এমন অবস্থায় ভারতের বিদেশ মন্ত্রক নাগরিকদেরকে ইরান ও ইসরায়েল সফর না করার জন্য পরামর্শ দিয়েছে৷ কেন্দ্র বলেছে, ‘‘যারা বর্তমানে ইরান বা ইসরায়েলে রয়েছেন, তাদের সংশ্লিষ্ট দেশের ভারতীয় দূতাবাসগুলির সঙ্গে যোগাযোগ করে নিজেদের নাম নথিভুক্ত করতে হবে৷ নিজেদের চূড়ান্ত সতর্ক থাকতে হবে৷ একইসঙ্গে সীমিত করতে হবে গতিবিধি৷’’
ফ্রান্স এবং রাশিয়া তাদের নাগরিকদের উদ্দেশেও একই ধরনের সতর্কতা জারি করেছে৷
ইসরায়েলে অবস্থিত ভারতীয় দূতাবাসের ওয়েবসাইট অনুযায়ী, সেখানে প্রায় ৯০০ ভারতীয় শিক্ষার্থী পড়াশোনা করেন৷ ইসরায়েলে কর্মরত ভারতীয় নাগরিকের সংখ্যা প্রায় ১৮ হাজার৷এপ্রিল, মে মাসে ভারতীয় আরো শ্রমিক, কর্মচারীদের যাওয়ার কথা ছিল৷
গাজায় হামাসের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের যুদ্ধের প্রেক্ষিতে শ্রমিকের অভাব দেখা দেয়ায় গত নভেম্বরে নেতানিয়াহু সরকার দিল্লির কাছে আবেদন জানায়৷ দুই দেশের সরকারি বোঝাপড়ায় ভারত থেকে এপ্রিল ও মে মাসে ছয় হাজার শ্রমিক পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয় বলে জানায় বার্তা সংস্থা পিটিআই৷ এর অংশ হিসেবে গত ২ এপ্রিল হরিয়ানা ও উত্তরপ্রদেশ থেকে ৬৪ জন নির্মাণ শ্রমিক প্রথম দফায় ইসরায়েলে গিয়েছেন৷
চলতি মাসে মোট দেড় হাজার শ্রমিকের ইসরায়েল যাওয়ার কথা৷ তারা লোহার কাঠামো, ইমারত নির্মাণ, টাইলস বসানোর কাজ করবেন৷ তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে এই যাত্রা অনিশ্চয়তায় পড়েছে৷
সংখ্যায় কম হলেও ইরানেও ভারতীয় নাগরিকেরা রয়েছেন৷ বিশেষত, তেহরানে বহু দশক ধরে ভারতীয়রা বসবাস করছেন৷ ব্যবসা-বাণিজ্যের সঙ্গে যোগ রয়েছে সেখানকার ভারতীয় শিখ সম্প্রদায়ের৷
অসুরক্ষিত আকাশপথ
সামরিক সংঘাতের আশঙ্কার প্রেক্ষিতে ইরান ও ইসরায়েলের আকাশপথ যাত্রীবাহী বিমানের জন্য নিরাপদ নয়৷ তাই এয়ার ইন্ডিয়া ইরানের একাংশের আকাশপথ ব্যবহার করছে না৷
শনিবার লন্ডনগামী একটি বিমানকে ইরানের আকাশপথ এড়িয়ে গন্তব্যের উদ্দেশ্যে পাঠানো হয়৷ এর ফলে ইউরোপগামী বিমানের গন্তব্যে পৌঁছতে ৪৫ মিনিট থেকে এক ঘণ্টা বাড়তি সময় লাগবে৷ যদিও ইরানের দক্ষিণ অংশের আকাশপথ ব্যবহার এখনই বন্ধ করছে না এয়ার ইন্ডিয়া৷
একটি শীর্ষস্থানীয় বেসরকারি বিমান পরিষেবা সংস্থা এয়ার ইন্ডিয়ার মতোই ইরানের আকাশপথ এড়িয়ে যাচ্ছে৷ তাদের ঘোষণা অনুযায়ী, ১৮ এপ্রিল পর্যন্ত এই সর্তকতা বজায় থাকবে৷
ইসরায়েল-ইরান সংঘাত বাধলে ভারতের জন্য অস্বস্তিকর হতে পারে: অনিন্দ্য মিত্র
‘বিশ্ব মিত্র’ ভারত
দীর্ঘদিন ধরেই ইসরায়েলের সাথে ভারতের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে৷ অন্যদিকে ইরানের সাথেও রয়েছে সুসম্পর্ক৷ দুই বন্ধু দেশ সংঘাতে জড়িয়ে পড়লে দিল্লির অবস্থান কী হবে?
আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অধ্যাপক অনিন্দ্য মিত্র বলেন, ‘‘ইসরায়েল ও ইরান দুটিই ভারতের বন্ধু রাষ্ট্র৷ ফলে তাদের মধ্যে সংঘাত বাধলে তা ভারতের জন্য অস্বস্তিকর হতে পারে৷ ভারতকে চেষ্টা করে যেতে হবে যাতে দুই পক্ষকে সংঘর্ষ থেকে বিরত রাখা যায়৷ আর যদি লড়াই বাধেও তার মাত্রা যেন সীমিত থাকে৷’’
২০৪৭ সালে স্বাধীনতার শতবর্ষ পূর্তিতে ভারতকে উন্নত রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলার জন্য কেন্দ্রীয় সরকার ‘বিকশিত ২০৪৭'-এর লক্ষ্য সামনে রেখেছে৷ তাতে ভারত ‘বিশ্ব মিত্র' হিসেবে নিজেকে স্থাপন করতে চায়৷
এশিয়ার চলতি উত্তেজনা সম্পর্কে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অধ্যাপক ইমনকল্যাণ লাহিড়ী ডিডব্লিউকে বলেন, ‘‘এটা সার্বিক যুদ্ধ হবে না৷ যদি হয়ও, তা হলে দুই বন্ধু রাষ্ট্রের মধ্যে মধ্যস্থতা করতে হবে ভারতকে৷ যুদ্ধের আগে দেশগুলির পারস্পরিক আলোচনার সঙ্গে দিল্লির যুক্ত হওয়া প্রয়োজন৷’’
তার মতে, ‘‘মিত্রতার মাধ্যমে যুদ্ধের বাতাবরণ সরিয়ে ফেলা উচিত৷ ভারত সেই চেষ্টায় করবে যেহেতু তারা নিজেদের বিশ্ব মিত্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা চালাচ্ছে৷’’
ভারত-ইসরায়েল সম্পর্ক নিয়ে ২০১৯ সালের গ্যালারি
ভারত-ইসরায়েল সম্পর্ক কেমন?
আরব রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষার স্বার্থে প্রথম দিকে ইসরায়েলের সঙ্গে পরোক্ষ সম্পর্ক বজায় রাখত ভারত৷ পরে ১৯৯২ সালে দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/PIB
১৯৪৭
১৯৪৭ সালের নভেম্বরে জাতিসংঘ ফিলিস্তিনি এলাকা ভাগের প্রস্তাব দিয়েছিল৷ সাধারণ পরিষদে সেটি পাসও হয়৷ তবে আরব রাষ্ট্রগুলোসহ ভারত সেই প্রস্তাবে সমর্থন জানায়নি৷ ছবিতে সেই সময়কার আরব নেতাদের দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/United Archives
১৯৪৯
ইসরায়েলকে জাতিসংঘের সদস্য করার বিপক্ষে ভোট দিয়েছিল ভারত৷ তবে ডানপন্থি হিন্দু জাতীয়বাদী দল ‘হিন্দু মহাসভা’র নেতা বিনায়ক দামোদর সাভারকর ইসরায়েলের বিপক্ষে ভোট দেয়ার সমালোচনা করেছিলেন৷
ছবি: Getty Images/AFP
১৯৫০
১৯৫০ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর ইসরায়েল রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দেয় ভারত৷ এরপর প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু বলেছিলেন, ‘‘আমরা আরও আগেই ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দিতাম, কারণ ইসরায়েল একটি বাস্তবতা৷ কিন্তু আমরা আরব রাষ্ট্রের বন্ধুদের কষ্ট দিতে চাইনি বলে, তা (ইসরায়েলকে স্বীকৃতি) করিনি৷’’
ছবি: Getty Images
১৯৫৩
মুম্বইতে ইসরায়েলের একটি কনসুলেট খোলার অনুমতি দেয় ভারত৷ কিন্তু আরব বিশ্বের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ হতে পারে ভেবে ইসরায়েলের সঙ্গে পরিপূর্ণ কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করতে চায়নি নেহেরু সরকার৷
ছবি: Getty Images
১৯৬২
ইসরায়েলের কাছে অস্ত্র চেয়ে সে দেশের প্রধানমন্ত্রী ডাভিড বেন গুরিয়নের (ছবি) কাছে চিঠি লিখেছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু৷
ছবি: Getty Images
১৯৭১
ভারতীয় পত্রিকা হিন্দুস্তান টাইমস বলছে, ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের সঙ্গে লড়তে অস্ত্র চেয়ে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী গোল্ডা মেয়ারের কাছে চিঠি লিখেছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী৷ সেই অস্ত্র ভারতীয় সৈন্য ও মুক্তি বাহিনী ব্যবহার করেছিল বলে জানায় পত্রিকাটি৷ এরপর মেয়ার গান্ধীর কাছে ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেয়ার দাবি জানিয়েছিলেন৷ তবে গান্ধী তা মেনে নেননি৷
