকদের উপর হামলা করেছে নিরাপত্তা বাহিনী৷
ছবি: UGC/AFP
6 ছবি1 | 6
গত ১৬ সেপ্টেম্বর ২২ বছর বয়সি কুর্দি ইরানি নারী মাহসা আমিনির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে ইরানে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে৷ হিজাবে চুল ঠিকমতো ঢাকা হয়নি এমন অভিযোগে দেশটির নীতি পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার পর তেহরানের একটি হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়৷ এ নিয়ে দেশ ও দেশের বাইরে ইরানিদের আন্দোলনে চাপের মুখে পড়ে তেহরান৷ এই আন্দোলনে এখন পর্যন্ত নিরাপত্তাবাহিনী হাতে তিনশতাধিক মানুষ প্রাণ হারিয়েছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ৷ তবে শনিবার ইরানের নিরাপত্তা সংক্রান্ত রাষ্ট্রীয় সংস্থা প্রথমবারের মতো ২০০ জনের প্রাণহানির কথা স্বীকার করেছে৷
শনিবার মন্তাজেরি জানান, নারীদের হেডস্কার্ফ বা মাথা ঢেকে রাখাপোশাক পরার বাধ্যবাধকতা সংক্রান্ত কয়েক যুগের পুরাতন আইন সরকার পুনর্বিবেচনা করে দেখছে৷ প্রয়োজনে সেটি পরিবর্তন করা হতে পারে বলে ইঙ্গিত দেন তিনি৷
‘নীতিপুলিশ' ইরানের পুলিশের একটি ইউনিট হিসেবে কার্যক্রম পরিচালনা করে৷ জনপরিসরে নারীদের ইসলামিক পোশাক পরিধানের বিষয়ে নজরদারি বা আচরণগত আইন প্রয়োগের দায়িত্ব পালন করে তারা৷
২০০৬ সালে ইরানের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ আহমদিনেজাদের মেয়াদে এই বাহিনী প্রথম রাস্তায় নামে৷ ইরানীয় আইন অনুযায়ী, জনসমক্ষে নারী বা বয়ঃসন্ধিকাল অতিক্রম করা মেয়েদের মাথা ঢাকা ও ঢিলেঢালা পোশাক পরার বাধ্যবাধকতা রয়েছে৷
এসব ক্ষেত্রে নীতিপুলিশের বিরুদ্ধে বারবার আইন বহির্ভূত গ্রেপ্তার ও সীমালঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে৷
এফএস/আরকেসি (এএফপি, ডিপিএ, রয়টার্স)
মাহসা আমিনি হত্যা : বিক্ষোভ এশিয়া ছাড়িয়ে ইউরোপে
ভাইয়ের সঙ্গে ছিলেন মাহসা আমিনি৷ সহি পোশাক না পরায় তাকে ধরে নিয়ে যায় ইরানের নীতি পুলিশ৷ আর জীবিত ফেরেননি মাহসা৷ তার মৃত্যুর প্রতিবাদে বিক্ষোভ চলছে বিভিন্ন দেশে৷ দেখুন ছবিঘরে...
ছবি: Yasin Akgul/AFP
মাহসা আমিনি
মাহসার বয়স মাত্র ২২৷ কুর্দি পরিবারে জন্ম৷ গত ১৩ সেপ্টেম্বর ভাইয়ের পাশ থেকে তাকে ধরে নিয়ে যায় ইরানের নীতি পুলিশ৷ মাহসার অপরাধ- ঠিকভাবে হিজাব পরেনি৷
ছবি: privat/UGC
তিনদিন পর সংবাদ শিরোনামে
ভোজারা ডিটেনশন সেন্টারে নিয়ে যাওয়ার পরই নাকি অজ্ঞান হয়ে যান মাহসা৷ পুলিশের এমনই দাবি৷ তারপর নিয়ে যাওয়া হয় হাসপাতালে৷ সেখানে তিনদিন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে হেরে যান তরতাজা তরুণী মাহসা৷ইরানের প্রায় সব খবরের কাগজে ছাপা হয় মাহসার রহস্যজনক মৃত্যুর খবর৷
ছবি: Fatemeh Bahrami/AA/picture alliance
মাথায় আঘাত করে হত্যা?
ইরানের নীতি পুলিশের দাবি, মাহসা হঠাৎ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন৷ তারপরই নাকি তিনি কোমায় চলে যান৷ কিন্তু পরিবার বলছে, মাহসা পুরোপুরি সুস্থ ছিলেন, তাই হৃদরোগে মারা যাওয়ার তথ্যটি তারা বিশ্বাস করছেন না৷ জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক ভারপ্রাপ্ত হাই কমিশনার নাদা আল-নাশিফ অবশ্য বলেছেন, পুলিশ আমিনির মাথায় লাঠি দিয়ে আঘাত করেছিল অথবা কোনো গাড়ির সঙ্গে মাথা ঠুকে দিয়েছিল বলে রিপোর্টে বলা হয়েছে।
ছবি: Denis Balibouse/REUTERS
ইরানে প্রবল বিক্ষোভ
মাহসা আমিনির নীতি পুলিশের হেফাজতে মৃত্যুর খবরে ফুঁসে উঠেছে ইরান৷ নানা শহরে বিক্ষোভ জানাতে রাস্তায় নেমেছে হাজার হাজার মানুষ৷ওপরের ছবিতে রাজধানী তেহরানের এক রাস্তার বিক্ষোভ মিছিল৷
ছবি: UGC
এক থেকে হাজার মাহসা
মাহসা হত্যার প্রতিবাদ ইরান থেকে ছড়িয়ে পড়েছে নানা দেশে৷ বিভিন্ন স্থানে নারীরা মাহসার ছবি নিয়ে বিক্ষোভ করছেন, কেউ কেউ ছবির নীচে লিখছেন, ‘‘আ অ্যাম মাহসা৷’’ ওপরে জার্মানির রাজধানী বার্লিনের ছবি, ইরানি বংশোদ্ভূত এক নারীর হাতেও দেখা যাচ্ছে মাহসার ছবিতে ‘‘আ অ্যাম মাহসা’’ লেখা প্ল্যাকার্ড৷
ছবি: Paul Zinken/picture alliance/dpa
তুরস্কে বিক্ষোভ
ইস্তাম্বুলের রাস্তায় মাহসা হত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভ৷ এই নারীর মতো অনেকেই তুরস্ক থেকেই তুলেছেন হত্যাকারীদের কঠোর শাস্তির দাবি৷
ছবি: Francisco Seco/ASSOCIATED PRESS/picture alliance
চুল কেটে প্রতিবাদ
হিজাবে চুল এবং মুখ না ঢাকার কারণে মাহসাকে নিয়ে পিটিয়ে মারা হয়েছে বলে বিক্ষোভকারীদের সন্দেহ৷ তাই ইরানের অনেক নারীই হিজাব পোড়াচ্ছেন, কেটে ফেলছেন নিজের মাথার চুল৷ অন্যান্য দেশেও এভাবে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন অনেকে৷ ওপরে ইস্তাম্বুলে এক নারীর চুল কাটার মুহূর্ত৷
ছবি: Yasin Akgul/AFP
ফ্রাঙ্কফুর্টে বিক্ষোভ
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট শহরে বসবাসরত ইরানিরাও মাহসা হত্যার প্রতিবাদে রাস্তায় নেমেছেন৷
ছবি: Boris Roessler/picture alliance/dpa
পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ
ইরানের বিভিন্ন শহরে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়াচ্ছেন বিক্ষোভকারীরা৷