জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে দেশব্যাপী বিক্ষোভের পর এবার রাজধানী তেহরানে ইরানের সরকার সমর্থকরাও সমাবেশ করেছে৷
বিজ্ঞাপন
জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে ইরানে সাম্প্রতিক জনঅসন্তোষের পর রাজধানী তেহরানের এংহেলাব স্কোয়ারে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে সরকারপন্থিরা৷ দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারীদের অ্যাখ্যায়িত করেছে ‘প্রকৃত ইরানি' হিসেবে৷
সম্প্রতি জ্বালানি তেলের মূল্য ২০০ ভাগ পর্যন্ত বৃদ্ধির আকষ্মিক ঘোষণা দেয় সরকার৷ প্রতিবাদে ১৫ নভেম্বর রাস্তায় নেমে আসে ক্ষুব্ধ জনতা ৷ আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে গোটা দেশেই৷ এক পর্যায়ে তা রূপ নেয় সহিংসতায়৷ ব্যাংক, পেট্রোল স্টেশনসহ বেশ কিছু ভবনে আগ্নিসংযোগ এবং লুটপাটের ঘটনা ঘটে৷ মহাসড়কে অবরোধের কারণে বন্ধ হয়ে যায় যান চলাচল৷
বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণে ইরানের সরকার দমন পীড়নের পথ বেছে নেয়৷ যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল গত সপ্তাহে জানিয়েছে, নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে ১০০ জনের বেশি নিহত হয়েছে৷ সংস্থাটি বলেছে, মৃতের সংখ্যা এমনকি ২০০ জনেও ঠেকতে পারে৷ ইরানের সরকার এই সংখ্যাকে অতিরঞ্জিত অ্যাখ্যায়িত করে এ পর্যন্ত পাঁচ জনের মৃত্যুর কথা স্বীকার করেছে৷
এদিকে বিক্ষোভকারীদের উপর চালানো নির্যাতন ও হত্যার ঘটনায় তেহরানের উপর আন্তর্জাতিক চাপ বেড়েছে৷ নিন্দা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্স৷ ঠিক এমন এক প্রেক্ষাপটে সোমবার তেহরানে সরকার সমর্থকরা সমাবেশের আয়োজন করে৷ ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, এটি গোটা বিশ্বের সামনে তুলে ধরেছে কারা আসলে ‘প্রকৃত ইরানি' এবং তাদের কী দাবি৷
এদিকে জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে অংশ নেয়াদের ভাড়াটে সৈনিক হিসেবে উল্লেখ করে তাদেরকে গ্রেপ্তারের কথা জানিয়েছেন দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আব্বাস মৌসাভি৷ শনিবার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে দেয়া বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘‘আমরা শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকারকে সমর্থন দেই৷ কিন্তু দাঙ্গাবাজদের জন্য এটি প্রযোজ্য নয়...তারা (বিদেশ থেকে) নির্দেশ পেয়েছে এবং সশস্ত্র ছিল৷’’
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও সরকারের নির্যাতনের ভিডিও, ছবি ও তথ্য ওয়াশিংটনকে পাঠাতে ইরানের প্রতিবাদকারীদের প্রতি টুইটারে আহবান জানান৷ যুক্তরাষ্ট্র সেগুলো প্রকাশ করবে বলে ঘোষণা দেন তিনি৷ একে হীনমন্য আচরণ উল্লেখ করে তাঁর কড়া সমালোচনা করেছেন মৌসাভি৷ সোমবার ইরানের রেভোল্যুশনারি গার্ডের প্রধান জেনারেল হোসেন সালামিও ইরানের বিক্ষোভে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা ইন্ধন দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেন৷ সরকারপন্থিদের সমাবেশে দেয়া বক্তৃতায় তিনি জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদকে ‘মিথ্যা অজুহাত' হিসেবে উল্লেখ করেন৷
এফএস/এসিবি (এএফপি, রয়টার্স, এপি)
সৌদি আরব, ইরান, ইসরায়েল কার শক্তি কেমন?
সৌদি আরবের তেলক্ষেত্রে হামলার পর অস্থির হয়ে উঠেছে মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতি৷ হুতি বিদ্রোহীরা এর দায় নিলেও ইরানকে দায়ী মনে করছে যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরব৷ এ নিয়ে চলছে হুমকি-পাল্টা হুমকি৷ কিন্তু সামরিক শক্তিমত্তা কার বেশি?
