জনসমক্ষে হিজাব খুলে উড়িয়ে দেয়ার অপরাধে ইরানে এক নারীকে দুই বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত৷ রায়ের পর বৃহস্পতিবার সকাল থেকে তেহরানে রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ জানিয়েছেন অনেক নারী৷
ছবি: iran emrooz
বিজ্ঞাপন
৮ই মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস৷ কিন্তু ইরানে এবারে নারী দিবসে বিক্ষোভের আগুন ছড়িয়ে পড়েছে৷ হিজাব বন্ধের দাবিতে এবং দণ্ডপ্রাপ্ত নারীর মুক্তির দাবিতে রাজধানী তেহরানের রাস্তায় বিক্ষোভ করেছেন তাঁরা৷ জনসমক্ষে হিজাব খুলে উড়িয়ে দেয়ার অভিযোগে বুধবার ৩৪ বছরের এক নারীকে দুই বছরের কারাদণ্ড দেয় আদালত৷ তবে যে নারীকে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে তাঁর নাম প্রকাশ করা হয়নি৷ ধারণা করা হচ্ছে, তিনি নার্গিস হুসেইনি, যাঁকে এ বছরের শুরুতে তেহরানে আটক করা হয়েছিল৷ বিচার চলাকালীন তিনি তাঁর কৃতকর্মের জন্য কোনোরকম অনুশোচনা প্রকাশ করেননি বলে জানিয়েছেন এক আইনজীবী৷ বরং বিচারককে তিনি বোঝাতে চেষ্টা করেছেন যে জোর করে হিজাব পরানো ঠিক নয়৷
তেহরানের পাবলিক প্রসিকিউটর আব্বাস জাফর দোলাতাবাদী বলেছেন, ‘‘দেশের আইনে যা বলা আছে, তা মেনেই এ রায় দেয়া হয়েছে৷'' ইরানের আইন অনুযায়ী, মহিলাদের হিজাব পরা বাধ্যতামূলক৷ আইনে স্পষ্ট বলা আছে, মেয়েদের চুল ঢাকতে হবে এবং শরীরের সমস্ত অংশ ঢেকে রাখতে হবে৷ প্রতিবাদ শুরু হয়েছে এর বিরুদ্ধেই৷
গত কয়েক মাস ধরে ইরানের মহিলারা তাই নতুন আন্দোলন শুরু করেছেন৷ প্রকাশ্যে হিজাব খুলে প্রতিবাদ করতে শুরু করেছেন তাঁরা৷ শুধু তাই নয়, তাঁদের সেই প্রতিবাদ সোশ্যাল নেটওয়ার্কে আপলোডও করে দিচ্ছেন৷
ডিসেম্বর থেকে ইরানি নারীদের এই আন্দোলন চরম রূপ ধারণ করেছে৷ জনসমক্ষে নারীরা তাঁদের হিজাব খুলে প্রতিবাদ জানিয়েছেন৷ কেউ কেউ সেটা লাঠিতে উড়িয়ে ব্যানার বানিয়েছেন৷ আন্দোলনকারী অন্তত ৩০ জন নারীকে এ পর্যন্ত আটক করা হয়েছে৷
ইরান সরকারের সমীক্ষা অনুযায়ী, গত এক দশক আগে সে দেশের মহিলারা হিজাবের পক্ষে ছিলেন৷ কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তাঁদেরও মত বদলেছে৷ ইরানের বেশিরভাগ মহিলা আর হিজাবের আড়ালে থাকতে চান না৷ তাঁদের বক্তব্য, হিজাব পরা বা না-পরা একেবারেই ব্যক্তিগত পছন্দ৷ প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানিও কিছুদিন আগে বলেছিলেন, জনগণের মতকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয় তাঁর সরকার৷ কিন্তু তাঁর কথা এবং সরকারের আচরণের মধ্যে খুব একটা মিল পাওয়া যাচ্ছে না৷
আন্দোলনের সূত্রপাত গত বছর৷ ইরানের বিখ্যাত সাংবাদিক মিসাহ আলিনেজাদ প্রথম ‘হ্যাশট্যাগ হোয়াইটওয়েডনেসডেজ’ আন্দোলন চালু করেন৷ নিজের হিজাব খুলে লাঠির গোড়ায় বেঁধে সেটি উড়িয়েছিলেন তিনি৷ পুরো ঘটনার ভিডিও করে সোশ্যাল নেটওয়ার্কে ছেড়ে দিয়েছিলেন তিনি৷ কয়েকদিনের মধ্যেই তাঁকে গ্রেফতার করে পুলিশ৷ এখনো তিনি জেলে৷
এপিবি/এসিবি (ডিপিএ)
গতবছরের জুলাই মাসের ছবিঘরটি দেখুন...