ছবি: Getty Images/AFP/
১৯৮৫
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ভারতের প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী ও ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী শিমন পেরেজের মধ্যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়৷ সেটিই দুই দেশের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে প্রথম আনুষ্ঠানিক বৈঠক ছিল৷
ছবি: picture-alliance
১৯৯২
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরসিমা রাওয়ের সময় ভারত ও ইসরায়েলের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপিত হয়৷ ফেব্রুয়ারি মাসে ইসরায়েল ভারতের নতুনদিল্লিতে দূতাবাস খোলে৷ আর মে মাসে ইসরায়েলের তেল আভিভে দূতাবাস খোলে ভারত৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
১৯৯৬
ইসরায়েলের প্রেসিডেন্ট এজার ভাইৎসমান ভারত সফরে গিয়েছিলেন৷ ইসরায়েলের কোনো রাষ্ট্রপ্রধানের এটিই প্রথম ভারত সফর ছিল৷
ছবি: Getty Images/GPO
১৯৯৯
কারগিল যুদ্ধের সময় ভারতকে অস্ত্র সরবরাহ করেছিল ইসরায়েল৷
ছবি: picture-alliance/AP/A. Rahi
২০০০
ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এলকে আডভানি তেল আভিভে ইসরায়েলের প্রেসিডেন্ট এজার ভাইৎসমানের সঙ্গে সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধ নিয়ে বৈঠক করেন৷ এরপর ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জসওয়ান্ত সিংয়ের সফরের সময় দুই দেশ যৌথভাবে সন্ত্রাসবিরোধী কমিশন গঠন করেছিল৷
২০০৩
ইসরায়েলের প্রথম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ভারত সফরে গিয়েছিলেন আরিয়েল শ্যারন৷ সেই সময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন অটল বিহারী বাজপেয়ী৷
ছবি: Getty Images/AFP
২০১৪
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে গিয়ে বৈঠক করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/S. Scheiner
২০১৫
জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদে ইসরায়েলের বিপক্ষে ভোট দেয়া থেকে বিরত থাকে ভারত৷ এর মাধ্যমে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন দ্বন্দ্ব নিয়ে ভারতের নীতিতে পরিবর্তন আসার সংকেত দেয়া হয়৷ একই বছর ইসরায়েল সফরে যান ভারতের প্রেসিডেন্ট প্রণব মুখার্জি৷
ছবি: picture-alliance/Photoshot/Xu Jinquan
২০১৭
ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ইসরায়েল সফরে যান নরেন্দ্র মোদি৷ সেখানে তিনদিন ছিলেন তিনি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/PIB
২০১৭
জেরুসালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের স্বীকৃতির বিরুদ্ধে ভোট দেয় ভারত৷
ছবি: picture-alliance/N. Alon
২০১৮
মোদির ইসরায়েল সফরের ছয় মাস পর ভারত সফরে যান ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু৷
ছবি: AFP/Getty Images
২০১৯
প্রথম ফেব্রুয়ারি, পরে সেপ্টেম্বরে ভারত সফরে যাওয়ার কথা ছিল নেতানিয়াহুর৷ তবে দুবারই দেশে নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত থাকায় সফর বাতিল করতে হয়েছে৷ তবে বন্ধু দিবসে একে অপরের সঙ্গে টুইটারে শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন মোদি ও নেতানিয়াহু৷