বিদ্রোহী গোষ্ঠীর নেতৃত্ব ও বোমা হামলার দায়ে হাবিব চাব নামে এক ব্যক্তির ফাঁসির ফাঁসি কার্যকর করেছে ইরান৷ তার সুইডেন ও ইরানের দ্বৈত নাগরিকত্ব রয়েছে৷ মৃত্যুদণ্ড কার্যকরকে ‘অমানবিক' অভিহিত করে নিন্দা জানিয়েছে সুইডেন৷
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের হিসাবে চীনের পরই ইরান বিশ্বের সবচেয়ে বেশি মৃত্যুদণ্ড কার্যকরকারী দেশ৷ছবি: Allison Bailey/NurPhoto/picture alliance
বিজ্ঞাপন
শনিবার সুইডিশ-ইরানি নাগরিক হাবিব ফারাজুল্লাহ চাবের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেছে ইরান৷ ২০১৮ সালে খুজেস্তান প্রদেশে একটি সামরিক কুচকাওয়াজে হামলায় বহু মানুষের মৃত্যুর দায়ে তার প্রাণ কেড়ে নেয়ার শাস্তি দেয় আদালত৷
ইরানের বিচার বিভাগ বিষয়ক সংবাদ মাধ্যম মিজান অনলাইন লিখেছে, ‘‘শনিবার সকালে হরকাত আল-নিদাল সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর প্রধান হাবিব চাব ওরফে হাবিব আসিউদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে৷''
২০২০ সালে সুইডেন থেকে তুরস্ক আসার সময়ে ইরানের বাহিনী তাকে আটক করে এবং তেহরানে নিয়ে আসে৷ তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত কোনো তথ্য তারা কখনও প্রকাশ করেনি৷
ইরানে আহভাজের স্বাধীনতাকামী বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী আরব স্ট্রাগল মুভমেন্টের নেতৃত্ব দেয়ার অভিযোগে ২০২২ সালে তার বিচার শুরু হয়৷ একাধিক ‘বোমা হামলা ও সন্ত্রাসী অভিযানের' অভিযোগ আনা হয় তার বিরুদ্ধে৷ ইরানের আহভাজ অঞ্চলের মানুষ দীর্ঘকাল ধরে দেশটির সরকারের বঞ্চনার শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে৷ যে কারণে দক্ষিণ পশ্চিমের তেল সমৃদ্ধ খুজেস্তান প্রদেশকে নিয়ে আলাদা রাষ্ট্র গঠন করতে চায় আরব স্ট্রাগল মুভমেন্ট৷
গত বছরের ডিসেম্বরে হবিব চাবকে ফাঁসির দণ্ড দেয়া হয়৷ তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকরকে অমানবিক উল্লেখ করে উদ্বেগ ও নিন্দা জানিয়েছে সুইডেন৷ দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী টবিয়াস বিলসট্রোম টুইটে লিখেছেন, ‘‘এই মৃত্যুদণ্ড একটি অমানবিক এবং অসংশোধনযোগ্য শাস্তি ৷ ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে যৌথভাবে সুইডেন যেকোন পরিস্থিতিতে এই (মৃত্যুদণ্ড) কার্যকরের নিন্দা জানায়৷''
ইরানের সঙ্গে গত কয়েক বছর ধরে সুইডেনের সম্পর্কের টানাপোড়েন চলছে৷ ১৯৮৮ সালের রাজনৈতিক বন্দিদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের সঙ্গে যুক্ত থাকার দায়ে ২০২২ সালে সুইডেন ইরানের সাবেক এক কর্মকর্তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়৷
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের হিসাবে চীনের পরই ইরান বিশ্বের সবচেয়ে বেশি মৃত্যুদণ্ড কার্যকরকারী দেশ৷
এফএস/আরআর (রয়টার্স, এপি, এফপি)
ইরানে মেয়েদের স্কুলে যাওয়া ঠেকাতে বিষ প্রদান!
ইরানের ১৫টি শহরের অন্তত এক হাজার মেয়ে শিক্ষার্থী বিষাক্ত গ্যাস হামলার শিকার হয়েছে৷ ইরানের স্বাস্থ্য উপমন্ত্রীর দাবি- মেয়েদের স্কুলে যাওয়া ঠেকাতে এমন হামলা চালানো হয়েছে৷
ছবি: Hasan Sarbakhshian/AP/picture alliance
এক হাজার ছাত্রী আক্রান্ত
গত কয়েক মাসে ইরানের ১৫টি শহরের বিভিন্ন স্কুলের প্রায় এক হাজার ছাত্রী বিষাক্ত গ্যাস হামলার শিকার হয়েছেন৷ অভিভাবকদের অভিযোগ, পরিস্থিতি সামলাতে তেমন কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না সরকার৷
ছবি: Social Media/via REUTERS
আক্রান্তদের অভিজ্ঞতা
ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে শিক্ষার্থীরা জানায়, তারা হঠাৎ করেই বিশেষ ধরনের গন্ধ পাচ্ছিল৷ যেমন পচা ডিমের, পচা ফলের বা শক্তিশালী পারফিউমের৷ এরপর তাদের শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল৷ কারো কারো মাথা ঘুরছিল৷ এর ফলে অনেতে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন৷
ছবি: Allison Bailey/NurPhoto/picture alliance
যেখান থেকে শুরু
ইরানের কোম শহরে একটি স্কুলের শিক্ষার্থীরা প্রথম এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হন৷ এরপর একে একে ইরানের ১৫টি শহরের বিভিন্ন স্কুল থেকে একই ধরনের অভিযোগ আসে৷
ছবি: Diego Radames/SOPA Images/ZUMA Press Wirepicture alliance
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য
এমন ঘটনার প্রেক্ষাপটে দেশটির স্বারাষ্ট্রমন্ত্রী আহমাদ ভাহিদি এক সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেন, মানসিক চাপে থাকার কারণে এবং ভয় পেয়েই নাকি মেয়েরা শারীরিকভাবে অসুস্থ অনুভব করছিল৷ যদিও মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, এমনটা হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই৷
ছবি: Allison Bailey/NurPhoto/picture alliance
সন্দেহ স্বাস্থ্য উপমন্ত্রীর
ইরানের স্বাস্থ্য উপমন্ত্রী ইউনেস পাহানি অবশ্য ভিন্ন কথা বলছেন৷ তার বক্তব্য, ‘‘মেয়েদের স্কুল বন্ধ করতেই এমন হামলা চালানো হচ্ছে৷’’ বিষয়টি ইতিমধ্যে দেশের সংসদে উত্থাপন করা হয়েছে৷ বিস্তারিত তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি৷
ছবি: tejaratnews
আতঙ্কে অভিভাবকেরা
ঘটনার প্রতিবাদে বিভিন্ন স্কুলের সামনে প্রতিবাদ করছেন অভিভাবকেরা৷ রাজধানী তেহরানের বাসিন্দা এক মা ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘অনেক অভিভাবাকই মেয়েদের স্কুলে না পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন৷’’
ছবি: Isna
শিক্ষকদের বিক্ষোভ
এদিকে ঘটনার পর শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার দাবিতে দেশব্যাপী বিক্ষোভের ডাক দিয়েছে ইরানিয়ান টিচার্স ট্রেড অ্যাসোসিয়েশন৷ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক পোস্টে সংগঠনটির সদস্য মোহাম্মদ হাবিবি বলেন, ‘‘এই ঘটনার সাথে যারা জড়িত তাদের জানা থাকা উচিত যে, আমাদের সর্বোচ্চ সীমারেখা হলো শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা৷’’