হিজাববিরোধী প্রচারণা #মেনইনহিজাব
১৯৭৯ সালে ইসলামিক বিপ্লবের পর থেকে ইরানে জনসমক্ষে নারীদের হিজাব পরা বাধ্যতামূলক হয়েছে৷ সম্প্রতি ইরানের পুরুষরা নারীদের হিজাববিরোধী আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়ে অভিনব প্রচারণা শুরু করেছেন৷ সেই প্রচারণার কিছু অংশ থাকছে ছবিঘরে৷
ছবি: Twitter/Lola Oltra
নিঃশব্দ প্রতিবাদ
ইরানের বেশিরভাগ পুরুষ সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে নিজেদের হিজাব পরা ছবি শেয়ার করেছেন, যা এই মুহূর্তে ছড়িয়ে পড়েছে সোশ্যাল মিডিয়া জগতের সর্বত্র৷ ‘মাই স্টিলথি ফ্রিডম’ নামে এই প্রচারণার অংশ হিসেবে তারা এটা করছেন৷
ছবি: facebook/my stealthy freedom
সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল
নারী অধিকারের প্রতি সমর্থন জানিয়ে নিজেরা মাথা ঢেকে নারীদের সঙ্গে ছবি তুলে তা পোস্ট করছেন ফেসবুক-টুইটারে৷ এভাবে ছড়িয়ে দিয়েছেন পুরো দেশে৷ তাঁরা বলছেন, হিজাব নারী স্বাধীনতার লঙ্ঘনের প্রতীক৷
ছবি: facebook/my stealthy freedom
হিজাববিরোধী আন্দোলনের উদ্যোক্তা
এই প্রচারণা শুরু হয় সাংবাদিক ও নারী আন্দোলন কর্মী মসিহ আলিনেজাদের উদ্যোগে৷ তিনি ইরানের পুরুষদের হিজাব পরার এই বাধ্যতামূলক আইনের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলার ডাক দেন৷
ছবি: facebook/my stealthy freedom
নিউ ইয়র্ক থেকে আন্দোলন
পুরুষদের আহ্বান জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে বসবাসরত আলিনেজাদ বলেছেন, পুরুষদের নিজেদের হিজাব পরে দেখা উচিত তাদের কেমন লাগে৷
ছবি: facebook/my stealthy freedom
মাথা না ঢাকলে শাস্তি
ইরানে নারীদের মাথা ঢাকার বিষয়টি কঠোরভাবে পর্যবেক্ষণ করা হয়৷ বিশেষ করে সেখানকার নৈতিক পুলিশ বিষয়টির প্রতি লক্ষ্য রাখে৷ হিজাব না পরলে বা মাথায় কাপড় না দিলে জেল-জরিমানা হতে পারে৷
ছবি: facebook/my stealthy freedom
নারী স্বাধীনতার লঙ্ঘন
সম্প্রতি ইরানের নারীরা এই কঠোর নিয়মের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেক লেখালেখি করছেন৷ তাদের দাবি, এটা নারী স্বাধীনতার লঙ্ঘন৷ তাদের স্বাধীনতা যেন ফিরিয়ে দেয়া হয়৷
ছবি: facebook/my stealthy freedom
‘মেন ইন হিজাব’
২০১৪ সালে আলিনেজাদ ফেসবুকে একটি পাতা বানিয়েছিলেন যার নাম ‘মেন ইন হিজাব’৷ সেই থেকে ফেসবুক ও টুইটারে ইরানি পুরুষেরা মাথায় হিজাব পরে ছবি তুলে পোস্ট করতে থাকেন৷
ছবি: facebook/my stealthy freedom
সমালোচনা
পুরুষের হিজাব পরা বা না পরাটা কোনো বিষয় নয়, যদিও এটাকে সমাজ ভালো চোখে দেখে না৷ ইরানেও পুরুষের এ ধরনের কাজের সমালোচনা করেছেন আইন প্রণেতারা৷
ছবি: facebook/my stealthy freedom
মডেলদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা
সম্প্রতি ইরানের সরকার ইন্টারনেটে ইসলামবিরোধী পোস্টের জন্য দেশের কয়েকজন নামি-দামি মডেলের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নিয়েছে৷ এই মডেলরা ইন্টারনেটে এমন কিছু ছবি পোস্ট করেছেন, যেগুলোতে তাদের মাথায় কাপড় ছিল না৷