ছবি: picture-alliance/EPA/TSGT
আকাশে সৌদি আরব
সামরিক খাতে সৌদি আরব ২০১৮ সালে ৬ হাজার ৭৬০ কোটি ডলার খরচ করেছে৷ ব্যয়ের দিক থেকে তাদের অবস্থান গোটা বিশ্বে তৃতীয় আর উপসাগরীয় দেশগুলোর মধ্যে শীর্ষে৷ বিশ্বের সামরিক যন্ত্রপাতির সবচেয়ে বড় ক্রেতাও তারা৷ বর্তমানে সৌদির মোট সামরিক সদস্য ২ লাখ ৩০ হাজার৷ আছে ৮৪৮ টি যুদ্ধবিমান, ২৫৪ টি হেলিকপ্টার, ১০৬২ টি ট্যাংক ও ৫৫ টি যুদ্ধ জাহাজ৷ তবে নেই কোনো সাবমেরিন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সমুদ্র আর সৈন্যে ইরান
সামরিক খাতে গত বছর ইরানের ব্যয় ছিল ১ হাজার ৩২০ কোটি ডলার, যা ২০১৭ সালের তুলনায় সাড়ে নয় ভাগ কম৷ অবরোধ আর অর্থনৈতিক মন্দায় গত এক দশকে দেশটির অস্ত্র আমদানির পরিমাণও কমেছে৷ ২০০৯-১৮ সালের মধ্যে তা্দের আমদানিকৃত অস্ত্রের পরিমাণ সৌদি আরবের মাত্র সাড়ে তিনভাগ৷ বর্তমানে দেশটির সামরিক সদস্য আট লাখ ৭৩ হাজার৷ ৫০৯ টি যুদ্ধ বিমান, ১৫৬ টি হেলিকপ্টার, ১৬৩৪ টি ট্যাংক, ৩৯৮ টি নৌযান, ৩৪ টি সাবমেরিনের মালিক তারা৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/E. Noroozi
ইসরায়েল নিজেই অস্ত্র তৈরি করে
২০১৮ সালে সামরিক খাতে এক হাজার ৫৯৫ কোটি ডলার ব্যয় করেছে ইসরায়েল৷ দেশটি নিজেই সামরিক অস্ত্র তৈরি করে, তাই তেমন একটা আমদানি করতে হয় না৷ গত বছর সর্বসাকুল্যে ১০৩ কোটি ডলারের অস্ত্র কিনেছে যুক্তরাষ্ট্র আর জার্মানির কাছ থেকে৷ দেশটির সামরিক বাহিনীর সদস্য সংখ্যা ৬ লাখ ১৫ হাজার৷ তাদের বহরে আছে ৫৯৫ টি যুদ্ধবিমান, ১৪৬ টি হেলিকপ্টার, ২৭৬০ টি ট্যাংক, ৬ টি সাবমেরিন৷
ছবি: Reuters
প্রতাপশালী তুরস্ক
২০১৮ সালে তুরস্কের সামরিক ব্যয়ের পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৮৯৭ কোটি ডলার৷ এর মধ্যে ১১১ কোটি ডলার খরচ করেছে যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, স্পেন, ইতালিসহ ৬টি দেশের কাছ থেকে অস্ত্র ক্রয়ে৷ তুরস্কের সামরিক বাহিনীর সদস্য ৭ লাখ ৩৫ হাজার৷ যুদ্ধবিমান আছে ১০৬৭ টি৷ আছে ৪৯২ টি হেলিকপ্টার, ৩২০০ ট্যাংক, ১৯৪ টি যুদ্ধজাহাজ, ১২ টি সাবমেরিন৷
ছবি: Getty Images/AFP/B. Kilic
উপসাগরের ছোট শক্তি কাতার
কাতারের সবশেষ সামরিক ব্যয়ের হিসাবটি ২০১০ সালের৷ সে বছর তাদের বাজেট ছিল ২১৭ কোটি ডলারের৷ দেশটির সামরিক সদস্য সংখ্যা ১২ হাজার৷ আছে ১০০ টি এয়ারক্রাফট, ৪২ টি হেলিকপ্টার, ৯৫ টি ট্যাংক, ৮০ টি যুদ্ধজাহাজ৷
ছবি: Getty Images/AFP/K. Jaafar
পড়ন্ত শক্তির ইরাক
গেল বছর সামরিক বাহিনীর পেছনে প্রায় ৬৩২ কোটি ডলার খরচ করেছে ইরাক৷ এর মধ্যে ১৫৬ কোটি ডলার ব্যয় করেছে অস্ত্র ক্রয়ে৷ তাদের আছে ১ লাখ ৬৫ হাজার সৈন্য, ৩২৭ টি যুদ্ধবিমান, ১৭৯ টি হেলিকপ্টার, ৩০৯ টি ট্যাংক, ৬০ টি যুদ্ধজাহাজ৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A. Abdul Hassan
এবং যুক্তরাষ্ট্র
গত বছর যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাজেট ছিল ৬৪ হাজার ৮৮০ কোটি ডলারের৷ প্রায় সাড়ে ২১ লাখ সামরিক সদস্যের বিশাল বাহিনী তাদের৷ ১৩,৩৯৮ টি যুদ্ধবিমান, ৫৭৬০টি হেলিকপ্টার, ৬২৮৭টি ট্যাংক, ৪১৫টি যুদ্ধজাহাজ, ৬৮টি সাবমেরিন আছে এই পরাশক্তির বহরে৷